
ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : তরিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই পারিবারিক সূত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্নাত আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে এসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হন। বাগেরহাটের সন্তান ঢাকার একটি সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের হাল ধরে এগিয়ে চলেছেন। তিনি সেই এগিয়ে যাওয়া পথের পরিচয় তুলে ধরেছেন একটি সাক্ষাৎকারে।
ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ছাত্ররাজনীতিতে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
তরিকুল ইসলাম : জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর একটি প্রবন্ধে ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন- ‘ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বদানে নিজেকে গড়ে তোলা।’ (শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ১, পৃ ১৭৯) এজন্য তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার উপযুক্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন ১৯৯৪ সালের প্রথম থেকেই। নেত্রীর এই প্রত্যাশা অনুসারে ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আমি চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে। যে আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই সংগঠনে কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আর সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের সংগঠনকে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।
জগন্নাথের ছাত্রলীগের কমিটিতে বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপ বা উপগ্রুপ আছে। এটা কেন? গ্রুপিং-এর কারণে কি সংকট তৈরি হয়? সংকট হলে সমাধান কি?
তরিকুল ইসলাম : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে বিভিন্ন আঞ্চলিক উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়। তবে সেগুলো সৃষ্টি হয় নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে। এ আঞ্চলিক উপগ্রুপ সৃষ্টির সুবিধা হল ওই অঞ্চলের ছাত্রদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য গড়ে ওঠে। আর এ গ্রুপিংয়ে সামান্য সংকট সৃষ্টি হয়। তবে সেটা রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। নতুন কমিটি ঘোষণা হলে সে সংকট শেষ হয়ে যায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ও নেতা হিসেবে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ রক্ষায় আপনার ভূমিকা কি হবে?
তরিকুল ইসলাম : শুধু একজন ছাত্রনেতা হিসেবে নয় একজন ছাত্র হিসেবে আমি চাই ক্যাম্পাসে সব সময় শিক্ষার ভাল পরিবেশ বজায় থাকুক। আর একজন সাধারণ ছাত্রের চাহিদা হিসেবে আমি সব সময় শিক্ষার উত্তম পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের কাজ করে যাবো। শেখ হাসিনা ‘স্কুল জীবনের কিছু স্মৃতিকথা’( সাদা কালো) প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য ছিল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আন্দোলন করার জন্য। ছাত্র রাজনীতির এই ঐতিহ্য নষ্ট করার জন্য এবং আইয়ুব খানের আমলেই ছাত্র রাজনীতিতে অস্ত্রধারীদের মহড়া শুরু হয়। মেধাবী গরিব ছাত্রদের অর্থ দিয়ে ছাত্র রাজনীতি ধ্বংসের এই চক্রান্ত আজও বিদ্যমান।’ ক্যাম্পাসে অস্ত্রধারীদের মহড়া করিয়ে ছাত্র রাজনীতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হলে আমি তা প্রতিরোধ করে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করব।
ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ তৈরি সম্ভব কি? কীভাবে?
তরিকুল ইসলাম : সব সময় ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ তৈরি হয়। ছাত্ররাজনীতি হলো রাজনীতির প্রাইমারি লেভেল। আমি মনে করি যে নেতা অতীতে ছাত্ররাজনীতি করেননি তার রাজনীতি পরিপক্ব নয়। ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতির প্রকৃত শিক্ষা-অর্জিত হয়।
সারা দেশে বর্তমান ছাত্রলীগের কর্মকা- প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে কি? তারা কি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শ ধারণ করে?
তরিকুল ইসলাম : অবশ্যই সারাদেশে ছাত্রলীগের কর্মকা- প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা কর্মী বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শ ধারণ করে। আর যারা এ আদর্শ ধারণ করে না তারা তো ছাত্রলীগ না। ছাত্রলীগ মানেই তো বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা।
ছাত্ররাজনীতিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে আপনার করণীয় কি হবে? কর্মীদের আদর্শ ও নৈতিকতার শিক্ষা দিবেন কীভাবে।
তরিকুল ইসলাম : ছাত্র রাজনীতিকে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে আমি তা কঠোর হস্তে দমন করব। কেননা শৃঙ্খলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রধান শর্ত। যেখানে শৃঙ্খলা নেই সেখানে শান্তি থাকতে পারে না। আর যেখানে ছাত্রলীগের মূূলনীতি হল- শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি- সেখানে ছাত্রলীগ বিশৃঙ্খলা মেনে নিতে পারে না। বিভিন্ন বাস্তবধর্মী কর্মশালার মাধ্যমে ছাত্রলীগের কর্মীদের আদর্শ ও নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়।
বর্তমান সরকারের ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নে আপনার পক্ষ থেকে কোনো অবদান রাখা সম্ভব কি? কীভাবে?
তরিকুল ইসলাম : শেখ হাসিনা সব সময় বলে থাকেন, ‘জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমার রাজনীতি।’ আমি তাই মনে করি। বর্তমান সরকারের ভিশন ও মিশনে কাজ করার জন্যই তো আমি রাজনীতি করি। আমি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে দেশ ও দলের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেই। শেখ হাসিনা সরকারের ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নে আমি আমার জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি এবং করে যাবো ইনশাল্লাহ। আর দেশ ও জনগণের জন্য যে অবদান রাখার কথা তা আমার বুদ্ধি, পরামর্শ ও শ্রমের মাধ্যমে দিয়ে থাকি।
জাতীয় নির্বাচনে আপনারা কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন? তরুণ সমাজকে শেখ হাসিনার আদর্শ গ্রহণ করতে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবেন।
তরিকুল ইসলাম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অবদান সম্পর্কে জননেত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘সুশাসন কাকে বলে? যে-সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার মাধ্যমে মানুষের মনে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে এবং খাদ্যের অভাব দূর করতে পারে, নতুন কর্মসংস্থান করতে পারে তাকেই তো অল্প কথায় সুশাসন বলে। জনগণের সমস্যা দূর করতে পারলেই তো রাজনীতি জনগণের কল্যাণের জন্য করা বোঝায়। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই জনগণকে কিছু দিয়েছে। এদেশের মানুষ যা অর্জন করেছে তার সিংহভাগ আওয়ামী লীগের দেওয়া।’(কণ্ঠ আজিকে রুদ্ধ আমার, সবুজ মাঠ পেরিয়ে)
জাতীয় নির্বাচনে আমরা শুধু ছাত্রলীগের কর্মী নয় দেশের শিক্ষিত সচেতন নাগরিক হিসেবে এদেশ ও এদেশের জনগণকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই স্বপ্নকে প্রচার করব। আমাদের এদেশের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকারের যে কোনো বিকল্প নেই, সেটার বাস্তব চিত্র তুলে ধরব। আমরা বিভিন্ন প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের বিচিত্র বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেব এবং দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে যে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সরকারের কোনো বিকল্প নেই সেটা বুঝাতে চেষ্টা করব।
ভবিষ্যতে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান?
তরিকুল ইসলাম : জননেত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন- ‘আমরা শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের বিরোধী।’ তাঁর উৎসাহে বর্তমান শতাব্দীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য নতুন প্রজন্মের সাহসী সৈনিকরা অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছেন। আর জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগোপোযোগী নেতৃত্বের কারণে দেশ এগিয়ে চলেছে। আমার মতে, নেতা হবেন নরম তুলতুলে। সকল কর্মী নেতাকে ছুঁয়ে দেখতে পারবে- তিনি কেমন নেতা! আবার নেতার নির্দেশনায় থাকবে কঠোরতা। আমি ঠিক ওই রকম একজন নেতা হতে চাই, আমার কোনো কর্মী আমাকে ভয় পাবে না, তারা সবাই আমাকে ভালোবাসবে এবং শ্রদ্ধা করবে। আমার নির্দেশনাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।
(সংগৃহীত)