বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

রম্য সাহিত্যিক বেগম ফাহমিদা আমিন

রম্য সাহিত্যিক বেগম ফাহমিদা আমিন

আনোয়ারা আলম, ১৮ জানুয়ারি, এবিনিউজ : কবি রবীন্দ্রনাথের মতো শোককে শক্তি হিসেবে ধারণ করে- এ বন্দর নগরীতে তিনি ছিলেন বটবৃক্ষের সুশীতল ছায়ার মতো। এ মাসেই তার জন্ম মাস! আর এ মাসেই তিনি প্রবাসের মাটিতে বিদায় জানালেন সবাইকে- দেশের শিল্পাঙ্গনের আলোকিত এক প্রদীপ নিভে গেল চিরতরে-সময়ের বিচারে গতায়ু তিনি-তবে সৃষ্টিশীল মানুষেরা অমর হয়ে থাকেন শিল্পকর্মের মাঝে-অমরতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ান তাঁরা-তিনি ছিলেন-আছেন-থাকবেন আমাদের মাঝে অনন্তকাল-সৌরভ ছড়াবেন নীরবে-নিভৃতে-তাঁর প্রতিভা ও জীবন বাংলাদেশের অলংকার।

“কলেজের প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসে আমাদের শিক্ষক ড. মোখলেসুর রহমান সবাইকে প্রশ্ন করেন, আমরা কে কি হতে চাই? মনে আছে আমার পালা এলে আমি বলেছিলাম, ‘আমি বিবাহিত স্যার, আমার কিছু হওয়া না হওয়া আমার ওপর নির্ভর করে না স্যার।”

একথাগুলো লিখেছেন আমাদের অতি প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট রম্য সাহিত্যিক ফাহমিদা আমিন।

বিয়ে বা পরনির্ভরতা–সংসার বা সন্তান তথা মাতৃত্ব–কোন কিছুই যে একজন সৃজনশীল ও অনন্য প্রতিভার মননশীল সত্তার মানুষের এগিয়ে চলার পথকে আটকে রাখতে পারেনি তার এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বেগম ফাহমিদা আমিন। অফুরান প্রাণশক্তি আর তীব্র সাহিত্য তৃষ্ণা তাকে নিয়ে গেছে এক আলোর পথে–যিনি আমার কাছে এক বর্ণাঢ্য আলোকস্তম্ভের মতো। নতুন নতুন আলো ছড়িয়েছেন তিনি সাহিত্যের পাতায় পাতায়–গল্প–ছড়া এবং রম্যসাহিত্য–একই সাথে শিশুতোষ গ্রন্থ।

তাঁর সৃষ্টি সম্ভারের ভেতরে প্রবেশ করলে বোঝা যায় সময়ের চাইতে এগিয়ে আছে প্রকাশ ও বিকাশ। লেখায়ণ্ডবর্ণনায়–বিশ্লেষণেণ্ড পরিবেশনায় তাঁর নিজস্ব ভঙ্গি পাঠককে মুগ্ধ করে রাখে। আর এ বিশেষণ বিশেষভাবে প্রযোজ্য তাঁর রম্য রচনায়।

শাণিত বুদ্ধির খরদীপ্ততা আর সুতীক্ষ্ন রসবোধের সংমিশ্রণে লেখা কিন্তু পাঠকের মনে আনে প্রফুল্লতা– মন খুলে হাসার প্রশান্তি–তেমন ধারার লেখাই রম্যরচনা। এতে কোথাও গল্পের আভাস–কোথাও কাব্যের মাধুর্য– কোনখানে আবার হয়তোবা হাস্য পরিহাসের আলিম্পন–নানাখণ্ডের বাহারি সমবায়ে এ এমন এক সৃষ্টি যার কোনো ধরাবাধা বা নিশ্চিত কোন লক্ষ্য নেই–প্রগলভতা ও চাপল্যের খানিক বৈঠকি চালে তা দিব্যি জমে ওঠে। রম্য রচনায় তীব্র কটাক্ষ–তীব্র রসের মাধুর্য, আবার লেখনীর মধ্য দিয়ে হাস্যরসের অবতারণা বেশ কঠিন–আমরা জানি–বাংলা সাহিত্যে আধুনিক অর্থে এ ধারাটি পাশ্চাত্য প্রভাবপুষ্ট। শাণিত শব্দের কারুকার্যে সমাজ ও ব্যক্তির স্ববিরোধকে নির্মল হাসির মাধ্যমে তুলে ধরাই রম্য–সাহিত্যের বিশেষ কাজ। রম্যসাহিত্যে রম্যরচনায় আধিপত্য পুরুষদের–এক্ষেত্রে সৈয়দ মুজতবা আলীসহ অনেকের নাম এসে যায়।

তবে রম্য সাহিত্যিক হিসেবে নারীদের পদচারণা খুব বেশি কি! কিন্তু অবলীলায় বলা যায় একজন ফাহমিদা আমিনের কথাণ্ডতিনি বিভিন্ন বিষয়ে সাহিত্যচর্চা করেছেন বটে কিন্তু রম্য রচনার সূত্রে তিনি পাঠকের সাথে যে বন্ধন গড়ে তুলেছেন–সেখানে তার তুলনা শুধু তিনিই। এক্ষেত্রে তার ভেতরে যে প্রবাদ আর শ্লোকের ভাণ্ডার একেকটা রম্য রচনায় তিনি অবলীলায় ব্যবহার করেন–চমৎকৃত হন পাঠক–সত্য ও সুন্দরের সাথে কঠিন বাস্তবতার এতটা মেলবন্ধন! প্রস্ফুটিত ফুলের সুবাস যেন ছড়িয়ে যায় হৃদয়ের অলিতে গলিতে।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২২টি এর মধ্যে নয়টিই ‘রম্যরচনা’–প্রথম গ্রন্থ ‘নিমমধু’–১৯৭৪ সালে প্রকাশিত এবং শেষ গ্রন্থ সাজতে সাজতে ফিঙ্গে রাজা প্রকাশিত ২০১০ সাল–সাজতে সাজতে ফিঙ্গে রাজা’–এটিও রম্যরচনা।

প্রয়াত সাহিত্যিক সুচরিত চৌধুরীর মূল্যায়নে ফাহমিদা আমিন বাংলাদেশের একমাত্র লেখিকা। তাঁর রম্যরচনা রসজ্ঞ পাঠক পাঠিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর প্রথম গ্রন্থ নিমমধু’র ভূমিকায় প্রয়াত আবু হেনা মোস্তফা কামাল লিখেছেন ‘সমকালীন জীবনের বিপুল নৈরাশ্য ও নৈরাজ্যের ভেতরে দাঁড়িয়েও কেউ যে হাসতে পারছেন এবং অন্য সবাইকে হাসিতে উদ্ভাসিত করতে চাইছেন এটি কম কথা নয়।” আর অনিবার্য কারণবশত: গ্রন্থটির পর্যালোচনায় সুচরিত চৌধুরী লিখছেন “গ্রন্থটি অধ্যয়ন করতে করতে শিয়রে ছায়া জাগে পরশুরামের, শিব্রামের, আবুল মনসুর আহমেদের, সৈয়দ মুজতবা আলীর, বিভূতি মুখার্জীর, রূপদর্শীর–লেখিকার সাজানো রম্য বিতানটি দেখে মনে হলো আমরা বাঙালিরা শুধু কাঁদতে জানিনা, হাসতেও জানি।” (রম্য সাহিত্যিক বেগম ফাহমিদা আমিন–সাখাওয়াত হোসেন মজনু, মর্জিনা আখতার মণি পৃ. : ১৪৪

কলিকাতার চিঠি শিরোনামে নিবন্ধে মনোজবসু লিখেছেন “আপনার লেখার জাদু আমার সর্বকর্ম নাশ করে তখনই অন্তত পাতা ত্রিশেক পড়িয়ে ছাড়ল। খানিক পরে আর একদফায় বাকিটা শেষ করলাম। পাকা হাত–ব্যঙ্গগুলোও মধুর।…….মহাভারতে পেয়েছি, মহাবীর কর্ণক বচ–কুনডুল নিয়েই মাতৃগর্ভ থেকে পড়েছিলেনণ্ডএ যুগে আপনি প্রায় তাই।” (রম্য সাহিত্যের রত্নগর্ভা বেগম ফাহমিদা আমিন–সাখাওয়াত হোসেন মজনু ও মর্জিনা আখতার মণি (পৃ: ১৫৬)

২০০১ সালে শৈলী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ “ঝালে ঝোলে অম্বলে”- এটিও রম্যরচনা। চৌদ্দটি রচনার নামকরণণ্ড‘না ঘরকা না ঘাটকা’ তিন হাতের এক হাত অজুহাত’, জোড়াতালি–নাকের বদলে নরুন, মামা–ভাগনে যেখানে, সুটকেস সমাচার, জানে–মানে গ্যাঞ্জামে, যানজটে ঝঞ্ঝাট, প্রেমের মরা জলে ডোবে না, হাঁচা কথা আর মিছা কথা, আমি যখন বাড়িওয়ালা, প্রধান অতিথির বড়ই অকাল, বিয়েতে শাদীতে, ঝালে ঝোলে অম্বলে।

নামকরণগুলো আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী –যেমন তেমনি প্রবাদেও আছে। বিষয়ে এসেছে প্রবাসে বাঙালির দুর্বিষহ জীবন যাপন যেমন না ঘরকা না ঘাটকার’ শ্যাম চাচার পরদেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকণ্ডএকমাত্র সম্বল একটা ছেড়াখোড়া ‘বাল্যশিক্ষা’ণ্ড অথবা নাকের বদলে নরুন পেলাম রচনায়ণ্ড“দেশের নামকরা কিন্ডারগার্টেন প্রিন্সিপ্যাল, জাঁদরেল ম্যাডাম হয়েছেন বেবি সিস্টার— বেশি পয়সায় নিজে আয়াগিরি করেন অন্যের সন্তানের। কাকের বাসায় কোকিলের ছা।…. শেষে লেখেন তিনিণ্ড“আমাদের ছেলেরা শুধু ডিগ্রি আনতেই বিদেশ যায় না ঘোড়ার ঘাস কাটতেও যায়। নিজের নাক কেটে বাপের জন্য চকচকে নরুন নিয়ে আসে।” (পৃ: ১৭)

সুটকেস সমাচার রচনায়– বিদেশ ভ্রমণে সুটকেস যন্ত্রণার সমাধান দেন তিনিণ্ড“দিল্লীতে কিনেছিলাম পিঠটু। হ্যাডার স্যাক। পিঠে বেঁধে সংসার নেয়া যায়।— এবার ভাবছি ভ্রমণে বেরুলে তাই একটা নিয়ে বের হব। খোয়া যাবার ভয় থাকবে না, ওজনও বাড়ানো যাবে না–নিজেকেই বইতে হবে তো। নির্ভার ভ্রমণ, নির্ভার আনন্দ। ‘জানে–মানে গ্যাঞ্জামে’-গ্যাঞ্জাম তিন প্রকার, স্ব–সৃষ্ট গ্যাঞ্জাম, অপরে সুষ্ট গ্যাঞ্জাম, ঘটে যাওয়া বা গেঁজে যাওয়া গ্যাঞ্জাম…জানে মানে গ্যাঞ্জামে ঘুঁটে…এ ঘুঁটে-এ খানিতে খইল হয়ে যাওয়া জীবন।” (পৃঃ ২৫)।

‘প্রেমের মরা জলে ডোবে না’-রচনায় কি চমৎকার রসবোধেণ্ডদাম্পত্য সংঘর্ষ এড়ানোর উপায় বলে দেন-ok, you are right darling. “আমি পরাজয় মেনে নিলাম ওগো বধূ সুন্দরীণ্ডঅথবা তুমিই সত্য, তুমিই ধ্রুব-নাথ বলে মেনে নিলে সংঘাত এড়ানো যায় সহজে।” (পৃঃ ৩২) এভাবে লেখকের গভীর এবং অনুসন্ধানী মন যেন টর্চের তীব্র আলোতে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন পরিবার–সমাজ–দেশ এবং মানুষের দিন যাপনের খুঁটিনাটি সব অসঙ্গতি। এর মাঝে তিনি চমৎকারভাবে শিল্পীর নিখুঁত টানে তুলে আনেন কলম নামক তুলিতে।

‘ওজুহাত’ বা জোড়াতালিণ্ডবা হাঁচা–কথা আর মিছাকথাণ্ডএগুলো বাঙালির স্বভাব–অভ্যাস এবং বলা যায় সার্বক্ষণিক শব্দসংগী। আমরা ওজুহাত দেই নিজেদের দুর্বলতা এড়াতেণ্ড“মায়ের কোল থেকেই যে ওজুহাতের লিস্টি সে মাকশো করে, সারাজীবন তাই ভেঙে ভেঙে চালায়। লেখাপড়ায় লবডঙ্ক ছাত্র বলে শিক্ষক পড়ায়না, শিক্ষক বলে ছাত্র পড়ে না। ফলাফল শূন্য। (পৃঃ ৯)ণ্ডঅতি সাম্প্রতিক প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বা প্রাসঙ্গিক নানা ক্ষেত্রে এর কি ব্যত্যয় ঘটছে? ‘জোড়াতালি’তে লেখকণ্ড-“আমরা এখন কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে জীবন কাটাচ্ছি। বৃদ্ধরা হৃদয়ে পেস মেকার, উদরে পিতশুল, হাঁটুতে গেঁটে বাত নিয়ে কেতরে শুয়ে আছি। জোয়ানরা নাসির গোল্ডের ধোঁয়ায় গোল্ডেন জীবনের স্বপ্ন দেখে দেখে জিন্সে তাপ্পি মারছে… কল্পনাটা খান খান হচ্ছে, প্রেমের মালা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হচ্ছে, নতুন আশায় আবার জোড়াতালি দিচ্ছে।” (পৃঃ ১১)

মিথ্যের বেসাতি নিয়ে অনেকে যা করি তার আলোকপাত হাঁচা কথা আর মিছা কথা’য়- “শুধু এক গুলবদন নয়ণ্ড আশে পাশে অনেক গুলবদন। এক সমাজ সেবিকার বিশেষ প্রয়োজন ছিল আমার কাছে- আমাকে তোলা দিতে লেখার প্রশংসা। আমিও পুলকিত চিত্তে গদ গদ হয়ে তার কাজটি করে দেব জানালাম। তিনি চলে যেতেই তার কলিক আমার আত্ম প্রাসাদের উড়ত্ব ফানুসটাকে পিন ঢুকিয়ে ফুটো করে দিলেনণ্ড বললেন-“ও আপনার নামই শোনে নি, লেখা পড়বে কি?… বড়ই চুপসে গেলাম।” (পৃঃ ৩৪)

এভাবে লেখক তার প্রতিটি রচনায় ব্যঙ্গ–কৌতূহল আর হাস্যরসের মিশ্রণে অপ্রিয় সত্যগুলো তুলে ধরেন নিপুণ দক্ষতায়-

‘বিয়েতে শাদীতে’ রচনায় ২০০১ সালে তিনি অপচয়ের বার্তা দেন–২০১৮ তে এসে তা আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছেণ্ড ‘প্রধান অতিথির বড়ই আকাল’-রচনায়–নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এ আসনের ক্ষেত্রে সময়ের অপব্যবহার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর ফ্যাসাদ এবং দেরিতে এসে প্রধান অতিথির সুদীর্ঘ বক্তব্য সহ যে বিষয়গুলো নিয়ে লেখেন–তা এখনো বিদ্যমান বলা যায় যেন রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।

আমি যখন বাড়িওয়ালায় যেমন শাঁখের করাতের দুর্দশায় লেখকের মনোবেদনার বাস্তব প্রতিফলন নিত্য অনুভবে আবার যানজটে ঝঞ্ঝাটে রচনায় এ জটের দুর্দশাতেও যেভাবে চারিদিকে চিত্র তুলে আনেনণ্ড তখনি পাঠক হৃদয়ে পরম বিস্ময়ণ্ডদোকানগুলোর মাঝে সুন্দর বোর্ডে শোভা পাচ্ছে-শাশ্বত সত্যবাণীণ্ড ‘সময় অমূল্যধন, সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে নাণ্ডসময়ের সদ্ব্যবহার করুন। যখন নিউমার্কেটে পৌঁছালো তখন অনেকটা সময় কেটে গেছে-এর মূল্যায়ন কিভাবে হবে। আম ও গেল ছালাও গেল সময়ও নষ্ট হলো, আর সময় মতে পৌঁছাতে পারলাম না বলে টাকাও আদায় হল না। (পৃঃ ২৯)

শেষ রচনা, ‘ঝালে ঝোলে অম্বলে’–এর চরিত্র ‘বেরেস্তা বেগম’-লেখক নিজেই-“ইদানীং ‘স্বাধীনতা’ বেগম রোকেয়া জাতীয় কিছু পদকের মুল্যে বেরেস্তা বেগমের নাকের ডগায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক (বিভাগীয়) মনোনয়ন পেয়ে তিনি ও ডমমগ হয়ে এক দশক ধরে বায়োডাটা পাঠিয়ে চলেছেন। … কেউ বলল পদক তো আজকাল নিজেই ম্যানেজ করে নিজেকেই দেয় জানেন না? … বোধোদয় হয়েছে বেরেস্তা বেগমের। তবুও অনুরোধে, নির্দেশে ব্যক্তিগত বিবরণী পাঠিয়েই চলেছেন, বলাতো যায় না-যদি কোনদিন ভুল করে তাঁর নাম উঠে যায়। (পৃঃ ৪৮)

রম্যরচনার ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতায়ণ্ডবিভিন্ন উপমায়-কবিতার ব্যবহারেণ্ড যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ফাহমিদা আমিন এ অঙ্গনকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তা অতুলনীয়। তবে এ চট্টগ্রাম শহরকে ভালোবেসে এখানে অবস্থানের কারণে হয়তো তার যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি।

একজন ফাহমিদা আমিনের এই যে শিল্পসৃজন এবং অনুরাগ দুয়ের মূলেই আছে জন্মগত প্রবণতা। সূক্ষ দৃষ্টিতে যেভাবে তিনি সমাজের অসংগতি, অপসংস্কৃতির সাথে নানা ভাষার ব্যবহারণ্ডশ্লোক ও রূপকের মাধ্যমে হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন রম্যগ্রন্থে–তা পাঠকের আনন্দ পিপাসু মনের খোরাক যুগিয়েছে- সিরিয়াস ধারার সাহিত্য কিংবা ভারিক্কি চালের উচ্চ মার্গীয় সাহিত্য আমাদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটায়- কিন্তু মনের আনন্দ দেবার মতো রম্য রচনা কয়জন পারেন আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি আরও কঠিন। অথচ একজন ফাহমিদা আমিনের রচনায় ধার ও ভার দুইই আছে-

তাঁর জীবনাচরণ, কথা কাজ সবকিছুই আমার মতো। অনেকেই প্রেরণায় তাপিত করে- তিনি চলে গেছেন ওপারে–চিরতরে তবে রেখেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জনপ্রিয়তা ছিল এ শহরেণ্ডপ্রায় সভা সমিতিতে তিনি–তবে বলবো তার শক্তি ছিল লেখালেখি- যে শক্তিকে সাথে নিয়ে সংসারের নিত্য কোলাহলের সব কিছু কড়ায় গণ্ডায় শোধ করে নিজেকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের শিখরে। এখানেই তিনি অনন্য সাধারণ ও অতুলনীয়। বেদনার সাথে বলি-একজন রত্নগর্ভা মা হিসেবে যিনি এ সমাজকে উপহার দিয়েছেন ছয়জন আলোকিত নাগরিক-শেষ বয়সে এসে হারালেন- এ স্বাধীন দেশে। পুত্র কর্নেল এনশাদকে হত্যা করেছে বাঙালিরাই নিষ্ঠুরভাবে।

কবি রবীন্দ্রনাথের মতো শোককে শক্তি হিসেবে ধারণ করে- এ বন্দর নগরীতে তিনি ছিলেন বটবৃক্ষের সুশীতল ছায়ার মতো। এ মাসেই তার জন্ম মাস! আর এ মাসেই তিনি প্রবাসের মাটিতে বিদায় জানালেন সবাইকে- দেশের শিল্পাঙ্গনের আলোকিত এক প্রদীপ নিভে গেল চিরতরে-সময়ের বিচারে গতায়ু তিনি-তবে সৃষ্টিশীল মানুষেরা অমর হয়ে থাকেন শিল্পকর্মের মাঝে-অমরতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ান তাঁরা-তিনি ছিলেন-আছেন-থাকবেন আমাদের মাঝে অনন্তকাল-সৌরভ ছড়াবেন নীরবে-নিভৃতে-তাঁর প্রতিভা ও জীবন বাংলাদেশের অলংকার। পরিশেষে বলি-রবীঠাকুরের ভাষায়-

“বজ্রো তোমার বাজে বাঁশি, সে কি সহজ গান।

আমি ভুলব না আর সহজেতে, সেই প্রাণে

মন উঠবে মেতে,

মৃত্যু মাঝে ঢাকা আছে যে অন্তহীন প্রাণ ॥

(সংগৃহীত)

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত