মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
logo

‘প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের মতো সময় বেশি লাগবে না’

‘প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের মতো সময় বেশি লাগবে না’

আ হ ম মুস্তফা কামাল, ২৭ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : পরিকল্পনামন্ত্রী। পড়ালেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৬৭ সালে বি.কম (অনার্স) ও ১৯৬৮ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে অ্যাকাউন্ট্যান্সিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। উল্লেখ্য, তিনি ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানে (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একত্রে) চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সম্মিলিতভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি। দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সহসভাপতি হিসেবেও। এছাড়া বর্তমানে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, বিনিয়োগ বোর্ড, প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের সদস্য ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি সরকারের পরিকল্পনা ও অর্জন, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি-

প্রায় তিন বছর হলো আপনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ সময়ে বড় কোন পরিবর্তন এসেছে, যার জন্য আপনি উচ্ছ্বসিত বোধ করেন?

এখনো বড় কোনো পরিবর্তন হয়েছে, এমনটা বলব না। তবে পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরই যে পরিবর্তন এসেছে, তা নয় বরং তার আগে থেকেই পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। আসলে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি অর্থাত্ যেগুলো ম্যাটার করে, সেগুলোয় যা করা দরকার এবং যা সময়োপযোগী, তা-ই করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই কখন কোনটা করা দরকার, কী করতে হবে, কী অর্জন করতে হবে এবং কীভাবে অর্জন করা সম্ভব, তার দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাতে তা ২০২১ সালের আগেই বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। প্রাথমিক শিক্ষা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সবার জন্য বিদ্যুত্— এসব ক্ষেত্রেই আমাদের সক্ষমতা অনেক বেশি। এ লক্ষ্যগুলো অর্জন ২০২১ সালের আগেই হয়ে যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন কোনো স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তবতা। সবাই এখন অনুভব করছে, এটি অর্জন সম্ভব। এটি একটি চলমান বিষয়। ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, তার থেকে আমরা বেশি করে ফেলেছি।

দায়িত্ব নেয়ার পর আপনার অর্জনের কথা বললে কোনগুলোকে আগে বলবেন?

সরকারের অর্জন যেটা, সেটিই আমার অর্জন। এককভাবে আমার কোনো অর্জন নেই। আমার অর্জন পুরোটাই সরকারের।

আপনার দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারের অর্জন...

আমরা ক্রমাগতভাবে এগোচ্ছি। আমরা ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি, সেটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত্। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ— এটি তার চেয়েও বড়। এবার করব ৭ দশমিক ২০ অথবা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এভাবে আমাদের পরিকল্পনার যে প্রক্ষেপণ, সে মোতাবেক এগোচ্ছি। ২০৪১ সালে যখন আমরা একটি উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশে রূপান্তরিত হব, সেটি হবে আমাদের চূড়ান্ত বিজয়। সেটি হবে সোনার বাংলা, যার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক কষ্ট করেছেন, ত্রিশ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে। তাঁদের কাছে আমাদের যে ঋণ, তা শোধ হবে সেদিন।

এ সময়ে আপনারা কী কী চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন?

বিদ্যুত্ ও জ্বালানি আমাদের জন্য বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় হলো মানব সম্পদ। এটিকে একটি সক্ষমতার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক দেশে রূপান্তরিত করা। এটি করতে পারলে আমাদের মাথাপিছু উৎপাদনশীলতা বাড়বে। আমাদের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৬ শতাংশ। এটি ২০৪৮ সালের আগে কমবে না। লম্বা সময়ের জন্য এ জনশক্তির সুবিধা ভীষণভাবে সাহায্য করবে। আমাদের ভূপ্রকৃতির অবস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের সাহায্য করছে। ক্রয় ক্ষমতা সাম্যের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে চীন এখন ১ নম্বর অর্থনীতির দেশ, জাপান ৩ নম্বর। ১ ও ৩ নম্বর দেশ আমাদের পাশাপাশি রয়েছে। আমাদের একদিকে থাকবে ১ নং, আরেক দিকে ৩ নং। আমাদের বাদ দিয়ে ওরা কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে? পুরো বাংলাদেশটাই একটা করিডোর। এমন অবস্থান পাওয়া দুষ্কর। অন্যদিকে আমাদের আসল শক্তিকে আমরা কিন্তু এখনো ব্যবহার করতে পারিনি। আমাদের আসল শক্তি মানুষ। এটিকে এখনো ঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়নি। আমরা আমাদের জনগোষ্ঠীকে এখন শিক্ষিত করছি। এখন দেশে ১৩ হাজারের মতো টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিটিউট রয়েছে। একসময় আমাদের কর্মীরা প্রযুক্তির দিক থেকে দক্ষ ছিলেন না। এখন কিন্তু এ সমস্যা নেই। আমাদের এখানে প্রযুক্তিগত দিক থেকে শিক্ষিত ছেলেমেয়ের সংখ্যা ৫ শতাংশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে এটিকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা। ১০ শতাংশ কিন্তু খুব ভালো একটি সংখ্যা। আমরা যে সঠিক পথে এগোচ্ছি, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য দিয়ে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৫৫ ভাগ ছেলেমেয়ে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী শোভন চাকরি পাচ্ছে। বাকিরাও চাকরি পাচ্ছে। মালয়েশিয়ার ম্যানেজেরিয়াল ইনডেক্স অনুযায়ী, দেশটির বিভিন্ন কারখানায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৭ জন বিদেশী ম্যানেজেরিয়াল পোস্টে কাজ করে, যার মধ্যে বাংলাদেশী হলো ৩৭ শতাংশ।

তাহলে আমরা কেন বাইরের লোক নিয়ে এসে কাজ করাচ্ছি?

বিষয়টি হলো মিসম্যাচ। যেখানে আমাদের শ্রমশক্তি প্রয়োজন, সেখানে আমাদের লোক নেই; যেখানে বেশি রয়েছে, সেখান থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে।

আপনার সময় হওয়া রেকর্ড প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

যারা বলছেন, তারা নিজেদের সময়ে করতে পারেননি বলেই এ কথা বলছেন। সে সময় এডিপির আকার ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। কোনো বছরেও ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের সময়ে এ অংক ১ লাখ কোটি এবং কোনো বছরেই বাস্তবায়ন ৯০ শতাংশের নিচে আসে না। আমরা গত বছরও বাস্তবায়ন করেছি ৯৩ শতাংশ। ৯৩ শতাংশ এবং শতভাগের মধ্যে পার্থক্য কিন্তু বেশি নয়। শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করবই এবং সেটি করা হবে জোর করে নয়, প্রকৃত বাস্তবায়নের মাধ্যমেই। শতভাগ করে আমরা দেখিয়ে দেব যে, এটি করা সম্ভব।

প্রকল্প বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো কী?

যে হারে এডিপির আকার আয়তন বড় হচ্ছে, সে হারে তো জনবল বাড়ছে না। তবে যারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে আসছেন, তারা আগামীতে আরো ভালো করবে। আগের আমল ও বর্তমান আমলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমি মনে করি, এখন যারা আসবে, তারা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে আগ্রহী। কারণ এটি আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আমার মনে হয়, তারা ভালো করবে। আরেকটি বিষয় হলো, বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন— পারটেক্স গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, এদের কোনো ছেলেমেয়ে বিদেশে নেই। সবাই দেশে, কারণ তারা বিশ্বাস করে, এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ভালো জায়গা, নিজেদের উন্নতির জন্য, দেশের জন্য কাজ করার জন্য। আমি এ পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, আমরা ভালো করব।

অনেকে বলেন, আমাদের প্রকল্প ব্যয় অনেক বেশি হয়। যেমন— প্রতি কিলোমিটার সড়ক বা রেলপথ নির্মাণ করতে হলে অন্য দেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ব্যয় হয়...

অন্য দেশের সঙ্গে নয় বরং আমাদের সঙ্গে আমাদের মেলাতে হবে।

কিন্তু আগের তুলনায়ও তো এখন দেশে সড়ক নির্মাণ ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে...

আগে রাস্তা নির্মাণ ব্যয় কম ছিল। আগে শুধু মাটির রাস্তাকে পাকা করতে হতো। কিন্তু এখন যদি দুই লেনের রাস্তাকে চার লেন করতে যান, তবে ব্যয় তো বাড়বেই। জমি অধিগ্রহণসহ অন্য বিষয়গুলো এখন কঠিন হয়ে গেছে। এগুলোর জন্য একটি ব্যয় রয়েছে। এটি বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন— ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। আগে ছোট ছিল, মাটির রাস্তা ছিল, তা পাকা করা হয়েছে। এখন যদি এটি চওড়া করতে হয়, তবে চিন্তা করে দেখুন কত নিচ থেকে ভরাট করে আসতে হচ্ছে।

কিন্তু এর জন্য তো পাঁচ-ছয় গুণ ব্যয় বেশি হতে পারে না...

বাংলাদেশের মতো আর কোন দেশে এত খাল-বিল নদী রয়েছে? কোন দেশে জায়গাজমির দাম এত বেশি? চীনকে কি জমি অধিগ্রহণ করতে হয়? চীনা সরকার যেখানে চায়, সেখানে কাজ করতে পারে। ভারতের চেয়ে আমাদের জমির দাম অনেক বেশি। এতে তো ব্যয় বাড়বেই। প্রকল্প কর্মকর্তাদের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে। তাই প্রকল্প ব্যয় বাড়বেই। তাহলে কি কাজ করব না? করতে তো হবেই। আমাদের প্রতিটি বড় কাজ বিদেশীরা করে। একমাত্র পদ্মা সেতু ছাড়া বাকিগুলোয় বিদেশীরা আমাদের স্টেকহোল্ডার বা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। এডিবি, জাইকা বা বিশ্বব্যাংক যখন অর্থায়ন করে, তখন কি তারা হিসাব করে দেখে না? অতিরিক্ত ব্যয় হলে তারা তো প্রথম থেকেই বুঝতে পারবে যে, এটি নন-পারফর্মিং প্রজেক্ট হবে, এমন হলে তারা টাকা ফেরত পাবে না।

সময়ক্ষেপণ কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধির একটি কারণ...

এখন আর আগের মতো সময় বেশি লাগবে না। সরকার শক্ত হওয়ায় অনেক কিছু সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে। মেগা প্রকল্পগুলো তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এবং যেকোনো প্রকল্প তিন বছরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনো প্রকল্পই দুবারের বেশি মেয়াদ বাড়বে না। যদি প্রকল্পটি খুবই ভালো হয়, তবেই তৃতীয়বার বাড়বে, নচেত্ নয়। আবার কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে যেহেতু আমাদের অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা নেই, তাই কিছু অপচয় হতে পারে বা বাড়তি ব্যয় হতে পারে। এটি মেনে নিতে হবে। মালয়েশিয়াও কিন্তু প্রথমে কারো না কারো কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছে। সবাই কিন্তু এভাবে সাহায্য নিয়ে কাজ করে।

বড় প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু, রূপপুর দ্রুত এগোচ্ছে, কিন্তু বাকি প্রকল্প যেমন— রামপাল বিদ্যুত্ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুেকন্দ্র, আনোয়ারা এলএনজি স্টেশন, এগুলো ধীরে এগোচ্ছে। এগুলো কি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাবে?

এলএনজি প্রকল্পটি এখন দ্রুত এগোচ্ছে। মাতারবাড়ী প্রকল্পটি কেন দেরি হচ্ছে, তা আপনারা সবাই জানেন। জুলাই থেকে এখানে কাজ বন্ধ। কাজ বন্ধ না থাকলে এত দিনে অনেক এগোনো যেত। সব প্রকল্পেই কাজ হচ্ছে। স্থবির হয়ে আছে, এমন কোনো মেগা প্রকল্প নেই।

বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনার অগ্রগতি কতটুকু?

বিদ্যুত্ উৎপাদনের জন্য আমাদের কয়লায় চলে যাওয়ার দরকার ছিল অনেক আগেই। এদিকে আবার ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা ব্যবহার কমাতে হবে। আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যেমন— সোলার, নিউক্লিয়ার, হাইড্রো বা উইন্ডের দিকে অগ্রসর হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে উইন্ড খুব কম। এটি অর্থনৈতিকভাবে সফল হবে না, তাই এটিকে বাদ দিতে হবে। আমাদের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে জ্বালানি। আমাদের জ্বালানির স্বল্পতা রয়েছে। ভারতের বিদ্যুত্ তৈরি করার সক্ষমতা হলো ২ লাখ ৮৩ হাজার মেগাওয়াট। আর আমাদের ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এ বিদ্যুত্ দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। এজন্য আমাদের হেভি এনার্জি বা বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। এজন্য হয় এলএনজি বা এ ধরনের যে গ্যাস রয়েছে, তাতে যেতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে নিজেরাই বিদ্যুত্ উৎপাদন করতে পারে, সেজন্য সরকার সহযোগিতা করছে। আমি মনে করি, ১৮ মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিরাট পরিবর্তন আসবে। বিদ্যুতের জন্য এ পরিবর্তন আসবে। বিদ্যুত্ থাকলে এখনই অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব হতো।

এখন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে পরিবেশকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে...

সবাইকে নিউক্লিয়ারের দিকে যেতে হবে। কারণ যখন আপনি পেট্রোলিয়াম, গ্যাস, কয়লা থেকে বিদ্যুত্ উৎপাদন করতে পারবেন না, তখন উৎপাদন করবেন কী দিয়ে? আমাদের এখানে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করলেই দোষের। ভারত ও পাকিস্তানে থাকলেও সেটা কিন্তু দোষের না। আমাদের এখানে যা করতে যাওয়া হয়, তা-ই দোষের। যতই আন্দোলন করা হোক, আমরা আমাদের কাজ করে দেখিয়ে দেব যে আমরা সঠিক।

অতিরিক্ত গাড়ি কেনা বা পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার মতো অযাচিত ব্যয়ের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায় বলে অভিযোগ রয়েছে...

অযাচিত ব্যয়ের পক্ষে কি কেউ থাকে? অযাচিত ব্যয় করা হয় না। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে সময় বেশি লাগে।

প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আর্থিক সুশাসন নিশ্চিতের প্রতি কেমন জোর দেয়া হচ্ছে?

সময় বাঁচাতে হবে, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে, প্রকল্প পরিচালক ভালো হতে হবে, কাজের মান ভালো হতে হবে, প্রতিযোগিতামূলক দামে কিনতে হবে— এগুলো তো সুশাসন।

অর্থের স্বল্পতা বা ছাড়ের কারণে কি প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়...

আমি এসেই প্রথমে জেলাওয়ারি, মন্ত্রণালয়ওয়ারি সবাইকে বলেছি যে, সরকারের কাছে কেউ যাতে টাকা না পায়। কারণ প্রথমেই আমাদের ঠিকাদারদের কাছে আস্থাভাজন হতে হবে। তারা যদি আস্থা পায় যে, সরকারি কাজ করলে সময়মতো টাকা পাওয়া যায়, তবে তখন তারা টাকার জন্য চিন্তা না করেই কাজ করবে।

কাজের মান নিয়েও তো প্রশ্ন ওঠে...

রাস্তাঘাট ছাড়া আর কোনো প্রকল্পই আমরা নিজেরা করি না। সব প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে বিদেশী অংশীদার রয়েছে। কোনো প্রকল্পের শতভাগ অর্থ আমরা দিই না। হয় অর্ধেক অথবা বড় অংশ বিদেশীরা অর্থায়ন করে। পরামর্শক, ঠিকাদার তারা নিয়োগ দেয়। তাদের অ্যাপ্রোচ ছাড়া আমরা কোনো ঠিকাদার নিতে পারি না। কাজের মান খারাপ হলে বিদেশীরা আমাদের সঙ্গে কাজ করতো না।

বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য অর্থমন্ত্রী বলেছেন সার্বভৌম বন্ড ছাড়বেন। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন...

এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমার বিশ্বাস, মাননীয় অর্থমন্ত্রী বুঝে-শুনেই এটি করছেন। এটি সবার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। মনে হয়, এটি ভালোই হবে।

অভিযোগ রয়েছে, দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনায় অতিরিক্ত প্রকল্প নেয়ায় যথাসময়ে কাজ শেষ হয় না...

আমরা সব প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় করি। রাজনীতি তো মানুষের জন্য। আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য, আর মানুষের সঙ্গে কাজ করলেই আল্লাহ খুশি হবেন, এ ভরসায় আমরা কাজ করছি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে। অর্থনীতির যে চাহিদা, তা পূরণ করতে না পারলে অর্থনীতি থমকে যাবে। মানুষ যেমন প্রয়োজনীয় খাবার না পেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তেমনি অর্থনীতির যা প্রয়োজন, সে পরিমাণ রসদ যদি না দেয়া হয়, তবে এটি দুর্বল হতে শুরু করবে এবং একসময় তা থমকে যাবে।

সৌজন্যে: বণিক বার্তা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত