
ঢাকা, ১০ জানুয়ারি, এবিনিউজ : শতবছরেরও পুরনো সম্পর্ক বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের। ঐতিহাসিক এ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যেও অবস্থান শক্ত করতে চায় দেশটি। এ বাণিজ্যিক সম্পর্কের বেশকিছু সম্ভাবনার দিক নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বর্তমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। এ ভূখণ্ডের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এ সম্পর্ক ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। বহুকাল ধরে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করে আসছেন। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবার বাণিজ্য হয়ে আসছে। এখানে কীভাবে কাজ হয়, তা নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা বেশ সমৃদ্ধ। আর যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ব্রিটিশ বাংলাদেশীদেরও এ দেশের সঙ্গে ভালো ব্যবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে। এখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। ব্রিটিশরা এখানে সেবা রফতানি করে অর্জন করতে পারে বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। যুক্তরাজ্যের তরুণদের একটি বড় অংশ এ খাতে এগিয়ে এসেছে। আমাদের মূলধন হিসেবে মানবসম্পদ রয়েছে। সেসঙ্গে রয়েছে ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাও। এটি একটি বিশেষ সময়। কেননা বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাজার হিসেবে কৌশলগত দিক থেকে এবং ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, যার পাশে রয়েছে ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশ। যুক্তরাজ্য এখানে ব্যবসায় আগ্রহী।
আপনার এবারের বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য কী?
এ সফরে আমি শিখতে এসেছি। বাংলাদেশে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত হিসেবে এটি আমার পরিচিতিমূলক সফর। এ দেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ গভীর। দুই দেশই যাতে প্রবৃদ্ধি ও সাফল্যের সহযাত্রী হতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই আমার এ সফর। আমি জানতে এসেছি, গত তিন বছরে এখানে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। কারণ আমি এখানে তিন বছর আগে সফর করে গেছি। তবে এবার এসে দেখতে পাচ্ছি, গত তিন বছরে এখানে বেশ পরিবর্তন হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ কেমন মনে হয়?
বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত বিষয়গুলোয় আরো নজর দিতে হবে। বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বিদ্যুত্ উত্পাদন, পণ্য পরিবহনের পথগুলো সুগম এবং দক্ষ করার মতো বেশকিছু বড় অবকাঠামো নির্মাণে হাত দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটি বাংলাদেশের বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বাংলাদেশে পায়রা বন্দর, পদ্মা সেতুসহ বেশকিছু প্রকল্পে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বড় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ উদীয়মান অর্থনীতি। আর ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে ব্যবসায়ীদের এখানে আঞ্চলিক ব্যবসা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশকে ব্রিটেনের বেশকিছু প্রস্তাব দেয়ার রয়েছে। যেসব প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ হয়তো অন্য কারো নেই।
চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশে প্রকল্পের কাজ পাওয়াকে কীভাবে দেখছেন?
এক্ষেত্রে আমাদের ভিন্ন শক্তি রয়েছে। অবশ্যই চীন ও ভারত এখানে বড় খেলোয়াড়। একই সঙ্গে এ দুটি দেশ যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। আমাদের শক্তির জায়গাটি একেবারেই ভিন্ন। প্রথম শক্তি হচ্ছে, দুই দেশের শক্তিশালী ইতিহাস রয়েছে, যা দুই দেশের বোঝাপড়া ও বন্ধুত্বকে পোক্ত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যুক্তরাজ্যের ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। দুই দেশের রাজনৈতিক যোগাযোগ ভালো। এছাড়া ব্রিটেনে একটি প্রভাবশালী বাংলাদেশী সম্প্রদায় বাস করে। সেখানেও ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের একটি বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বেশ সক্রিয় ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স রয়েছে, যাদের সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর ভালো যোগাযোগ আছে। এ বিষয়গুলো একদিনে গড়ে ওঠেনি। আর এগুলো অর্থ দিয়ে কেনা যায় না। ব্রিটেনের অর্থায়ন সক্ষমতা রয়েছে, যা ব্রিটিশরা প্রস্তাব করতে পারে। আর এরই মধ্যে করেছেও। ব্যবসায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে আমাদের বেশ অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর এ খাতে আমাদের সম্ভাবনাও ব্যাপক। ফলে আমাদের কাছে ভিন্ন ধরনের শক্তি ও প্রস্তাব রয়েছে, যা বাংলাদেশ চীন ও ভারত থেকে পাবে না। তবে অবশ্যই অন্য দেশের প্রতিযোগিতার বেশকিছু ক্ষেত্র রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর সেবার অভিজ্ঞতা বা পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। আর এটাই যুক্তরাজ্যের তুলনামূলক সুবিধা।
বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কি?
যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে নেই, তারা মূলত যানেন না, এখানে ব্যবসা কীভাবে পরিচালনা করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এখানে অনেক দিন ধরেই ব্যবসা করছে। তারা বাংলাদেশে ব্যবসা করার বিষয়ে অভিজ্ঞ। তবে নতুনরা এখানে ব্যবসা করতে গেলে আমাদের সরকারের সহযোগিতা লাগে। আমাদের হাইকমিশনের কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতা করে থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। আর সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাও করতে হয়। আমি দেখছি, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার জন্য এ কাজগুলো হচ্ছে বেশ।
ব্রেক্সিটের পর বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক কোন দিকে যাবে বলে মনে করেন?
আমাদের লেবার পার্টি ইউরোপে থাকার পক্ষে ছিল। সাধারণ জনগণ তাদের মত প্রকাশ করেছে। এটি আমাদের মেনে নিতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর পর কী হবে? কীভাবে বিষয়গুলো আমরা সমাধান করব? আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমাদের যে সম্পদ রয়েছে, তা দেশের জন্য ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, কিন্তু এটি করতে প্রতিবন্ধকতা পার হতে হবে অবশ্যই। ফলে কীভাবে আমরা আমাদের আগের সম্পর্কগুলো মূল্যায়ন করব, তা নিয়ে সংসদে বিতর্ক চলছে। ব্যবসার খাতিরে ইউরোপসহ অন্য অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য চুক্তিগুলোর যতটা সম্ভব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের জন্য একটি শক্তিশালী আওয়াজ রয়েছে। আমি আশা করি, বিষয়গুলোয় আলোচনা করে আমরা সামনে এগিয়ে যাব, পেছাব না। যদিও এখানে ব্রেক্সিট একটি উদ্বেগের কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সবাই অপেক্ষা করছে দেখার জন্য যে, আমরা সম্পর্কের আগের স্থান থেকে পিছিয়ে যাই কিনা। তবে আমি বলতে চাই, আমরা পেছাব না। আর বাংলাদেশ যেভাবে বারবার সামনে চলে আসছে, তাতে ব্রিটিশরা যে আন্তর্জাতিকতাবাদী— এ সত্যই প্রমাণ করে।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। এর অগ্রগতি কী?
বিষয়টিতে এখনই কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কোথায় এবং কীভাবে বিনিয়োগ করবে।
সূত্র: বণিকবার্তা