
ঢাকা, ১৬ জুন, এবিনিউজ : ড. এম এ তসলিম অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। ২০০২-০৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে। বেশ কয়েকবার ডব্লিউটিও মিনিস্টারিয়াল ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সংলাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। ছিলেন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের সিইও। গবেষণার ক্ষেত্র কৃষি, বিশেষ করে ভূমি মালিকানা ও উৎপাদনশীলতা, সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য-সম্পর্কিত ইস্যু। পিএইচডি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮৭ সালে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন তিনি। এবিনিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এবারের বাজেটে করের বিষয় ছাড়া খুব বড় ধরনের পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। নতুন ভ্যাট আইনে সর্বস্তরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। উন্নত দেশে ভ্যাটের এমন চর্চা দেখা গেলেও আমাদের বাস্তবতার নিরিখে এ ধরনের ভ্যাট কার্যকর করা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যেহেতু সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে অনেক মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে, রয়েছে অনেক স্তর, তাই এর প্রত্যেক স্তরে সবাই ভ্যাট দিতে পারবে কিনা কিংবা প্রদত্ত ভ্যাটের তথ্য সংরক্ষণ বা প্রদেয় তথ্যের ভিত্তিতে সরবরাহ শৃঙ্খলের উপরের দিকে যারা আছে, তারা ভ্যাট রিফান্ড পাবে কিনা— এসব নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে। কেননা ভ্যাট পরিশোধ-সংক্রান্ত যে নথিপত্র জমা দেয়া হবে, তার সত্যতা কতটুকু, সরকার থেকে কীভাবে তা আদায় করা হবে কিংবা যদি এর অপব্যবহার হয়, তাহলে এর দায়ভার কার ওপর বর্তাবে, এসবের কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে দেখা যাবে, সর্বস্তরে সমহারে ভ্যাট কার্যকর করার উপযোগী সমাজ ব্যবস্থা বা পরিচালন সক্ষমতা কোনোটাই আমাদের দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। একজন শল্যচিকিত্সকের হাতে ছুরি হলো একটি জীবন রক্ষাকারী হাতিয়ার, কিন্তু একজন খুনির হাতে সেটা জীবন কেড়ে নেয়ার অস্ত্র। কাজেই সর্বক্ষেত্রে একই হারে ভ্যাট প্রয়োগ নিয়ে শঙ্কা বিরাজমান। যদি ভ্যাটের সঠিক প্রয়োগ না হয়, তবে লাভের বদলে ক্ষতিই হবে বেশি। ভ্যাটের বিষয় বাদ দিলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন তেমন কিছুই নেই। সমালোচক, বিশ্লেষকরা এটাও বলেছেন, বিশাল, উচ্চাভিলাষী এবং অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। কিন্তু প্রকৃত হিসাব বলছে ভিন্ন কথা। এ বছর বাজেটের আকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের বৃদ্ধির তুলনায় কম। সুতরাং এ বছর বাজেটের আকার খুব যে বেড়েছে, তা নয়।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, অর্থমন্ত্রী যে বাজেট দেন, শেষ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন দেখা যায় না। বাড়তি টাকা খরচের লক্ষ্যে প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়ানো হয়। যদিও পিছিয়ে পড়ছে বাস্তবায়ন হার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১০-১১ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার পর অর্থবছর শেষে বাস্তবায়ন হয় এর ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা প্রশংসনীয়। এর পরের অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ব্যয় হয় ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাত্ ২০১১-১২ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয় ঘোষিত বাজেটের ৯৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করা হয় প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা কিন্তু ব্যয় সম্ভব হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। ওই অর্থবছর বাস্তবায়ন হয় মূল বাজেটের ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছর প্রথমবারের মতো ২ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষণা করা হয়। অর্থবছরটিতে ঘোষিত ২ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে ওই অর্থবছর বাস্তবায়ন হয় বাজেটের ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাস্তবায়ন হয়েছে মূল বাজেটের ৭৬ দশমিক ২৬ শতাংশ, অর্থাত্ পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশের অধিক কমে গেছে। কাজেই বড় বাজেট হলেও এর পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। বাজেটে আয়-ব্যয়ের যে স্বপ্ন থাকে, বছর শেষে সেই স্বপ্ন থাকে যোজন যোজন দূরে। অন্যদিকে বাস্তবায়িত বাজেট বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে বাস্তবিকভাবে এটি দিনে দিনে ছোট হচ্ছে, বড় নয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে এরই মধ্যে তা কমিয়ে করা হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আগামী অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে না।
আগামী অর্থবছরে সরকার রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন কি?
২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। আর শেষতক আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর লক্ষ্য ছিল প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার। সেখানে অর্জন ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা (যদিও রাজস্ব আদায় বেড়েছে, কিন্তু তার পরও বাজেট প্রাক্কলনের সঙ্গে ব্যবধান রয়ে গেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওপর)। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও অনেক বেশি ধরা হয়েছে। যেহেতু সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তি কমে গেছে, তাই অর্থমন্ত্রী ঝুঁকেছেন ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণের দিকে। এতে বাজেট শৃঙ্খলাও বিপন্ন হতে পারে। সত্যিকার অর্থে বৈদেশিক সহায়তা এক ধরনের সাবসিডাইজড লোন। আগে এ ধরনের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা ছিল, কারণ সুদের পরিমাণ ছিল কম। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঋণ নিলে সুদহার বেড়ে যাবে, একই সঙ্গে কমবে ঋণ পরিশোধের সময়ও, যেহেতু আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ বনেছি। এবারের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। টাকার অংকে এটা বেশ বিরাট মনে হলেও এ ঋণের পরিমাণ কিন্তু আপেক্ষিক হিসেবে খুব বেশি নয়। আশার কথা হলো, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে, এমন কোনো নজির নেই। দীর্ঘমেয়াদে এ অবস্থা ধরে রাখা গেলে নিঃসন্দেহে তা হবে আমাদের জন্য গৌরবের। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে ঋণ নেয়া শুরু হয়েছে, তা ভবিষ্যতে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি এমন অবস্থা চলমান থাকে, তবে বাংলাদেশ তার আগের জায়গা হারাবে। এর দায়ভার বহন করতে হবে পরবর্তী সরকারগুলোকে। বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ কমই। সে হিসাবে আমরা এখনো অনেক ভালো অবস্থানে আছি। কিন্তু ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারকেই অতিরিক্ত ব্যয় করতে দেখা যায়নি। কম ঋণের অন্যতম কারণ হলো, আমাদের বাজেটে যে ব্যয়ের কথা বলা হয়, তার উল্লেখযোগ্য অংশই করা সম্ভব হয় না। ফলে ঋণ করার প্রয়োজনও হয় না। আর ভবিষ্যতে যদি ঋণ অবস্থার অবনতি হয়, তা অকস্মাত্ হবে না, সময় লাগবে। এ মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজস্ব বাড়ানো। একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয়। সাধারণ মানুষের কাছে করের ধারণা হলো, যা সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয়। সময়মতো দিলে তাকে কেউ বিরক্ত করবে না। এখানে একটু ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে, জনগণ যে টাকা সরকারের রাজস্ব কর্মচারীদের দিচ্ছে, তার পুরোটাই কি রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে যায়? অবশ্যই না। মোটাদাগে জনগণ যে অর্থ পরিশোধ করছে, তার একটা বড় অংশ সরকারের রেকর্ডে দেখানো হয় না। হতে পারে এটা দুর্নীতি, না-হয় সরকারের অক্ষমতা। কিন্তু জনগণের কাছ থেকে সরকারের পাওনা বাবদ অর্থ ঠিকই চলে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের ব্যবসার অঙ্গনে বহু লাখ ইউনিট আছে, যারা ভ্যাট দিচ্ছে না। আমাদের আশপাশে যেসব ক্ষুদ্র দোকানপাট আছে, এরাও ভ্যাটের আওতায় পড়ে। কারণ এরা প্রত্যেকেই একেকটা ইকোনমিক ইউনিট। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর হিসাবে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভ্যাট দিচ্ছেন না। অথচ মিডিয়ার সংবাদে জানা যায় যে, শুধু গুলিস্তান এলাকায়ই উচ্ছেদের আগে ছোট ফুটপাত ব্যবসায়ীরা সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকা চাঁদা দিতেন। সেখানকার দোকানিদের ধারণা, তারা সরকারকে অর্থ দিচ্ছেন। তাহলে বলা যায় যে, সরকার এখানে ব্যর্থ; তার প্রাপ্তব্য অর্থ কর হিসেবে আদায় করতে পারেনি, অন্যরা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকের ধারণা, এসব দোকানি যে পরিমাণ অর্থ সরকারি লোকদের দেন, তার অংকটা নেহাত কম নয়। অথচ যেভাবেই হোক, সরকারি কোষাগারে এ অর্থ জমা হচ্ছে না। এ কথা সত্য যে, একদিক থেকে দেখলে কোনো দেশের জনগণই সদিচ্ছায় কর দিতে চায় না। আবার আরেক দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে, অনেক দেশের জনগণ কোনো প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ ছাড়াই কর দেয়। এর পেছনের কারণ হলো, এসব দেশের জনগণ জানে কর দেয়া বন্ধ করে দিলে তারা সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। অর্থাত্ জনগণ জানে যে, সরকারের কাছ থেকে যে সেবা পাচ্ছে, তার একটা মূল্য আছে। উন্নত দেশগুলোর জনগণ যে সেবা পাচ্ছে এবং তার বিনিময়ে যে কর দিচ্ছে, তার মধ্যে একটা যৌক্তিক সমন্বয় আছে। ফলে কর দিতে কেউ বিশেষ আপত্তি করে না। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। এখানে কর দেয়ার বিপরীতে যথেষ্ট সেবা পাচ্ছে না জনগণ। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারকে কর দেয়াটাই অপচয় বলে প্রতিভাত হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা নিরাপত্তা কোনো জায়গাতেই জনগণ তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। প্রতিটি দেশের সরকারের প্রথম দায়িত্ব হলো, জনগণের জানমালের সুরক্ষা দেয়া। আর এর দায়িত্ব বর্তায় দেশের সিকিউরিটি এজেন্সিগুলোর ওপর। আমাদের দেশে এ এজেন্সিগুলোর ওপর আমরা কতটা নির্ভর করতে পারি, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, জনগণ কেন কর দেবে। বাস্তবতা হলো, আমাদের এখানে অনেকেরই ধারণা কর দেয়া মানে হলো দুর্নীতিকে উসকে দেয়া। সে কারণে কর দিতে অনাগ্রহী অনেকেই। জনগণকে করমনস্ক করার পুরোপুরি দায়িত্ব সরকারেরই। যা-ই হোক, অবস্থার পরিবর্তনে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে নিশ্চয়তা দিতে হবে তাদের অর্থের যথোপযুক্ত ব্যবহার হচ্ছে।
ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
কর সাধারণত আরোপ করা হয় এমন কিছুর ওপর, যা সহজে ধরা যায়। সে কারণে আগেকার দিনে বাণিজ্যের ওপর কর বসানো হতো। বন্দর কিংবা হাটে, লোক বসিয়ে রেখে কর আদায় করা হতো। খুব একটা ঝক্কি পোহাতে হতো না। খুব সহজেই এর দেখভাল করা যেত। আয়ের ওপর কর বসানো হতো না, কারণ এর প্রায়োগিক দিকগুলো ছিল অত্যন্ত জটিল। এখনো সে সমস্যা থেকে বেরোনো সম্ভব হয়নি। অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী, সামাজিক কল্যাণের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো হলো, শুধু আয়ের ওপর কর আরোপ করা। কিন্তু আয়ের ওপর কর আদায় করা অনেক সময় কঠিন, কারণ এর সঠিক হিসাব সবসময় অনুমান করা যায় না। সে কারণে আয়কে টার্গেট করে প্রয়োজনমতো কর আহরণ করা সম্ভব হয় না। ফলে সরকার অনেক সময় অন্য ক্যাটাগরিতে কর আরোপ করতে চায়। আমাদের এখানে আগে সবচেয়ে বেশি কর আদায় হতো ট্যারিফ থেকে। এটা আহরণ করা ছিল সবচেয়ে সহজ। এখন বাণিজ্যের ওপর কর বসানো হচ্ছে। আয়ের ওপর তো কর বিদ্যমান আছেই, এখন উৎপাদনের ওপরও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। সরকারের বোধহয় ধারণা, এতে কর আহরণের কাজটা সহজ হবে। আসলে তা না-ও হতে পারে। এর আগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপের একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে সরকারকে পিছু হটতে হয়েছে। কিন্তু এবারে বাজেটে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, এতে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেকের আয় কমে যাবে। আরেকটা বিষয় হলো, সারা বছরে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো একসময় যদি ১ লাখ টাকা অতিক্রম করে, তার ওপর বর্ধিত আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর লোকজনের বিশ্বাস কমে যেতে পারে। যে হারে ব্যাংকিং বাড়ছিল, তার গতি স্তিমিত হতে পারে। অর্থনীতিতে প্রত্যাশার একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। অনেক সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্ভর করে কী হয়েছে তার ওপর নয়, বরং কী হতে পারে তার ওপর। মানুষ ভবিষ্যত্ অনুমান করেই অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। মানুষের মনে ধারণা হতে পারে, ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ নয়। এতে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা চলে যেতে পারে এবং অন্যান্য বিনিয়োগে যেমন— আবাসন বিনিয়োগে তারা উৎসাহিত হতে পারে। সব মিলিয়ে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। বাস্তবতা হলো, সরকারের এ উদ্যোগের কারণে মোটা অংকের রাজস্ব কোষাগারে যে জমা হবে— এমন কিন্তু নয়। জনগণের টাকা নিয়ে সরকারের দুর্নীতি ভারাক্রান্ত লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়ার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। এতে পুরো ব্যবস্থার প্রতি তাদের বিশ্বাস কমে আসবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে প্রবৃদ্ধির ওপরও। পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা ধসে পড়বে না, কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা যে পিছিয়ে পড়ছি, এটাও তার একটা কারণ। অথচ আমাদের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে ৯-১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা। কেননা আমাদের সামগ্রিক পরিস্থিতি প্রবৃদ্ধি-অনুকূল। কিন্তু তা হচ্ছে না, কারণ বিশেষ কোথাও অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো— জনগণের অনাস্থা।
৪ লাখ কোটি টাকার এ বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এ খাতে ব্যয় বাড়ানোর কারণ কী?
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ আছে। তাদের দলীয় কাঠামো ঠিক রাখতে হলে দলের জন্য ব্যয় বাড়ানো জরুরি। অন্যদিকে জনগণকেও সন্তুষ্ট রাখার বিষয় আছে। যেমন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর জন্য ব্যয় বাড়াচ্ছে সরকার। এসব উদ্যোগ বাজেটকে আকারে বড় করছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, বরাদ্দ যেখানে বেশি, সেখানে অপচয় হওয়ার আশঙ্কাও তত বেশি। এবারের বাজেটে অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বেশি। অথচ আমরা জানি, এটা দুর্নীতির সবচেয়ে বড় আখড়া। এ খাতে বাস্তবে কী পরিমাণ টাকা খরচ হয়, আর কী পরিমাণ টাকা সরিয়ে নেয়া হয়, তা অনুমান করা মুশকিল। এ দেশে এক কিলোমিটার ব্রিজ তৈরিতে যে পরিমাণ ব্যয় হয়, তার এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় অন্য অনেক দেশে। আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি, প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে চাইলে শুধু অবকাঠামো নয়, মানবসম্পদও উন্নয়ন করতে হবে। অথচ এবারো বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের পুরো চিত্রই মেঘাচ্ছন্ন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ তার আগের অর্থবছরের ৭ দশমিক ৮৮ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৬ দশমিক ৫১ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ৫০ করা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে অতি প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেখানেও এবার বরাদ্দ কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ৫ দশমিক ১৩ থেকে কমিয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে আনা হয়েছে। এখানে দৃশ্যমান যে, আমরা আমাদের তরুণদের শিক্ষিত করে তুলতে যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছি না। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। তরুণদের এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে নেয়া উচিত ছিল, যার চাহিদা বাজারে আছে। পড়াশোনা শেষ করে তাদের কর্মসংস্থান যেন নিশ্চিত হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। অথচ বাস্তবে এ থেকে আমরা অনেকটাই দূরে আছি। শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট হয়েছে। একটু পেছনে ফিরে যাই। মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন— ৫০ বছর আগে এ দেশগুলো আমাদের থেকে বেশি দরিদ্র ও অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এখন বাস্তবতা সম্পূর্ণ বদলেছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের সেরা ৩০টি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টিই চীনে অবস্থিত। নিঃসন্দেহে দেশটি মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করায় তারা আজ এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্কর্ষ সাধনে অনেকটাই এগিয়ে গেছে তারা। এজন্য দরকার বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। আমাদের এখানে এর যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
কর্মসংস্থান নিয়ে সরকার ও অন্যান্য সংস্থার তথ্যে যথেষ্ট ফারাক আছে। এ নিয়ে কিছু বলুন।
সরকারি বিভিন্ন জরিপ বলছে, পুরো বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের বেকারত্ব অত্যন্ত কম। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক, আইএলওর বিভিন্ন জরিপ বলছে, আমাদের দেশে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ব্যাপক। এ দেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে, কার্যত যত বেশি শিক্ষিত হবে তত বেশি চাকরির সম্ভাবনা কমবে। এখানে দুটো বিষয় কাজ করছে। আমাদের পরিসংখ্যানগুলো থেকে যে তথ্য পাচ্ছি, তা আমলে নিলে দেখা যাবে, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের সার্বিক বেকারত্বের হার খুব বেশি নয়, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে এ হার ৪০ শতাংশ ছুঁয়ে যায়। যেখানে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে, সেখানে শিক্ষিত বেকারত্ব এ পর্যায়ে থাকার কথা নয়। কিন্তু শিক্ষিত তরুণরা চাকরি পাচ্ছেন না। এর মানে হতে পারত যেসব চাকরির জন্য উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন, এমন চাকরি আমাদের দেশে নেই। কিন্তু বাস্তবতাও তো তা বলে না। দেশের বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ এনে আমাদের এখানে চাকরি দেয়া হচ্ছে। সুতরাং এমনটা হতে পারে, আমাদের এখানে এ তরুণরা যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে, তা এসব কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে তরুণরা বের হচ্ছে, তারা কর্মসংস্থানের বাজারে প্রবেশ করার জন্য উপযুক্ত নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনই যে, আমরা শিক্ষার্থীদের বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে পারছি না। বিভিন্ন দেশে দেখা যায়, বাজারে যে চাহিদা রয়েছে, সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডিপার্টমেন্টগুলো সাজানো হয়। কিন্তু আমাদের এখানে শিক্ষা ব্যবস্থা এভাবে সাজানো নয়। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি। মার্কেট রেডি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যও গবেষণা পরিচালনায় কোনো বরাদ্দ নেই। রূপকল্পহীন শিক্ষায় অর্থের বিপুল অপচয় হচ্ছে।
কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
অবশ্যই প্রয়োজন আছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষার গুণগত মান বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদনশীলতা বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে আয়ও বাড়বে। তবে একটা বিষয় এখানে বলা জরুরি, উৎপাদন বাড়ানো কেবল মানবসম্পদের ওপর নির্ভর করে না। মানবসম্পদ কাজে লাগাতে হবে সঠিক জায়গায়। একজন প্রকৌশলীকে যদি বাণিজ্য নীতির দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে তার কাছ থেকে আশানুরূপ ফল নাও পাওয়া যেতে পারে। তাকে কাজ শিখিয়ে পড়িয়ে নিতেও সময় ও ব্যয় প্রয়োজন। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই। এসব নিয়ামক আমাদের চলার পথ করেছে বন্ধুর। আমরা সেই ধারায় গা ভাসিয়ে দিয়েছি প্রতিনিয়ত। বলে রাখা ভালো, প্রতিটি দেশই একটা সুযোগ পায় প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার। এর কারণটা হচ্ছে, প্রতিটি দেশই একটা ডেমোগ্রাফিক ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যায়। এ রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে প্রবৃদ্ধির দারুণ একটা সম্পর্ক আছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর দেখা যায়, শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা পরনির্ভরশীল মানুষের চেয়ে অনেকটাই বেড়ে যায়। যেহেতু প্রতিজনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমে যায়, তখন স্বভাবতই খরচের পরিমাণ কমে যায়। ভোগের পর পুরোটাই চলে যায় সঞ্চয়ের খাতায়। আমরাও এখন এমন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সত্তর-আশির দশকের দিকে আমাদের সঞ্চয়ের হার ছিল সাকল্যে ১০-১৫ শতাংশ। এখন সে হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। এ রূপান্তরের প্রতিফলন আমরা প্রবৃদ্ধিতে দেখতে পাচ্ছি। যদি সঞ্চয়ের পরিমাণ আরো বাড়ানো যায়, তাহলে বিনিয়োগও বেড়ে যাবে যদি তা বাধাগ্রস্ত না হয়। বাড়বে প্রবৃদ্ধিও। তবে ভুলে গেলে চলবে না, এমন অবস্থা খুব বেশি দিন ধরে রাখা যায় না, বড়জোর ৪০-৫০ বছর। এরপর যখন নির্ভরশীল জনসংখ্যা বেড়ে যাবে, তখন খরচ বাড়াতে হবে। আমেরিকা বা ব্রিটেনের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, শতচেষ্টা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি আর বাড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। চীন, কোরিয়া, জাপান— প্রতিটি দেশই রূপান্তরের এ ধারা অতিক্রম করে এসেছে। তাই এখন ধারাবাহিক দুই অংকের প্রবৃদ্ধিতে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ আছে। তবে সময় খুব সীমিত। আমরা প্রবৃদ্ধির অংক ৫ থেকে ৭ শতাংশে নিয়েছি, দুই অংকের প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা যদি এ রূপান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে নিতে না পারি, তবে আমাদের অবস্থাও দক্ষিণ আমেরিকার মতো হবে। মিডল ইনকাম ট্র্যাপ থেকে এখন তারা বেরোতে পারছে না। অবস্থার পরিবর্তনে তাই মানবসম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। একটা বিষয় না বললেই নয়, আমরা বিদেশী বিশেষজ্ঞদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। শোনা যায়, আমাদের দেশে প্রায় পাঁচ লাখ বিদেশী রয়েছেন, যাদের অনেক বেশি বেতন দিয়ে রাখতে হয়। বাংলাদেশী একজন কর্মীর বিপরীতে তারা গড়ে ১০-১৫ গুণ বেশি বেতন নিচ্ছেন। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, আমরা আমাদের কর্মীদের তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ এ দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে আমাদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পালন করার কথা। সরকারি পর্যায় থেকে তাদের ওপর এটা সম্পাদনে কখনো চাপ দেয়া হয়নি, তারাও এ বিষয়গুলো অনুভব করেননি। ব্যবসায়ীরাও চেষ্টা করেননি। কর্মীদের দক্ষ করে তোলার জন্য গবেষণার প্রয়োজন আছে। কিন্তু দেশে সামান্যই গবেষণা হয়। কর্মসংস্থান যে খুব একটা বাড়ছে না, তার আরেকটি নির্দেশক হলো, কর্মীদের বেতন কমছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত হলে কর্মীদের বেতন কমার কথা নয়। বিভিন্ন সরকারি তথ্য-উপাত্ত বলছে, ২০১০-১১ সাল থেকে প্রতিটি খাতে প্রকৃত মজুরি কমেছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, শ্রমবাজারে অতিরিক্ত শ্রমিক আছে। সে কারণে কম উৎপাদনশীল কাজে এদের নিয়োজিত করা হয়েছে। ফলে স্বভাবতই বেতনের হার কমে যাচ্ছে।
ভ্যাটের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা আছে কি?
মূল্যস্ফীতি বাড়বে না হয়তো, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম সাময়িক বাড়বে। এখানে দুটো বিষয় আছে। ভ্যাটের কারণে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়বে। কিন্তু এজন্য নতুন করে এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ সৃষ্টি হবে না। এর প্রতিফলন দেখা যাবে আগামী বছর। আসছে বছরে ভ্যাটের কারণে দাম বাড়বে, তাই মূল্যস্ফীতি বাড়তে দেখা যাবে। দাম বাড়ার দুটো দিক আছে, একটি মূল্যস্ফীতির চলমান প্রক্রিয়া আর অন্যটি দামের ওয়ান শট ইনক্রিজ। ভ্যাট একটি ওয়ান শট ইনক্রিজ। একবার দাম বাড়ে এবং এরপর থেমে যায়। যেহেতু ভ্যাট সবাই আগামী বছরেই দেয়া শুরু করবে না, তাই প্রথমেই খুব একটা বড় ধরনের ধাক্কা আসবে না। অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পূর্ণ হতে হয়তো কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। তত দিনে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে আমাদের এখানে বাস্তবতা ভিন্ন। এখনো নতুন ভ্যাট প্রয়োগ করা হয়নি, কিন্তু বাজারে এর প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। অথচ সরকার নির্বিকার। মূল্যস্ফীতি অবদমনে সরকার তেমন কোনো চাপ সৃষ্টিতে সচেষ্ট নয়।
সৌজন্যে: বণিক বার্তা
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি