রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
logo
  • হোম
  • সাক্ষাৎকার
  • উপমহাদেশীয় বেঞ্চমার্কের চেয়ে দ্রুততর হবে স্বপ্নের সাফল্য

উপমহাদেশীয় বেঞ্চমার্কের চেয়ে দ্রুততর হবে স্বপ্নের সাফল্য

উপমহাদেশীয় বেঞ্চমার্কের চেয়ে দ্রুততর হবে স্বপ্নের সাফল্য

ঢাকা, ২১ জানুয়ারি, এবিনিউজ : রিটেইল চেইন স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির। বুয়েটে প্রকৌশলবিদ্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রির পর যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, রিটেইলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন। বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নিয়েও পড়াশোনা করছেন। বিদেশে একাধিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশে কাজ করেছেন বাটা সু, টেট্রাপ্যাক ও অটবিতে। ২০১২ সালের শুরুতে তিনি স্বপ্নের হাল ধরেন। খুচরা বিক্রয় খাত ও নিজ প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ অবস্থা, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন।

২০১৬ সালের ‘স্বপ্ন’ ও ২০১৭ সালের স্বপ্ন...

২০১৬ সাল আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল। এ বছর আমাদের সোর্সিং, অপারেশনস, সার্ভিস তথা সার্বিক মানোন্ননে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। গেল বছর ক্রেতার প্রত্যাশা পূরণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এরই একটি স্বীকৃতি মিলেছে মিলওয়ার্ড ব্রাউন ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের কাছ থেকে। ২০১৬ সালের জন্য বেস্ট রিটেইল ব্র্যান্ডের পুরস্কার পেয়েছে ‘স্বপ্ন’।

প্রথমে সোর্সিং প্রসঙ্গে আসি। ২০১৬ সালে আমরা সবজির ৬৫ শতাংশ ও মাছের ৫০ শতাংশ সরাসরি পূর্বনির্ধারিত উত্পাদকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি। ফ্রেশনেস বিবেচনায় আমাদের ওপর ক্রেতার আস্থা অনেক বেড়েছে। ঢাকার আউটলেটে বিক্রি হওয়া লাউয়ে এখন সূক্ষ্ম হুলগুলো দেখা যায়। এ কারণে ২০১৬ সালে আমাদের সবজি ও ফলের বিক্রি ৮০ শতাংশ বেড়েছে। মাছ সংগ্রহেও আমরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চুজি ছিলাম। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে স্বপ্নের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

বাস্কেট সাইজ বর্তমানে ৬৯২ টাকা, যেটি আমরা ৮০০ টাকায় উন্নীত করার চেষ্টা করছি। গ্রস মার্জিনটা বাড়ানোর জন্য আমরা সোর্সিংয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। ২০১৭ সালে স্বপ্নে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আরো বেশি পণ্য আসবে। কিছু পণ্য, যেগুলো এখন আমদানিকারকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে, তার কিছু কিছু আমরা নিজেরা আমদানি করব। দাম-মান দুদিক থেকেই আমাদের ক্রেতারা লাভবান হবেন।

খাদ্যপণ্যের মান ও নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে অ্যাড্রেস করছেন?

২০১৬ সালে আমরা এ বিষয়ে অনেক কাজ করেছি। অ্যাগ্রো সোর্সগুলোয় ফিড, সার, উত্পাদন পরিবেশ ইত্যাদি ক্রাইটেরিয়া আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া আছে। গেল বছর মনিটরিং অনেক জোরদার হয়েছে। এ বছর আমরা বড় খামারগুলোয় সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য নিজেদের একজন লোক রাখার পরিকল্পনা করছি, যারা দেখবেন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির মতো কোনো কিছু উত্পাদন বা প্রক্রিয়াকরণে চলে আসে কিনা।

২০১৭ সালেই আমরা খাদ্য ও কৃষিপণ্যের সেফটি ডিক্লারেশন শুরু করব। এর আওতায় আমরা বলে দেব, এই বিফ বা চিকেনে কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার হয়নি এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো খাদ্য ওই গরু বা মুরগিকে খাওয়ানো হয়নি। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ— সব পণ্যেই পর্যায়ক্রমে সেফটি ডিক্লারেশন চলে আসবে।

দেখুন, সেরা ব্র্যান্ডের স্বীকৃতিটাকে আমরা একটি দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। সেফটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ফ্যাক্টসের ব্যাপারে স্বচ্ছতা ও ডিক্লারেশনের পরিকল্পনা এরই একটি অংশ। গেল বছর আমরা গ্লোবাল গ্যাপের সদস্য হই। বৈশ্বিক গ্রুপটি নিরাপদ পণ্যের জন্য বড় রিটেইলারদের সার্টিফিকেট দেয়। দ্রুতই এমন আরো কয়েকটি সার্টিফিকেশন আশা করছি আমরা।

জেনে খুশি হবেন, আমরা স্বল্প পরিসরে অর্গানিক চাষাবাদও শুরু করেছি। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেলে আগামীতে আমরা অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসে অর্গানিক ফুডের দিকে জোর দেব। নন-জিএমওর ব্যবসায়িক সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। এটুকু বলতে পারি, সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্রেতার যা যা প্রয়োজন, দীর্ঘমেয়াদে স্বপ্ন তার সবই প্রমোট করবে।

দায়িত্বের অংশ হিসেবেই আমরা অনেক ভালো ভালো মূল্যবোধ আত্মস্থ করার কথা ভাবছি। এগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনারাও জানবেন।

আপনারা অনেক পণ্যই তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে কিনছেন। সেগুলোর ব্যাপারে কী করবেন?

এখনো যেসব পণ্য তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে সংগ্রহ করছি, সেগুলো কিন্তু যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমাদের স্টোরে আসে। ফলমূলে কার্বাইড বা ফরমালিন আছে কিনা, শাকসবজিতে কীটনাশকের মাত্রা কেমন, মাছে কোনো ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা— এগুলো আমরা পরীক্ষা করি। দীর্ঘমেয়াদে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে সোর্সিং যথাসম্ভব কমানোর চেষ্টা করছি আমরা।

সুপারশপ ইন্ডাস্ট্রির প্রতিযোগিতামূলক দিকগুলো সম্পর্কে জানাবেন?

প্রায় ৪৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে আমরা দেশের সুপারশপ ইন্ডাস্ট্রির লিডার। নিকটতম প্রতিযোগীর ক্ষেত্রে তা ১৫ শতাংশের মতো। মিলওয়ার্ড ব্রাউনের হিসাবে আমাদের ব্র্যান্ড ইকুইটি ৪৭, নিকটতম প্রতিযোগী যেখানে পেয়েছে ১৯। আপনাকে বুঝতে হবে, মিলওয়ার্ড ব্রাউনের হিসাব-নিকাশের যৌক্তিক ভিত্তি আছে।

আগের বছরের ধারাবাহিতকায় ২০১৬ সালেও আমরা প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হই। এখন যেসব জায়গায় স্বপ্নের আউটলেট আছে, সেখানকার চারপাশে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার ৮ শতাংশ মানুষ আমাদের ক্রেতা। চলতি বছর সেটিকে ১১ শতাংশে এবং কয়েক বছরের মধ্যেই ১৫ শতাংশে উন্নীত করার জন্য আমরা নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছি।

আউটলেট সম্প্রসারণে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আমরা আউটলেট সম্প্রসারণে অনেক বিনিয়োগ করেছি। ২০১৭ সালেও সম্প্রসারণ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে গতি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম থাকবে। ২০১৭ সালে আমরা প্রফিট্যাবিলিটি এনজয় করার চেষ্টা করব। আপনারা জানেন, পুরনো আউটলেটগুলোর মুনাফা সন্তোষজনক। কিন্তু নতুন আউটলেটের খরচ আর সম্প্রসারণ প্রচেষ্টার পুঞ্জীভূত দায় মিলিয়ে বছর শেষে স্বপ্ন নিট মুনাফা দেখাতে পারছে না।

আউটলেটের বদলে ২০১৭ সালে আমরা অন্যান্য দিকে বেশি নজর দেব। আউটলেটে সেবার মান বাড়াতে মানবসম্পদে জোর দেয়া হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও ই-কমার্স। আমরা মনে করছি, পাঁচ বছরের মধ্যে রিটেইলিংয়ে ই-কমার্স একটি শক্ত অবস্থান করে নেবে। এজন্য ভৌত স্টোরগুলোর সমান্তরালে আমরা ভার্চুয়াল স্টোর গড়ে তুলব। এটিকে অমনিচ্যানেল রিটেইলিং বলে, যেখানে আউটলেট, অনলাইন দুই প্লাটফরমেই সমানতালে কেনাকাটা করতে পারবেন আমাদের ক্রেতারা।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। বিগ ডাটা অ্যানালিটিকসের জন্য আমরা দুটো মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিচ্ছি। কাস্টমারদের জন্য অসুবিধাজনক, এমন বিষয়গুলোকে আমরা ২০১৬ সালে ভালোভাবে অ্যাড্রেস করেছি। এ বছর সেসব জায়গায় সংস্কার আসবে।

স্বপ্ন কবে নাগাদ নিট মুনাফা দেখাবে?

শেয়ারহোল্ডারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ২০১৭ সালে কিছু কিছু মাসে পরিচালন মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি আমরা। শুধু ভেরিয়েবল এক্সপেন্সগুলো হিসাবে নিলে ২০১৬ সালে আমরা মুনাফায় ছিলাম। অবচয় আর ফিক্সড কস্টগুলো হিসাব করে মুনাফা দেখাতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে। তবে আমরা ক্রমেই নিট মুনাফার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ২০১৬ সালে আমাদের পুরনো আউটলেটগুলোয় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত

মুনাফা প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। নতুন আউটলেটগুলোকে দাঁড় করাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আর্থিক বিবরণীতে এর সুফল দেখানো যাচ্ছে না। আমার বিশ্বাস, স্বপ্ন ২০২১-২২ সালের মধ্যে নিট মুনাফায় চলে যাবে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কনগ্লোমারেট এসিআইয়ের একটি সাবসিডিয়ারি হিসেবে নিট মুনাফা দেখানোর একটি প্রেরণা আমাদের মধ্যেও কাজ করে। কিন্তু দেখুন, উপমহাদেশেই একেকটি রিটেইল ব্র্যান্ড নিট মুনাফায় আসতে কত বছর সময় নিয়েছে। ১২-১৫ বছর। স্বপ্ন ২০০৮ সালে করলেও প্রথম কয়েক বছরকে আমরা লার্নিং ইয়ার হিসেবে ধরব। ২০১১ সালের পর ইফেক্টিভ যাত্রা ধরলে আমরা যদি ২০২২ সালেও নিট মুনাফায় পৌঁছি, সেটিও উপমহাদেশীয় বেঞ্চমার্কের চেয়ে দ্রুততর হবে। সৌজন্যে: বণিকবার্তা

এবিএন/ফরিদুজ্জামান/এফডি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত