![আজাদ বুলবুল অর্ধেক পেরিয়ে](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/12/23/azad-bulbul_116631.jpg)
কাজী সাইফুল হক, ২৩ ডিসেম্বর, এবিনিউজ :
ক.
গাজী গোলাম মাওলার চেয়ে আজাদ বুলবুল অনেকটে মুক্ত, মশহুর, প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত। আজাদ বুলবুল বাংলাভাষা ও সাহিত্যের লোক; বাংলা বিভাগেরই শিক্ষক। বাংলা সাহিত্যের প্রমিত তথা শিষ্ট–মানুষ তিনি। সাহিত্যে সজ্জিত, চর্চিত ও সমন্বিত একটি জাঙ্গাল মানুষটির আছে।
আজাদ বুলবুল চিন্তক; সেই হেতুতে বিরলপ্রজ পাহাড়ি ভাবুকও! পাহাড় এবং পাহাড়ি সংস্কৃতি নিয়ে আজাদ বুলবুলের পাহাড়সম সৃষ্টিপ্রসব না থাকলেও; ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’– প্রবাদকে বুলবুল তরফে ফিরিয়ে উপস্থাপন করা যায়। ‘মূষিকের পর্বত প্রসব’–বুলবুলের বেলায় মৌলপাঠ প্রবাদকথা। তার সমগ্র রচনায় বিস্ময়প্রবণ সমাজ এবং চৈতনিক জীবনবোধ অনেকখানে ঝরিয়েছে প্রস্রবণধারা–নিঃশঙ্কে বলা যায়। অন্যূন, তার পাহাড়ঘেঁষা সংস্কৃতি ও পাহাড়যাপিত রচনাকে ছুঁয়ে দিতে পারেণ্ড এমন মার্তণ্ড ও প্রতাপী লেখক–ভাবুক দু’চারটে খুঁজে পাওয়া মুশকিল! পাহাড়–আশ্রিত জনগোষ্ঠীর আর্থ–সামাজিক, রাজনৈতিক স্থিতি ও পরিস্থিতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে স্বভাবআলস্য আকর–শ্রমবিমুখতা আজাদ বুলবুলের চিন্তনে যেমনটে অদৃষ্ট; তেমনটে রচনেও পরিদৃষ্ট নয়। এখানে তিনি কর্মযোগি, কাজের মানুষ! খাঁটি পর্যেষক। সরঙ, সঢঙ ও কথাসাজে মানুষের যাপনিক অনিবার্য ধারাকে গুছিয়ে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বুলবুলের অসংকোচ সাহস প্রত্যক্ষ –পর; তার সহিসসম সাহস দেখি পাহাড় রচনে! এবং আজাদ বুলবুল রচনায় স্বপ্রতিভ হয়ে ওঠেন পার্বত্য অঞ্চলের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে। তিনি ঈমানে–বিশ্বাসে ধারণও করেন ফেরিকরা পাহাড়ি লোকমানস। পাহাড়–প্রধান পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের ব্যতিক্রমী জীবন–জীবিকা, রীতি–পদ্ধতি, সংস্কার–সংস্কৃতি, শিষ্টাচার–লোকাচার; যার রঙ–রূপ নাগরিক মধ্যবিত্ত মানুষের অনেকটে অচেনা ও অজ্ঞাত। সেই অজ্ঞাতনামায় বিম্বিত হয়েছে পাহাড়িয়া কথাসাহিত্য। তাই বুলবুলের পাহাড়ি লেখাজোখায় স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন কাজের খুশবো অনুভব ও মনোভব দুই–ই সম্ভব।
এ জা’গা থেকে আমরা বলতেই পারিণ্ড কথাসাহিত্যিক আজাদ বুলবুল পাহাড়েই সুন্দর, মনোহর ও তমোহর। পর্বত–পাহাড়েই গাজী গোলাম মাওলা সত্যি সত্যিই গাজী! সত্যিই পাহাড়–প্রধান আঞ্চলিক সাহিত্যে আজাদ বুলবুল একবার গোলাম, দু’বার গোলাম, অশেষবার গোলাম! পাহাড়িয়া সংস্কৃতিতে সহজিয়াধন্য আজাদ বুলবুল ক্রমেই পাহাড়কে রাঢ় করেন কিনা; সেইটে শেষতক দেখবার বিষয়। একটা সময় তিনি পাহাড়ের সাথে ঘর–গেরস্থালি করেছিলেন। মাঝখানে শাহরিক নাগরিক হলেও তার চিন্তার নাচা–গানায় পাহাড় চাপা পড়েনি। পাহাড়ের বিচিত্র যাপন তার দিল্কলমে ধরিয়েছে দিওয়ানা। যা লিখছেন পাহাড়কে আশ্রয় করে এবং পাহাড়ে আশ্রিত হয়েই লিখছেন। তার এমফিল অভিসন্দর্ভের বিষয়ও পাহাড়! এ অভিসন্দর্ভের মুদ্রিত রূপ তাকে দিয়েছে ডিগ্রি–পিএইচডি। সুতরাং পাহাড়–প্রধান অঞ্চল ও আঞ্চলিক সাহিত্যে আজাদ বুলবুল আমাদের কাছে হয়ে ওঠেন মাত্রাধিক দাতা ও ত্রাতা।
খ.
‘পঞ্চাশের হাওয়ায় আজাদ বুলবুল’– প্রামাণ্যগ্রন্থ একটি। জীবিতজীবনে নিবেদিত গ্রন্থ–রচন এবং এর শুদ্ধাশুদ্ধি নিয়ে বিদগ্ধজনের খোঁচা ও তেরছাকথা অবশ্য আছে। এ নিয়ে ছোটোখাটো আলপিন খোঁচার দাবিণ্ড ন্যায্য না হলেও অপলাপও নয়। তবুও জৈবনিক–প্রামাণ্যগ্রন্থ নামীয় প্রশংসার অক্ষর–বাক্যপথ জ্যামমুক্ত দেখা যায়। হরহর করে চল্লিশ–পঞ্চাশ–ষাটে সকূলমূলকগ্রন্থ লাভে মানুষ আটঘাঁট বাঁধেন, নামেন; গ্রন্থও প্রকাশ করেন। আবার সম্পাদকীয়তে বুধোর ঘাড়ে পিণ্ডি চটকাতে বিলম্ব–মুহূর্ত করেন না! এসব বইয়ের সম্পাদকীয়গুলো মাত্রই উকিল কর্তৃক মুয়াক্কিলকে শিখিয়ে দেয়া সুনিপুণ বাহানা বলেই জানি। বেমক্কা মাঝপথে এমতই বাঁকাকথা বলার অবশ্য করণ ও কারণ আছে কিছুটে। গুচ্ছ গুচ্ছ এমন দৃশ্য দেখা এবং সেই হেতুতে বিশ্বাস ও আগ্রহ কোনোটেই প্রবল নয় তাই, এমন উটকো বয়ান!
আজাদ বুলবুলের ঢাউস সাইজের প্রামাণ্যগ্রন্থ নিয়ে অনেকের আগ্রহ ও উৎসুক্যতা দেখার সুযোগ হয়েছে অনেকেরই। ভংচং নয়ণ্ড যতটুকু জানি, আজাদ বুলবুল নিবেদিত–গ্রন্থের জন্য ভক্ত–অনুরক্তই বিরক্ত করেছেন বেশি। তেলানি ও জ্বালানির ভাগে–ভাঁজের সাম্প্রতিক সময়ে আজাদ বুলবুলকে মুক্তই মনে হচ্ছে আমাদের। পাহাড়দরদি আজাদ বুলবুল কেন্দ্রিক প্রকাশনা একটি হিল ট্র্যাক্টস্ ফাউন্ডেশন প্রয়াস যে, বইটি পাঠ করলেই বুঝা যায়। বইটি তার প্রতি অতলশ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অনন্য স্মারক।
গ.
‘পঞ্চাশের হাওয়ায় আজাদ বুলবুল’ গ্রন্থে গুণে গুণে লিখেছেন ৭১ জন গুণী–জিনি লিখিয়ে। প্রাজ্ঞ–অভিজ্ঞ লিখিয়ের পাশে আনকোরা লিখিয়েও আছে বেশ। নবতর লিখিয়েদের লেখা পাঠে একবারও মনে হয়নি, তারা হাতমকশো লিখিয়ে! বুলবুলের ৫০ উদযাপনীগ্রন্থের সিংহভাগ লেখা পাহাড়ি হাওয়া মিশ্রিত।
সাক্ষাৎকার আছে দুটো। অনুমিত অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন তিরিশজন বুলবুল প্রিয়জন। মত–অভিমত ব্যক্ত করেছেন চারজন বরেণ্যজন।
৩৯ পৃষ্ঠাজুড়ে আছে আজাদ বুলবুলের কর্মের কিয়দংশ। টোটাল সাহিত্য কর্মের ম্যাপও আছে ছয় পৃষ্ঠাজুড়ে। আছে জীবনালেখ্যও। আজাদ বুলবুলের পঞ্চাশি হাওয়া; হাওয়া হয়েছে আলোকচিত্র দিয়ে।
বইটি জনাপাঁচেক সম্পাদক সম্পাদিত। ‘হিল ট্র্যাক্টস্ ফাউন্ডেশন’ (এইচটিএফ) সংগঠনের ব্যানারে প্রকাশ পায় ২০১৫ খৃস্টাব্দের জুলাইয়ে। প্রচ্ছদ করেছেন দীপক দত্ত। প্রতিকৃতি এঁকেছেন কৃতীজন গৌতম পাল। বইয়ের মূল্য হয় না, তাই বিনিময় হিসেবে চেয়েছেন চারশত টাকা।
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি