![খাগড়াছড়ি দিঘীনালাতে বৃদ্ধা মহিলাকে ধারালো কাচির আঘাতে হত্যা: আটক ১](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/09/17/khagrachari-hotta@abnews_100271.jpg)
খাগড়াছড়ি, ১৭ সেপ্টেম্বর, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা দিঘীনালা উপজেলাতে মেরুং ইউপির মধ্য বোয়ালখালী এলাকায় ধন্য জমিতে গরুর ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে মৃত: সুবতী রঞ্জনের স্ত্রী ইন্দ্রা চাকমা(৫৫) নামে এ গৃহবধূকে কাচির আঘাতে হত্যা করেছে প্রতিবেশী আলা উদ্দিন(৬৫)। শনিবার সকাল ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবেশী মো: আলা উদ্দিনের(৬৫) বর্গা নেওয়া পতিত ধান্য জমিতে গরু বাঁধতে গেলে মো: আলাউদ্দিন বাধা দেয় এবং গরুটিকে খোয়ারে নিতে চাইলে ইন্দ্রা চাকমা সাথে বাক বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে আলাউদ্দিন সাথে থাকা ধারালো কাচির দিয়ে আঘাত করলে ইন্দ্রা চাকমা ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিকেল ৩টায় জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে কড়া নিরপত্তায় সদর সার্কেলের সি: সহকারী পুলিশ সুপার এমএম সালাউদ্দিন নেতুত্বে দুই ফিআপ পুলিশ ও এক ফিআপ সেনাবাহিনী দায়িত্বে থেকে ডা: ফযেজুর রহমান ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন।
দীঘিনালা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো: সামসুদ্দিন ভুইয়া জানান, পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করেন এবং সাথে হত্যাকারী আসামী আলাউদ্দীন(৫৫) কে আটক করেছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। দিঘীনালায় আইন শৃংখলা শান্তি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে এবং আইন-শৃংখলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে।
এই হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাবেক সাংসদ ও সাবেক উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভুইয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই হত্যাকান্ডসহ সকল হত্যাকান্ডে নিন্দা ও বিচার দাবি জানিয়েছে। জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত রাখার জন্য পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে উদাত্ত আহবান জানান। দীঘিনালা কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করেছে পিসিজেএসএস(লার্মা) গ্রুপ।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কলাবাগান এলাকায় অপর এক গৃহবধুর পারভীন বেগম(২০) স্বামী সুমন মিয়া(২৭) দ্বিতীয় বিয়ে করায় পারভীন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিষপান করে শনিবার সকালে নিজেকে আতœহত্যা করে।
খাগড়াছড়ি মডেল থানার(ওসি) তারেক মোহাম্মদ হান্নান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
অপরদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মধ্য বোয়ালখালীতে বিধবা নারী ইন্দ্রা চাকমাকে(৪৫) হত্যাকারী মো. আলাউদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ৫ নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও নারী আত্মরক্ষা কমিটি।
শনিবার(১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে ৫ নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উক্ত হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য শনিবার(১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে জমিতে গরু বাধাকে কেন্দ্র করে ইন্দ্রা চাকমার সাথে কথা আলাউদ্দিনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মো. আলাউদ্দিন(৫৫) ইন্দ্রা চাকমাকে কুপিয়ে/ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পরে ¯’ানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশ খুনি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটলার কর্তৃক নারী ধর্ষণ, খুনের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধির কারণ হ”েছ ধর্ষক এবং খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া। কিছুদিন আগে পানছড়িতে বালাতি ত্রিপুরাকে ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিš‘ ওই ঘটনায় অভিযুক্ত খুনীদের পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করেনি।
নেতৃবৃন্দ ইন্দ্রা চাকমার খুনী মো. আলাউদ্দিনকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পাহাড়ি নারীসহ দেশের সকল নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরুপা চাকমা(২), ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা ও নারী আত্মরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এন্টি চাকমা। হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটি দপ্তর সম্পাদক নীতিশোভা চাকমা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
অস্যদিকে শনিবার সকাল ৯টায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন দিঘীনালা উপজেলার ১নং মেরুং ইউনিয়নের ২নং ওর্য়াডের কনা মহাজন আদামের(শান্তি লক্ষীপুর )বাসিন্দা ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী মিস.ইন্দ্রা চাকমা(৫৫) স্বামী মৃত সুরতি চাকমাকে নিজ জমিতে ধানের খর কাটতে গিয়ে সেটেলার বাঙ্গালী আলাউদ্দীন, পীং-আব্দুর রশীদ,সাং ২নং ওর্য়াড,১নং মেরুং ইউনিয়ন দিঘীনালা উপজেলা নির্মমভাবে হত্যা করে। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ইং সনে ১৩ই জুন দুপুর ১২টার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সেটেলার বাঙ্গালীরা দিঘীনালা উপজেলায় পাঁচটি মৌজায় আদিবাসী জুম্মদের হাজার হাজার ঘরবাড়ীতে অগ্নি-সংযোগ, লুটপাত এবং গণহত্যা চালানো হয়েছিল। অধিকন্তু, ২০০১ইং সনে ১৮মে শান্তিলক্ষীপুর আদাম সহ কালাচান মহাজন আদামে আদিবাসী জুম্মদের ঘরবাড়ীতে লুটপাত ও অগ্নি-সংযোগ দেয়া হয়। ১৯৯৮ইং এক জন বয়স্ক মেয়েকে এবং ২০০৮ইং এক জন চার বছরের শিশু মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। কোন অপরাধীর শাস্তি হয়নি। কখনো কারও শাস্তি হবে না। অদ্য যে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছিল,অপরাধীর শাস্তি হবে বলে মনে হয় না। দেশে আইন আছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতি উক্ত অপরাধীর শাস্তি দাবী করছি। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে,অপরাধীর যাতে শাস্তি না হয়,সে ভাবে তথ্য ও মামলা প্র¯‘ত করা হয়। আরো একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির মধ্যে বিশ দফা চুক্তি ৯ই র্মাচ ১৯৯৭ ইং স্বাক্ষরিত হয়। বিশ দফা চুক্তির ১ নং দফাতে রয়েছে,ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা সরকার প্রদান করবে। কিš‘, সরকার ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা এখনো দেয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতি ইন্দ্র চাকমার হত্যাকারীর নিশ্চিত ফাঁিস চাই এবং ভারত প্রত্যাগত সকল জুম্ম শরণার্থীদের নিশ্চিত জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দাবী করছি। পার্বত্য চট্টগ্রগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সম্পাদব সন্তোষিত চাকমা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এবিএন/ চাইথোয়াই মারমা/জসিম/নির্ঝর