শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

...মুজিবনগরের অক্ষয় চেতনার বিনাশ নেই

...মুজিবনগরের অক্ষয় চেতনার বিনাশ নেই

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সার্বজনীনভাবেই এ দিবসটি পালিত হওয়ার কথা। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের সে সুযোগ করে দেয়নি। চোখ বন্ধ করে অন্ধ সেজে অনেকেই 'দ্বিদলীয় রাজনীতি দ্বিদলীয় রাজনীতি' নামের ছড়া আওড়ায় আর মুখস্থ বুলি ছাড়ে। বাস্তব বরং অন্য কথা বলে।

তথাকথিত রাজনৈতিক দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সংগ্রামের পর্যায়, লক্ষ্য ও অঙ্গীকার নিয়ে স্বকপোলকল্পিত মিথের পসরা সাজায়; এবং এদের ভিত এসব বানানো গল্প। ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ঘিরে আমাদের শহীদের স্বপ্নের সাথে তারা প্রতারণা করেছে; গণতন্ত্রের শরীরে পড়িয়ে দিয়েছে সামরিক আলখেল্লা; অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে লুটপাটরাজের কাছে, সামরিক চক্র আর মৌলবাদের কাছে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ যে 'মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক' হয়নি; সরকারি-বিরোধী উভয় রাজনৈতিক দল যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-অঙ্গীকার, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়নি; বরং একাত্তরের মীমাংসিত বিষয়গুলোই যে এখনো আমাদের রাজনৈতিক গতিধারায় নেতিবাচকভাবে প্রভাবক হিসেবে রয়ে গেছে; রাজনৈতিক ধারা হিসেবে এখনো যে জামায়াতের অবশেষ রয়ে গেছে এর সিংহভাগ দায় এ দলের।

শক্তিহীন, অবিকশিত, ভ্রান্ত অন্যান্য প্রগতিমুখী দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি থেকে 'সমদূরত্বের নীতির' ভুল রণকৌশলে হেঁটে বরং প্রতিপক্ষ মুক্তিসংগ্রামে পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকেই সুযোগ করে দিচ্ছে। স্বাধীনতার মত বিষয় নিয়ে এদেশে রাজনৈতিক ভাঁওতাবাজি ও সতেচন বিকৃত বয়ানের বিস্তৃতি আছে রাজনৈতিক শক্তির এ ভুল সমীকরণ ও অদূরদর্শী কৌশলের সুযোগেই। আমাদের জাতীয় জীবনের দূর্ভাগ্য যে ২৬ মার্চ নিয়েও এদেশে অনেকবারের ক্ষমতাসীন দল বিএনপি সীমাহীন, ক্ষমার অযোগ্য, অশ্লীল মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে চলেছে। গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে ২০১৮ সালের বাংলাদেশেও এই ষড়যন্ত্রসর্বস্ব রাজনৈতিক দলটি ৭১ এর ২৬ মার্চ নিয়ে মিথ্যের জাল বুনে চলে অথচ যে সমাধান আমরা একাত্তরেই করে এসেছি। এখন লন্ডন থেকে ফতোয়া দেয়া হয় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জন্মের গোয়েবলসীয় বয়ানের।

১৭ এপ্রিল এ অপরাজনীতি, অপশক্তি, মিথ্যাদেবীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অজেয় ঢাল। ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঘোষণার উল্লেখ, আইনগত স্বীকৃতি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দেয়া হয় ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ যেটি পাঠ করা হয় মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭ এপ্রিলে। ২৬ মার্চ থেকেই আমাদের 'স্বাধীনতা' স্বীকৃত হয় যেজন্য ২৬ মার্চের পরে পাকবাহিনী শুধু হানাদার বাহিনীই ছিল না, তারা ছিল আইনের দৃষ্টিতে, জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছায় 'দখলদার বাহিনী'। ১৬ ডিসেম্বরকে জন্মদিন বলা এ কারণেই এক ধরনের বিভ্রান্তিকর ভুল চর্চা।

আমাদের 'স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেই' উল্লেখ আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার তথা বাংলাদেশের প্রথম সরকারের কাঠামো ও বিন্যাস নিয়ে, অথচ উর্দিভিত্তিক রাজনৈতিক দল বিএনপি এর বিপরীত বয়ানের 'মিথ্যা'কে পুঁজি করেই তাদের রাজনৈতিক স্বপ্ন-সাধ নির্মাণের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ আমরা ইতিহাস থেকে জানি মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি, বাহাত্তরের সংবিধানের 'চার স্তম্ভকে' অপনোদন করার মাঝেই তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের চরিতার্থ হয়।

মুজিবনগরের অক্ষয় চেতনার বিনাশ নেই।

হুসাইন সাদ্দাম’র স্ট্যাটাস থেকে

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত