সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
logo

রাসেলের মায়ের কাছে ফেরা

রাসেলের মায়ের কাছে ফেরা

জয়নাল আবেদীন

ঘুমুতে যাবার কালে

রাসেল বাবার কোল ঘেঁষে

কানে কানে বলে-

কালকের অনুষ্ঠানে

আমি যাব তোমার সাথে ।

বাবা আদর করে বলে -

ঘুমো গিয়ে, নেব নে।

পিতার সাথে পুত্রের

এই ছিল শেষ কথা

এই ছিল শেষ দেখা।

জ্ঞান হবার পরে

রাসেল কম পেয়েছে বাবাকে

বন্দী বাবা থাকেন জেলে।

বাবার বাড়ি ওটাই

রাসেলের ধারণা এটাই।

মাসে একদিন খেলা ফেলে

রাসেল যায় মার সাথে

বাবাকে দেখতে জেলে।

এভাবে রাসেল উঠেছে বেড়ে

বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের ছোট ছেলে।

মা বাবার সাথে রাসেল ঘুমায়

মুখ ঢেকে চাদরে

ভোর বেলায় ঘুম ভাঙে তার

মা বাবার আদরে।

আগস্টের কালরাতে

রাসেলের ঘুম ভাঙে বিকট শব্দে

আড়মোরা দিয়ে চেয়ে দেখে

বাবা মা নেই ঘরে।

বাবার সাথে অনুষ্ঠানে যাবে

অনেকের সাথে দেখা হবে

এ জন্য রাসেলের মনে

আনন্দের দোলা বহে।

ছোট্ট রাসেল আদরের রাসেল

কিছু না ভেবে কিছু না বুঝে

বাইরে গিয়ে বাবা মাকে খোঁজে।

এদিক ওদিক চায়

বাবা মাকে কোথাও

দেখতে না পায়।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার কালে

দেখে বাবা পড়ে আছে সিঁড়ির ঢালে-

বুকে রক্তজবা, চেহারা উজ্জ¦ল,প্রশান্তির ভাব

কোথাও নেই পাপ পঙ্কিলতার ছাপ।

রাসেল অনুভব করে

কী ঘটেছে আজ তাদের ঘরে।

দৌড়ে গিয়ে বলে মোহিতরে

ভাই মারবে না তো আমারে ?

কামাল ভাইয়ের লাশ দেখে

রাসেল ভয় পেয়ে চমকে ওঠে

কেঁদে কেঁদে বলে-

আমাকে পাঠিয়ে দাও হাসু বুর কাছে,

সেখানে দুলাভাই আর রেহেনা বু আছে,

থাকবো আমি গিয়ে তাদের কাছে।

মোহিত বলে ছোট ভাই রাসেল

আমি আছি তোমার ভয় কিসের?

ছোট রাসেল অতি আদরের রাসেল

মোহিতের কথায় আশায় বুক ভরে

ভাবে মা আছে দোতলায় ভাবির ঘরে।

বাবা ভাইয়ের লাশ দেখে

রাসেল ভয়ে কাঁপে দুখে কাঁদে

বলে আমি যাব মার কাছে।

এ সময় খুনিদের একজন

রাসেলকে চিনে ফেলে

কাছে এসে হাত ধরে বলে

চল, তোকে দিয়ে আসি মার কাছে।

ছোট্ট রাসেল অতি আদরের রাসেল

গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে

চলতে চলতে মনে মনে বলে

এখনই দেখা হবে মায়ের সাথে।

দোতলায় উঠে মা মা বলে ডাকে

সৈন্য রিভালবার তাক করে

কিছু বুঝার আগে

রাসেলের মাথায় করে গুলি

নিমিষেই উড়ে যায় মাথার খুলি

রক্ত মগজ একাকার হয়ে

সাগর পানে যায় ধেয়ে

রাসেলের আত্না যায় চলে

বাবা মার সাথে জান্নাতুল ফেরদৌসে।

মধ্য আগস্টের হত্যাকা-ে

আল্লাহর আরস উঠে কেঁপে,

কবুতর প্রতিবাদে পাখা ঝাপটায়

ফণা তোলেনি চিড়িয়াখানার কাল সাপটায় ।

দোয়েল কোকিল দেয়নি শিস

ভয়ে মানুষ করে ফিস ফিস।

হরিণেরা প্রতিবাদে চায় গলা উঁচিয়ে,

ময়ুর ময়ুরী নাচে না আজ লেজ দুলিয়ে।

মনিবের বাড়ির বেঁচে নেই কেউ

প্রতিবাদে কুকুরটি করে ঘেউ ঘেউ।

বাতাসের প্রবাহ হঠাৎ যায় থেমে

প্রতিবাদে হাঁসগুলো নামে না আজ জলে।

থেমে যায় নদীর কুলকুল ধ্বনি সমুদ্রের গর্জন

মাঝি মার্ল্লাা করেছে খেয়া পারাপার বর্জন।

কৃষক লাঙল নিয়ে যায়নি আজ মাঠে

বধু যায়নি কলস নিয়ে জল আনতে ঘাটে।

কাল মেঘ আকাশে ভেসে সূর্যকে দেয় ঢেকে

ঘনিয়ে আসে অন্ধকার প্রকৃতি হয় নির্বাক

হত্যাকান্ডের খবরে মানুষ সব হতবাক ।

তাঁতি আজ বোনেনি তাঁত

গৃহিণী রাঁধেনি ভাত ।

কামার চালায়নি হাঁপার

জুতা সেলাই করেনি চামার ।

কুমার চালায়নি চাক

ঢুলি আজ বাজায়নি ঢাক।

জেলে ফেলেনি বিলে জাল

কুলিরা বহন করেনি মালামাল।

বাউলের একতারা যায় ছিঁড়ে

অসময়ে পাখিরা ফিরে আসে নীঁড়ে ।

আগস্টের হত্যাকা-ের প্রতিবাদে

কাদের সিদ্দিকী অস্র হাতে

মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে

প্রতিরোধের ঝড় তোলে।

কারবালায় ঘটেছিল যা

ধানমন্ডিতেও হয়ে গেল তা।

নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে

ঝিঁ ঝিঁ পোকারা দলে দলে

পাখি সব ডানা মেলে

নিত্য দিনের সুর ভুলে

হায় রাসেল ! হায় রাসেল ! ধ্বনিতে

আকাশে বাতাসে কান্নার রোল তোলে।

লেখক: কবি, মুক্তিযোদ্ধা, পরিচালক, ইসলামী ব্যংক বাংলাদেশ লিমিটেড|

­­­­­

এবিএন/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত