![বাংলা একাডেমিতে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/10/25/1_107265.jpg)
ঢাকা, ২৫ অক্টোবর, এবিনিউজ : বাংলা একাডেমি আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অক্টোবর বিপ্লব : ফিরে দেখা ও সামনে তাকানো শীর্ষক অধ্যাপক যতীন সরকার লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা
ড. মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ এবং মফিদুল হক। প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি রুবী রহমান, কাজী রোজী, কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া, আনোয়ারা সৈয়দ হক, অধ্যাপক আহমদ কবির, গবেষক ড. ইসরাইল খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, মানজার চৌধুরী সুইট, মযহারুল ইসলাম বাবলা প্রমুখ।
স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, মানবসভ্যতার ইতিহাসে অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য অসামান্য। এই বিপ্লব গোটা পৃথিবীতে নতুন সামাজিক অগ্রগতি আনয়ন করেছিল, মানুষের মূল্যবোধে ঘটিয়েছিল ইতিবাচক রূপান্তর।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, বিশ শতকের শেষ দশকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে একুশ শতকে পদার্পণ করেছে যে বিশ্ব তো অচিন্তিতপূর্ব সব সংকটে নিমজ্জমান। এ রকমের বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্বই আজকের সকল বিশ্বসংকটের মূল উৎস। নির্বিচার ভোগবাদ এবং ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ ওই একই উৎস থেকে উপজাত। ভোগবাদ আর মৌলবাদ-দুই-ই মানুষকে কূপম-ুক বানিয়ে রাখে, আবার সন্ত্রাস-নৈরাজ্যেও ইন্ধন জোগায়।
ধনতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদের হাতেই সৃষ্ট ও লালিত-পালিত হয়েছে ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ। একুশ শতকের শুরুতে এসে সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদের যে আপাত-দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, তাতে এই দুয়ের কোনো পক্ষকেই সমর্থন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। দুই-ই মানবসভ্যতার শত্রু। দুই-ই সুস্থ ও সুষ্ঠু মানববিকাশের পথের প্রতিবন্ধক। দুইয়ের বিরুদ্ধেই আমাদের আজকের লড়াই। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে সে-লড়াইয়ের পথ ও পদ্ধতির সন্ধান করতে হবে।
আলোচকদ্বয় বলেন, অক্টোবর বিপ্লব শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাপ্ত পরিবর্তন এনেছে। তাই এই বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন প্রকৃতপক্ষে মানুষের অগ্রগতির এক ধাপকেই স্মরণ করার প্রয়াস।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অক্টোবর বিপ্লব কোন স্থানীয় বিপ্লব নয় বরং একটি আন্তর্জাতিক সমাজবিপ্লব যা মানবসভ্যতার ইতিহাসকে নতুন ধারায় প্রবাহিত করেছে। পুঁজিবাদীরা সোভিয়েত পতনকে সমাজতন্ত্রের পতন হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করলেও আজ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সমাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের ব্যাপক আগ্রহ প্রমাণ করে সোভিয়েত পতন একটি রাষ্ট্রকাঠামোর পতন ছিল মাত্র। তিনি বলেন, অক্টোবর বিপ্লব মানুষে-মানুষে অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছিল যা আজ পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার দাপটে হুমকির সম্মুখীন।
বাংলাদেশেও আমরা শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষসহ নারীর উপর যে ক্রমাগত নিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি, পরিবেশের যে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি তা পুঁজিবাদী সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থার চরম রূপকে প্রকাশ করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মানব-সভ্যতার ইতিহাসে অক্টোবর বিপ্লব এক বড় ঘটনা। নানা কারণে রুশ দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব স্থায়ী হয়নি কিন্তু এই বিপ্লব ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও ন্যায়পর সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবসময় অন্তহীন প্রেরণা হয়ে কাজ করে যাবে।
এবিএন/রাজ্জাক/জসিম/এআর