রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
logo

ভুল-ভুলাইয়া

ভুল-ভুলাইয়া

পবিত্র সরকার, ২২ জানুয়ারি, এবিনিউজ : এখন বয়স হয়েছে, এখন নানান রকম ভুলের খপ্পরে পড়ি। নানারকম ভুলে–যাওয়া যেন আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। বলে, ‘বাপু, তোমার ঝকঝকে তকতকে মনে রাখার দিন গেছে, এখন তোমার ভোলার দিন, ভুল করবার দিন, ভুলে যাওয়ার দিন। তোমার অহংকারের বারোটা বাজানোর জন্যে আমরা হাজির, এখন থেকে আমরাই তোমাকে চালিয়ে নেব, ভুল থেকে ভুলে, এক ধ্যাড়ানো থেকে আর–এক ধ্যাড়ানোয়। তোমাকে নিয়ে খুব জমবে আমাদের খেলা!

এই সেদিন যেমন তন্ন তন্ন করে একটা টি–শার্ট খুঁজছিলাম। সেটা আলমারি থেকে বার করে রেখেছি পরব বলে, কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না। এ ঘর, ওঘর, বাথরুম, বারান্দা, সব ঘরের বিছানা, খাটের তলা–ইত্যাদি খোঁজবার পর আমার স্ত্রীর সাহায্য চাইলাম, তিনিও তেমন সাহায্য করতে পারলেন না। টি–শার্টটার বর্ণনা চাইলেন। কিন্তু রঙের ব্যাপারে আমি যেমন কানা, তিনি তেমনই ওই ব্যাপারে সূক্ষ্মতা–সন্ধানী। ঠিক রঙটা না বলতে পারলে তিনি এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেবেন না। আর আমি তাঁকে রঙের নাম বলতে একেবারেই সাহস পাই না। কোনটা নীল আর কোনটা সবুজ এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই একটা অন্তহীন তর্ক চলছে, মনে হয় শেষদিন পর্যন্ত তার সমাধান হবে না। আমি যে শাড়িটাকে সবুজ বলি তিনি সেটাকে অপ্রতিরোধ্যভাবে নীল বলেন এবং আমার সবুজ ওঁর কাছে শতকরা দুশোভাগ নীল। যাই হোক স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে এই রকম সংলাপের সম্পর্ক হওয়াই নিয়ম, এতে দাম্পত্য গাঢ় হয়। ফলে আমি টি–শার্টটার রঙ বলতে গিয়ে দ্বিধায় পড়লাম, এবং তিনিও বললেন খানিকটা, হ য ব র ল –র বেড়ালের ধরনে, টি শার্টটা আর আমি এ দুয়ের জটিল সম্পর্কের নিরসন করতে হলে দেখা দরকার, সেটা কোথায় কোথায় থাকতে পারে, আমি বাড়িতে কোথায় কোথায় যেতে পারি, টি–শার্ট কোথায় কোথায়, আর আমি কোথায় কোথায় থাকতে আর যেতে পারি না, দুইই এক সঙ্গে কোথায় কোথায় উপস্থিত থাকতে পারে এবং পারে না, এই বাড়ির পরিসরে দুয়ের আপেক্ষিক দূরত্ব কখন কী রকম হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই জটিল অঙ্ক শুনে, অঙ্কে চিরকাল কাঁচা আমার মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগল। তার পর তিনি ভগ্নাংশ না ত্রৈরাশিক কী করলেন জানি না, শেষে বললেন খাটের নিচে বা বাথরুমের ময়লা জামাকাপড়ের ব্যাগে খুঁজে দ্যাখো। সেটা খুব একটা সাহায্য করল না। বনবন করে ঘুরতে থাকা মাথা নিয়ে ভাবলাম, আমার এই পরিপক্ব টাকমাথার একশো সাঁইত্রিশটা অসুখী সাদা চুলকে একবার আঁচড়ে নিলে বোধ হয় মাথা ঘোরার কিছুটা উপশম হবে। সেই সদিচ্ছা নিয়ে আয়নার সামনে গেছি, দেখি আমার নিরুদ্দিষ্ট টি–শার্ট আমি আমার ঊর্ধাঙ্গে পরেই আছি। (কী অবান্তর কথা, যেন ঊর্ধাঙ্গ ছাড়া আর কোথাও টি–শার্ট পরা যায়!)। যাই হোক, কখন আমার গায়ে টি–শার্টটি ছিল না, আর কখন সে গায়ে চড়াও হল, এ ইতিহাস আমার কাছে সম্পূর্ণ ধোঁয়াশা। আমি সে কথা আমার স্ত্রীকে বলায় তিনি ঠোঁট উলটে বললেন, ‘ও এই ম্যাজেন্টা রঙেরটা? এই হল তোমাকে নিয়ে মুশকিল। তুমি তো কী রঙের সেটা বললেই পারতে।’

ম্যাজেন্টা নামে অদ্ভুত একটা রঙের কথা সাহস করে আমার স্ত্রীকে বলব, পাগল না কি? আমার কাছে তো এটা আহেলা বেগুনি ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যদের কাছে আমি তো চোখমুখ বুজে বেগুনিই বলে দিই। কিন্তু বহুবার নেভি ব্লুকে কালো বলে অট্টহাস্য শোনার পর আমার স্ত্রীর কাছে আমি রঙ নিয়ে আর খাপ খুলতে যাই না, মোটামুটি বুদ্ধিজীবীর নৈঃশব্দ্য অবলম্বন করি। উনি জোর করলে মরিয়া হয়ে বলি, ‘ওই ব্রাউন ধরনের,’ কিংবা লালমতন।’

ওই ‘ধরনের’ বা ‘মতন’ দিয়ে কাজ সারি। এতে আমার স্ত্রী অধৈর্য হয়ে ওঠেন। কিন্তু তা নিয়ে আমার তো কিছু করবার নেই। স্বামীদের ব্যাপারে স্ত্রীরা যদি অধৈর্য না হন তো কাদের ব্যাপারে হবেন? পাড়া থেকে লোক ডেকে আনবেন অধৈর্য হওয়ার জন্যে?

এই দেখুন, হচ্ছিল ভুলের কথা, তা থেকে বকবকানিতে কোথায় চলে গেলাম। আমার বয়সের সব লোক এটা করেন কি না জানি না, কিন্তু আমার দৈনন্দিন ভুলের একটা সোনালি এলাকা হল আমার বাজার। রোজ বাজারে যাই এবং রোজই কোনো না কোনো জরুরি জিনিস আনতে ভুলে যাই। এটা এখন স্বাভাবিক, সবাই সেটা বোঝেন। বাজারে গিয়ে দোকানের সামনে দাঁড়ালে, জিনিসপত্রের দাম শুনে আমি ব্যাগ হাতে খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে খাড়া থাকি, যদিও মাথাটা কী রকম তলতল করতে থাকে, আমার অতীত–ভবিষ্যৎ–বর্তমান লুপ্ত হয়ে যায়, আমি কে, কেন বাজারে এসেছি, বাজারে এসে কী করব এবং সেখান থেকে কোথায় যাব সব ভুলে যাই। মনে হয় পৃথিবীতে আদিম হেমন্তের কুয়াশা নেমে এসেছে। কাজেই বাজার করে ফিরলে আমাকে শুধু বুড়ো ঝিঙে, পোকা–ধরা বেগুন বা পাথরের মতো বিচিওয়ালা পটোল আনবার জন্যে সমালোচনা শুনতে হয় না, কখনও নুন, কখনও কাঁচালংকা, কখনও তেঁতুল ইত্যাদি না আনবার জন্যেও প্রচুর সমালোচনা শুনতে হয়। কী করব, মস্তিষ্ক থেকে কয়েকটা আইটেম বেরিয়ে কোথায় চলে যায়। কখনও আমাদের রান্নার মেয়ে অণিমা বলে, ‘দাদা, তোমাকে ‘রাঁধুনি’ আনতে বলেছিলাম, আনোনি যে।’ রাঁধুনি ব্যাপারটা যে হাতাখুন্তি নাড়ানো কোনো ব্যক্তি শুধু নয়, একটা মশলার নাম সে আমি বিয়ের পরে জেনেছি, মানুষ হয়েছি।

লোকের নাম ভুলে যাওয়াটা বেশ কিছুদিন শুরু হয়েছে। মুখটা হয়তো চেনা লাগে, কিন্তু সেই মুখের যুতসই নামটা মাথায় আসে না। ফলে ছাত্র–ছাত্রী, নানা সময়ের সহপাঠী বা সহকর্মী–সকলেরই কাছে খুব লজ্জায় পড়তে হয়। বিশেষত মহিলারা এসে যখন চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘বলুন/ বলো তো আমি কে? তখন আমি রীতিমতো ঘামতে থাকি। মুখের মধ্যে একটা বহুদিন আগেকার চিহ্ন কখনও খুঁজে পাই, কিন্তু প্রাণপণে নামটা হাতড়াতে হাতড়াতে অসহায় হয়ে পড়ি।

আমার এসব ভুল তো তুচ্ছ ভুল, তুচ্ছ লোকের ভুল তো তুচ্ছই হবে। আমরা সবাই এ রকম ভুল করি তো। বই নিয়ে বই ফেরত দিতে, ধার নিয়ে ধার শোধ করতে ভুলে যায় এরকম মূল্যবান লোক যেমন আছে, তেমনিই রুটিনে ক্লাস থাকলেও ক্লাসে যেতে ভুলে যান এমন শিক্ষকও কম নেই। আমাদের চেনা একজন শিক্ষক সম্বন্ধে তো যাদবপুরের ছাত্র–ছাত্রীরা তাদের এপ্রিল লিস্টে (পয়লা এপ্রিল ওটা ডিপার্টমেন্টে টাঙানো হত) লিখেই দিয়েছিল, অমুকবাবু বছরে মাত্র দু–দিন উম্মনা আর অন্যমনস্ক হয়ে ক্লাসে আসতে ভুলে যান। এক, যেদিন বৃষ্টি হয়, আর দুই, যেদিন বৃষ্টি হয় না। বোঝাই যায় মানুষটি প্রকৃতিপ্রেমিক ছিলেন।

আমাদের যাদবপুরের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপিকা শীলা লাহিড়ী চৌধুরীর (আমার রবীন্দ্রভারতীর জ্যেষ্ঠ সহকর্মী অধ্যাপক ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীর সহধর্মিণী) ভুলে যাওয়া সম্বন্ধে দুটো গল্প বলি, অন্যদের কাছে শোনা। শীলা এ লেখাটা পড়েন শুনেছি, ভুল হলে মার্জনা করে দেবেন।

একটি পার্টিতে গেছেন তিনি। দেখছেন তাতে মধ্যমণি হয়ে আছে একটি বিশেষ সুন্দরী মেয়ে, তাকে ঘিরে সবসময় একটা ভিড়, সেও চমৎকার উপভোগ করছে ব্যাপারটা। এক সময় শীলা তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে একটু উৎসুক চোখে শীলার দিকে তাকাল, যেন শীলা তাকে প্রশস্তিসূচক কিছু বলবেন, যেমন সবাই বলছে।

শীলা তাকে হতাশ করলেন না। বললেন, ‘তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি বলো তো? তুমি কি যাদবপুরে আমার ছাত্রী ছিলে?’

এ কথা শুনে মেয়েটি এক অদ্ভুত আচরণ করল। শিলার ভাষায় ‘সে নাক ঘুরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল।’

যাবেন না কেন (এবার তাঁকে সম্ভ্রম না দেখিয়ে আমি যাব কোথায়)? সত্যজিতের ছবিতে প্রথম অভিনয়ের পর তখনই তিনি বাংলা ছবির এক প্রতিষ্ঠিত নায়িকা, রীতিমতো বিদূষী ও উজ্জ্বল তাঁর পরিচয়। পরে তিনি পরিচালিকা হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিও পাবেন। শীলার তাঁকে না–চিনতে পারা তিনি ক্ষমা করবেন কেন?

আর–একবার নাকি গড়িয়াহাটের একটি বাস–স্টপ থেকে শীলার স্কুল–ফেরত ছেলেকে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। ছেলে বাসেই ফেরে, কিন্তু শীলা বললেন, ‘কী দরকার কষ্ট করার? আমি আজ ওখান দিয়ে ফিরব গাড়ি নিয়ে, তোমাকে তুলে নিয়ে আসব। তুমি ওই স্টপটাতে দাঁড়িয়ো, ছুটির পরে।’

কথামতো ছেলে সেখানে ঠিক সময়ে এসে দাঁড়াল। মাও ঠিক সময়ে ওখান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে এলেন। কিন্তু স্টপে আদৌ না থেমে ছেলেকে দেখে দারুণ খুশি হয়ে তিনি জোরে জোরে হাত নেড়ে তাকে ‘হ্যাল্লো’ জানিয়ে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ‘ভাবলেন, বাঃ, খুব মজা তো! ছেলেটার সঙ্গে চমৎকার দেখা হয়ে গেল হঠাৎ।

আমাদের গুরুদেব প্রয়াত প্রমথনাথ বিশি সম্বন্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মহলে অনেক গল্প চালু আছে, এরকম অসাধারণ মানুষ নিয়ে কিংবদন্তি তৈরি হতেই পারে। অনেক কিছুই তিনি ইচ্ছে করে ভুলে যেতেন। সে সব নিয়ে আগে লিখেছি, তবু আর–একবার পাঠকদের জন্যে লিখি।

যেমন একবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কল্লোল যুগের এক বিখ্যাত কবি ‘কবি রবীন্দ্রনাথ’ সম্বন্ধে একটি বক্তৃতা ছিল, প্রমথবাবুর তাতে সভাপতিত্ব করার কথা। দ্বারভাঙা হলে কবি এসে গেছেন, শ্রোতারাও হল ভরতি করে উপস্থিত, কিন্তু প্রমথবাবু কোথায়? দেখা গেল প্রথমবাবু এসেছেন, কিন্তু বিভাগে অধ্যাপকদের সঙ্গে গল্পে মেতে আছেন।

উদ্যোক্তারা গিয়ে তাঁকে ঘিরে ধরল, ‘স্যার চলুন, সভার দেরি হয়ে যাচ্ছে, উনি এসে গেছেন।’ প্রমথবাবু একটু সচকিত হয়ে বললেন, ‘কীসের সভা বলো তো? আমি ভুলে গেছি।’ বোঝাই গেল এটা তাঁর বিনয়। উদ্যোক্তা ছেলেরা তাকে ব্যাকুল হয়ে মনে করিয়ে দিল বিষয়টা। তখন তিনি স্বীকার করলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তা তিনদিনের বক্তৃতা না? আজকের বক্তৃতার নাম কী?’ উদ্যোক্তারা জানাল আজকের টাইটেল ‘কবিতার সাত সিঁড়ি’। প্রমথবাবু অসম্ভব বিচলিত হয়ে বললেন, ‘কী সর্বনাশ, বিশ্বাস করো, আমার কোমরে খুব ব্যথা, আমি তো যেতে পারব না! অত সিঁড়ি ভাঙা আমার পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়।’ উদ্যোক্তারা কিছুতেই তাঁকে বিভাগের আড্ডার আসন থেকে টলাতে পারল না।

আমাদের ক্লাস করা নিয়েও প্রমথবাবুর একটা চমৎকার গল্প আছে। তিনি তখন দিল্লিতে সাংসদ, ফলে কলকাতায় কম থাকেন। আমরা তাঁর ক্লাসের আশায় হা–পিত্যেশ করে বসে থাকি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বা আসেন, আমাদের ক্লাস নেবার কথা হয় ভুলে যান, না হয় অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে দু–তিন মাস, কিন্তু এই অসাধারণ অধ্যাপককে আর পাই না।

একদিন শুনলাম তিনি এসেছেন, কিন্তু বিভাগে অধ্যাপকদের সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত। আর হবে না কেন, তিনি নিজে যেমন অসাধারণ বৈঠকি মানুষ, তেমনই আছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, বিজনবিহারী ভট্টাচার্য, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়–এই সব বিপুল নামধারী অধ্যাপক। কেউ অনর্গল বলেন, কেউ স্বল্পভাষী, কিন্তু যা বলেন তা উজ্জ্বল মণিমুক্তার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা তক্ষুণি ছুটে গিয়ে প্রমথবাবুকে ঘিরে ধরলাম, ‘স্যার, আমাদের ক্লাস আছে তো আপনার!’ তিনি মিটিমিটি হেসে বললেন, “আছে বুঝি? আচ্ছা তা হলে চলো!’ বলে রেজিস্ট্রার নিয়ে এসে রোল কল্‌ করেই জিজ্ঞেস করলেন, “গল্প–উপন্যাস স্পেশাল পেপার নিয়েছ, তা তোমরা স্কট, ডিকেন্স, জেন অস্টিন, টলস্টয়, ডস্টয়েভ্‌স্কি, পুশকিন, জোলা, মপাসাঁ–এঁদের বইটই সব পড়ে নিয়েছ তো?’

বাপ রে! এক সঙ্গে এতগুলো বিদ্‌ঘুটে বিদেশি নাম? আমরা তো সকলে হতবাক্‌, সাহস করে কেউ বলছে না, পড়েছি। প্রমথবাবু তখন ভয়ংকর রাগের গলায় বললেন, ‘এহ, তোমরা তো কিছুই পড়নি! তবে আর তোমাদের কী পড়াব?’ বলে রেজিস্ট্রার নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার আড্ডায় যোগ দিলেন।

এরও প্রায় দু–মাস পরে শুনলাম তিনি আবার এসেছেন। আবার তাঁকে গিয়ে ধরলাম, ‘স্যার, ক্লাস!’ স্যার বললেন, ‘ওহ্‌ তোমাদের নিয়ে আর পারি না! দু’একবার ভুলে যেতে পার না যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে ক্লাস করতে হয়!’ বলে বললেন, ‘চলো’ রেজিস্ট্রার নিয়ে ক্লাসে এসে বসলেন, রোল কল্‌ করলেন, তার পর আবার সেই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা স্কট, ডিকেন্স, রিচার্ডসন, টলস্টয়…ইত্যাদি ইত্যাদি পড়েছ?’

আমরা তখন একটু চালাক হয়েছি, এ সব বইয়ের কিছু কিছু সকলে মিলে পড়ে ফেলেছি। সে কথা তাঁকে বললাম একজনের পর একজন। এ কথা শুনে তিনি আর্তনাদ করার মতো করে বলে উঠলেন, ‘তবে তো তোমরা সবই পড়ে ফেলেছ, তোমাদের আর কী পড়াব?’ বলে রেজিস্ট্রার নিয়ে আবার বিভাগের অধ্যাপকদের আড্ডায় গিয়ে যোগ দিলেন।

তাঁকে যখন আমরা অনুযোগ করতাম, ‘স্যার সিলেবাস তো শেষ হল না।’ তখন তিনি ধমকে বলতেন, ‘সিলেবাস আবার কী? বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি পেতে এসেছ, বাংলা সাহিত্যের এ পর্যন্ত মুদ্রিত এবং অমুদ্রিত সমস্ত বই তোমাদের পাঠ্য। এ সিলেবাস শেষ করার কথা পাগল ছাড়া আর কে ভাবে?’ কিন্তু যেদিন পড়াতেন সেদিন সারা বছরের না–পড়ানো একদিনেই পুষিয়ে দিতেন, যেন চারদিকে হাজারটা জানলা খুলে দিতেন আমাদের জন্যে। (সংগৃহীত)

এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত