মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
logo
  • হোম
  • সাক্ষাৎকার
  • সিপিএ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খোঁজা হবে : ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

সিপিএ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খোঁজা হবে : ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

সিপিএ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খোঁজা হবে : ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

ঢাকা, ০১ নভেম্বর, এবিনিউজ : জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন দুই দেশের সমস্যা নয়। এটি এখন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা।

সবাই বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ঢাকা সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইস্যুটি তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মতামত গঠনের পক্ষে কাজ করবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খোঁজা হবে। আমরা চাই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সিপিএর ৬৩তম কনফারেন্স উপলক্ষে একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে বলবেন?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : সিপিএ কমনওয়েলথ দেশসমূহের জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক সংসদগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিক সংগঠন। বিশ্বব্যাপী সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। কমনওয়েলথ চেতনার বন্ডেজ সংহত করে মতবিনিময়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে এই সংগঠন। এবারের সম্মেলনেও সংসদীয় গণতন্ত্র সংহত ও সমুন্নত রাখা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ তরুণকে রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে বিশ্বশান্তি, সমৃদ্ধি ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগানোর জন্য সিপিএ কাজ করছে। এ সম্মেলনেও এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে আপনি প্রথম সিপিএ চেয়ারপারসন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে আপনাকে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে কি?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা এ জন্য যে, তিনি আমার প্রতি আস্থা রেখে এত বড় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার চেয়ারপারসন পদে নির্বাচন করার সুযোগ ও প্রেরণা দিয়েছেন। আজ তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই দেশের স্পিকার হিসেবে সিপিএ চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাকে কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়নি। বরং কাজ করতে গিয়ে সব জায়গায় সবার সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সবাই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে আমাকে সহযোগিতা করেছে।

প্রশ্ন : ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সিপিএর ৬৩তম কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য ও প্রত্যাশা কী?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কনটিনিউয়িং টু অ্যানহাঞ্চ দ্য হাই স্ট্যান্ডার্ড অব পারফরম্যান্স অব পার্লামেন্ট’ (অব্যাহতভাবে সংসদের উঁচুমানের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়াস)। আমাদের প্রত্যাশা অব্যাহত সংসদীয় গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদগুলো নিজ নিজ দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কমনওয়েলথ চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

প্রশ্ন : ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কী অর্জন করতে পারে— বিস্তারিত বলবেন?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : বাংলাদেশের জন্য এ সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনের সফল আয়োজন বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। সিপিএ বিশ্বের ২.৪ বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। কমনওয়েলথভুক্ত ৫২টি দেশের জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক সংসদ এ সংগঠনের সদস্য। দেশগুলোর মধ্যে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও কমনওয়েলথ চেতনার একটি কমন বন্ড আছে। সিপিএর ঢাকা কনফারেন্স উপলক্ষে এসব দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসবেন। সম্মেলনে দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন, মানবাধিকার, আইনের শাসনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় হবে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশও নিজেদের অর্জন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে পারবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের একটি সুন্দর ও পজেটিভ ইমেজ তুলে ধরা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এ সম্মেলনে বিশ্বের অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানদের আলোচনার মাধ্যমে যেসব মতামত আসবে ও যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে— ভবিষ্যতে আমরা তা আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কাজে লাগাতে পারব।

প্রশ্ন : গত বছর বাংলাদেশে এ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তা হতে পারেনি। এবার এ সম্মেলনের আয়োজন বাংলাদেশের জন্য কতটা সম্ভাবনা বা চ্যালেঞ্জের মনে করছেন?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষ গণতন্ত্র ভালোবাসে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুই আমাদের একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন। ১৯৭২-এর সেই মূল সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সংসদীয় গণতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাংলাদেশ এই কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ লাভ করেছে। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সংসদীয় গণতন্ত্রকে এক নতুন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংবিধানের আলোকে কার্যকর সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, গণতন্ত্র সংহতকরণ, আইনের শাসন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে সফলভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ যৌথভাবে ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলন আয়োজন করে নিজেদের সক্ষমতা বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এমন একটি পরিবেশে দেশে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিপিএর ৬৩তম সিপিসি। এবারও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ যৌথভাবে এ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজন করে বিশ্ববাসীর মন জয় করতে পারবে বলে মনে করি।

প্রশ্ন : আপনি বাংলাদেশে ইয়ুথ পার্লামেন্টারিয়ান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। সিপিএর প্যাট্রন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আপনার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। এ কর্মসূচির সফলতা নিয়ে আপনি নিজে কতটা আশাবাদী?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ তরুণ। দেশে দেশে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কমনওয়েলথের ঐক্য চেতনা গড়ে তোলা, সংসদীয় গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি কীভাবে আগ্রহী করে তোলা যায়— ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ান কর্মসূচি তারই একটি বহিঃপ্রকাশ। স্কুল-কলেজের তরুণদের সংসদের কার্যক্রম দেখিয়ে বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র ও সংসদীয় কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের ধারণা দেওয়া, যাতে তারা বুঝতে পারে কীভাবে সংসদীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, আইন প্রণয়ন হয় বা সংসদীয় ব্যবস্থায় কীভাবে সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়, কীভাবে সংসদীয় গণতন্ত্র ধারণ করা যায় এসব বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সিপিএ কাজ করছে। এ সম্মেলনেও এ বিষয়েই কথা হবে।

প্রশ্ন : আমরা জেনেছি সিপিএ সম্মেলনের এজেন্ডা আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। ফলে এজেন্ডা হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশের মূল সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুটি নেই। সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপিত হবে কিনা?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : সিপিএ পরিচালিত হয় ব্রিটেনের কমনওয়েলথ হেডকোয়ার্টার থেকে। নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেখান থেকেই এজেন্ডা নির্ধারিত হয়। গত আগস্টে সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় ঠিক হয়। তখন নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। তাই এটি এজেন্ডাভুক্ত করা যায়নি। তবে ঢাকা সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইস্যুটি তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মতামত গঠনের পক্ষে কাজ করবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ খোঁজা হবে।

প্রশ্ন : সিপিএর কর্মসূচি কী? এসব বাস্তবায়নের মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলো কী ধরনের সফলতা লাভ করতে পারে?

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : কমনওয়েলথভুক্ত ৫২টি দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদ মিলিয়ে ১৮০টি পার্লামেন্ট এ সংগঠনের সদস্য। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন এবং উন্নয়নের দর্শন নিয়ে এ সম্মেলনে জনপ্রতিনিধিরা মতবিনিময় করবেন। তাতে অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিনিধিরা সবাই সমানভাবে অংশ নেবেন। গণতন্ত্রচর্চাসহ উন্নয়নের নানান বিষয়ে সিপিএভুক্ত দেশগুলো জানতে পারবে। কমনওয়েলথ চেতনায় সংসদীয় গণতন্ত্র বিকাশের পথ প্রশস্ত হবে। এবারের সম্মেলনে ৪৪টি দেশের ১৪৪টি জাতীয় ও প্রাদেশিক পার্লামেন্টের ৫৬ জন স্পিকার, ২৩ জন ডেপুটি স্পিকারসহ ৫৫০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেবেন। অংশগ্রহণকারীদের গুরুত্ব অনুসারে এটি একটি অনেক বড় আয়োজন। সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত