![রুম নং-৩০৩](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/17/room-303_121142.jpg)
রহমান রনি, ১৭ জানুয়ারি, এবিনিউজ : দুপুর ১টা বাজে। আমি আর আদিল ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারে বসে আছি। আমাদের নিতে লোক আসার কথা কিন্তু এখনো এলো না। আমি যতটা বিরক্ত আদিল ততটা বিরক্ত নয়। সে এসব বিরক্তির ব্যাপারে ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। গোয়েন্দাদের সব ব্যাপারে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়।
‘তুমি কি খুব বিরক্ত হচ্ছো?
‘না। তবে খুব ক্লান্ত।
‘অভ্যস্ত হয়ে যাও গোয়েন্দাগিরি করতে হলে অনেক কিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। যেকোন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এর আগে কক্সবাজার কতবার এসেছো?
‘৮–৯ বার তো হবেই।
‘সমুদ্র দর্শনের মোহ ভালোই আছে দেখছি।
‘তা আছে বলতে পারো। তবে এবারের আনন্দ ভিন্ন হবে বলতে পারি।
‘কেন?
‘তোমার মতো একজন গোয়েন্দার সাথে গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছি। এটা কতো উত্তেজনা সৃষ্টি করছে বুঝতেই পারছো।
‘আদিল মুচকি হাসলো। হোটেল করিম ইন্টারন্যাশনাল এর দু’জন লোক আমাদের নিতে আসলো।
‘আমরা ৪ জন টমটমে উঠলাম। ব্যাগ নিয়ে হোটেলে রওনা দিলাম। কড়কড়ে রোদ মাঝে মাঝে খুব ভালো লাগে। ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা হোটেলে পৌঁছালাম।
হোটেল ম্যানেজার আমাদের স্বাগত জানালেন। স্যার আপনারা বসুন আমি চা পাঠাচ্ছি।
‘আদিল আর আমি হোটেলটা একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। আদিল এখন হোটেল ব্যবসা খুব জমজমাট। টাকা থাকলে আমিও একটা হোটেল খুলে বসতাম।
‘যতটা সহজ ভাবছো ততটা সহজ নয়।
‘কেন? টাকা থাকলে সব এমনিতে হয়ে যায়।
‘ভুল বললে বন্ধু। বর্তমানে টাকার সাথে পেশিশক্তির মিশ্রণ না ঘটলে কিছুই হয় না।
‘হয়তো। চা শেষ হতেই ম্যানেজার আসলো।
‘স্যার আপনাদের রুম নাম্বার ৩০৩ দিবো নাকি অন্য কোন রুম?
‘আমি আদিল এর দিকে তাকালাম। সে ৩০৩ রুমটাই দিতে বললো। স্যার আমার ধারণা ছিলো আপনি ৩০৩ থাকবেন তাই রুম গুছিয়ে রেখেছি।
‘ভালো।
‘স্যার আপনারা ফ্রেশ হয়ে আসেন। লাঞ্চের পর আপনাদের সাথে কথা বলবো।
‘ওকে। আমরা রুমের চাবি নিয়ে তিন তলায় উঠে গেলাম। গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছি বটে কিন্তু কাজটা কি তা এখনো ক্লিয়ার হলাম না।
‘তিনটায় আমরা ফ্রেশ হয়ে হোটেলের লবিতে বসলাম। ম্যানেজার আমাদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। রুই, কোরাল, রুপচাঁদা, মাংস এবং হরেককরম ভর্তা দিয়ে খেলাম। খাবারে যত্নআত্তি ভালোই করেছে। সাদা ভাত আর শুটকি ভর্তা ছিলো এক কথায় অসাধারণ। খাওয়ার পর আমরা আবার লবিতে বসলাম। বয় তিনকাপ চা দিয়ে গেলো। ম্যানেজার আমাদের সামনের সোফায় বসলেন। এখন শুধু আমরা তিনজন আছি।
‘স্যার আমার নাম লুৎফর রহমান। এই হোটেলে তিনবছর ধরে ম্যানেজার পদে আছি। আমার ব্যবস্থপনা নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ বা কাস্টমারের কোন অভিযোগ নেই।
‘আদিল আর আমি দুটো সিগারেট ধরালাম। মনযোগ দিয়ে ম্যানেজারের কথা শুনতে লাগলাম।
‘স্যার আপনাকে যে প্রবলেমের জন্য ডেকেছি তা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
‘সহজভাবে আপনার মতো করে বলুন। আদিল বললো’
‘আপনাকে তো ফোনে বলেছি রুম নাম্বার ৩০৩ অপয়া হয়ে গেছে। কেউ থাকতে চাই না। যারা থেকেছে তারা ভয়ে আতংকে মধ্যরাতে হুলুস্থুল কাণ্ড করে বসে।
‘কেন?
‘স্যার রুম নাম্বার ৩০৩ এ ভূত আছে। অনেকের দম বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের অনেক রকম সমস্যা হয়েছে। স্যার যদিও আমি ভূতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু সবার কথাশুনে মনে হচ্ছে সত্যি ভূত আছে। আমিও একবার রাতে রুমে থেকে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ফলাফল একই।
‘আদিল সিগারেট ধোঁয়া ছাড়লো। তা ভূতটা কেমন এবং কি করে তা তো বললেন না।
‘রাত যখন গভীর হয় তখন হঠাৎ বাথরুমে পানির শব্দ হয়। মনে হয় যেন বালতিতে পানি নিয়ে কেউ খেলা করছে। আর রুমের সুইচগুলো কে যেন অফ–অন করে কিছুক্ষণ পর পর। তাছাড়া বারান্দায় স্পষ্ট হাঁটার শব্দ শোনা যায়। তার চেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো মাঝে মাঝে রুমে মানুষের ছায়া দেখা যায়। এ পর্যন্ত দু’জন অজ্ঞান হয়ে গেছে এবং তিনজনের অধিক দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
‘ম্যানেজার সাহেবের কথা শুনে ভয়ে আমার ভেতরে কাঁপুনি হচ্ছে। রাতে ঐ রুমে থাকতে হবে সেটা ভাবতেই পিঠ দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
‘কতোদিন ধরে এমন হচ্ছে?
‘প্রায় দুই মাস।
‘হুম, তা মানুষের ছায়া কি সবাই একই রকম দেখে নাকি ভিন্ন?
‘তা তো স্যার জানি না।
‘কয়েকটা ঘটনা বলুন। যারা ভয় পেয়েছে তাদের জবানবন্দি বলুন।
‘কিছুদিন আগে এক কাপল রুমটা ভাড়া নিয়েছিলো। তারা হানিমুনে এসেছিলো। প্রথম রাতটা ভালোই ছিলো। ২য় রাতে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে রুমে গেলাম। দেখলাম– উনার বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে আর স্বামীর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সকালে জিজ্ঞেস করলাম রাতে কি হয়েছিলো?
‘উনারা বললেন, রাত ২টার দিকে উনার স্ত্রী বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠলেন– তখন রুমে মানুষের ছায়া দেখলেন। এবং বাথরুমে পানি নড়াচড়ার শব্দ হচ্ছিলো। কিন্তু উনার হাজবেন্ড বিছানায় ঘুম ছিলো। এটা দেখে উনি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। স্বামীর ঘুম ভাঙ্গার পর উনি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। উনার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।
‘হুম।
‘আরেকবার ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকা থেকে একটি পরিবার এসেছিলো। স্বামী–স্ত্রী এক রুমে আর উনার তিন মেয়ে ৩০৩ নাম্বার রুমে ছিলো। রাত তিনটা ২৫ বা ৩০ দিকে জানালায় খুট খুট শব্দে বড় মেয়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন সে স্পষ্ট বাতি অফ–অন করার শব্দ শুনে। ফিসফিস করে কথা বলার শব্দও শুনতে পায়। সে ভয়ে অন্য বোনদের জাগিয়ে দেয়। তখন তারা রুমের দিকে কারো হেঁটে আসার শব্দ শুনে। ঠিক আগের ঘটনার মতো বাথরুমে পানি পড়ার শব্দ শুনে তারা ভয়ে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। পরে আমরা গিয়ে তাদের রুম থেকে বের করে আনি।
‘স্যার আর শুনবেন?
‘না। আচ্ছা লাইট অফ–অন এর যখন শব্দ হয় তখন কি লাইট জ্বলে–নিবে?
‘না স্যার। শুধু শব্দ হয়।
‘ওকে প্রয়োজন হলে আপনার সাথে কথা বলবো।
‘ওকে স্যার।
আমি আর আদিল হোটেল থেকে বের হয়ে সমুদ্রের দিকে গেলাম। বিচ থেকে দু’টো ডাব নিলাম। আদিল কেসটা কেমন মনে হচ্ছে?
‘অনেক সময় সহজ কেস অনেক জটিল হয়ে যায়। জটিল কেস সহজ হয়ে যায়।
‘পড়ন্ত বিকালে সমুদ্রের বালির উপড় হাঁটতে খুব ভালো লাগছে। দু’জনে একটা সিট ভাড়া নিয়ে সমুদ্র দর্শনে গা এলিয়ে দিলাম। বাতাসের সাথে সূর্যের হেলে পড়ার দৃশ্য সত্যিই চমৎকার। ছেলেমেয়েদের পানিতে দাপাদাপি দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেলো।
‘আদিল ভূতের ব্যাপারে কি ভাবলে?
‘চিন্তা করছি ঘটনায় ভালোই রহস্য রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন কেসে শেষ পর্যন্ত ভূতের অস্তিত্ব পায়নি। রাতে রুমে না থাকা পর্যন্ত ভালোভাবে বোঝা যাবে না। তোমার তো ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে। এতো ভয় পেলে কি গোয়েন্দার সাথে থাকা যাবে?
‘আমি হেসে ভয় লুকানোর চেষ্টা করলাম।
সন্ধ্যা হয়ে গেলো। একটু একটু ঠাণ্ডা লাগছে। দু’জনে রাত নাগাদ ঘুরাঘুরি করলাম। মাছের বারবিকিউ খেলাম। ইদানিং এ ব্যবসাটা বেশ জমে উঠেছে। টোনা মাছের বারবিকিউর স্বাদই অন্যরকম। শহরে এ মাছ তেমন পাওয়া যায় না। সমুদ্রে এসে সামুদ্রিক মাছ না খেলে কক্সবাজার আসায় বৃথা। রাতের খাবার খেয়ে রশুমে ফিরে এলাম। আমি বেশি খেলাম না। বদহজমে দুঃস্বপ্ন দেখার চান্স আছে। এমনিতে ভূতের ভয় তার উপড় খারাপ স্বপ্ন দেখলে তো আর রক্ষে নেই।
রাত ১০.৩০ মিনিট। বিছানাটা বড়ই আরামদায়ক। আমি আর আদিল বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছি। আর ভূতের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি যথেষ্ট উত্তেজনায় আছি। কিন্তু আদিলের সামনে সাহসের অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছিলাম। টিভি দেখতে দেখতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩.৩০ দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি লাইট অফ–অন করার স্পষ্ট শব্দ শুনলাম। মনে হচ্ছিলো রুমে অদৃশ্য ভাবে কেউ হাঁটছে। আমি চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। একটু পর বাথরুমে পানি পড়ার শব্দ পেলাম। যেন পানি নিয়ে কেউ খেলা করছে। ভয়ে আমি শিউরে উঠলাম। আমি আদিলকে জাগানোর চেষ্টা করলাম। আদিল আমাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললো। দু’জনে চুপচাপ কিছুক্ষণ পর পর পানি পড়ার ও লাইট অফ–অন করার শব্দ শুনছিলাম। হঠাৎ জানালায় কিসের জানি শব্দ হলো। ভয়ে আমি ঘামতে শুরু করেছি। বুকের মধ্যে অনবরত ড্রাম বাজছিলো। আদিল চোখ কান খাড়া করে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে কি হচ্ছে। ঠিক ৩০ মিনিট পর বারান্দায় হাঁটার শব্দ শুনলাম। শব্দ শুনে মনে হচ্ছিলো আমাদের রুমের দিকে কেউ হেঁটে আসছে। একটু পর হাঁটার গতি পাল্টে গেলো। এভাবে ঘণ্টাখানেক চলার পর আবার যখন বাথরুমে পানির শব্দ হলো তখন আদিল সাবধানে বাথরুমের সামনে দাঁড়ালো। আমিও তার পেছনে দাঁড়ালাম। আস্তে করে দরজা খুললো আদিল। কিন্তু বাথরুমে কিছুই ছিলো না। এক গ্লাস পানি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আর কি ঘটে তার জন্য অপেক্ষা করছি। একটু পর আজান দিয়ে দিলে আমরা আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এভাবে দু‘দিন কাটলো। আদিল যথেষ্ট গম্ভির হয়ে আছে। আমিও ভাবছি যদি কোন সাহায্য করতে পারি। পরেরদিন সকাল ১১টায় আমরা ফ্রেশ হয়ে টেবিলে খেতে বসলাম। ম্যানেজার আমাদের সাথে নাস্তার টেবিলে যোগ দিলো। ম্যানেজারের চোখ পিটপিট করছে। কিছু বলবে বলবে করে তার বলা হচ্ছে না। আদিল নাস্তা খাওয়া পর্যন্ত কোন কথা বললো না। চায়ের চুমুক দিয়ে বললো– রাতে কেমন ঘুম হয়েছে?
‘ম্যানেজার বললো ভালো। আপনাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
‘হয়েছে এবং সমাধানও করে ফেলেছি। আমি আদিল এর দিকে তাকালাম। তার কথা শুনে আমি নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছি। এর মধ্যে সে কিভাবে সমাধান করলো! আমিও ম্যানেজারের মতো রহস্য নিয়ে তার দিকে তাকালাম।
‘ম্যানেজার সাহেব আপনার ভূত তাড়াবার পথ আমি খুঁজে বের করেছি।
‘সত্যি বলছেন! বলুন স্যার।
‘প্রথমে পানির শব্দের কথা বলি। রুম থেকে বাথরুমে পানির নড়াচড়া শব্দ আমি আর রহমান স্পষ্ট শুনেছি। সত্যিই ভয়ের ব্যাপার। মনে হয় বাথরুমে সত্যি কেউ রয়েছে। আপনি কি জানেন আপনার হোটেলের পেছনে আরেকটি হোটেল হচ্ছে?
‘জানি স্যার।
‘রুম নাম্বার ৩০৩ এর বাথরুমের ঠিক আই এঙ্গেল এর একটু উপরে ওখানে আর একটি বাথরুম হচ্ছে। আগে ২ সিফট কাজ চলতো। কিন্তু বর্তমানে শুধু রাতের সিফটে কাজ চলে। যেহেতু এটি পর্যটন এলাকা তাই ওরা চুপচাপ কাজ করে যেন কারো সমস্যা না হয়। কাজের জন্য ওদের পানি ব্যবহার করতে হয় এবং ওরা সন্ধ্যা থেকেই পানি ব্যবহার করে। কিন্তু আমরা শুনতে পাই না। কারণ তখন চারপাশে মানুষ আর যানবাহনে মুখরিত থাকে। তাই পানির শব্দ আমাদের নজরে আসে না। আর রাত যখন বাড়তে থাকে অর্থাৎ মধ্যরাত– তখন সুনসান নীরবতায় পানির শব্দ ৩০৩ রুমে এমনভাবে শোনা যায় মনে হয় বাথরুমে কেউ রয়েছে। দু’টো বাথরুম কাছাকাছি হওয়ার কারণে এমনটি হয়। এ হলো আপনার পানির রহস্য। আদিল সিগারেট জ্বালালো। আমরা এর মধ্যে আসা নতুন করে চায়ে চুমুক দিলাম।
‘ এবার আসুন মানুষের ছায়া দেখার ব্যাপারটায়। ম্যানেজার সাহেব ৩০৩ রুমে কয়টি লাইট বলুন?
‘স্যার ৩টি।
‘আপনি ঘুমালে কোন লাইটটি জ্বালিয়ে ঘুমাবেন?
‘ম্যানেজার চিন্তায় পড়ে গেলো। আমি বলছি শুনুন– রুমের ডান পাশের দেয়ালে হলো এনার্জি লাইট। এনার্জি লাইট জ্বালিয়ে কেউ ঘুমাবে না। তারপর বামপাশে হলো ৫ ওয়াটের ড্রিম লাইট আর মাথার উপরে রয়েছে আর একটি ড্রিম লাইট কিন্তু ওটার আলো একটু কম। ঘুমানোর আগে বেশিরভাগ মানুষ মাথার উপরে ড্রিম লাইটটি জ্বালিয়ে ঘুমায়। ঐ লাইটের আলো দেয়ালের সামনে থাকা এল.সি.ডি টিভি ও ছোট আলমারিতে পড়ে। আদো–আলোতে ছায়ার সৃষ্টি হয়। হঠাৎ দেখলে আকৃতিটা মানুষের ছায়ার মতো মনে হয়। মানুষ যখন নানারকম শব্দে শুনে চোখ খুলে তখন সে ভয়ে থাকে এমতাবস্থায় সে যখন সামনে তাকায় ঐ আদো–আলোয় সৃষ্টি হওয়া ছায়াকে ভূত মনে করে।
‘কি বলছেন।
‘আমি কাল পরীক্ষা করে দেখেছি। চাইলে আপনিও দেখতে পারেন। আদিল চায়ে চুমুক দিলো। আর আমরা মনযোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছি। রহস্য জানার জন্য ইতিমধ্যে হোটেল বয়রাও ভীড় করতে শুরু করেছে।
‘এবার আসুন হাঁটাহাঁটির ঘটনায়। আপনার হোটেলের সব স্টাফ কি এখানে আছে?
‘জ্বি স্যার।
‘আপনাদের মধ্যে কে রাতে ঘুমায় না? মানে রাতে ঘুম না আসার কারো সমস্যা আছে কি?
‘হোটেল স্টাফরা একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। ম্যানেজার বললো, এমন তো কেউ নেই।
‘ আদিল বললো আছে। আপনাদের দারোয়ান মোবারক হোসেন।
‘সবাই গুনগুন করে কথা বলা শুরু করলো। আদিল চা শেষ করে আবার সিগারেট ধরালো। সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে খবর নেওয়া শুরু করলাম কে রাতে জেগে থাকে। এবং পেয়েও গেলাম। তিনি হলেন এই হোটেলের দারোয়ান মোবারক হোসেন। তার ইনসমনিয়া রোগ আছে। উনার যখন ঘুম আসে না তখন উনি হোটেলের বিভিন্ন ফ্লোরে হাঁটাহাঁটি করেন। যা অন্য কোন রুমের মানুষ শুনলেও আতংকগ্রস্ত হয় না। শুধু ৩০৩ নাম্বার রুম ছাড়া।
‘কি বলেন? ম্যানেজার দারোয়ানকে ডাকতে পাঠালেন।
‘আরো একটি ঘটনা আমি জেনেছি এবং সেটাও সমাধান করেছি।
‘কোন ঘটনার কথা বলছো আদিল?
‘ম্যানেজার সাহেব আপনার এখানে ৩–৪ মাস আগে দু’য়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে তা তো আপনি বলেননি।
‘স্যার থানায় ডায়েরি করেছি। সত্য কথা বলতে ছোট ব্যাপার হিসেবে গুরুত্ব দেইনি।
‘এটা ঠিক নয় ম্যানেজার সাহেব। অপরাধ ছোট হোক বা বড় অবহেলা করা ঠিক নয়।
‘ম্যানেজার লজ্জিত হলেন। ভুল হয়ে গেছে।
‘আমি আপনার চোরকে ধরেছি।
‘কি বলছেন স্যার! কখন কিভাবে?
‘আপনাদের দারোয়ান মোবারক হোসেন রাত জেগে থাকেন। এবং বিভিন্ন ফ্লোরে হাঁঁটাহাঁিট করেন। আর যার জানালা খোলা থাকে তার ওখানে চুরির চেষ্টা করেন। ভাগ্য ভালো হলে দাও মেরে দেন। তার বাসা থেকে একটি মোবাইল ও বেশ কিছু টাকা পেয়েছি। কাউকে না বলে তার বাসায় আমি সকালবেলা তল্লাশি করে এসব পেয়েছি।
‘আপনি কিভাবে বুঝলেন যে এগুলো চুরির টাকা?
‘খুবই সিম্পল ব্যাপার। দেখুন ওর কাছে একটি মোবাইল থাকতে এটি লুকিয়ে রাখবে কেন? তাছাড়া হাজার বিশেক ক্যাশ টাকা তার কাছে থাকাটা নিশ্চয় স্বাভাবিক নয়। আর একটি শক্ত প্রমাণ আমি পেয়েছি।
‘কি?
‘টাকা ও মোবাইলের সাথে কয়েকটি ভিজিটিং কার্ড। ঐ দোকানগুলো চোরাই মাল কিনতো।
‘কিভাবে বুঝলেন?
‘আমি ওদের ফোন করে চোরাই মাল নেয়ার কথা বলেছি। প্রথমে ওরা রাজি না হলেও পরে যখন মোবারকের রেফারেন্স দিলাম তখন রাজি হলো।
‘দারুণ।
‘বয় এসে বললো স্যার দারোয়ান পালানোর চেষ্টা করছিলো তাকে আমরা রুমে বন্দি করে রেখেছি।
‘গুড।
‘স্যার রুমে সুইচ অফ–অন করার ঘটনা সম্পর্কে বললেন না যে?
‘হুম, আদিল সিগারেটে টান দিলো। রুম নাম্বার ৩০৩ এর খাটের পাশে অর্থাৎ ডান পাশের দেয়ালটা ফাঁপা। যার কারণে ওপর তলার মানুষেরা যখন সুইচ অফ–অন করে তখন সেটা ৩০৩ নাম্বার রুমে স্পষ্ট শোনা যায়। তাই সবাই ভাবে অদৃশ্যভাবে কেউ রুমের সুইচ অফ–অন করছে।
‘গ্রেট স্যার।
‘আমি বললাম সব যখন বললে তখন দম বন্ধ হওয়ার রহস্যটাও বলে ফেলো।
‘আদিল মুচকি হাসলো। ম্যানেজার সাহেব আপনারা রুমে এ্যারোসেল ব্যবহার না করে মশার কয়েল দেন তাই তো?
‘জ্বি।
‘মানুষ যখন ভয় পায় তখন তার শরীরের নার্ভ উত্তেজিত থাকে তার উপর কয়েলের ধোঁয়া পাখার বাতাসের সাথে গুমোট হয়ে থাকে। যার ফলে ভয় ও ধোঁয়া দম বন্ধ হতে সাহায্য করে।
‘আমি কি ক্লিয়ার করতে পেরেছি?
‘আমি আর ম্যানেজার বললাম জ্বি স্যার। ম্যানেজার তাৎক্ষণিক হুকুম দিলেন এখন থেকে কয়েলের বদলে যেন এ্যারোসেল ব্যবহার করা হয়।
‘আমি অবাক হয়ে আদিল এর দিকে তাকিয়ে আছি। সত্যি কথা বলতে ঘোর থেকে বের হতেই পারছি না। এতো কাছে থেকে কিছুই বুঝতে পারলাম না। আর সে সব রহস্য সমাধান করে বসলো। সত্যি গ্রেট আদিল আবরার।
আজ চলে যাচ্ছি। একটু খারাপ লাগছে। তাড়াতাড়ি সব সমাধান হয়ে গেলো। সমুদ্র দর্শনটা অপূর্ণ রয়ে গেলো। কোন এক পূর্ণিমায় হয়তো আবার আসা হবে স্বর্ণালি বালির দ্বীপে। ম্যানেজার আমাদের অনেক খাতির করলেন। ভালো পেমেন্ট করলেন। যতটা জটিল রহস্য আশা করেছি তা হয়নি। আশা করি নতুন কোন কেস সে আশা পূরণ করবে।
‘আচ্ছা আদিল রহস্য বলতে কি কিছুই নেই? সবই কি জাগতিক?
‘আদিল মুচকি হাসলো। সে গল্প আরেকদিন হবে। আমাদের দেরি হয়ে গেছে। আমি আর আদিল মসৃণ পথ ধরে হাঁটা শুরু করলাম। (সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি