![হাসান আজিজুল হকের গল্প](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/11/29/hasan-azizul_113049.jpg)
চৌধুরী শাহজাহান, ২৯ নভেম্বর, এবিনিউজ : বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যে কয়জন সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ত্ব। বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার যবগ্রাম নামক গ্রামে ১৯৩৮ সালে হাসান আজিজুল হক জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৬০ সালে সমকাল পত্রিকার মাধ্যমে হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যজীবনের সূত্রপাত হয়। সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় তাঁর শকুন গল্প প্রকাশিত হয়। এই গল্পের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত হন। এই সময়েই তাঁর আজিজুল হক নামের পূর্বে হাসান শব্দটি যুক্ত হয়। এরপর তিনি হাসান আজিজুল হক নামেই লিখতে থাকেন অদ্যাবধি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছোটগল্পের জনক। রবীন্দ্র্রনাথের হাতেই বাংলা ছোটগল্পের উৎপত্তি ও বিকাশ লাভ করে। তাঁর গল্পে সমাজের বিচিত্র শ্রেণির মানুষ স্থান লাভ করেছে। বাংলার প্রবহমান গ্রামীণ জীবনকে গল্পে তুলে আনেন রবীন্দ্রনাথই প্রথম। রবীন্দ্রনাথের পর মানিক বন্দোপাধ্যায় (১৯০৮–১৯৫৬) তাঁর কথাসাহিত্যে সমাজ ও জীবনের অবক্ষয়ের প্রধান কারণ হিসেবে মানুষের কামতাড়িত জীবনাচরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। হাসান আজিজুল হকের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ আত্মজা ও একটি করবী গাছ–এর কয়েকটি গল্পে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের প্রভাব সুস্পষ্ট। ত্রিশের উপান্তে মানিক বন্দোপাধ্যায় মার্কসীয় মতবাদের দ্বারা আকৃষ্ট হন। চল্লিশের দশক থেকে মানিক বন্দোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্যে সমাজ জীবনকে বিশ্লেষণ করেছেন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সাহায্যে। হাসান তাঁর প্রথম গ্রল্পগ্রন্থ সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য ও দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ আত্মজা ও একটি করবী গাছ–এর অধিকাংশ গল্পে যৌন সর্বস্বতাবাদে ধারাটিকে অল্প–বিস্তর অব্যাহত রাখলেও তৃতীয় গল্পগ্রন্থ জীবন ঘষে আগুন–এর পর থেকে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শ অনুসরণ করে সমাজবাদী ধারার গল্প লেখা শুরু করেন। ভাষা প্রয়োগের ভঙ্গির দিক থেকে হাসান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখকের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তবে গদ্যরীতিতে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের প্রভাব সুস্পষ্ট। কমলকুমার মজুমদার, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ ও সোমেন চন্দ দ্বারাও তিনি কোনো কোনো সময়ে প্রভাবিত হয়েছেন। রাঢ়বঙ্গের উত্তরাধিকার হলেও হাসানের গল্পের ভৌগোলিক পটভূমি বাংলাদেশ। এই দেশের ভূমিতে বাস করে হাসান ছোটগল্প রচনা করেছেন।
আত্মজা ও একটি করবী গাছ গ্রন্থে মোট আটটি গল্প সংকলিত হয়েছে। গল্পগুলো হলো– গ্রন্থের নামগল্প আত্মজা ও একটি করবী গাছ, পরবাসী, সারাদুপুর, অন্তর্গত নিষাদ, মারী, উট পাখি, সুখের সন্ধানে, ও আমৃত্যু আজীবন। গল্পগুলো নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের বাস্তবচিত্র নিয়ে লেখা। গ্রাম বাংলার কৃষকের শোষিত জীবন সংগ্রাম ও হতাশা গল্পগুলোতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
আত্মজা ও একটি করবী গাছ গল্পটি আমাদের সমাজ জীবনের একটি পরিবারের অবর্ণনীয় বেদনা ও যন্ত্রণার কাহিনী। ইনাম, ফেকু ও সুহাস ক্ষয়িষ্ণু সমাজের তিনটি প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে বৃদ্ধ কেশো–বুড়ো দুটো টাকার বিনিময়ে নিজের মেয়েকে তুলে দেয় সুহাস ও ফেকুদের কাছে। লেখক বর্ণনা করেছেন এভাবে– তোমরা দিচ্ছ, তুমি আর সুহাস? দাও। আর কত যে ধার নিতে হবে তোমাদের কাছে। কবেই বা শুধতে পারবো এইসব টাকা? সুহাস উঠে দাঁড়ায়। চলে যাবে এখন? এত তাড়াতাড়ি? রুকু রাগ করবে–চা করতে দিলে রা ওকে। ওর সঙ্গে দেখা না করে গেলে আর কোনদিন কথা বলবে না। দাঁড়াও– হারিকেনটা রেখে বুড়ো বেরিয়ে যায়। ছায়াটা ছোট হতে হতে এখন নেই। মুরগিগুলো আবার কঁ কঁ করে ওঠে, কথা বলে ওঠে এক বৃদ্ধা স্ত্রীলোক, তী ্ব গালাগালি অন্ধকারকে ফাড়ে, চুপ, চুপ,মাগী, চুপ কর, কুত্তী এবং সমস্ত চুপ করে যায়। বুড়ো ফিরছে এখন–মাথা নামিয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে ঘরে ফিরে এসে ফিস ফিস করে যাও তোমরা, কথা বলে এসো, উই পাশের ঘরে।
এখানে অধঃপতিত সমাজের ভাবটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে নিজের যুবতী মেয়েকে যুবকদের হাতে সপে দেয়ার মধ্য দিয়ে বৃদ্ধের জীবনের চরম লজ্জা উন্মোচিত হয়েছে। এরপর বুড়ো ইনামের সঙ্গে গল্প করতে বসে। এটা তার বাস্তব জীবনের গল্প। লেখকের ভাষায়– বুড়োটা গল্প করছে, ভীষণ শীত করছে ওর গল্প করতে, চাদরটা আগাগোড়া জড়িয়েও লাভ নেই। শীত তবু মানে, শ্লেষ্মা কিছুতেই কথা বলতে দেবে না তাকে! আমি যখন এখানে এলাম, সে গল্প করেই যাচ্ছে, আমি যখন এখানে এলাম, হাঁপাতে হাঁপাতে কাঁপতে কাঁপতে বলছে ॥–সারারাত ধরে বলছে, আমি যখন এখানে এলাম, আমি যখন এখানে এলাম॥– আমি একটা করবী হাছ লাগাই বুঝলে? বলে থামলো বুড়ো, কান্না শুনল, হাসি শুনল, ফুলের জন্য নয়, বুড়ো বলল, বিচির জন্যে, বুঝেছ করবী ফুলের বিচির জন্য। চমৎকার বিষ হয় করবী ফুলের বিচিতে।
আত্মজার যন্ত্রণাদগ্ধ অবস্থাকে ভুলে থাকার জন্য বুড়োর ই বানানো গল্পের অবতারণা। সব মায়াই মিথ্যা হয়ে যায়, ভিতরে ভিতরে বিষ সঞ্চারিত হয়ে যায় বহুদূর। এক অনিবার্য মৃত্যুর ডাক শোনা যায় শুধু। বুড়োর অসহায় অবস্থা লক্ষ্য করে ইনাম যতই বলুক ‘এ্্যাহন তুমি কাঁদতিছ?ম্ব তার তিক্ততা সত্ত্বেও ঐ কান্নাতেই ধরা পড়ে বিপর্যয় অসহায়ত্ব।
পরবাসী গল্পের পটভূমি নির্মিত হয়েছে দুই বাংলার হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের দাঙ্গার ইতিহাসকে আশ্রয় করে। সাধারণ মানুষকে একেক সময় তার নিজস্ব নীতিবোধ হারিয়ে ইতিহাসের সংকটের শিকার হতে হয়–সেটাও এক ধরনের অসহায়ত্ব। শুধু অর্থনৈতিক চাপের সামনেই মানুষ যে অসহায় তা নয়, মূল্যবোধ নানাভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে। বশির এরকমই প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হওয়া এক মানুষের অসহায়ত্বকে প্রকট করে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আকস্মিক আক্রমণের ভয়ঙ্কর ছোবলে তার ছাব্বিশ বছরের যুবতী স্ত্রী ও সাত বছরের ছেলেকে হারিয়েছে। হারিয়েছে তার চাচা ওয়াজদ্দিকে। সব হারিয়ে বশির কোন মতে প্রাণ রক্ষার তাগিদে পাকিস্তানের পথে পা বাড়িয়েছে। চলার পথে এক সময় সে একটি শুকনো খালে আশ্রয় নিল। হঠাৎ খালের উঁচু পাড়ে ধূতি পরিহিত মানুষটিকে দেখার সাথে সাথে বশিরকে তাড়া করে আদিম প্রাগৈতিহাসিক নিষ্ঠুর হিংস্রতা। আগন্তুকটির বাঁক থেকে কুড়াল নিয়ে সে প্রচন্ড আঘাতে তাকে হত্যা করে। এ গল্পটির মানবিক আবেদন অবিস্মরণীয়। খণ্ডিত বাংলার আত্মখণ্ডিত মানুষের ক্রুরতা রাজনৈতিক ঘটনারই ঘৃণ্য পরিণতি। গ্রামের কৃষিজীবী সাধারণ মানুষ ওয়াজদ্দি যখন তার বুদ্ধি ও বিবেচনার সাহায্য নিয়ে মন্তব্য করে ষ্ক্র তোর বাপ কটো? এ্যাঁ–কটো বাপ? মা কটো? একটো তো? দ্যাশ তেমনি একটো! বুইলি?
সাধারণ মানুষ রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে বলেই দেশ সম্পর্কে তাদের কোন সুস্পষ্ট ধারণা নেই। জন্মদাতা যেহেতু একাধিক হতে পারে না তেমনি দেশও একাধিক হতে পারে না। এই প্রগাঢ় বিশ্বাসে ওয়াজদ্দি বিশ্বাসী। জন্মভূমিকে তারা জন্মদাতার সমান বিবেচনা করেছে । দেশ সম্পর্কে এই বিশ্বাসের হলো অপমৃত্যু । মৃত্যুর বীভৎস্য তান্ডবলীলা দেখে বশিরের মন ভেঙে যায়। লেখকের ভাষায়–
‘বাড়িটা ততক্ষণে পুড়ে শেষ। ওরা চলে গেছে। বল্লম দিয়ে মাটির সাথে গাঁথা বশিরের সাত বছরের ছেলেটা। ছাব্বিশ বছরের একটি নারীদেহ কালো একখণ্ড পোড়া কাঠের মতো পড়ে আছে ভাঙা দগ্ধ ঘরে। কাঁচা মাংস–পোড়ার উৎকট গন্ধে বাতাস বিষে ভারি। প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক পাশাপাশি রুপায়িত হয়ে এখানে গল্পের বক্তব্যকে এক আলাদা মাত্রা নিয়ে আসে। গল্পে যে ট্র্যাজেডি, তা সাধারণ মানুষের ট্র্যাজেডি। ছোটগল্পের জগতে এই গল্প নিঃসন্দেহে আলাদা এবং অনন্যও বটে।
সারা দুপুর গল্পে সমাজের নারী–পুরুষের অবক্ষয় ও অসঙ্গতি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র কাঁকন। সে অনেক ক্ষেত্রেই যেন অসহায়। পিতার আদর থেকে বঞ্চিত কাঁকনের মনোজগত এবং মায়ের প্রতি জেগে ওঠা প্রবল ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে এই গল্পে। নিঃসঙ্গ দুপুরে কাঁকনের বেদনার্ত অন্তর্জগৎ উন্মোচন করেছেন লেখক এভাবে-‘সেই মরে যাওয়ার ইচ্ছাটা ফিরে আসে। আহারে যদি মরে যেতাম–কত ভালো হতো–হয়তো হাঁসগুলোর মতো উড়তে পারতাম। তার বদলে দাদুটা মরে যাচ্ছে। হয়তো এক্ষুনি দাদু মরছে। একটা বালিহাঁস খেতে চেয়েছিল দাদু। দাদু মরে গেলে চেয়েচিন্তে একটা বালিহাঁস খেলেও খেতে পারবে। এই সঙ্গে মায়ের কথা মনে পড়ল কাঁকনের আর ওর বুকটা যেন ফেটে যেতে চাইল। মা–টাও মরে গেছে বলে মনে হয় যে আমার! আব্বার সঙ্গে বিকেলে কি আর দেখা হবে? সেই মেয়েলোকটা কি আসবে?
কাঁকন নামের একটি কিশোরের চোখ দিয়ে দেখা তার চারপাশের জগৎ, তার কালিমালিপ্ত অন্ধকার, নৈরাশ্য, আনন্দ এবং কৌতূহলের জিজ্ঞাসায় ঘেরা নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের কথা এই গল্পে স্থান পেয়েছে। একদিকে মৃত্যুপথযাত্রী দাদু অন্যদিকে স্বামী পরিত্যক্তা তার নিজের মা, যার শয্যায় একদিন দেখতে পেয়েছে ফর্সা রঙের একজন মানুষকে, যার প্রতি অক্ষম ক্রোধে গুমরে মরে কাঁকন। নিঃসঙ্গ কাঁকনের অবস্থা লেখক বর্ণনা করেন এভাবে-‘শীতে গাছের পাতাগুলোকে বিশ্রী দেখাচ্ছে, পথের ওপর ছায়া ভয়ানক ঠান্ডা আর ঘাসের ভেতরে রাস্তার রং দুধের মত সাদা। ঘাস এখনো হলদে হয়নি–হবে হবে করছে। এই সব আধ–মরা ঘাসের ওপর শিশির আধাআধি শুকিয়েছে এতটা বেলা হয়েছে। রোদ কেবল এই সময়টায় একবার চড়াৎ করে উঠেছে, খেজুর গাছে ঘুঘু ডাকছে, অমনি মন কেমন করে উঠলো কাঁকনের। সব মরে যাচ্ছে গো–কাঁকন এই কথাটা শোনাবার মত লোক খুঁজে পেল না। আব্বা একটা মাগীর সঙ্গে চলে যাচ্ছে? কাঁকন মাকে জিজ্ঞেস করে ‘মাগী কি?ম্ব-‘প্রচন্ড একটা চড় কষে ওর মা ফেটে পড়ে, রাত দুপুরে শয়তানী। পাজী কোথাকার! হাড়ে হাড়ে বজ্জাতী তোমার। মাগী ককে বলে জানিস না-‘আমি একটা মাগীম্ব। এই নির্মম সত্যের অনুভব নিয়ে কাঁকনের মরে যেতে ইচ্ছে করে। একদিকে মৃত্যুপথযাত্রী দাদু, অন্যদিকে মৃত্যুগুহায় ডুবন্ত তার মা–এই দুয়ের টানাপড়েনে কাঁকনের মনেও উঁকি দেয় মৃত্যুচেতনা। একবার নয়, দুইবার নয়, তিনবার গল্পের শেষে ‘কাঁকন ছেলেটার মনে কি রকম মরে যাবার ইচ্ছা প্রবল হয়। দারুণ শীতের জন্য সেই সময় ঘাসপাতা, আকাশ রোদ সব কিছু মরছিল বা মরণাপন্ন ছিল। গল্পটি এভাবে শেষ হযে যায়। নিঃসঙ্গ এক কিশোরের চোখ দিয়ে দেখা এই জগতে নেই কোনো উৎফুল্লের আনন্দধ্বনি। মৃত মানুষের জগতে সেই কিশোর বেলাতেও যার মরে যেতে ইচ্ছে করে সেই কাঁকনের প্রতি সহমর্মিতায় আমাদের অন্তরও কি কেঁদে ওঠে না? (সুশীল সাহা, কিশোর মনের তলকুঠুরী: কথাসাহিত্যের অন্য আর এক ভুবনের প্রেক্ষিতে হাসান আজিজুল হক, হাসান আজিজুল হক: নিবিড় অবলোকন, চন্দন আনোয়ার সম্পাদিত, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ২০১৫)।
অন্তর্গত নিষাদ গল্পে একজন নিম্নবিত্ত চাকরিজীবীর হতাশা, অভাব, দুঃখ–কষ্ট, বেদনা ইত্যাদির কথা বর্ণিত হয়েছে। লেখক গল্পের নায়কের ক্লান্তিকর পরিবেশের বর্ণনা দিচ্ছেন এভাবে-‘এঁদো ডোবার মত বিছানা, চোখ না–ফোটা কুকুর ছানার মত কালো কালো বংশধরমণডলী, গাদা–জরাজীর্ণ কটুগন্ধের কাঁথা–আলনা, জামাকাপড়, কেরোসিন কাঠের টেবিল, টিনের স্যুটকেস, পুরনো দৈনিক পত্রিকা। অন্তর্গত নিষাদ গল্পের মানুষটি নিজের শরীর থেকে ঘুমন্ত স্ত্রীর হাত ঘৃণায় সরিয়ে দেয়। নিম্ন–মধ্যবিত্ত, ক্লিন পরিবেশ, কুকুর ছানার মতো বংশধরমণ্ডলী, নোংরা জামাকাপড় বিছানা আসবাব। ছেলে আহত হলে সে বিচলিত না হয়ে নির্বিকারভাবে মুড়ি চিবায়-‘ব্যাটা হারামজাদার মেলা রক্ত আছে। কত আর পড়বে? সে কখনো কখনো অনুভব করতে চায় নিমফুলের গন্ধে ভরা কোন আশ্চর্য সকালকে কিন্তু ব্যাংকের বাড়ি, অফিস, ধোপিখানা, মুড়ি–মুড়কির দোকান, আতা গাছ, ফুলন্ত নিম, শালিক, চড়াই, মুক্তোর মতো শিশির, সবুজ গঙ্গাফড়িং–এ ভরা পথ দিয়ে সে যখন মাঠে পৌঁছায় সেখানেও অ্যালসেসিয়ান সঙ্গে নিয়ে উকিলবাবুর উপস্থিতি তাকে মলিন করে দেয়। অফিস ফেরত লোকটি বিজ্ঞাপন পড়ে সিনেমা দেখতে ঢোকে, এক বৃদ্ধ মৎস্য শিকারীর সমুদ্রযাত্রার ছবি। তার চোখে সমুদ্র ভাসে, ছবি দেখে হেমিংওয়ে সুলভ মন নিয়ে সে বেরিয়ে আসে। তারপর শহরের একটি ভালো হোটেলে পেট ভরে খায়, ছেলেমেয়েদের জন্য জামা–কাপড়, স্ত্রীর জন্য শাড়ি, বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাড়িতে উৎসবের আবহাওয়া বইয়ে দেয়। এক যুগ পরে স্ত্রীর গলা জড়িয়ে শুতে যায় সে, তোলা কাপড়ের ন্যাপথলিনের গন্ধ নাকে এসে লাগে তার। কিন্তু রক্তের ভেতর খেলা করে যে অন্তর্গত নিষাদ সে এই স্থুল বাঁচা থেকে মুক্তির জন্য অস্থিও হয়ে উঠেছে। সে কোনো ভূত দেখেনি, স্ত্রীকে জড়িয়ে যখন সে শুয়ে আছে, তখন খোলা জানালা দিয়ে নিমফুলের গন্ধ ভেসে এসেছে, নিয়ে এসেছে যেন এক বিপন্ন বিস্ময়বোধ। তাই বধূ শুয়ে ছিল পাশে, শিশুরাও ছিল। তবুও পরেরদিন সকালে আবিষ্কার হয়, ‘এই ভরা সুখের সংসারে লাথি মেরে লোকটা কড়িকাঠে ঝুলছে। জীবনানন্দের কবিতার চরিত্রের মতোই এই নামহীন লোকটির মনের মধ্যে কোনো এক আততায়ী থেকে যায় হয়তো। তা না হলে, জীবন যন্ত্রণার মাঝে বিভিন্ন পরিবেশে লোকটি আর ফিরে আসতে চায়নি কেন? এখানে অসহায়ত্ব কাজ করে যা তাকে অন্তরে অন্তরে কুরে খায়।
মারী গল্পটিতে গৃহহীনদের অভাব–অনটনের এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। গৃহহীন লোকেরা স্থানীয় একটি স্কুলঘরে আশ্রয় নিয়েছে। স্কুলে রিফুজিদের আশ্রয় নেয়াটা গ্রামের লোকেরা সহ্য করতে পারেনি। অনেকে বিরূপ মনোভাব পোষণ করেছে। তাইতো রফিককে মৌলভী সাহেবের কথার উত্তরে বলতে শুনা যায়, ‘ যেহানে ইচ্ছা সেহানে যাক, আমরা মরতেছি নিজেগোর জ্বালায়, এ্যাহন রিফুজি আলি বাঁচবেন একটা লোক–কনদিনি…এই রিফুজিরা গভরমেন্টের সাঙর ভেঙে দেবেনে কলাম। পৃষ্ঠা–৪৫। এ কথাতে রফিকের দুঃখ ও ক্ষোভ ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। রকিব নিম্নবিত্ত শ্রেণির একজন খেটে খাওয়া মানুষ। সে জানে উদবাস্তুরা গ্রামে প্রবেশ করলে অভাব–হতাশা, রোগ–শোক ও নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। একেতো নিজেদের সমস্যা নিজেরা মেটাতে পারে না, তার উপর বাড়তি চাপ। সে জানে রিফুজিদের নিশ্চিত কোন ভবিষ্যৎ নেই। তাই সে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে মতলেবের উক্তি: ‘এছলাম কোয়ানে? সব মোনাফেক, বুইছ? (পৃষ্ঠা–৪৫)।
নফরের প্রতি উত্তর: কেউ আসবানে, যাবানে আমাদের সঙ্গে মনে হচ্ছে তোমার? পাগল হইছ? (পৃষ্ঠা–৪৫)। এখানে শাসক ও শোষকশ্রেণির মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে। রিয়াজুদ্দি ও কবীর সাহেব শেষ পর্যন্ত পুণ্যের আশায় সাহাযার্থে এগিয়ে আসে। মতি, জাফর, রহম ও হাবীব দুর্দশাগ্রস্ত উদ্বাস্তুদের সমালোচনা করে কিন্তু কোন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে না। মারী গল্পটিতে রাজনীতির খারাপ প্রভাব ও শাসকশ্রেণির অমানবিক আচরণের চিত্রটি ফুটে উঠেছে। মূলত দেশবিভাগের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যা ও তাদের অসহায়ত্বই এই গল্পটিকে প্রতীকীভাবে এসেছে।
হাসান আজিজুল হক উটপাখি গল্পের পরিবেশকে একটি বৃহত্তর পরিমন্ডলে উপস্থাপন করেছেন। গল্পটি তিনি একজন লেখককে নিয়ে রচনা করেছেন। গল্পের নায়ক একজন লেখক। তিনি স্পষ্টবাদী, পরিশীলিত নাগরিক মনের অধিকারী এবং শিল্পের জগতের একজন বাসিন্দা। একজন লেখকের কাজ হলো সাধারণ মানুষের সাথে সংযোগ সাধন, জীবনের বিচিত্র দিক থেকে তিনি লেখার উপাদান সংগ্রহ করেন। আর লেখকের উদ্দেশ্য হলো পাঠকের সাথে তার সংযোগ গড়ে তোলা। অথচ হাসান চরিত্রটিকে গড়ে তোলেন স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হিসেবে। গল্পটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই যে, লেখক কখনো তার জীবনের সঙ্গে তার ভাবনা, চিন্তা ও কল্পনাকে মেলাতে পারেন নি। যখন জীবন তার কাছে আনন্দ ও মধুর মনে হতো, তখন তিনি কথা বলতেন, মৃত্যু যখন তাকে আচ্ছন্ন করছে, গ্রাস করছে, তখন তিনি বুঝাতে চান জীবনের নোংরামির কথা। অতঃপর নিজের কাছেই তার জীবন অসহনীয় হয়ে উঠে।
জীবন–মৃত্যুর নানা বাধা অতিক্রম করে তিনি উপস্থিত হন তার প্রেমিকার বাসায়। সেখানেও তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কৌশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে কিছুতেই তাদের কথা এগোয় না। দুম্বএকটি কথার পরেই ওঁরা দুম্বজনেই আর কিছু খুঁজে পান না। তারপর লেখক উপলব্ধি করতে পারেন তার নিঃসঙ্গতার কথা। তিনি কাতর হয়ে পড়েন। এক সময় তিনি মেযেটিকে বলেন– ‘ আমি তোমার কাছে কেন এসেছিলাম জানো ? তোমার কাছে আমি সান্ত্বনা চাইতে এসেছিলাম। নির্ভর করতে এসেছিলাম তোমার ওপর। আমি আর কাউকে খুঁজে পেলাম না, কোন কিছুর কথা ভাবতে পারলাম না। কবিতা, দর্শন কোন কিছুই আমাকে কিছু দিতে পারল না। বন্ধু, আত্মীয় অপারগ হলো, হতাশ করলো আমাকে। ধর্ম কাঁচা মনে হলো আমার কাছে। হঠাৎ তোমার কথা আমার মনে হলো। মনে হলো তুমি আমাকে কিছু দিলেও দিতে পারো। নিদারুণ যন্ত্রণায়, বিশ্রী অসুখে আমি ভুগছি। অসুখটা হচ্ছে মৃত্যু–আমার কাজ, চিন্তা সব কিছু আচ্ছন্ন করে সে আমাকে পেয়ে বসেছে–মেয়েটি লেখকের মৃত্যুর বক্তৃতা শুনে ঘাবড়ে যায়। কিন্তু মেয়েটি তার বিযে হয়ে গেছে এই কথা বলে লেখককে ফিরিয়ে দেয়। ফলে মৃত্যুই তার একমাত্র সত্য হয়ে ওঠে। সেখান থেকে তিনি রাস্তায় এলেন, দেখলেন মৃত্যুর ছায়ায় আবছা শহর কাঁপছে, দুলছে, ভেঙে পড়ছে তাসের ঘরের মত।ম্ব উটপাখি গল্পটিকে প্যারাডক্সধর্মী বলা যায়। অতিকথন দোষে গল্পটি অভিযুক্ত হলেও আবার বর্ণনার গুণে গল্পটি সুখপাঠ্য বলা যায় নিঃসন্দেহে।
সুখের সন্ধানে গল্পটি দাম্পত্য জীবনের অসুখী কুমকুম নামের একটি মেয়েকে নিয়ে লেখা। তার অসুখের কি কারণ সে নির্ণয় করতে পারে না। অথচ জীবনে সে যা যা চেয়েছিল তা ঠিক ঠিক সবই পেয়েছে। ‘চমৎকার খাট, স্টিলের আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, বই–এর র্যাক ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু কুমকুমের প্রায় স্বপ্ন ছিল বলা চলে সেইসব এনে ঘর সাজিয়ে বাইশ আর সাতাশ বছরের দুম্বটি যৌবন মূলধন করে সুখে জীবন কাটানোর আয়োজন হল। সংসারে সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও সে অসুখী। নিরন্তর দুঃখবোধ, হতাশা, বিষাদ কাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং সে হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এই অশান্তির কারণে রাজীবের সঙ্গে তার ভুল বোঝাবুঝি হয়। স্বপ্নবিলাসী কুমকুম একসময় প্রকৃতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়।
‘উঠোনে দাঁড়িয়ে কুমকুম আকাশ দেখছিল। আকাশের রঙ প্রায় সাদা এবং পাখিরা চলাচল করছিল এখন। সুন্দর বিকেল নেমে আসছে–ভাবল কুমকুম–যদি সুখ কিছু থাকে আমি যখন এইভাবে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি, আতাগাছে কাঠবিড়ালী দুম্বটোকে দেখি, আমি নগ্ন হলে সমস্ত আকাশ এবং প্রকুতি যখন আমার দিকে চেয়ে থাকে আর পৃথিবীর বুক থেকে গুণ গুণ ভেসে আসে, তখন আমার খুব ভাল লাগে, আমার মনে হয় এমনি করে ভাল লাগাই সুখ আর এমনি করে চিরকাল–চিরকাল সুখে থাকতে পারি আমি। কিন্তু প্রকৃতি কি কুমকুমকে কোন নির্দেশ দিতে পেরেছে ? তবে এখানে হাসান আজিজুল হক একজন অসুখী বাঙালি মেয়ের জীবনে অনেক কিছুর পরও নিজেকে বিষাদ আক্রান্ত করে যে বর্ণনা দিয়েছে তা অনেকটা প্রতীকীরূপেই প্রকাশ ঘটেছে, যা গল্পকে আলাদা মাত্রা দেয়।
আমৃত্যু আজীবন গল্পটি একটি মহৎ পটভূমিতে রচিত। ভাগচাষী কৃষক করমালির কৃষকজীবনের সংগ্রাম মূলর একটি বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে এ গল্পে। করমালি একজন নিম্ন–মধ্যবিত্ত ভাগচাষী কৃষক। তার নিজস্ব তেমন জমিজমা নেই। বাড়ির বিল ঘেষে সামান্য কিছু জমি আছে তাও পতিত জমি। তেমন ফলন পাওয়া যায় না। তাই গ্রামের বিত্তবান লোকদের কাছ থেকে তাকে জমি নিয়ে বর্গাচাষ করতে হয। পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, পুত্র–এই তিনজন পোষ্য নিয়ে তার সংসার। আত্মজ রহমালি তার সমস্ত কাজকর্মের একমাত্র সহযোগী। সারা বছরে যা ফসল পায় তা দিয়ে তাদের দিনগুলো কোন রকমে কেটে যায়। আমৃত্যু আজীবন গল্পটি সম্পর্কে সনৎকুমার সাহার মন্তব্য: আমার তো মনে হয়, ‘আমৃত্যু আজীবন শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বিশ্বসাহিত্যেই এক অমূল্য সম্পদ। গল্পে পাই মহাকাব্যিক বিস্তার। মৃত্তিকা সংলগ্ন শুদ্ধ মানুষের অন্তহীন জয় পরাজয় ফুটে উঠে মানব ভাগ্যেরই অসহায় সত্য পরিণাম। ভাব কল্পনাকে ভাষা অনুসরণ করে। তার সরল অনাবিল ঐশ্বর্যে আমরা বিমোহিত হই।
হাসান আজিজুল হক আমৃত্যু আজীবন গল্পটি দীর্ঘ পটভূমিকায় রূপকের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যেমন তিনি এক জায়গায় করমালির জবানিতে বলেছেন– ‘কেউ মারতি পারে না। ওরে মারা যায় না কোনদিন।ম্ব এখানে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, গল্পে বর্ণিত সাপটি একটি বৃহৎ শক্তির প্রতীক। রূপকের আড়ালে তিনি যে সত্য উদঘাটন করেছেন তা এ গল্পের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আধুনিক বাংলা ছোটগল্পের ধারায় নিজের অবস্থান অত্যন্ত সুসংহত করেছেন হাসান আজিজুল হক। ছোটগল্পের সবগুলো বৈশিষ্ট্যই তাঁর গল্পে বিদ্যমান। তাঁর গল্প বলার ভাষা, শব্দ প্রয়োগ, কাহিনী বিন্যাস ও আঙ্গিক সহজ ও সাবলীল। বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষ, তাদের জীবনাচরণ, প্রান্তিক জনগণ, মৃত্যু, অদৃশ্য শক্তি ইত্যাদি তাঁর গল্পের উপজীব্য বিষয়। তিনি লেখেন কম, ভাবেন বেশী। যা লিখেছেন, তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ গল্পই শক্তিশালী ও বাস্তবকে আশ্রয় করে রচিত। হাসান আজিজুল হক মানিক বন্দোপাধ্যায় ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লারই সার্থক উত্তরাধিকারী।
অশ্রুকুমার সিকদার হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে বলেছেন– হাসান আজিজুল হক জগদীশচন্দ্র গুপ্ত ও মানিক বন্দোপাধ্যায় গোত্রজ গল্পকার। তিনি কোনো কোনো গল্পে–যেমন ‘সারা দুপুর বা ‘সুখের সন্ধানেম্ব– জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর জগতে প্রবেশ করতে চেয়েছেন, আবার কখনো–যেমন ‘জীবন ঘষে আগুনম্ব নামক অসামান্য গল্পে তিনি নিস্ময়করভাবে, অথচ স্পষ্টতই কমলকুমার মজুমদারের, ‘অন্তর্জলী যাত্রার কমলকুমারের ভাষারীতি ধার নিয়েছেন। এই সবই নিশ্চয় তন্ন তন্ন অনুসন্ধানের বিষয়, তবু জ্যোতিরিন্দ্র বা কমলকুমারের সঙ্গে এই লেখকের স্বভাবেই মিল নেই। তবু এই গল্পে বিশেষ করে কমলকুমারের অনুভূতি ও চিন্তার নিজস্ব মৌলিকতা ও বর্ণাঢ্যতা হাসান আজিজুল হকের মধ্যে সক্রিয় ছিল বলেই তিনি এই গল্পে কমলকুমারের ভাষার মডেল ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। অন্যত্র এই মডেল ব্যবহার করেননি। তিনি, যেমন আগেই বলেছি, জগদীশচন্দ্র ও মানিক বন্দোপাধ্যায় গোত্রজ। গোত্রজ, কিন্তু তিনি যা জেনেছেন, দেখেছেন, তাই দিয়ে এক বহুস্তর অভিজ্ঞতার জগতই শুধু তিনি রচনা করেননি, প্রেক্ষিতের স্বাতন্ত্রে গড়ে তুলেছেন এক নিজস্ব ভুবন; স্থাপন করেছেন এক নিজস্ব উপনিবেশ।
হাসান আজিজুল হক অনেকগুলো গল্পগ্রন্থের জনক। তাদের মধ্যে সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), নির্বাচিত গল্প (১৯৭৫, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭, লেখককৃত), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৯), রোদে যাবো (১৯৯৫), একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা (১৯৯৫), মা–মেয়ের সংসার (১৯৯৭), বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প (২০০৭)। কিশোর উপন্যাস–লালঘোড়া আমি (১৯৮৪)। নাটক– চন্দন কোথায় (১৯৮০)। বিচিত্র রচনা–চালচিত্রের খুঁটিনাটি (১৯৮৬), সক্রেটিস (১৯৮৬)। সম্পাদনা–জি সি দেব রচনাবলী (১৯৭৯, ৩ খন্ডে সমাপ্ত) ইত্যাদি অন্যতম।
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি