শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • রাজনীতি
  • আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের বক্তব্য জানতে পারলেননা প্রধানমন্ত্রী!

আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের বক্তব্য জানতে পারলেননা প্রধানমন্ত্রী!

আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের বক্তব্য জানতে পারলেননা প্রধানমন্ত্রী!

সোনাগাজী (ফেনী), ২১ মে, এবিনিউজ : ২০তম জাতীয় সম্মেলনের ছয় মাস পর গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেড় বছর আগেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে শনিবার বর্ধিত সভায় সারাদেশের জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক ও তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক,দলীয় সাংসদগন,আওয়ামী কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দদের সাথে গণভবনে বৈঠক করেছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তৃণমূলের আট নেতার বক্তব্য শেষ হলে সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নিজ জেলার নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’ এর আগে এ বর্ধিত সভার উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এসময় তিনি সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন। এরপর সারাদেশ থেকে আসা আট বিভাগের আট জন নেতা বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা মঞ্চে বসে থেকে সবার বক্তব্য শোনেন। পরে সবার অভিযোগ, অনুযোগ ও পরামর্শের জবাব দেন তিনি। রুদ্ধদ্বার এই সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করে। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে শেখ হাসিনা কি সত্যিই তৃনমুলের প্রকৃত বক্তব্য জানতে পেরেছেন? বিশ্লেষনে দেখা যায় শেখ হাসিনা বর্ধিত সভায় তৃনমুলের ত্যাগী,নির্যাতিত,দলের জন্য প্রশ্নাতিত আনুগত্য পোষনকারী সমর্থকদের অতীত ও বর্তমান অবস্থা, দলের প্রকৃত অবস্থান কিছুই জানতে পারেনি। এর কারন হিসেবে উঠে এসেছে যাদেরকে তৃনমুলের প্রতিনিধি হিসেবে বর্ধিত সভায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে তারা কি আদৌ তৃনমুলের প্রতিনিধিত্ব করে কিনা?অথবা তাদের সাথে দলের শিকড়ের যোগাযোগ রয়েছে কিনা?তৃনমুলের নেতাকর্মীদের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই সারাদেশে সিংহভাগ সেই সাংসদ,জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি/ সম্পাদকেরা কি নিজেদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করবে?তারা কি নিজেদের অপকর্মের ফিরিস্তি শেখ হাসিনাকে অবহিত করবেন।বাস্তবতায় কিছুতেই এটা ঘটবেনা।সারাদেশে জেলা কমিটির সভাপতি/সম্পাদকেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলীয় পদ ছাড়াও জনপ্রতিনিধির পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।তারা কেউ বা এমপি পদে কেউবা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত রয়েছে।সারাদেশে এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে সরকারী উন্নয়ন বরাদ্ধ ও কাজের কমিশন গ্রহন,পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি,ভর্তি বানিজ্য,টাকার বিনিময়ে অন্যদলের সমর্থকদের চাকুরী দেওয়া,সরকারী জমি ও নীরিহদের জমি দখল, মাদক ও অস্ত্র ব্যাবসায় পৃষ্ঠপোষকতা করা,সংখ্যালগু নির্যাতন,দু:সময়ের ত্যাগী ও নির্যাতিতদের বাইরে ঠেলে দিয়ে নিজেদের বলয় সৃষ্টি করতে বিএনপি জামায়াত কর্মিদের দলে ডুকানোর মতো গুরতর অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযুক্তরা একই সাথে জনপ্রতিনিধি ও দলের পদে অধিষ্ঠিত থাকায় তৃনমুলের কেউ তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান গ্রহন করার সাহস করেনা। এরাই আবার দলের জেলা কমিটির দায়িত্ব কুক্ষিগত করে টাকার বিনিময়ে বা আনুগত্য দেখে জেলা কমিটির অন্যপদগুলোতে নিজেদের পচন্দমতো লোকদের স্থান করে দেয়।আর কেন্দ্রীয় কমিটি কোন অনুসন্ধান না করে জেলা সভাপতি/ সম্পাদকের পাঠানো কমিটি অনুমোদন করে।অধিকাংশ জেলা কমিটিতে ত্যাগী ও পরিক্ষীত আওয়ামীলীগাদের স্থান না হলেও নব্যদের স্থান ঠিকই হয়েছে।এভাবে প্রায় প্রত্যেক জেলাতে নিজস্ব বলয়ের শক্তিসালী চক্র তৈরী হয়েছে।আবার তাদের কে তৃনমুলের প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রন করে দলের প্রকৃত চিত্র জানার চেষ্টা করা হাস্যকর, অবাস্তব ও অলীক ঘটনার মতো। তাদের অপকর্মের কারনে সরকার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশী উন্নয়ন করলেও জনগনের কাছে সরকারের ভাবমুর্তি প্রশ্নের সম্মুক্ষিন হয়েছে। টাকার পিচনে ছুটতে ছুটতে তাদের এমন অবস্থা হয়েছে যে সরকারের উন্নয়ন চিত্রের পরিসংখ্যানটুকু মনে রাখার মতো অবস্থান নেই। যারা ৫ জানুয়ারী ১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়েছে নির্বাচনের পর ৬ জানুয়ারী ফিরে এসে একেকজন দলীয় কর্মীদের জন্য দানবরুপে অধিষ্ঠিত হয়েছে।নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে টাকার বিনিময়ে চরম আওয়ামী বিরোধী সংবাদকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে দলের সমর্থক সংবাদ কর্মীদের একপ্রকার নির্যাতন করে কোনঠাসা করে রেখেছে।এমনও দেখা গেছে মিচিল মিটিংয়ে চিরচেনা সমর্থকদের না দেখা গেলেও টাকার বিনিময়ে অন্যদলের সমর্থক ও সাধারন মানুষে জনসভা ভরপুর রয়েছে।নির্যাতিতরা সাহস করে প্রতিবাদের চেষ্টা করলে প্রশাসনকে ব্যাবহার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এত গুরতর অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে তারা যদি দলের বর্ধিত সভায় তৃনমুলের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রজন করে তবে প্রধানমন্ত্রী তৃনমুলের বাস্তব চিত্র পাবে কি করে? দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ।২০০১ সালের প্রাপ্ত ভোট ৪২% হিসেবে বর্তমানে দলটির সমর্থকের সংখ্যা প্রায় মোট জনসংখ্যার মধ্যে সাত কোটির মতো হবে।এরমধ্যে দীর্ঘ আট বছর ক্ষমতায় থাকার কারনে সরকারের উন্নয়নের সুফলভোগকারী সমর্থক,দীর্ঘ ইতিহাস বিকৃতির গন্ডি থেকে বের হয়ে সত্য ইতিহাস জানা তরুন সমর্থক,সরকারী চাকুরীতে যোগ দেওয়া সমর্থক,ব্যাক্তি শেখ হাসিনার ক্যারিসমাটিক গুনে আকৃষ্ট সমর্থকও রয়েছে।আ'লীগের এত বিশাল সংখ্যক সমর্থকেরা শেখ হাসিনার বেলায় প্রশ্নাতিত আনুগত্য থাকলেও জেলায় জেলায় তৃনমুল বিচ্ছিন্ন হাজারো অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের প্রতি মোটেই আস্থা নেই।দলের মনোয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে যে ব্যাবস্থা রয়েছে তাতে অভিযুক্তরাই ১৯ সালের নির্বাচনে মনোয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবে।সেক্ষেত্রে তৃনমুলের ক্ষুব্ধ বিশাল সমর্থক কিছুতেই অভিযুক্তদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেনা। এতে করে দলের ভরাডুবি অনেকটা নিশ্চিত যদিনা ৫ জানুয়ারীর মতো সংকটকালীন নির্বাচন না হয়।

জেলা নেতাদের ইন্ধনে দলের মধ্যে ব্যাক্তি কেন্দ্রিক সংঘাত এতটা মারাত্বক আকার ধারন করেছে যে নিজেরাই নিজেদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে জেলার নেতারা টাকার বিনিময়ে জনপ্রিয় ও ত্যাগীদের মনোনয়ন না দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নব্যদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। আর কেন্দ্র অন্ধের মতো জেলা থেকে পাঠানো নামের তালিকা অনুমোদন দিয়েছে।যার কারনে অজনপ্রিয়দের জেতাতে প্রশাসনের সহায়তা নিতে গিয়ে দলের মধ্যে পুঞ্জিভুত ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বোপরি ১৯ সালের নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করতে হলে দলে নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট তৈরী করে (সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত নেতাদের ভুলতথ্যে বিভ্রান্ত থাকে)তৃণমূলের প্রকৃত চিত্র সংগ্রহ করে শেখ হাসিনাকে সেগুলো সমাধান করতে হবে। অন্যাথয় হাজারো অভিযোগে অভিযুক্ত সিন্ডিকেটের নেতাদের দিয়ে নির্বাচনে বৈতরণী পার হওয়া যাবেনা।

এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত