
ঢাকা, ২৬ আগস্ট, এবিনিউজ : মোতাহার হোসেন সাজু; ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ষোড়শ সংশোধনী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। যিনি আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে দীর্ঘদিন এ মামলার শুনানি করেছেন। তার সাথে মুখোমুখি হয়ে মামলার বিভিন্ন অপ্রকাশিত ভাষ্য তুলে আনা হয়েছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম সম্পাদক ড. বদরুল হাসান কচি।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতটুকু সম্পর্কিত?
মোতাহার হোসেন সাজু : ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল না থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলা হয়েছে। আমি মনে করি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জড়িত না। কারণ বিচারকের স্বাধীনতা মানে যাচ্ছে-তাই করা না। বিচারপতির স্বাধীনতারও একটা সীমারেখা আছে। বিচারকদের স্বাধীনতা মানে বিচারকার্যে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভাবান্বিত বা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হওয়া। কিন্তু কোন বিচারক যদি এই স্বাধীনতাকে পুঁজি করে বিচার বিভাগের গণ্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক বা নির্বাহী আদেশের ওপর প্রয়োগ করেন তাহলে তা বিচারকের সাংবিধানিক স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং সেটা বিচারকের স্বেচ্ছাচারিতা। সংবিধানের আর্টিক্যাল ৯৪ (৪) এ বিচারকদের স্বাধীনতার বিষয়ে বলা আছে। মূলত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সংবিধানের আর্টিক্যাল ৯৬ এর প্রাসঙ্গিকতা ছিল না কিন্তু আদালত প্রাসঙ্গিকতা টেতে এনে শেষমেশ সামরিক জান্তার করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনলেন।
আমি যেহেতু এই মামলা হাইকোর্ট বিভাগে দীর্ঘদিন শুনানি করেছি তাই একটু ব্যাখ্যা করে বলি, আমার মনে হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচারকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ সংকুচিত করেছে। কারণ ৭২ এর সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যাস্ত থাকলেও তাদেরকে কি উপায়ে অপসারণ করা হবে সে বিষয়ে কোন আইন ছিল না। এ লক্ষ্যে ‘বিচারকদের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য তদন্ত ও প্রমাণ আইন ২০১৬’ নামে একটি আইন তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিল সরকার। যার চূড়ান্ত খসড়াও তৈরি হয়েছিল। সেখানে বিচারকদের কি ধরণের আচরণ অসদাচরণের পর্যায়ে পড়বে তা সুস্পষ্ট করা ছিল। একইসঙ্গে অসদাচরণ তদন্ত ও প্রমাণের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বলা হয়েছিল। কোন বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে প্রথমে তা স্পীকারের কাছে যাবে। স্পীকার দশ সদস্যের একটি কমিটি করে অভিযোগ যাচাই করতে দিবেন। সাত কার্য দিবসের মধ্যে উক্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে হবে। প্রতিবেদনে যদি তদন্তের পরামর্শ দেওয়া হয় তাহলে স্পীকার সাবেক একজন অ্যাটর্ণি জেনারেল ও একজন দেশের সম্ভান্ত নাগরিক/জুরিস্টকে সদস্য এবং একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতিকে কমিটির চেয়ারম্যান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। তদন্তে অভিযোগ পাওয়া গেলে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে অভিযুক্ত বিচারকের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল। বিচারক আইনজীবী রেখে আত্মপক্ষ সমর্থনের বিধানও সে আইনে ছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিচারকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রমাণ পেলে তখন স্পীকার তা সংসদে উত্থাপন করবেন। এরপর সংসদ ব্যবস্থা নেবেন। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য যদি বিচারকের বিপক্ষে ভোট দেয় তাহলে সেই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ (২) অনুযায়ী অভিযুক্ত বিচারককে তিনি অপসারণ করবেন। এছাড়া, বিচারপতির অসামর্থ্য বিষয়ে আইনে বলা ছিল যদি মেডিক্যাল বোর্ডে মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি শারীরিক বা মানসিকভাবে আনফিট কি-না তা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। পাশাপাশি যদি কোন বিচারকের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন বা মিথ্যা অভিযোগ আনেন তাহলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে সাজার বিধান ছিল। বিচারকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এ ধরণের কোন সুযোগ কিন্তু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে নেই।
ষোড়শ সংশোধনী মামলা চলাকালীন জাজেজ ইনকুয়্যারি বিষয়ক আইনটি নিয়ে উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেছি। উক্ত আইনের খসড়া এফিডেভিট আকারে আদালতে উত্থাপন করা হয়েছিল। পাশাপাশি আইনটির খসড়া বিচারপতিদের কাছেও পাঠানো হয়েছিল আলোচনা করে মতামত জানানোর জন্য। অথচ বিচারকেরা আইনটি পাশ কাটিয়ে মামলার শুনানি শেষ করে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলেন।
আপনি ষোড়শ সংশোধনী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, আদালতে আপিলের পক্ষে কি যুক্তি তুলে ধরেছিলেন?
মোতাহার হোসেন সাজু : আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগে বারংবার জানিয়েছি ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রিম্যাচিউর। যেহেতু জাজেজ ইনকুয়্যারি বিষয়ক আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে, সেহেতু আইনটি অপারেটিভ হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালত আপিল ডিসমিস না করে নিষ্পত্তি করতে পারত। কারণ আইন কার্যকরের আগে অনুচ্ছেদটি পূর্ণতা পায়না। তাই আমরা বারবার বলার চেষ্টা করেছি ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রিম্যাচিউর আইন কার্যকর হলেই বিচারপতি অপসারণের প্রক্রিয়া সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু আদালত সেটা না করে প্রাথমিকভাবে ১২জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিলেন। যাদের দুই-চারজনকে বাদ দিলে অন্য কারো সংবিধান সম্পর্কিত ব্যাখ্যা দেবার পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কতজন ছিলেন? অথচ আদালত এসব বিষয় এড়িয়ে গেলেন।
তাহলে কি মনে করছেন রায়ের পর্যবেক্ষন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
মোতাহার হোসেন সাজু : অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কারণ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ থেকে পর্যবেক্ষনের অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যই তার প্রমাণ। অনুচ্ছেদ ১১৬ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী বিচারকদের ছুটি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্গলা বিষয়গুলো করার কথা। কিন্তু রায়ে ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সেই ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি কৌশলে কুক্ষিগত করেছে। আমার কেন যেন মনে হয় এই রায় লেখার সময় মাথায় ক্ষমতার ভাগাভাগির বিষয়টা বিচারকদের মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। কিভাবে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ১১৬ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাটা নিয়ে আসা যায়। রায় প্রকাশের পর রিভিউ করার সময় উত্তীর্ণ হবার পূর্বেই প্রধান বিচারপতি তড়িঘড়ি করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সভা করেছেন। ফলে এটা তো স্পষ্ট যে তিনি ক্ষমতাটা নিজের করে নিতে এসব করছেন। রায়ের মধ্যে বিচারকদের ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাহা ঘোড়ার আগে গাড়ি যাবার মতো ব্যাপার; কারণ ৯৬ অনুচ্ছেদটি পুনস্থাপন হয়ে যাবার পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বিচারকদের ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ ঠিক করবে সেটাই ৯৬ (৪) বলা ছিল কিন্তু এ রায়ের ক্ষেত্রে আদেশের সাথেই ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ যুক্ত করা হয়েছে।
আরেকটা বিষয় বলতে চাই, এই মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য তারিখ ঘোষণার সাথে সাথেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন ক্ষুদে বার্তার বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের জমায়েত করার আহ্বান জানান। এই মানুষগুলোই যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলাকালে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন তুলেছেন। এক বছর আগেই তো যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সময় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একতরফাভাবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করাসহ একতরফা ভাবে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ গঠনের অভিযোগ তুলেছেন। আজ সেই লোকগুলোই কোন যোগসাজশে, ইঙ্গিতে বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এক হয়ে যাচ্ছেন? সবচেয়ে বড় কথা রায়ের সময় জমায়েত কেন হবেন? তার মানে তাঁরা আগে থেকেই জানতেন রায় সরকারের বিপক্ষে যাচ্ছে? এই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হলে আদালতে গণজমায়েত করার কারণ কি? পরিষ্কার করে বললে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিএনপি’র কোন ইস্যু নাই তাই বিচারাঙ্গণে এই ইস্যু খুঁজে পেয়েছে।
সংরক্ষিত নারী সাংসদরা তো জনগণেরই প্রতিনিধি। অথচ রায়ের পর্যবেক্ষন হেয় করে মন্তব্য হয়েছে বলা হচ্ছে…
মোতাহার হোসেন সাজু : তিনশো সংসদ সদস্যের ভোটে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হয়ে থাকে। এই তিনশো সংসদ সদস্য কিন্তু জনগণের প্রতিনিধি। ফলে সংরক্ষিত নারী আসনে অগণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয় বিষয়টা ঠিক না। এই বিষয়ে কিন্তু হাইকোর্ট কোন প্রশ্ন তুলেনি। এক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত এবং এককভাবে প্রধান বিচারপতি এই বিতর্কের অবতারণা করেছেন। রায়ের পর্যবেক্ষনে এ ধরণের বিতর্কের জন্ম দিয়ে সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যদের খাটো করা হয়েছে।
বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কতটা কার্যকর বলে আপনি মনে করেন?
মোতাহার হোসেন সাজু : আমি খুব বেশি দূরে যাবো না। সম্প্রতি একটি বিষয় আমার কাছে খুব আশ্চর্য্য লেগেছে। আপিল বিভাগের সাবেক এক বিচারপতির দুর্নীতি অনুসন্ধান করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যের কাগজপত্র চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সুপ্রিম কোর্ট সেখানে দুদককে সহযোগিতা না করে বরং চিঠি দিয়ে দুদককে জানিয়েছেন উক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দিতে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, উক্ত বিচারপতি ইতোমধ্যে যে সব রায় দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যকারিতার নজির কই? সাবেক এই বিচারপতিকে প্রশ্রয় দিয়ে বরং অন্য বিচারপতিকে দুর্নীতির পক্ষে উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির ক্ষমতার এই অহমিকা দেখে আগামীতে অন্য বিচারপতিরা দুর্নীতিতে অনুপ্রাণিত হতে পারেন। মানুষ চলে গেলেও প্রতিষ্ঠান থেকেই যায় ফলে আদালতের মত পবিত্র একটা জায়গায় দুর্নীতির পক্ষে প্রশ্রয়ের অবস্থান এই নজিরের দায় সুপ্রিম কোর্টকে অনেকদিন বয়ে বেড়াতে হবে।
রায়ের অপ্রাসঙ্গিক ইস্যু আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে একপাঞ্জ করার সুযোগ আছে কি?
মোতাহার হোসেন সাজু : অনেকেই বলে থাকেন আদালত চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো একপাঞ্জ (বাতিল) করতে পারেন। কিন্তু আমার জানা মতে আদালত রায়ের কোন অংশ স্বপ্রণোদিত হয়ে একপাঞ্জ করার বিধান নাই। রায়ে যদি বাদী-বিবাদীর কোন দ্বিমত বা আপত্তির জায়গা থেকে থাকে তবে আইনিভাবে মোকাবেলা করতে হবে। রায়ের অপ্রাসঙ্গিক বা দ্বিমতের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে আইনানুযায়ী রিভিউ করতে হবে। রিভিউ পিটিশন দেখে আদালত যদি মনে করেন নতুন কিছু যুক্ত বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন তাহলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রায়ের অংশবিশেষ এক্সপাঞ্জ বা নতুন কিছু যুক্ত করতে পারবেন।
হাইকোর্টে অনুচ্ছেদ ৭০ নিয়ে একটি রিট মামলা চলমান অবস্থায় ঐ অনুচ্ছেদ নিয়ে আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষন দেওয়া ঠিক হয়েছে বলে মনে করেন কি?
মোতাহার হোসেন সাজু : আপিল বিভাগে ষোড়শ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরুর আগে থেকেই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে উচ্চ আদালতে একটা রিট মামলা চলমান। একই বিষয়ে মামলা চলমান থাকাবস্থায় আপিল বিভাগের এমন পর্যবেক্ষন ঐ মামলার বিচারপতিদের প্রভাবিত করবে। কারণ সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধস্তন আদালতকে মেনে চলতে হবে। রায়ে আপিল বিভাগের সেই নির্দেশনা হাইকোর্টের জন্য মানা বাধ্যতামূলক।
নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপোড়নের অভিযোগ আছে- এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
মোতাহার হোসেন সাজু : নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে অদৃশ্য একটা প্রতিযোগিতা আছে বলে আমার মনে হয়। ক্ষমতার সেই প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান হয়েছে এই রায়ে। কার ওপর কে এটা প্রমাণে যুক্ত হয়েছে বিচার বিভাগ। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের মূল এই অঙ্গগুলোর মধ্যে কেউ কারো চেয়ে বেশি বা কম ক্ষমতাবান না। এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া মোটেও সমীচীন না। কোন দেশের বিচারপতি জনসম্মুখে এতো কথা বলেন না। আমাদের প্রধান বিচারপতি কোর্টে বসে পাবলিক ইস্যুতে মন্তব্য করে বসেন। ফলে বিচার বিভাগ নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। অপ্রাসঙ্গিক ইস্যু অবতারণা করে সৃষ্ট চলমান দ্বন্দ্ব দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরী। মনে রাখতে হবে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সব অঙ্গের ‘লক্ষণ রেখা’ অর্থাৎ সবার নিজস্ব টেরিটোরি আছে এর বাহিরে যাওয়ার এখতিয়ার সংবিধান দেয়নি। একজন বিচারক আম্পায়ারের মতো। নিরপেক্ষ জায়গা থেকে বিচার বিবেচনা করে আইন অনুযায়ী আদেশ দিবেন। কিন্তু আম্পায়ারের জায়গা ছেড়ে বিচারক খেলোয়াড় হয়ে গেলে কিন্তু বিপত্তির জায়াগা তৈরি হয়। বর্তমানে খেলোয়াড়সুলভ প্রতিযোগিতা চলছে যা বিচার বিভাগের জন্য মোটেও শোভনীয় না।
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে চলমান সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের যে উদাহরণ দিলেন এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
মোতাহার হোসেন সাজু : বাস্তবের পাকিস্তান আর বাংলাদেশ অনেক তফাৎ। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, একবার আমি হজ্বে গেলে পাশে এক পাকিস্তানী নামাজ পড়ছিলেন। ঘটনাক্রমে ঐ ব্যক্তির সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আর আমরা রাতে ঘুমিয়ে যাবার আগে নিশ্চিত নই যে সকালের সূর্য্য দেখতে পারবো কি-না। জঙ্গিতে ভরে যাওয়া সেই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কোন ইস্যুতে উদাহরণ চলে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের, দেশের প্রতি যার ন্যূনতম প্রেম আছে, এদেশের মাটির কাছে ঋণ আছে এমন কোন ব্যক্তি অন্তত পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে আনতে পারেন না।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি