![বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিল্পীর দায়বোধ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/18/kamrul-hasan_121302.jpg)
কামরুল হাসান বাদল, ১৮ জানুয়ারি, এবিনিউজ : ১। বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত। সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেটার এম এস ধোনির চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি চলচ্চিত্রের আগে টিভিতেও অভিনয় করেছেন। বলিউডের উঠতি নায়কদের মধ্যে তিনি ইতিমধ্যে অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে দর্শকদেরও মন জয় করেছেন। অতি সম্প্রতি তাঁর একটি সিদ্ধান্ত তাঁকে অন্য মাত্রায় অভিষিক্ত করেছে। তিনি আদায় করে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের সমীহ। এক ভিন্নধর্মী সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থাপন করেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
ভারতের একটি ত্বক ফর্সাকারী নামী প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান সুশান্তকে তাদের পণ্যের মডেল হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সুশান্ত তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন ১৫ কোটি রুপির লোভনীয় প্রস্তাব। সুশান্ত সিং রাজপুতের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সুশান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি কোনো ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনীর প্রচার করবেন না। কারণ এটা তাঁর নীতির বিরোধী। তিনি কোনো বর্ণবৈষম্যকে উসকে দিতে চান না। সূত্র জানায়, তিনি এ ধরনের পণ্যের প্রচারে বিশ্বাসী নন। পণ্য প্রচারের ক্ষেত্রে শুধু পারিশ্রমিক নয়, পণ্যের গুণগত মান ও প্রতিষ্ঠানের নীতিমালাকেও সমান গুরুত্ব দেন তিনি। দর্শকদের কাছে তিনি যে পণ্যের বার্তা দিচ্ছেন, তার জন্য সুশান্ত নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করেন। তিনি যখনই জেনেছেন এটা ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনী, তখন তিনি ১৫ কোটি রুপির পারিশ্রমিকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এর আগে একই ধরনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত, রাধিকা আপ্তে ও চিত্রাঙ্গদা সিং।
এই উপমহাদেশের বিজ্ঞাপন বাজারের বড় একটি অংশ দখল করে আছে নামী–দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির রং ফর্সাকারী প্রসাধনী পণ্যের বিজ্ঞাপন। সাবান থেকে শুরু করে নানা প্রকার ক্রিমের বিজ্ঞাপনে ত্বক ফর্সা হওয়ার কথা প্রচার করা হয়। প্রসাধনী কোম্পানিগুলোর অন্যান্য পণ্যের বিক্রির তুলনায় ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ও সাবানের বিক্রি কয়েক শ গুণ বেশি। আর এ ধরনের পণ্যের মডেল হয়েছেন হলিউড–বলিউড থেকে শুরু করে ঢাকার চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের তারকারা পর্যন্ত। আমাদের পত্র–পত্রিকা থেকে শুরু করে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের বিশাল অংশজুড়ে থাকে ত্বক ফর্সাকারী নানান পণ্যের বিজ্ঞাপন। বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা কিং খান নামে খ্যাত শাহরুখ খান ত্বক ফর্সাকারী একটি ক্রিমের মডেল হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। এখনো তিনি সেই পণ্যের মডেল হিসেবে আছেন। ভারতীয় বিভিন্ন টেলিভিশনের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেলেও সে বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হচ্ছে। শাহরুখ খান নাম–যশ–খ্যাতির দিক থেকে সুশান্তের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও অন্তত একটি বিষয়ে সুশান্ত আজ তাঁকে এবং তাঁর মতো অনেক সুপার স্টার ও মডেলকে ছাপিয়ে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বলে অন্তত আমি মনে করি।
সুশান্ত এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে গিয়ে দু’টি নীতিগত বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছেন। প্রথমত; ত্বক ফর্সা করার মতো একটি বর্ণবাদী পণ্যের মডেল না হওয়া। দ্বিতীয়ত; পণ্যের গুণগত মান ও প্রতিষ্ঠানের নীতিমালাকে গুরুত্ব দেওয়া। দর্শকদের কাছে তিনি যে বার্তা দিচ্ছেন তার জন্য নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করা।
ফর্সা হওয়ার বাসনাটি মূলত একটি বর্ণবাদী মনোভাব। সৌন্দর্য্যের ধারণার সাথে ফর্সা হওয়ার একটি শর্ত যেন কীভাবে আমাদের মধ্যে অর্থাৎ আমরা যারা শ্বেতাঙ্গ নই তাদের মাঝে বপন হয়ে গেছে। আমাদের সৌন্দর্যবোধের ভেতর ফর্সা হওয়া একটি শর্তই যেন। আর শত শত বছর থেকে এই বোধকে, পক্ষান্তরে ‘হীনম্মন্যতাবোধ’ কে পুঁজি করে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ফর্সা হওয়ার নানা পণ্য তৈরি করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি ডলার। প্রথম যখন সাবান তৈরি করা হলো, তখন উপমহাদেশে তা বাজারজাত করতে বলা হয়েছিল, সাবান দিয়ে গোসল করলে ত্বক ফর্সা হয়। এই সাবান কোম্পানিগুলো বছরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করতো। ইংল্যান্ডে ‘সোপ অপেরা’র নাম শোনেনি কিংবা সে ব্যাপারে জানে না এমন শিক্ষিতজন খুব কমই আছে এদেশেও। এই বিজ্ঞাপন থেকে এখনো বের হয়ে আসেনি কোম্পানিগুলো। বিশ্ববিখ্যাত অভিনেত্রী বা সেলিব্রিটিরা হরহামেশাই মডেল হচ্ছেন সাবানের এবং বিভিন্ন প্রকার রং ফর্সাকারী পণ্যের। স্থানীয়ভাবে খ্যাতিমান বা সেলিব্রিটিদের দিয়েও একই বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, কোনো সাবান বা প্রসাধনী পণ্য ত্বক ফর্সা করতে পারে না। ক্ষণস্থায়ী দান ঔজ্জ্বল্য করলেও তাতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আর সাবানতো ফর্সা করার প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু চটকদার বিজ্ঞাপনের কারণে টন টন ফর্সাকারী ক্রিম বিক্রি করে বহুজাতিক কোম্পানি থেকে শুরু করে স্থানীয় উৎপাদকরা। বর্তমানে এসব পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘হারবাল’ শব্দটি। যদিও প্রায় পণ্যের কাঁচামাল রাসায়নিক ছাড়া অন্য কিছু নয়।
সুশান্ত আরেকটি বিষয়ে তাঁর উচ্চতর ভাবনা ও সমাজমনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন। তাহলো, পণ্যের মান ও প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা বিষয়ে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি বা সেলিব্রিটির জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে সে ব্যক্তি টাকার বদলে যে কোনো পণ্যের মডেল হয়ে থাকেন। জনপ্রিয় বলে তার ভক্তরা তাঁর কথাকেই বিশ্বাস করে। এখানে মূলত ওই সেলিব্রিটি তাঁর ভক্তদের বিশ্বাসকেই বিক্রি করে থাকেন কোটি কোটি টাকায়। অনেক ক্ষেত্রে ওই মডেল তার প্রচারিত পণ্যটি ব্যবহারই করেন না। যেমন শাহরুখ খান যে রং ফর্সাকারী পণ্যটির বিজ্ঞাপন করেন বাস্তবে তিনি সেই পণ্য ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না। তিনি যদি ব্যবহারই করে থাকেন দেখা যাবে তিনি তাঁর প্রচারিত পণ্যের চেয়ে দামি কোনো পণ্যই ব্যবহার করছেন। তেমনি অমিতাভ বচ্চন যে তেলের বিজ্ঞাপনটি এখন করছেন সে তেলটি তিনি কষ্মিণকালেও ব্যবহার করেছেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অধিকাংশ পণ্যের বিজ্ঞাপনেরই এই হাল। খোঁজ নিলে দেখা যাবে খোদ মডেলই সে পণ্য ব্যবহার করেন না। শুধু পণ্যের বেলায়ই নয়, জায়গা বা ফ্লাটের বিজ্ঞাপনের বেলায়ও একই কথা খাটে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি, তিনি অভিনেতা হতে পারেন, হতে পারেন জনপ্রিয় শিল্পী বা লেখকও, এমন বিজ্ঞাপন করে তিনি কি তাঁর জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে সাধারণ ভক্তদের ঠকাচ্ছেন না? নৈতিকতার প্রশ্নটি তোলা যায় এখানেই। একজন সেলিব্রিটি শুধু টাকা কামানোর লক্ষেই তাঁর জনপ্রিয়তাকে, ব্যবহার করলেন, অথচ সমাজ বা সাধারণ মানুষের প্রতি সামান্য দায়বোধের পরিচয় দিলেন না। এটা কতটা ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত ও দায়িত্ববোধ প্রসূত? কারণ একজন সাধারণ মানুষ যখন দেখে তার প্রিয় অভিনেতা কিংবা প্রিয় শিল্পী বা প্রিয় লেখক একটি পণ্যকে ভালো বলছে তখন সে তো সহজেই বিশ্বাস করছে এবং সে জিনিসটিই ক্রয় করছে। আমার এই প্রশ্ন কিংবা অভিযোগগুলো কারো কারো কাছে অমূলক, বালখিল্য বা অনাধুনিক মনে হতে পারে। কিন্তু একজন সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমি তো এই অভিযোগ তুলতেই পারি আমার প্রিয় অভিনেতা অমিতাভের প্রতি অথবা শাহরুখের প্রতি। কারণ আমি তো আন্দাজ করতে পারি খুব সাধারণ ভোক্তাদের জন্য উৎপাদিত পণ্যটি এইসব সেলিব্রিটিদের ব্যবহার করার প্রশ্নই ওঠে না।
একটি পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত না হয়ে তার বিজ্ঞাপন করা কিংবা যে পণ্য আমি নিজেই ব্যবহার করি না তার প্রচারের, প্রসারের বিজ্ঞাপন করা কতটা নীতিগত ও আদর্শগত হলো সে প্রশ্ন তোলা অন্যায় কিছু নয়।
আর এখানেই, এই করপোরেট কালচারের যুগে সদ্য আগত নবীন এক অভিনেতা সুশান্ত যখন নীতিগত প্রশ্নে পণ্যের মডেল না হয়ে ১৫ কোটি রুপির প্রস্তাব নির্দ্ধিধায় প্রত্যাখ্যান করেন তখন আমি এই রাজপুতকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারি না।
২। আসলে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গী যে শুধু সাদা চামড়ার লোকেরাই পোষণ করেন তা নয়। আমরা যারা কালো, যদিও এশিয়ানদের অনেকেই নিজেদের কালো না বলে বাদামী বলতে বেশি গৌরববোধ করেন, তাদের ভেতরেও বিদ্যমান। আমরা নিজেদের বাদামী বলে ভাবলেও সাদা–কালোর মাঝখানে কিছুই নেই। সাদারা আমাদের কালো বলেই ভাবে। তারা মনে করে সাদারাই উন্নত জাতি বাদবাকিরা নিম্ন শ্রেণির কালো মানুষ। হাজার হাজার বছর ধরে এভাবেই চলে এসেছে বিশ্বে। আমরা নিজেদের মধ্যেও সাদা–কালো ভাগ করে নিই। আমাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম কালোদের ফর্সা হিসেবে সমীহ করি, কিছুটা ঈর্ষাও করি। যদিও আমাদের সবচেয়ে সাদা মানুষটিও পশ্চিমাদের চোখে কালো হিসেবেই চিহ্নিত।
এই বিভক্তিটি শুধু সাদারাই করে তা–ও কিন্তু নয়। আমাদের মধ্যেও আছে প্রচণ্ড বর্ণবাদ। একজন কালো আফ্রিকানের চেয়ে নিকৃষ্টতর সাদা চামড়ার মানুষটি অনেক বেশি গুরুত্ব পায় আমাদের কাছে। আমাদের মানে এশীয়দের কাছে। আমি ছাপোষা মানুষ। বিশ্বের উন্নত ও পশ্চিমা দেশে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তবে এশিয়ার যে দুয়েকটি দেশে গেছি সেখানেও প্রত্যক্ষ করেছি, বিমানবন্দর থেকে হোটেল–মোটেল–রেস্তোরাঁ ও শপিং মলে সাদা চামড়ার লোক হলে এক ধরনের সমাদর ও সমীহ পায় আর তার পাশে তারই প্রতিবেশী দেশের বাদামী বা কালো চামড়ার লোকের প্রতি নিদারুণ অবহেলা বা ঔদাসীন্য।
বাঙালিতো একটি শংকর জাতি। জার্মান, ব্রিটিশ এর পাশাপাশি মঙ্গোলিয়ান জাতিভুক্ত চায়নিজ, কোরিয়ান, জাপানিজদের যেভাবে সহজে চিহ্নিত করা যায় বাঙালিদের সেভাবে করা যায় না। কারো চেহারা ডাচদের মতো তো কারো চেহারা আফ্রিকানদের মতো। কারো চুল ঘন কোঁকড়া, কারো চুল রেশমি। কারো চোখ ঘন কালো তো কারো কারো বাদামি। এর মধ্যে যাদের গায়ের রং একটু বেশি কালো তাদের বিশেষ করে মেয়েদের, জীবনে গঞ্জনার শেষ নেই। সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও শুধু কালো হওয়ার কারণে এদেশে কত শত নারীর বিয়ে ভেঙে গেছে তার ইয়াত্তা নেই। নারীদের বেলায় বেশি মাত্রায় ঘটলেও পুরুষদেরও এই বর্ণবাদের শিকার হতে হয় আমাদের দেশে। বলছি বটে আমাদের দেশে, বাস্তবে এটা সব বাদামী রঙের মানুষদের দেশেই ঘটে। আমাদের দেশে কালোদের কালো বলা হয় না ভদ্রতা করে। বলা হয় “একটু শ্যামলা”। কালোদের প্রতি এই অবহেলা ও বৈষম্যের কারণে এদেশে কালোদের পক্ষে অনেকে ভেবেছেন, লিখেছেনও। বাংলার কবি সন্ত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার মানুষ জাতি কবিতায় লিখেছিলেন, “কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা।” বাংলার কোনো নাম না জানা চারণ কবি লিখেছিলেন, ‘জাতের মেয়ে কালোও ভালো, নদীর জল ঘোলাও ভালো। রবীন্দ্রনাথ কালো মেয়েদের প্রবোধ দিতেই হয়তো লিখেছিলেন, ‘কালো সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।
পৃথিবীর ইতিহাস অত্যাচারের ইতিহাস। এই ইতিহাস বর্ণবাদের ইতিহাস। অতীতে এবং এখনো বিশ্বের মানুষ মূলত দুভাগে বিভক্ত সাদা ও কালো। হাজার হাজার বছর ধরে কালোরা অত্যাচারিত হয়ে এসেছে সাদাদের দ্বারা। কালোরা যে মানুষ, শুধু গায়ের রংটি ছাড়া অন্য সবকিছুতে তাদের সাদা মানুষদের মতোই এই ভাবনাটিও ভাবা শুরু করেছে সাদারা গত শতাব্দি থেকে। সাদারা কালো বোঝাতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে। এর মধ্যে Colored’ অন্যতম একটি শব্দ।
২০০৫ সালে আফ্রিকান এক বালকের লেখা একটি কবিতা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। কবিতাটি মেণব মত ২০০৫ অর্থাৎ ২০০৫ সালের শ্রেষ্ঠ কবিতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। পাঠকদের জন্য কবিতাটি তুলে ধরলাম–
Colored
When I born, I black,/ When I grow up, I black,/ when I go in Sun, I black/ when I Seared, I black,/ whcn U sick, I black,/ And When I die, I still Black,/ And you White fella,/ when you born, You Pink,/ When you grow up, you white,/ when you go in sun, you Red,/ when you cold, you blue,/ When you scared, you yellow/ when you sick, you green,/ And when you die, you gray,/ And you calling me colored?
কালোদের প্রতি সাদাদের এখনো যে ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য বিদ্যমান তা আবার প্রকাশ পেয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের একটি বক্তব্যে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের ওভাল দপ্তরে অভিবাসন নিয়ে দ্বিদলীয় এক বৈঠকে ট্রাম্প আফ্রিকান দেশগুলোকে ‘অত্যন্ত নোংরা এলাকা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর এই মন্তব্যের কারণে চারদিকে কড়া সমালোচনার মধ্যে গত রোববার ফ্লোরিডায় এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, তিনি বর্ণবাদী কি না? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, না আমি বর্ণবাদী না।’ উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পশ্চিমা দেশে বর্ণবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা বা বর্ণবাদী আচরণ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য। তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে প্রকাশ পায় প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে এখন অনেকেই বর্ণবাদী মনোভাব পোষণ করে থাকেন। কয়েক মাস আগে এক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানকে পুলিশ কর্তৃক গুলি করে হত্যার ঘটনা প্রচণ্ড প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছিল। বারাক ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও গত নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পেছনে বর্ণবাদী মনোভাবও কাজ করেছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করে থাকেন। ট্রাম্প অবশ্য শুধু এই মন্তব্য করেই বিতর্ক সৃষ্টি করেন নি। শুরু থেকে নানা ধরনের কথা বলে ও কাজ করে তিনি অসংখ্য বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন। এসব কারণে শুরু থেকে ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
গত শুক্রবার ট্রাম্পের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়, যা আমেরিকার প্রচলিত রেওয়াজ। এই পরীক্ষার পর কয়েকজন চিকিৎসক ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষারও প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন। এজন্য তাঁরা হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক জ্যাকসনকে গত বৃহস্পতিবার জরুরি একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা আবশ্যক। কারণ প্রেসিডেন্টের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে দেশের নিরাপত্তা। আফ্রিকানদের নিয়ে ট্রাম্পের অশোভন উক্তির পর আফ্রিকান ইউনিয়ন তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। তারা বলেছে, এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এতদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হতে পারে।
৩। একজন লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীর অবশ্যই সামাজিক দায়বোধ থাকা উচিত। শিল্পের জন্য শিল্প নয়, মানুষের জন্যই শিল্প হওয়া উচিত। কাজেই আমি মনে করি সামাজিক দায়বোধ এবং মানুষদের প্রতি ভালোবাসাই একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে। বিশ্বের নামি–দামি তারকারা যখন করপোরেট পুঁজির প্রতিনিধি হয়ে তোতাপাখির মতো তাদের সাজানো কথাগুলোই তাদের ভক্তদের শুনিয়ে যান এবং বিভ্রান্ত করেন সে সময় তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়ে একটি নজির স্থাপন করেছেন। তাঁকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি আশা করব অন্যরাও তাঁকে অনুসরণ করে সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দেবেন এবং ভক্তদের বিভ্রান্ত ও বোকা বানানোর পথ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবেন।
শেষ করার আগে বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত একটি চুটকি বলি, মৃত্যুর পর দেখা গেল এক ব্যক্তির পাপ–পুণ্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সমান। অর্থাৎ ৫০ * ৫০। ফলে ঈশ্বর তাকে নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিলেন। অর্থাৎ তার পছন্দের জায়গাতেই তাঁকে পাঠানো হবে। প্রহরীরা তাঁকে প্রথমেই নিয়ে গেল স্বর্গ পরিদর্শনে। সেখানে তিনি যা দেখলেন তাতে খুব যে সন্তুষ্ট হলেন তা মনে হলো না। এরপর তাকে নিয়ে আসা হলো ওয়েটিং রুমে। প্রহরীরা বললেন, স্যার এরপর নরক দেখাব আপনাকে। তবে আপাতত সেখানে না গিয়ে আমাদের জায়ান্ট স্ক্রিনে নরকের অবস্থাটি দেখতে পারেন। ভদ্রলোক রাজি হয়ে গেলেন। শুরু হলো বিজ্ঞাপন। বিশাল স্ক্রিনে একে একে ভেসে উঠতে থাকলো বিশ্ববিখ্যাত, শিল্পীদের কনসার্ট, তাদের অভিনীত ছবি ও নানান বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। ভদ্রলোক এসব দেখে মুগ্ধ হয়ে সাথে সাথে সিদ্ধান্ত দিলেন, ‘আমি নরকেই যাব’। এটি বলার সাথে সাথে তার শরীরে আগুন লেগে গেল। এবং চারপাশ থেকে নরকের প্রহরীরা বড় বড় আগুনের শিখা তার দিকে ছুঁড়ে দিতে লাগল। ভদ্রলোক শেষবারের মতো আর্ত চিৎকার করে বললেন, ভাই এতক্ষণ কী দেখালেন, আর কীসব হচ্ছে। প্রহরীরা বলল, স্যার ওটাতো ছিল বিজ্ঞাপন। নরকের প্রমোশনাল। পৃথিবীতে থাকতে এই কাজটিইতো আপনি করতেন। বলা বাহুল্য, ভদ্রলোক ছিলেন একজন বিজ্ঞাপন নির্মাতা।
Email : [email protected]
(সংগৃহীত)