নিশি চৌধুরী, ১৪ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : বিনোদ বিহারী চৌধুরী! স্বপ্নে আলো দেখার পথ– এই পথে বাংলা ও বাঙ্গালি। এই পথে সূর্য সেন এবং বঙ্গবন্ধু সফল বিল্পবী। এই পথে চেগুয়েভার – ফিদেল ক্যাস্ত্র – এর চিন্তা চেতনার ভার
কবি, সাহিত্যিক বিদ্যুৎ কুমার দাশ এর সম্পাদিত বই ” আজন্ম বিপ্লবী বিনোদ বিহারী ” বইটিতে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী নিয়ে বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের হৃদয় স্পর্শক লেখা। তাঁরা তাঁদের জীবন চর্চায় ও সংস্কৃতি চর্চায় বিপ্লবী বিনোদ বিহারীকে ভেবেছেন। তাঁর জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় এ বইটি।
বিপ্লবী বিনোদ বিহারীর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লিখেছেন, ” ঋষিপ্রতিম কর্মবীরকে শ্রদ্ধা ” ” দেখতে দেখতে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী শতবছর পাড়ি দিয়েছেন। আজও তিনি সক্রিয় সংগ্রামী মানুষ। এমন ঋষিপ্রতিম কর্মবীর শততম জন্মদিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধা”।
বিপ্লবী বিনোদ বিহারীর শততম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ” বিনোদ বিহারী চৌধুরীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন” শিরোনাম দিয়ে লিখেছেন, ” দীর্ঘজীবনে বিনোদ বিহারী চৌধুরী অনেক দিয়েছেন আমাদের , বিল্পবের প্রয়াসে, অসহযোগ আন্দোলন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সকল সংকটে তাঁকে পেয়েছি যোদ্ধারূপে ”। বিপ্লবী বিনোদ বিহারীর কর্মজীবন নিয়ে লিখেছেন — রানা দাশগুপ্ত, নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, মাহবুবুল আলম, সত্যব্রত বড়ুয়া, ওমর কায়সার, খায়ের – উল – বশর প্রমুখ।
কবি আসলাম সানী বিনোদ বিহারীকে নিয়ে কবিতায় লিখেছেন, “বিপ্লবী বিনোদ বিহারী” বিপ্লবী চট্টলার মাটি / বিদ্রোহী সংগ্রামী ঘাঁটি / খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি / রক্ত স্নাত পরিপাটি / ভুলতে কি আর পারি? / সূর্য সেনের প্রীতিলতার / লাল আগুনের বাড়ি/ বিপ্লবী বিনোদ বিহারী/ সাক্ষী কালের সারথী”। কবিতাটিতে বিপ্লবী বিনোদ চৌধুরী, মাস্টারদা সূর্য সেনের, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এরাই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন – এরই সূত্র ধরে মুক্তিযুদ্ধ হয়। এই সব দীর্ঘ ইতিহাসের স্বাক্ষী আমাদের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী ভেসে ওঠে।
কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশ এর কবিতা ” বিল্পবে চির নূতন হাত ” কবিতায় লিখেছেন, ” আমি হারিয়েছি জীবনের পথ / মানুষের ঠিকানার পথ জানা নেই/ খসে পড়ার ভয় হই।/…… আমি শূন্য বেদনার পাখি / আপনার রাত্রিতে জনতা দেখি”। কবিতাটিতে কবি যখন নিজের জীবনকে নিয়ে দুঃখ – কষ্ট বেদনা– যন্ত্রণা অনুভব করেন তখন রাত্রে নীরবে বিপ্লবী বিনোদ বিহারীর আদর্শ জীবনী স্মরণ করেন। বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর নিজের লেখা থেকে বইটিতে ছাপা হয় – “আমার আমি” ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম সূর্য সেন ও সূর্য সাথিরা”, গ্রন্থের ভূমিকা, “আমার জেলজীবন শততম অনূভূতি”। বিনোদ বিহারী চৌধুরীর উপর অপ্রকাশিত সাক্ষাতকার রাজীব মীরের “বিশ্বাস করতাম করো নয় মরো” আরো আছে – মাস্টারদা সূর্য সেন এর ঐতিহাসিক রচনা, বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধার্য সংবর্ধনাপত্র, বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী, প্রয়াস সংবাদ ও শোকবার্তা, ছবির অ্যালবাম ।
সুপ্রিয় পাঠক, কবি বিদ্যুৎ কুমার দাশের সম্পাদিত বই ’আজন্ম বিপ্লবী বিনোদ বিহারী’। বইটি সম্পাদন করতে কবি বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। প্রথমত, বিভিন্ন লেখকের লেখাগুলো সংগ্রহ করতে হয়। দ্বিতীয়ত, একজন থেকে কিছু ছবি সংগ্রহ করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে। তৃতীয়ত, একজন উদাসীন কবি পান্ডুলিপিটা একটু দেখবে বলে প্রায় দু’বছরের জন্য উধাও হয়ে লেখাগুলো নিয়ে যায়। চতুর্থত, আর্থিক সংকট সহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। সব সমস্যা বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির মহোদয়ের সহায়তায় জুন ২০১৭ “আজন্ম বিপ্লবী বিনোদ বিহারী” বইটি প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয়তে নির্দ্বিধায় সব স্বীকার করেন বিদ্যুৎ কুমার দাশ।
অসাধারণ গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিদ্র, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা তারুণ্যের আলো সজীব ওয়াজেদ জয়কে উৎসর্গ করা হয়।এই উৎসর্গ ব্যক্তিগত কোন সুযোগ সুবিধার জন্য নয় শুধু ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন নিদর্শন। খুব রঙিন মোড়কে বইটি বাঁধাই করা হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছেন রবিউল হোসেন রবি। মূল্য ৫০০ টাকা মাত্র, প্রকাশক পালক (যাযাবর মিন্টু)।
আমি খুব আনন্দের সাথে বইটি পড়েছি। আশা করি আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করার জন্যে হলেও বইটি আপনারা পড়বেন। জয় হোক বিনোদ বিহারী চৌধুরী — ধন্য হোক বিদ্যুৎ কুমার দাশ।
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি