![ভাষাসংগ্রামী শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩১তম জন্মবার্ষিকী](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/11/02/dsc_5480_108753.jpg)
ঢাকা, ০২ নভেম্বর, এবিনিউজ : ভাষাসংগ্রামী শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে । অনুষ্ঠানে ভোরের পাখি শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন লেখক-গবেষক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী আরমা দত্ত উপস্থিত ছিলেন।
নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, নিশাবসানে একটি নতুন দিনের আগমনী সংবাদে আমাদের ঘুম ভাঙে ভোরের পাখির কলতানে-গানে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সেই জাগর-মন্ত্রে বাঙালি জাতিকে সচকিত করে দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সংবিধান সভায় পাকিস্তানের ভাষা বিতর্কের সূচনা করেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উপনেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পাকিস্তানের সংবিধান সভা গণপরিষদে কোন ভাষা ব্যবহার হবে, এই প্রসঙ্গে সরকারি মুসলিম লীগ দলের প্রস্তাব ছিল উর্দু ও ইংরেজি।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর প্রস্তাবের পক্ষে গণপরিষদে যে ভাষণ দেন তাতে তিনি দৃঢ়ভাবে বাংলাকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ভাষা হিসেবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের দাবি জানান। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সাহস ও প্রজ্ঞার সাথে সংবিধান সভায় এই দাবিটি তুলে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, মুক্তি ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার বংশীবাদকের ভূমিকা পালন করলেন। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু এই গৌরবোজ্জ্বল অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে তাকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিলেন।
আমরা পেলাম বাঙালির ইতিহাসের প্রথম জাতি-রাষ্ট্র, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ১৯৭১-এ পুত্রসহ বর্ষীয়ান ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী কুমিল্লা সেনানিবাসে দিনের পর দিন নিষ্ঠুরতম নির্যাতন করে হত্যা করে। এভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের প্রতিশোধ গ্রহণ করে। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদাররা শারীরিকভাবে এই বরেণ্য বীরকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও তার কালজয়ী আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একটি ভেদ-বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ মানবিক সমাজ গড়ার সংগ্রামে অনাগতকাল ধরে ধ্রুবতারা হয়ে আমাদের পথ দেখাবেন।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন বড় মাপের দেশপ্রেমিক নেতা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরই তিনি বাংলাভাষার পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা হিসেবে আবির্ভূত হন।
এছাড়া বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাংলার তৃণমূল মানুষের জন্য তিনি জনকল্যাণকর কাজ করে গেছেন। তাঁর আত্মকথায় বিধৃত হয়েছে প্রায় এক শতাব্দীর সংগ্রামী অভিযাত্রার কথা। মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণ করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের আত্মার সঙ্গে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছেন।
এবিএন/রাজ্জাক/জসিম/এআর