সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
logo

‘শাস্তি হয়নি বলেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়’

‘শাস্তি হয়নি বলেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়’

ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি, এবিনিউজ : নজরুল ইসলাম খান (এনআই খান)। সাবেক শিক্ষা সচিব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চেয়ারম্যান, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীল কমিশন। পাঠ্যপুস্তকে ভুলের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন তিনি। বলেন, দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এমন ভুল, যা ফৌজদারি অপরাধের শামিল। অপরাধের সাজা না হওয়ার কারণেই একই ভুল বারবার হচ্ছে। দীর্ঘ আলোচনায় তুলে ধরেন গুরুত্বপূর্ণ মতামত। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

ধারাবাহিকভাবেই ভুল হয়ে আসছে পাঠ্যবই মুদ্রণে। এমনকি একই ভুল বারবার হচ্ছে। কী বলবেন ভুলের এই পুনরাবৃত্তি নিয়ে?

নজরুল ইসলাম খান : অপরাধ করে ছাড় পেয়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি হয়ে আসছে। অমুকের পক্ষের লোক, অমুকের শক্তির ওপর ভর করে চলে।

লেখকরা বলছেন, তাদের লেখা পাল্টানো হয়েছে?

নজরুল ইসলাম খান : এটি বলে পার পাওয়া যায় না। একজন লেখকের দায় শেষ পর্যন্ত। যদি কেউ পাল্টিয়েও থাকে অন্তত লিখিতভাবে তার প্রতিবাদ করা উচিত। লেখকরা কী সে দায়িত্ব পালন করেছেন? পকেটমার নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। অর্থাৎ পকেটমারই অন্যজনকে ধরে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। এখানেও তাই হচ্ছে। যে লেখকরা ভুল করেছেন, তারাই আবার টকশোতে এসে নানান কথা বলছেন। পরামর্শকরা এসেই নানান ভুল ধরছেন মন্ত্রণালয়ের।

আপনি বলছেন, পার পাওয়া যায় না, কিন্তু বাস্তবে তো কিছুই হয় না?

নজরুল ইসলাম খান : শাস্তি হয়নি বলেই পার পেয়ে যায়। এ পর্যন্ত এনসিটিবিতে ভুলের জন্য উপযুক্ত কোনো শাস্তি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। নিয়ম না মানার জন্য যে শাস্তি হতে পারে, তা এখানে নেই। ভয় এবং ভক্তি থাকলেই ভুল কম হয়। আমার সময় লেখকদের সম্মানী দ্বিগুণ করা হয়েছিল। কারণ অর্থ না দিলে ভক্তি আসবে না। আমি মনে করি সম্মানী আরও বাড়ানো উচিত। একই বিষয়ে বারবার ভুল হচ্ছে। অথচ বইগুলোর কোনো আর্কাইভ নেই। আমি নিজে চেয়েও পাইনি। বই থাকলে আগের ভুল দেখে স্মরণ করিয়ে দিতে পারত। এই দায়িত্ব অবহেলার জন্যই লাখ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সাজা হওয়া উচিত। সাজা না হওয়ার কারণেই এমন হচ্ছে। হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলবেন, আমরা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের। আমরা স্বাধীন। কিন্তু অপরাধ করলে সবার জন্যই সাজার বিধান আছে। মন্ত্রণালয় চাইলেই শাস্তি দিতে পারে।

এমন ভুল কী ধরনের অপরাধের মধ্যে পড়ে বলে মনে করেন?

নজরুল ইসলাম খান : অবহেলার কারণে ভুল হচ্ছে। ভুলের কারণে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবশ্যই সিভিল মামলা হতে পারে। এনসিটিবির সদস্য, যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাদের সরিয়ে দেয়া উচিত।

মাল্টিমিডিয়া বইয়ের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনেকেই এর বিরোধিতা করেন। কিন্তু অনলাইনে যদি বইগুলো প্রকাশ করা হতো, তাহলে যে কেউ ভুলগুলো ধরতে পারত। যেমন ওড়নার প্রসঙ্গ এসেছে। অনলাইনে প্রকাশ পেলে লিঙ্ক থাকত কেন ওড়না শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য শব্দও পাওয়া যেত। অনলাইন হচ্ছে জ্ঞানের অবারিত রাজ্য। ধর্ম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তখন এই কথাগুলো আর থাকত না। সংশোধন করা যেত। এটি না করা তো দায়িত্বে অবহেলা। মানে অপরাধ করা। আমি মাদরাসার কিছু বই মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে এসেছিলাম। দেখানো হয়েছিল। পরে আর হলো না কেন? এর তদন্ত হওয়া জরুরি।

এই ভুলের প্রভাব নিয়ে কী বলবেন?

নজরুল ইসলাম খান : সমাজ, দেশের মারাত্মক ক্ষতি করছেন তারা। তারা হয়তো বুঝতে পারছেন না। কিন্তু চরম বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে সামান্য ভুল থেকে। সামাজিক সম্প্রিতি নষ্ট হলে তার কী প্রভাব, তা অনেক রাষ্ট্রই দেখেছে। অনেকেই ঘুমিয়ে আছেন। নীতিমালায় রয়েছে প্রত্যেকটি স্কুলে হাইস্পিড ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে। মাল্ডিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের সুযোগ থাকলে এই ভুলগুলো এমনিতেই শোধরানো যেত। শুধু ভবন নির্মাণ করলেই হয় না। ভবনের নকশাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল রেখেই এখন সব কাঠামো নির্মাণ করা জরুরি। আমার সময় বলেছিলাম, দোচালা ভবন নির্মাণ করতে হবে। এতে বৃষ্টির পানিতে ভবন নষ্ট হয় না, রং নষ্ট হয় না। উপরতলার ছাদ অবশ্যই দোচালা করতে হয়। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পরিবেশ যদি সুন্দর হয়, তাহলে শিক্ষা অর্জন শতকরা ২০ ভাগ বেশি হয়। পরিষ্কার ঝকঝকে, গন্ধহীন পরিবেশ, ভালো বাথরুম, রান্নাঘরের ব্যবস্থা আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য বলে মনে করি। রান্নাঘরের কথা বললে অনেকেই নাক সিটকায়। স্কুলে কিসের আবার রান্নাঘর? শিক্ষকরা সারাদিন থাকেন। তারা তো কিছু একটা রান্না করে খেতে পারেন। আমি স্কুলে সুইমিং পুলের কথা বলি। অনেকেই বিরোধিতা করেন। একটি পরিষ্কার পুকুর দেখলে তো যে কোনো ব্যক্তির মন ভালো হয়ে যায়। স্কুলের পুকুর না থাকলে পাশের কোনো পুকুর ব্যবহার করা যেতে পারে। শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে। মন ভালো থাকলে কোনো কিছু শিখতেও ভালো লাগে।

এসবে তো অর্থের বরাদ্দ দরকার?

নজরুল ইসলাম খান : পর্যাপ্ত অর্থ আছে। অর্থ কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। শুধু পরিকল্পনার দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফাইবার অপটিক কানেকশনের জন্য বিটিআরসিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। যথাযথ ব্যবহার না করা হলে অন্য কাজে ব্যবহার করে অর্থের অপচয় করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট কানেকশন দেয়ার কথা রয়েছে। ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। সৌজন্যে: জাগো নিউজ

এবিএন/ফরিদুজ্জামান/এফডি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত