![বাংলা সাহিত্যের ছোট গল্পে মুক্তিযুদ্ধ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/12/22/hasan-azizul_116414.jpg)
মেহেরুন্নেসা মেরী, ২২ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্তের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের ভাঙ্গন, পারিবারিক জীবনে স্থিরতার অভাব ইত্যাদি বার বার ওঠে এসেছে এ সময়ের গল্পে। স্বাধীনতা–পরবর্তী ছোটগল্পে সক্রিয় লেখকদের অনেকেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ফলে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তাঁরা অনেকেই ছিলেন সমৃদ্ধ। হানাদার বাহিনীর নির্যাতন–নিপীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধ ও যুদ্ধ গল্পকারদের অনুপ্রেরণার উৎস। মুক্তিযুদ্ধ আমাদেরকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে, আমাদেরকে সাহিত্য জগতে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ গৌরব ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন । আমাদের সাহিত্যের উৎকর্ষে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখে মুক্তিযুদ্ধ । তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী নিয়ে নানা ধরনের সাহিত্য–সৃষ্টির প্রবণতা। আর এই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন পর্যন্ত সাহিত্য–সৃষ্টিতে অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায় ।
বাংলা কথাসাহিত্যে বিশেষ করে ছোটগল্পে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক প্রতিফলন লক্ষণীয়।সৃজনশীলতার প্রশ্নে একটি জাতির আশা–আকাঙক্ষা সম্পর্কিত থাকায় আর্থ–সামাজিক, রাজনৈতিক–সাংস্কৃতিক মুক্তির স্বার্থে একীভূত হয়েছে অস্তিত্বের লড়াইয়ে। বিভিন্ন সময়ে ঔপনিবেশিক শক্তির দীর্ঘ ও ধারাবাহিক শাসন–শোষণে ভঙ্গুর আর্থ–সামাজিক অবস্থায় নিমজ্জিত বাঙালির মধ্যবিত্ত মানস যুদ্ধকালীন সময়ে দুটি বিপরীত দর্শন অবলম্বন করে পষ্ট হয়। প্রথমত ধর্মীয় ভীরুতা, স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধাবাদী নীতি গ্রহণ ও তোষণের সনাতন রূপ এবং দ্বিতীয়ত সমস্ত পঙ্কিলতা ও সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তীর্ণ হবার চেতনা। প্রথম ধারার সমর্থকরা সত্য ও যুক্তিনিষ্ঠ দ্বিতীয় ধারার বিপরীতে অবস্থান করলেও ঘটনার প্রবহমানতা ও প্রতিক্রিয়ায় একসময় মুক্তিকামী চেতনায় মিলিত হয়। হাসান আজিজুল হকের গল্প গ্রন্থ নামহীন গোত্রহীন, জহির রায়হানের সময়ের প্রয়োজনে সেলিনা হোসেনের পরজন্ম, দুই রকম যুদ্ধ, ’নতুন জলের শব্দ আবু রুশদের খালাস,আলাউদ্দিন আজ আজাদের স্মৃতি তোকে ভুলবো না,আবু ইসহাকের ময়না কেন কয় না কথা,আবদুশ শাকুরের ইশু,আবু জাফর শামসুদ্দীনের কালিমদ্দি দফাদার, আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিনের অল্পরী, আমজাদ হোসেনের কারবালার পানি, আবদুল মান্নান সৈয়দের ব্ল্যাক আউট, আবুবকর সিদ্দিকের ফজরালি হেঁটে যায়, ইমদাদুল হক মিলনের লোকটি রাজাকার ছিল, ইমতিয়াজ শামীমের মৃত্তিকা প্রাক পুরাতন, জাহানার ইমামের রায়বাগিনী,জ্যোতি প্রকাশ দত্তের আমৃত্যু, আজীবন, জুলফিকার মতিনের খোঁজা, নাসরীন জাহানের বিশ্বাস খুনি, পূরবী বসুর দুঃসময়ের অ্যালবাম, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মাধবপুরে, পৌষের আকাশে,বশীর আল হেলালের প্রথম কৃষ্ণচূড়া,বুলবুল চৌধুরীর নদী জানে মাহমুদুল হকের বেওয়ারিশ লাশ,মোহাম্মদ রফিকের গল্প কিন্তু সত্য নয় ইত্যাদি ।মুক্তিযুদ্ধের আবেগ, উপলব্ধি, তৎকালীন সামাজিক–রাজনৈতিক প্রেক্ষিত, মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা গল্পগুলোর নিবিড় পাঠে দৃশ্যমান হয় ।এই সব গল্প গুলোতে চিত্রায়িত হতে দেখি যুদ্ধক্ষেত্রের বাঙালির নিজস্ব উপলব্ধি। ফুটে ওঠে স্বাধিকার প্রশ্নে আত্মোৎসর্গকারী জনতার নির্লোভ মুখ। বিবৃত হয় এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধী ও পাক হানাদার বাহিনীর যৌথ যৌন লিঞ্ঝা। অপরাপর ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে সম্ভ্রম হারানো নারীর হৃদয় । লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও শক্তিশালী কল্পনার মিশেলে পুষ্ট গল্পগুলো আবেগসঞ্চারী বাক্য বিন্যাসে মূর্ত হয়ে ধরা দেয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত যাবতীয় হতাশা, দীর্ঘশ্বাস, আশা, প্রাপ্তি সহ নানাবিধ প্রপঞ্চ । লেখকদের শক্তিমত্তা, বুনন শৈলীতে শব্দ চিত্রে ভাস্বর হয় অসহায়–অনাহারী আমজনতার দীর্ঘশ্বাস ও দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস।কিছু কালজয়ী গল্পের আলোচনা একেবারে না করলেই নয়।হাসান আজিজুল হকের নামহীন গোত্রহীন গল্প গ্রন্থে মোট সাতটি গল্প রয়েছে। গল্পগুলো হচ্ছে–ভূষণের একদিননামহীন গোত্রহীন কৃষ্ণপক্ষের দিন আটক কেউ আসে নি , ফেরা, ঘরগেরস্থি । সাতটা গল্পের প্রতিটি গল্পের পটভূমি একাত্তর। এতো বাস্তব, অথচ একই সাথে এতো রুক্ষ রক্তাক্ত আর মর্মম্পর্শী প্রতিটা গল্প– বুকের ভেতরে দাগ কেটে যায় । পূর্বে হয়তো বেদনার্ত হয়েছি, বা সমব্যথী– কিন্তু এমন কদর্য চোখে একাত্তর দেখালেন আজিজুল হক, ছোট গল্পে বাংলাদেশে আর কেউ এমন করে পেরেছেন কিনা আমার জানা নেই। হাসান আজিজুল হকের আটকগল্পটি যুদ্ধক্ষেত্রের আরেক বাস্তবতা নিয়ে বিকশিত। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে বাঙালি যোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে দিশেহারা পাকসেনারা। রাতের আঁধারে তাদের পশ্চাদপসরণ নিখুঁতভাবে বিবৃত হয়েছে । তার ভূষণের একদিন গল্পে পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার নির্যাতনে বাঙালির বিধ্বস্ত জীবনের চিত্র ও বাঙলার প্রত্যন্ত জনপদের বিবর্ণ ছবি ফুটে ওঠে। গল্পে তিনি যুদ্ধ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরের বাস্তব অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন । নামহীন গোত্রহীন গল্পটি বিকশিত হয়েছে থমথমে ও ভয়াবহ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক বর্বরতার ছবি তিনি এ গল্পে শিল্পসম্মত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেনামের এক চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে । গল্পটি মুক্তিযুদ্ধ প্রেক্ষাপটে রচিত অপরাপর গল্পের ভেতর ভিন্নতা নির্দেশক ।
হানাদার বাহিনীর মানবতা বিরোধী হত্যা–নির্যাতন ও দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া এক যুবকের বীরত্ব গাঁথা নিয়ে রচিত জহির রায়হানের শ্রেষ্ঠ গল্প সময়ের প্রয়োজনে । গল্পের মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রের যুবক জীবনত্যাগী বীর সহযোদ্ধাদের কথা ভেবে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে আবার একই সঙ্গে পাকবাহিনীকে হত্যা করে উল্লাসে ফেটে পড়ে । গল্পের চূড়ান্ত পর্যায়ে সে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নিজের জীবনও উৎসর্গ করে। তবে ধরা পড়ার পূর্বে সে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধের কারণ অনুসন্ধান করে। গল্পটি একজন মুক্তিযোদ্ধার দিনলিপি হিসেবে ধরা যায়। বাঙালি জাতি সেদিন কোন সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়েছে? বর্তমানের বাস্তবতায় দ্বিধান্বিত জাতির সামনে সেই সত্যটিই কি নানা মাত্রিকতা নিয়ে দৃশ্যমান নয়? গল্পটিতে লেখকের শক্তিমত্তা পূর্ণমাত্রায় সমর্থনযোগ্য ।
তারল্যপূর্ণ লেখকদের মতো মুক্তিযুদ্ধকে তিনি শুধু নারী লাঞ্ছনা হিসেবে দেখেননি । পাকসেনা ও এদেশীয় বর্বরদের যৌন লিঞ্ঝা যুদ্ধক্ষেত্রের একটি প্রপঞ্চ মাত্র। যে বাস্তবতা, আকাঙক্ষা নিয়ে একাত্তরের যুদ্ধে অংশ নেয় সাধারণ জনতা, তার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা–চেতনার প্রতিফলন গল্পটিতে পূর্ণমাত্রায় উপস্থিত ।
প্রায় সমজাতীয় বাস্তবতা নিয়ে রচিত হারুন হাবীবের লাল শার্ট গল্পটি । কামালপুর নামের এক অখ্যাত অঞ্চলের রণক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থা এ গল্পে পূর্ণরূপে ফুটে ওঠে। এলাকার পাকিস্তানি ঘাঁটির নিকটবর্তী মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কার পাহারারত জলিল, সতিশ ও মোতালেব নামের তিন মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এ গল্পে। পাকসেনারা বাঙ্কার আক্রমণ করলে তিনজনের একজনও ফিরে আসে না । পরদিন খুঁজতে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক বাঁশঝাড়ের মধ্যে স্থির বসে থাকতে দেখে সহযোদ্ধা তাহের । ওই আক্রমণে সতিশ ও মোতালেব নিহত হয়। জলিল আহত হলেও মৃত দুই সহযোদ্ধার অস্ত্র দুটি যুদ্ধের কাজে লাগবে বলে সে সঙ্গে নিয়ে আসে । জলিলও ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে এগুতে থাকে । এ সময় তার মনে পড়ে মা আর বোনের কথা। যাদের না বলে সে যুদ্ধে অংশ নেয় । স্বাধীনতা প্রত্যাশায় জীবন উৎসর্গকারী এই যুবক যোদ্ধা জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও নিহত সহযোদ্ধাদের অস্ত্র, তাদের রক্তাক্ত লাল শার্টের ছেঁড়া অংশ বহন করে দেশমাতৃকার প্রতি অগাধ ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষ দেশ মাতৃকার সম্মানই গল্পে নিখুঁত ভাবে উঠে আসে ।
সেলিনা হোসেন তার পরজন্ম গল্পে যুদ্ধ যন্ত্রণায় নিঃসঙ্গ ও বেদনা জর্জরিত এক পিতার করুণ আর্তি তুলে ধরেছেন । বৃদ্ধ কাজেম আলীর মুক্তিযোদ্ধা চার সন্তান এক অপারেশনে গিয়ে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তার চোখের সামনেই পাকসেনারা তাদের গুলি করে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর নিঃসঙ্গ কাজেম আলীর স্ত্রী পুত্রশোকে মারা গেলে বৃদ্ধ কাজেম আলী আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে ।
গল্পকার সেলিনা হোসেনের ‘অনূঢ়া পূর্ণিমা’ গ্রন্থের ’দুই রকম যুদ্ধ’ গল্পে নূর জাহান দেশের স্বার্থে নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করেছে । শারীরিক অত্যাচারও দেশের স্বার্থে, স্বাধীনতার জন্য তুচ্ছজ্ঞান করেছে । এ দেশের স্বাধীনতার জন্য পুরুষের পাশে নারীরাও কতটা সক্রিয় ছিল, সে সত্যই এখানে চিত্রিত। যুদ্ধের সময় পুরুষের মতো নারীরাও যে যেভাবে পেরেছে দেশকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করেছে।সমাজে বিত্তশালী আর নিপীড়িত নিম্নবিত্ত শ্রেণির দ্বন্দ্ব চিরায়ত । বিত্তবানরা বরাবর গরিবদের অসহায়ত্বকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে । সাধারণ মানুষ এসব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে । ‘খোল করতাল’ গ্রন্থের ’নতুন জলের শব্দ’ গল্পে দেখা যায় অসহায় বৃদ্ধ মকবুল পাটারী তার মালিকের জমি চাষ করে। নতুন ফসল উঠলে মালিকের ঘরে তোলে। মকবুল খেতে পায় না। সন্তানদের ঠিকমতো পোশাক–খাবার দিতে পারে না। সেলিনা হোসেন সমাজের এই আবহমান বৈষম্যের বাস্তবতাকে তার গল্পে স্থান দিয়েছেন বিশ্বস্ততার সঙ্গে । গ্রাম–সমাজের দৈনন্দিন জীবন কাহিনী তার ছোটগল্পের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ । তিনি দক্ষ শিল্পীর মতো সমাজ ও মানুষের বিচিত্র প্রবণতার প্রবল প্রাচীরের ছবি আঁকেন আপন মনে, নিপুণ হাতে ।রেইনকোট গল্পটির বিষয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের মারদাঙ্গা বর্ণনা এতে নেই। তবে আছে বর্ণনার ঘনঘটা। সে বর্ণনা পরিবেশ পরিস্থিতিকে জীবন্ত করে তুলেছে। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গল্পটি এগিয়ে গেছে । গল্পটি শুরু হয়েছে নিস্পৃহ ভঙ্গির বর্ণনার মাধ্যমে— ‘ভোররাত থেকে বৃষ্টি। আহা! বৃষ্টির ঝমঝম বোল । এই বৃষ্টির মেয়াদ আল্লা দিলে পুরো তিন দিন । কারণ শনিতে সাত মঙ্গলে তিন, আর সব দিন দিন ।’ যা পড়ে বোঝার উপায় নেই এর মাধ্যমে যুদ্ধের একটা পটভূমি তৈরি হচ্ছে । ‘দেশলাইয়ের কাঠির মতো রোগা পটকা শরীরের উপর ফিট করা ভিজে বারুদের মতো ছোট্ট মাথা ঝাঁকিয়ে ইসহাক আরও তিনবার সম্মতি দেয় জরুর! জরুর! জরুর।’– দরজায় দাড়িয়ে পিওন ইসহাকের এরূপ শারীরিক বর্ণনা আর তার পাকিস্তান প্রীতির কথা বলতে বলতেই তিনি গল্প নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রবেশ করেছেন ।
ছোটগল্প লেখকরা নানা রৈখিক চিত্র অঙ্কনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলোকে মাত্রিক, ব্যঞ্জনা ঋদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনা কর্তৃক নারী ধর্ষণের চিত্র অঙ্কনের পাশাপাশি তুলে ধরেছেন বাঙালি নারীর গুপ্তচরবৃত্তির সফল কাহিনী। নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে পাকসেনাদের নিষ্ঠুরতা মেনে নিয়েছে আবার বিষধর ছোবল দিয়েও তাদের প্রাণ সংহারে ব্রতী হয়েছে । পাকসেনাদের নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা এবং সন্তান প্রসব করে মাতৃত্বের অপমানের প্রতিশোধ হিসেবে সেই সন্তানকে মেরে ফেলার দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গল্পে। শক্তিশালী গল্পকার শওকত ওসমান দ্বিতীয় অভিসার গল্পে এইভাবে বাঙালি নারীর প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবৃত্তিকেই সফলভাবে চিত্রায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছেন ।
অস্বীকার করা যাবে না, যুদ্ধ মানে ধ্বংস আর মৃত্যুর বিভীষিকা । তারপরও যুদ্ধ মানেই মুক্তি–শান্তি এবং যুদ্ধ মানেই স্বাধীনতা । মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির একটি ঐতিহাসিক বেদনা বিধূর অধ্যায় আবার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনও । কিন্তু আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর যুদ্ধের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে । জাতীয় অর্থনীতিতে তির পরিমাণ বেড়ে যায় । এ কথাও সত্য যে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ে আমাদের চেতনাও হয়েছে শাণিত। গতিশীল হয়েছে ছোট গল্পের মাধ্যমে আমাদের এই বাংলা সাহিত্য।
তথ্য সূত্র:
হাসান আজিজুল হকের ছোট গল্প পর্যালোচনা– মেহেরুন্নেসা মেরী, বাংলাদেশের ছোট গল্পে মুক্তিযুদ্ধ– মাহাবুবুল হক, বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ– আনিসুর রহমান এরশাদ। (সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি