রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
logo
  • হোম
  • সাক্ষাৎকার
  • যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি : সাঈদ খোকন

যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি : সাঈদ খোকন

যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি : সাঈদ খোকন

ঢাকা, ০৪ মে, এবিনিউজ : সাঈদ খোকন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। তার বাবা মোহাম্মদ হানিফ অবশ্য ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। আর দাদা মাজেদ সর্দার ছিলেন পুরনো ঢাকার অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। রাজনৈতিক পরিবারের বেড়ে ওঠা এই তরুণ রাজনীতিবিদ দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব পান ২০১৫ সালের ৬ মে। দায়িত্বের ২ বছরে দক্ষিণ সিটির জনগণের জন্য কী করেছেন, কী পারেননি, ভবিষ্যতে কী করতে চান, এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক আলমগীর স্বপন

প্রশ্ন : দায়িত্ব নেয়ার প্রথম বছর বলা যায় অনেকটা হানিমুন পিরিয়ড ছিল। দ্বিতীয় বছরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। কতটুকু সফল হয়েছেন ?

সাঈদ খোকন : সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন আসলে জনগণ করবে। আমাদের দায়িত্ব হলো কাজ করে যাওয়া। দায়িত্বের প্রথম দিন থেকেই সেই কাজ শুরু করেছি। যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, দক্ষিণ সিটির মৌলিক সমস্যা যেগুলো ছিল, এর অন্ততপক্ষে শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ সমস্যা চিহ্নিত করে কমবেশি এর সমাধান করতে পেরেছি।

প্রশ্ন : মৌলিক সমস্যা বলতে এখানে কোন বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন?

সাঈদ খোকন : আমরা যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম, ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। দায়িত্ব নিয়ে আমার এলাকার প্রায় ১৫৪ কি.মি. রাস্তা সংস্কার করেছি। সংখ্যায় ৩শ’ রাস্তা হবে। আমাদের সড়ক বাতির বেহাল অবস্থা ছিল। ৩৭ হাজার ২শ’ মতো বাতি এলইডিতে রূপান্তরিত করেছি। আমার এলাকা এখন এলইডি বাতির উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। তবে এক্ষেত্রে ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে। আশা করি জুলাই মাস নাগাদ শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে। এতে এলাকায় রাস্তায় যে সব অপরাধ সংঘটিত হতো, নারীদের নিরাপত্তার যে সংকট ছিল, সেটা উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে এসেছে। এক সময় এই শহরে হাজার হাজার অবৈধ বিলবোর্ডের কারণে আকাশ দেখা যেতো না। অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার আমরা চালু করেছি। কয়েকটি নির্মাণের অপেক্ষায় আছে। ২০১৭ সাল নাগাদ কমপক্ষে ৮০ থেকে ১শ’ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করব। ১৫ থেকে ১৬টি পাবলিক টয়লেট এরই মধ্যে জনসাধাণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ৩টি হাসপাতাল রয়েছে। সেখান থেকে জনগণ সেবা পাচ্ছে। ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। মেগা প্রকল্পের আওতায় স্লটার হাউস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া পরিচ্ছনতা কর্মীরা মনিটরিংয়ের আওতায় থাকায় সময়মতো অফিসে আসাসহ তাদের মাঠে পাওয়া যাচ্ছে। ট্র্যাকিং সিস্টেম ও উপস্থিতির অটোমেশন চালু হওয়ায় তারা আগের মতো ফাকি দিতে পারছে না। আমাদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ এরই মধ্যে চলমান। এই কর্মযজ্ঞ জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। যতদিন যাবে এই পরিবর্তন আরো দৃশ্যমান হবে।

প্রশ্ন : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দক্ষিণ সিটিতে বড় সমস্যা এখনো রয়েছে?

সাঈদ খোকন : বর্জ্য ব্যবস্থাপণার আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখান থেকে উন্নতি অবশ্যই করেছি। তবে আমাদের যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরো কিছু সময় লাগবে। আমরা কিছু এলাকায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন-এসটিএস তৈরি করেছি, যাতে ময়লা-আবর্জনাগুলো রাস্তায় পড়ে না থাকে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৮ থেকে ১০টি এসটিএস তৈরি করা হয়েছে। আরো ২০ থেকে ২৫টা আমরা করতে পারব। তবে জায়গার অভাবের কারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। পরিচ্ছন্নতার জন্য ৫ হাজার ৬৭টি ওয়েস্টবিন এরই মধ্যে দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন : এই ওয়েস্টবিন কতটা কাজে দিয়েছে। অনেক বিন চুরি হয়ে গেছে। আবার এমন জায়গায় কিছু বিন বসানো হয়েছে, যা ব্যবহার হয় না, কিছু অনুপযোগী?

সাঈদ খোকন : এই অভিযোগের বিষয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে খোজঁখবর নিয়েছি। ২ শতাধিক ওয়েস্টবিন চুরি হয়ে গেছে। ১৫৭টি বিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক সময় রাস্তায় কেউ গাড়ি পার্কিং করতে গিয়ে ধাক্কা দেয়ায় চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। অনেক সময় অনেক দোকানের সামনে ওয়েস্টবিন থাকাতে দোকানদার হয়তো সেই ওয়েস্টবিন সরিয়ে দিয়েছে। এভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি আমরা হয়েছি।

প্রশ্ন : আপনার ২ বছরের শেষ দিকে ফুটপাত হকার মুক্ত করার ক্ষেত্রে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছিল কারো স্বার্থে এটা করেছেন কিনা?

সাঈদ খোকন : গুলিস্তান থেকে পল্টন-মতিঝিল এলাকার ফুুটপাতে জনগণ চলাচল করতে পারতো না। এ কারণে রাজপথে যানজট লেগে থাকত। এটা অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ ছিল। আমরা জনগণের স্বার্থেই গুলিস্তান-মতিঝিল এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করে জনগণকে ফিরিয়ে দিয়েছি। এতে এই এলাকার যানজট কমে এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এক সপ্তাহ আগে ধানমন্ডি ২৭ থেকে নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত আমরা উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণ এখন স¦াচ্ছন্দ্যে এসব এলাকায় চলাফেরা করতে পারছে। এর পাশাপাশি যানজট নিরসনে মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। টানা অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ১শ’ বাস ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়েছি। লাইসেন্স নেই এ রকম ১শ’র বেশি ড্রাইভারকে সাজা দেয়া হয়েছে। এর ফলে কিছুটা হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে যানজট কমে এসেছে।

প্রশ্ন : এরপরও সংকটের শেষ নেই। ঢাকা শহর থেকে খেলার মাঠ ও পার্ক ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ সিটিও এর বাইরে না।

সাঈদ খোকন : এক্ষেত্রে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে আমরা কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ‘জলসবুজে ঢাকা’ প্রকল্পে শতাধিক স্থপতি আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। তারা ১২টি খেলার মাঠ ও ১৯টি পার্ক ডিজাইন করে দিয়েছেন। এর টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান আছে। আশা করি ২০১৭ সাল নাগাদ ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে ১২টি খেলার মাঠ ও ১৯টি পার্ক নির্মিত হবে। এ ছাড়া শিশুপার্ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রশ্ন : সাফল্যের কথা বললেন, কিছু কাজ করতে চেয়েছেন কিন্তু পারেননি, এমন কী কী কাজ আছে?

সাঈদ খোকন : ২ বছরে করতে পারিনি এমন কাজের সংখ্যা খুব কম। আমাদের যে পরিকল্পনা সেটা ৫ বছর মেয়াদি। ২ বছরে আমাদের মূল সমস্যগুলোকে আমরা সমাধান করতে চেয়েছিলাম। আর তৃতীয় বছরে আমাদের লক্ষ্য ঢাকাকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরিত করা। ২০১৮ সাল নাগাদ এর কাজ শুরু করব। চ্যালেঞ্জ থাকবে, কাজে বাধা আসবে, সেই বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাব।

প্রশ্ন : দক্ষিণ সিটির অধীনে ৮টি ইউনিয়ন যুক্ত হয়েছে। সেখানে কোনো উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় ইউনিয়নগুলোকে বলা হচ্ছে, ‘আলোর নিচে অন্ধকার’?

সাঈদ খোকন : নতুন ইউনিয়নগুলোর মধ্যে চারটিতে ৭ হাজার ২শ’ লেন বাই লেন রাস্তা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের পর কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে আছে মাতুয়াইল, সারুলিয়া, দনিয়া ও শ্যামপুর ইউনিয়ন। বাকি ৪টি ইউনিয়নের জন্যও প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রশ্ন : নগরবাসীর আরো একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা জলজট, জলাবদ্ধতা। একটু বৃষ্টি হলেই নাকাল হতে হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় জলজটের কারণে রাজধানীর শান্তিনগরের মানুষের অশান্তি এখনো দূর হয়নি? সাঈদ খোকন : জলাবদ্ধতা রাজধানীর অন্যতম সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী জুন-জুলাই মাসে বর্ষার মৌসুমে এর ফল দেখতে পাবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে শতকরা ৮৫ ভাগ জলাবদ্ধতা থাকবে না। এরই মধ্যে আমরা অনেকগুলো ফুটপাত নর্দমার কাজ সম্পন্ন করেছি। বিশেষভাবে শান্তিনগর এলাকায় অল্পবৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমে থাকত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। আমরা সেই কাজ শতকরা ৮০ ভাগ শেষ করেছি। মালিবাগ ও রাজারবাগ এলাকার কাজ এখনো চলমান আছে। আশা করি আর ৩-৪ সপ্তাহ সময় লাগবে। মে মাসের শেষ দিকে এই কাজও শেষ হয়ে যাবে। তখন বিগত ৫০ বছরে যে জলাবদ্ধতা দেখেছেন, তা আর পাবেন না। এই ফলাফল দেখার জন্য বর্ষা মৌসুম অর্থাৎ জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একটা ভারি বর্ষণ হওয়ার পর সেখানে গিয়ে বাস্তবে আমরা দেখতে পাব, আমরা যে কাজটা করেছি সেটা কতটা সফলভাবে হয়েছে ?

প্রশ্ন : বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা ও জলজটের পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কারণেও দুর্ভোগের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। এই সময়েই দেখা যায় সেবা সংস্থার কাজের হিড়িক পড়ে। এটা কেন? বর্ষা মৌসুম আসার আগেই কি কাজ শেষ করা যায় না?

সাঈদ খোকন : কথা সত্যি। অর্থবছরের শেষে লক্ষ্য পূরণের জন্য চাপটা বেশি চলে আসে। সবগুলো সংস্থা তখন উন্নয়ন কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার তোড়জোড় শুরু করে, হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কিন্তু এই কাজটা যদি আগে শুরু করা যায়, এক্ষেত্রে সব সংস্থা যদি একটু মনোযোগী হয় তাহলে জুনের যে চাপ সেটা আর থাকে না। কিন্তু এটা না হওয়ায়, দেখা যায় বর্ষা মৌসুমে কাজের তোড়জোরটা অনেক বেড়ে গেছে। বিষয়টা আসলে বর্ষাকেন্দ্রিক না, বিষয়টা হচ্ছে বাজেটকেন্দ্রিক। প্রাপ্ত বরাদ্দটা খরচ করতে করতে হবে, ব্যয়টা সম্পন্ন করতে হবে, উন্নয়ন কাজটা শেষ করতে হবে-তা না হলে আবার নতুন বছরের কাজটা শুরু করা যাবে না। তাই বাজেটের আগে বর্ষা মৌসুমে কাজের তৎপরতাটা খুব বেড়ে যায়, ভোগান্তিও বাড়ে ।

প্রশ্ন : এক্ষেত্রে অনেকের প্রস্তাব বাজেট ঘোষণার সময় এগিয়ে এনে, বাংলা মাস অনুযায়ী ১ বৈশাখে অর্থাৎ এপ্রিলে করার?

সাঈদ খোকন : এটা হতে পারে। তবে বাজেট বাংলা নববর্ষে নিয়ে আসা খুব বড় একটা প্রক্রিয়া। এটা কোন ছোটখাট বিষয় না না। এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা হতে পারে। সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। সংসদে আলোচনা হতে পারে। এটা সরকারের নীতি-নির্ধারণের বিষয়। এ ছাড়া এর সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা, দাতাসংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা যে ক্যালেন্ডারটা ফলো করছে, সে অনুযায়ী তাদের বরাদ্দটা কোন সময় আসবে সেটাও বিবেচ্য।

প্রশ্ন : আবার সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে বরাদ্দ অনুযায়ী সমন্বয় করে কাজ করার ঘাটতি রয়েছে। এটাও দুর্ভোগের একটি বড় কারণ?

সাঈদ খোকন : আমাদের সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মুল ২৬টি। এ ছাড়া অন্যান্য সংস্থাসহ প্রায় ৫৬টি সংস্থা রয়েছে। সবাইকে নিয়ে আমরা সভা করেছিলাম। তাদের বলেছিলাম, যে সব উন্নয়নমূলক প্রকল্প তারা গ্রহণ করে, এর পরিকল্পনাটা যদি ৬ মাস আগে আমাদের জমা দেয় তাহলে তদারকি করতে সুবিধা হয়। যাতে পরিকল্পনা দেখে আমরা বলতে পারি কে কোন রাস্তায়, কোথায় কখন কাজ করবে? এতে সমন্বয় করা যায়। দুর্ভোগও কমে। কিন্তু সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সেইভাবে তাদের পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি আমাদের সামনে নিয়ে আসছে না। এটা আমাদের জন্য একটা বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। এ কারণে দেখা যাচ্ছে, যে একটা রাস্তা আমরা ঠিক করে দিয়েছি। কিন্তু কিছুদিন পর হয়তো অন্য কোনো একটি সংস্থা তার জরুরি কোােন প্রয়োজনে সেই রাস্তা কাটার জন্য অনুমতি চাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, কাটার অনুমতি আবার না দিলে সংশ্লিষ্ট এলাকা বা পাড়া-মহল্লায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুতটা সরবারহ করা সম্ভব হবে না, হয়তো পানিটা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় জনগণের ভোগান্তি বিবেচনা করে আমরা অনেক সময় অনুমতি দিতে বাধ্য হই। এটা কিন্তু চলছেই।

প্রশ্ন : এক্ষেত্রে নানা বাধা আছে। আপনি ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগও আছে?

সাঈদ খোকন : ওয়াসার ব্যাপারে আমি কিছুদিন আগেই বলেছিলাম, প্রতিষ্ঠানটির সমস্যা অনেক প্রকট। আমরা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতে যাই, জনতার মুখোমুখি হই, খোলামেলা কথা বলি। তাদের সমস্যাগুলো জানার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা করি। সেখানে তারা বলে ওয়াসার পানি সরবরাহের সমস্যা, যদি কোথায়ও সরবরাহ ঠিক থাকে সেখানে দূষিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি পাওয়া যায়। দেখেন একটা পাইপে হয়তো কোথায়ও একটা ফুটো হয়ে গেছে, সেখানে দিয়ে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ঢুকে পানিকে দূষিত করছে। এই ৫শ’ গজ পাইপ সংস্কারের জন্য বা পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক কিছু প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষেত্রে যদি একটু মনোযোগ, মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় থাকে তাহলে হয়ে যায়। তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, এই ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগ দিবেন। মাঠ পর্যায়ে যেসব কর্মচারীরা আছে তাদের তিনি আরো বেশি পর্যবেক্ষণে রাখবেন। আমি তাকে বলেছি, আমাদের পুরনো ঢাকায় সমস্যা অতন্ত্য প্রকট। মানুষ খুব কষ্ট করে। এ ব্যাপরটা যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের আশ্বাস তিনি আমাকে দিয়েছেন। আর ওয়াসার দুর্নীতির কথা যদি বলেন,সেটা দেখার দায়িত্ব কর্পোরেশনের না। এটা সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন দেখবে।

প্রশ্ন : সেবামূলক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার দায়িত্ব আপনাদের। এক্ষেত্রে কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়া তারা কাজ করতে পারে না?

সাঈদ খোকন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেবামূলক সংস্থাগুলোকে সমন্বয় করার বাড়তি দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু এর পরও জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এটা অস্বীকার করব না। ঢাকা সিটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ছোট একটা শহর কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মাত্র ৪২ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু এই জায়গায় প্রায় দেড় কোটি জনসংখ্যার বসবাস। চিন্তা করা যায় এটা পৃথিবীর অন্যতম একটা ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা, সুতরাং এই জায়গাতে সমস্যা থাকাটা খুব স্বাভাবিক। তবে এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন : সমন্বিত পরিকল্পনা এবং পরিকল্পিত নগরীর ক্ষেত্রে নগর সরকারের প্রস্তাবও আছে। আপনার বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে নগর সরকারের প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন।

সাঈদ খোকন : নগর সরকার পৃথিবীর অনেক দেশে আছে। সবগুলো সংস্থা না হলেও যে সব সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নগর কর্তৃপক্ষের অধীনেই থাকে। এ রকম যদি কিছু একটা হয় তাহলে সেটা আমাদের জন্য সুসংবাদ হবে। কাজগুলো অনেক সুন্দরভাবে সমাধান করা যাবে। সবগুলো না হলেও গুরুত্বপূর্ণ যেসব সংস্থা রয়েছে তা একছাতার নিচে আনা যায়। সমন্বিত পরিকল্পিত একটি কাজের সাথে সমন্বয়হীন অপরিকল্পিতকাজে অনেক তফাৎ। আমাদের এই শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। অপরিকল্পিতভাবে ম্যানেজও হচ্ছে। কিন্তু এখন সবকিছু পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : কিন্তু দীর্ঘ দুই দশক পেরোলেও নগর সরকারের আমলেই আসেনি?

সাঈদ খোকন : এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে, সমন্বিত উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে দেশকে গড়ার প্রক্রিয়া চলছে, সেই ধারাবাহিকতায় একসময় হয়তো নগর সরকার হবে। আরো পরিকল্পিত ব্যবস্থাপণা হবে। এটা জনগণের আশা সবারই আশা, এক সময় হবে। যদি নগর সরকার এই মুহূর্তে সম্ভব নাও হয় সমন্বয়টা যথাযথভাবে হয় এর মাধ্যমেও সমস্যা কিছুটা লাঘব করা সম্ভব ।

প্রশ্ন : এক্ষেত্রে বাইরের দেশে নানা উদাহরণ রয়েছে। একই ধরনের কাজ বারবার না করে এক ছাতার নিচে সব কিছু সমন্বিত করার চল রয়েছে। যেমন কমন ইউটিলিটি ডাক টানেল?

সাঈদ খোকন : সেবা খাতের ভোগান্তি লাঘব করার জন্য আমরা এ ধরনের প্রকল্পের প্রস্তাব এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কমন ইউটিলিটি ডাক টানেল, এটা পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোতে রয়েছে। একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে যদি আমরা সব ইউটিলিটিগুলো নিতে পারি, সমস্যা থাকবে না। তবে এটা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করছে। দেখা যাক কী হয়? তবে এই প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত করা যায়, ৫-৭ বছরেও হয়, তাহলে জনগণ স্থায়ীভাবে মুক্তি পাবে।

প্রশ্ন : প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটও সিটি কর্পোরেশনের বড় বাধা। বিভিন্ন সময় বিষয়টি তুলে ধরেছেন?

সাঈদ খোকন : আর্থিক সংকট দক্ষিণ সিটির আমাদের উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে বড় বাধা। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভাগ হয়েছে। কিন্তু এই বিভাজন অর্থনৈতিক সমতার ভিত্তিতে হয়নি। ভৌগোলিক সীমারেখার ওপর ভিত্তি করে বিভাজনটি হয়েছে। এর ফলে অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের আয়ের মাত্র ৩৫ ভাগ আহরণ করতে পারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। বেশির ভাগ চলে গেছে উত্তর সিটিতে, প্রায় ৬৫ ভাগ। উল্টো দিকে ব্যায় বেশি দক্ষিণ সিটির, ৬৫ ভাগ। একই ধারায় উত্তর সিটির ব্যায় মাত্র ৩৫ ভাগ। এখানে আমাদের আয় কম কিন্তু ব্যায় বেশি। আর উত্তরের আয় বেশি কিন্তু ব্যয় কম। এই বাড়তি ব্যায়ের বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। কেন এই বাড়তি ব্যয়? অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল দক্ষিণে পড়েছে। বেশকিছু মাতৃসদন, অবকাঠামো রয়েছে, আমাদের জনবলও বেশি। এ কারণে আমাদের খরচও বেশি। এই রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের যে দুষ্টচক্র, সেই দুষ্টচক্র থাকার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সংসার সবসময় একটা টানাটানির মধ্যে চলে। তাই আমাদের সাধ যতটুকু সাধ্য ততটুকু নেই। সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা বিনীত আবেদন করেছি। তিনি বিভিন্ন প্রকল্প দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করছেন। আপাতত এর মাধ্যমেই আমরা উন্নয়নমূলক কর্মকা- চালিয়ে নিচ্ছি। আমাদের যে আয় হয় সেটা বেতন এবং অন্যান্য খরচেই চলে যায়। এরপর হাতে তেমন কোনো অর্থ থাকে না, যা দিয়ে আমরা উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারি। আমাদের উন্নয়ন পুরোটাই প্রকল্প নির্ভর। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। সিটি কর্পোরেশন আইন-২০০৯ এর চতুর্থ তফসিলে আছে, সরকার কর্তৃক আহরিত করের ওপর সিটি কর্পোরেশন উপকর বসাতে পারবে। এটা যদি আমাদেরকে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে সিটি কর্পোরেশন স্বাবলম্বী হবে। বিভিন্ন ভূমি হস্তান্তরের শতকরা আড়াই ভাগ সরকার আমাদের শেয়ার করে। এখন আমাদের অধিক্ষেত্র এলাকায় এনবিআর যে কর আহরণ করে সেখান থেকে একটা অংশ যদি দেয়, তাহলে অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে সিটি কর্পোরেশন উত্তরণ ঘটাতে পারবে।

প্রশ্ন : কিন্তু যে টাকা বরাদ্দ হয়, সেখানেও নয়ছয়ের অভিযোগ আছে। এর আগের নির্বাচিত এক মেয়রের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা এখনো চলছে। আপনার নেতৃত্বাধীন কর্পোরেশন অভিযোগের বাইরে না?

সাঈদ খোকন : টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপারে যদি বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারব একশতে একশভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হয়। আমাদের অর্জনের অন্যতম একটি অর্জন টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজদের নগরভবন থেকে বিতাড়ন করতে সক্ষম হয়েছি। টেন্ডার অনলাইনে হয়,সবাই এতে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সব চেয়ে কম দরদাতা কাজ পায়। এরপরও অভিযোগ থাকতে পারে, এখানে শত শত, হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ থাকতেই পারে। যদি কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমি বলতে পারব না যে এখানে অনিয়মের মাত্রা জিরো। তবে অভিযোগ থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেই। এক্ষত্রে একশভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত