শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

মাইকেলের বীরাঙ্গনা কাব্যে পুরাণের নারীরা

মাইকেলের বীরাঙ্গনা কাব্যে পুরাণের নারীরা

মেহেরুন্নেছা মেরী, ২৮ জানুয়ারি, এবিনিউজ : মাইকেল মধুসূদন দত্ত(১৮২৪–১৮৭৩)। ঊন–বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণ বশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি । এই সময়ে ই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায় ক্ষণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদ বধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী: দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি, হেকটর বধ ইত্যাদি ।

মজার ব্যাপার হল মধুসূদনের সকল লেখায় নারী চরিত্র প্রধান। পাশ্চাত্যের কবি ওভিদের কদণ ঔণরমধভণ্র : মর ঋযর্ধ্রফণ মতর্ দণ ঔণরমধভণ্র কাব্যের অনুসরণে একুশটি পত্র কাব্য লিখতে চেয়েছিলেন মধুসূদন । শেষ পর্যন্ত এগারোটি পত্র কাব্যের সমন্বয় এই বীরাঙ্গনা কাব্যটি রচনা করেছেন । আজকের আলোচনা মাইকেলের বীরাঙ্গনা কাব্য নিয়ে। পুরাণের বিভিন্ন নারী চরিত্র এ পত্র গুলো লিখেছে। শুকন্তলা, তারা, রুক্সিনী, কৈকেয়ী, সূর্পণখা, ভানুমতি, দ্রপোদী, দুঃশলা, জাহৃবী, উর্বশী, জনা এ এগারোজন নারী পত্রগুলো লিখেন তাদের স্বামী অথবা প্রেমিকের উদ্দেশে ।

দুস্মন্দের প্রতি শকুন্তলা

সত্য যুগের নারী বিরহ জীবন যাপন ও সব কিছু সহ্য করবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু ভারতীয় নারী চির আনুগত্যের প্রতীক নয় , বরং যুক্তি স্বাতন্ত্র্য প্রতীক হিসেবে শকুন্তলা স্বামীর প্রতি অভিযোগ ও অভিমান করে বললেন

“কিন্তু বৃথা ডাকি কান্ত। কি লোভে ধাইবে

আর মধু লেভি–অলি এ মুখ নিরখি,

শুখাইলে ফুল,কবে কে আদরে তারে?”

সোমের প্রতি তারা

যৎকালে সোমদেব অর্থাৎ চন্দ্র বিদ্যাধ্যয়ন করণাভিলাষে দেবগুরু বৃহপতির আশ্রমে বাস করেন, গুরুপত্নী তারাদেবী তাঁহার অসামান্য সৌন্দর্য সন্দর্শনে বিমোহিতা হইয়া তাঁহার প্রতি প্রেমাসক্ত হন। সোমদেব, পাঠ সমাপনান্তে গুরুদক্ষিণা দিয়া বিদায় হইবার বাসনা প্রকাশ করিলে, তারাদেবী আপন মনের ভাব আর প্রচ্ছন্নভাবে রাখিতে পারিলেন না, ও সতীত্বধর্মে জলাঞ্জলি দিয়া সোমদেবকে এই নিম্নলিখিত পত্রখানি লিখেন। সোমদেব যে এতাদৃশী পত্রপাঠে কি করিয়াছিলেন, এ স্থলে তাহার পরিচয় দিবার কোন প্রয়োজন নাই। পুরাণজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেই তাহা অবগত আছেন।

কি বলিয়া সম্বোধিবে, হে সুধানশুনিধি,-

তোমারে অভাগী তারা? গুরুপত্নী আমি

তোমার, পুরুষরত্ন; কিন্তু ভাগ্যদোষে,

ইচ্ছা করে দাসী হয়ে সেবি পা দুখানি!-

“ গুরু পত্নী বলি জবে প্রণামিতে পদে,

সুধানিধি, মুদি আঁখি ভাবিতাম মনে,

মানিনী যুবতী তুমি,তুমি প্রাণ পতি,

মান–ভঙ্গ আশে নত দাসীর চরণে

আশীর্বাদ চলে মনে নমিতাম আমি”।

বিবাহিতা রমণীর বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের পত্রও রচিত হয়েছে এই কাব্যটিতে। দ্বিতীয় স্বর্গে সোমের প্রতি তারার পত্রটি যদি পাঠ করি, তাহলে জানা যায় সোম বা চন্দ্রের গুরুপত্নী তারা স্বামী বৃহস্পতির শিষ্যের প্রতি অনুরক্ত হয়ে অসংকোচে পত্র লিখছেন সোমকে। তারা বিবাহিতা এবং সোমের গুরুপত্নী, তৎসত্ত্বেও তিনি অসংকোচে প্রেমপত্র লিখছেন স্বামীর শিষ্যকে। ভঙ্গীটি একেবারে অতি আধুনিক।

দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতি পত্রগুলো পাঠের ভিতর মনের মধ্যে আশ্চর্য্যভাব জাগে সপ্তম স্বর্গে ভানুমতীর পত্রটি পাঠ করলে । ভানুমতী মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র দুর্যোধনের মহিষী । পান্ডবদের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা এবং যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য দুর্যোধনের প্রতি ক্ষোভ, পান্ডবদের প্রতি শ্রদ্ধা, পাণ্ডবদের মতার প্রতি সমীহ ভাব যেমন ফুটে উঠেছে, ঠিক তেমনই তিরস্কার করেছেন স্বামীকে নানানভাবে মাতুল শকুনির নিকট অ বিদ্যা শিক্ষার জন্য। মাতুলের প্রতি অশ্রদ্ধা, উষ্মাও প্রকাশিত । আবার কখনও ভীত হয়েছেন স্বামীর যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায়। অনুনয় করেছেন পাণ্ডবদের অনুরোধ রক্ষা করতে । এই পত্রটি থেকে কয়েকটি উক্তিই তুলে ধরা যেতে পারে

‘কুক্ষণে মাতুল তব, ত্রকুল গ্লানি

আইল হস্তিনাপুরে! কু ণে শিখিলা

অ বিদ্যা, নাথ, সে পাপীর কাছে

এ বিপুলকুল, মরি, মজালে দুর্ম্মতি,

কাম–কলিরূপে পশি এ বিপুল–কুলে!’

শকুনির উপরে ক্রোধ ব্যক্ত হয়েছে এই ছত্রগুলিতে। শকুনির নিকট অ বিদ্যা শিক্ষা যে পতনের মূল, সে অনুযোগ করতে দ্বিধা করেননি দুর্যোধনের কাছে। সূতপুত্র কর্ণকে অঙ্গরাজ্য দান করে তাঁকে জনসমক্ষে সম্মান প্রদান করেছিলেন দুর্যোধন, কিন্তু অর্জুনের বীরত্বের সঙ্গে তুলনা করে ভানুমতী কর্ণকে উপহাস করছেন স্বামীর নিকট প্রেরিত পত্রে। উপহাসের বক্তব্য কর্ণের পক্ষে যথেষ্ট অসম্মানজনক হলেও ভানুমতী সেকথা বিবৃত করছেন অনায়াসে। এমন কি, সূতপুত্র কর্ণ তাঁর চন্দ্রবংশজাত স্বামীর সখা বলেও স্বামীকে উপহাস করতে দ্বিধা করছেন না।

‘কেন গর্ব্বী কর্ণে তুমি কর্ণ দান কর

রাজেন্দ্র? দেবতাকুলে জিনিল যে রণে,

তোমা সহ কুরু সৈন্যে দলিল একাকী

মাৎস্যদেশে, আঁটিবে কি রাধেয় তাহারে?

হায়, বৃথা আশা নাথ, শৃগাল কি কভু

পারে বিমুখিতে, কহ মৃগেন্দ্র সিংহেরে?

সূতপুত্র সখা তব? কি লজ্জ্বা, নৃমণি,

তুমি চন্দ্রবংশচূড়, বংশপতি!’

এসব বাক্য সত্ত্বেও আছে স্বামীর প্রতি প্রেম, আছে ভয়, আছে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের গ্লানি। তাই ভানুমতী অনড় স্বামীকে অনুরোধ করছেন পত্রে, যদি তিনি পঞ্চপাণ্ডবের অনুরোধ মত পাঁচখানি গ্রাম দান করেন, তাহলে হয়ত যুদ্ধ স্থগিত হয়ে আবার সবকিছু রক্ষা হতে পারে। তাহলে হয়ত তিনি আবার স্বামীর সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন। এমন কি অন্ধ পিতা–মাতার প্রতি কর্তব্যের কথাও উল্লেখ করেছেন। তাই পত্রের শেষে সেই অনুরোধ তিনি রাখছেন পতির কাছে

‘এস তুমি, প্রাণনাথ, রণ পরহরি

পঞ্চখানি গ্রামমাত্র মাগে পঞ্চরথী

কি অভাব তব, কহ, তোষ পঞ্চজনে;

তোষ অন্ধ বাপ–মায়ে; তোষ অভাগীরে:-

রক্ষ কুরুকুল, ওহে কুরু কুলমণি!’

মহাভারতের মহারণ্যে স্বল্পপরিচিত ভানুমতী পত্র লেখেন তাঁর যুক্তি দিয়ে, অনুনয় দিয়ে, পঞ্চপাণ্ডবের প্রতি সম্‌ভ্রম প্রদর্শন করে। মধুসূদনের ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যে ভানুমতী আমাদের বিস্মিত করেন তাঁর দৃঢ়তা ও যুক্তিবাদী লেখনী দ্বারা।

লক্ষণের প্রতি সূর্পণখা

একটি সর্গে আছে সূর্পণখার প্রেমপত্র লক্ষণের প্রতি। লক্ষণের দ্বারা সূর্পণখার নাক কর্তিত হোক বা না হোক, সূর্পণখা কিন্তু তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন এবং সেকথা ব্যক্ত করতে দ্বিধান্বিতা ছিলেন না মোটেই। মধুসূদনের নারীরা সকলেই অতি সাহসিনী।

অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী

”অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী ” এই পত্রে মাইকেলের কল্পনায় অর্জুনের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল দ্রৌপদী তীব্র প্রতিবাদ করেন …. স্বামীর ছলনা , দীর্ঘ –বিরহ এবং তাঁর প্রতি অর্জুনের উদাসীনতার জন্যে।

মধুসূদনের বীরাঙ্গনা স্বীয় পতির দোষগুণের সমালোচনাই শুধু করেন নি। পতির প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন। স্বীয় অহমিকায় বিশ্বাসী এবং নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রমণী মূর্তিকে মধুসূদন তার কাব্যে অঙ্কন করেছেন ।

দশরথের প্রতি কৈকেয়ী

” পরম অধর্মচারী রঘুকুল পতি ”

কৈকেয়ীর কাছে এটি অঙ্গীকার ভঙ্গের অপরাধ ।

নীলা ধ্বজের প্রতি জনা

” নীলাধ্বজের প্রতি জনা ” পত্রে স্বামীকে পুত্র হন্তার সঙ্গে মিত্রতা , স্বামীর অন্যায় আচরণে ক্ষুব্ধ স্ত্রীর হৃদয়াবেগ প্রকাশ বীরাঙ্গনা কাব্যের আঙ্গিক ও নামকরণের দিক থেকে মধুসূদন পাশ্চাত্য কবিদের কাছে ঋণী। ইতালির কবি ওভিদের হিরোয়দস কাব্যের পত্ররীতি অবলম্বন করে বীরাঙ্গনা কাব্য রচিত। বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত নারীর মনোবেদনা পত্রগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে ।

শান্তনুর প্রতি জাহ্নবী

জাহ্নবী শান্তনুর কাছে এক পত্রে লিখেছেন–

‘পালিয়াছি পত্রবরে আদরে, নৃমণি

তব হেত । নিবখিয়া চন্দ্রমুখ, ভুল

এ বিচ্ছেদ– দুঃখ তুমি’।

মধুসূদন এই কাব্যে এমন কিছু নারী চরিত্র আমাদের দিয়েছেন যাদের মধ্যে প্রেমের সতীত্ব, কামনার,বাসনার,সুখ ও প্রতিবাদের অভিঘাতের ফলে জাগ্রত ব্যক্তিত্বের রূপ আমরা দেখেছি।

এই নারীরা প্রধানত আবেগের দ্বারা চালিত। কিন্তু এমন কয়েকজন নারী খুব প্রধান ভাবে না হলেও অভ্রান্ত ভাবে মধুসূদনের এই কাব্যে এসেছেন যাদের আমরা বলতে পারি যুক্তিবাদী । তারা কখনো তাদের স্বামীকে অভিযুক্ত করেছেন কখনো অনুরুধ করেছেন আবার কখনো কর্তব্য স্মরণ করে দিয়েছেন। শান্তনুর প্রতি জাহ্নবীর পত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

দ্বারকানাথের প্রতি রুক্ষিনী

প্রেমাম্পদের অনুগ্রহ ভিক্ষা করিয়া প্রেমিকা রুক্ষিনীর একটি বিশাল প্রেম পত্র। যা কবি একান্ত নিজের চিত্রকল্পে সাজিয়েছেন।

পুনরবার প্রতি উর্বশী

উর্বশী দেবরাজ–দত্ত সুধাপাত্রটি ভ্রুভঙ্গিসহ সরিয়ে দিয়ে মুক্ত বিলাস–পক্ষ–দুটি গুটিয়ে সংসার–পিঞ্জরে আশ্রয় চেয়েছিলেন।স্বর্গনর্তকী উর্বশীর পত্রে বীরাঙ্গনার আর তারার পত্রে অবৈধ প্রেমের আনন্দ–বেদনাকে রূপায়িত করেছেন কবি। মানবজীবনে প্রেমের অনন্ত বৈচিত্য; তার একটি খণ্ডাংশের যথাস্থিত রূপাঙ্কনের বাসনা থেকেই এ পত্রের জন্ম।

জয়দ্রথের প্রতি দুঃশলা বীরাঙ্গনা কাব্যে আরেক নারী চরিত্রের মধ্যে আমরা মধুসূদনের স্ত্রী রেবেকার ভাব বৈশিষ্টের পরিচয় পাই। যে নারীটির মধ্যে মাত্র কোন নারীর বৈশিষ্ট ফোটে না উঠলেও তৎকালীন সমাজে নারীর স্বামী ও আত্মীয় পরিজনের জন্য ব্যাকুল হৃদয়ের নানাভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। দুঃশলা তার স্বামী জয়দ্রথকে উদ্দেশ্য করে যখন বলেছেন

“ ভুলে যদি থাকো মুরে ভোলনা নন্দনে

সিন্দুপতি; মনিভদ্রে ভুলনা, নৃমনে!

নিশার শৈশবে যথা পালযে মুকুলে

রসদানে;পিতৃস্নেহে হায়রে শৈশবে

শিশুর জিবন, নাখ কহিনু তোমারে”

তার এই উক্তির মধ্য দিয়ে অবশ্যই রেবেকার মানসিকতার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মধুসূদন যখন স্ত্রী এবং অবুঝ দুটি শিশুকে মাদ্রাজে রেখে কলকাতায় এসেছিলেন,তখন স্ত্রী রেবেকার মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল,শিশু সন্তানদের নিয়ে কি ধরনের অসুবিধায় পড়েছিলেন সে কথা অবশ্যই মধুসূদনের কল্পনায় বার বার নাড়া দিয়েছিল। আর সেই চিন্তায় প্রকাশিত হয়েছে বীরাঙ্গনা কাব্যের জয়দ্রথের প্রতি দুঃশলার পত্রে।

ওভিদের ‘হিরোইদ্‌স’ কাব্যের আদর্শে লেখা হলেও ভাবে একী দাহরূপে বীরাঙ্গনা কাব্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধরনের রচনা। কবি পত্রাকারে লিখলেও এগুলো অনেকটা –শ্রেণির। নায়িকাদের সংলাপের ভাষাকে বিচিত্র সূক্ষ্ম কৌশলে তরঙ্গিত করে তুলেছেন কবি। রুদ্ধ ভাবাবেগ, দৃপ্ত আত্ম ঘোষণা, অন্তস্থল বিহারী যন্ত্রণা, সব ভাসিয়ে–নেওয়া উচ্ছ্বাস ভাষার বন্ধনে কম্পিত হয়ে উঠে নাট্য রস সৃষ্টি করেছে। অবশ্য পুরাণকাহিনীর খণ্ডাংশগুলি একদিকে বৃহৎ পটভূমির অভ্যাস এনেছে, অন্যদিকে গল্প রস কিছু পরিবেশন করেছে। এই দ্বিমুখী উপাদানের সঙ্গে মিলেছে লিরিকের রস–প্রতিটি নারীর হৃদয় গভীর থেকে উদ্ধৃত একটি আর্ত দীর্ঘশ্বাস, একটি সতেজ কামনা, সর্বহারা বেদনা–হতাশার সুর। গীতিপ্রাণতার উচ্ছ্বাস ও আবেগকে একদিকে আখ্যায়িকার সাহায্যে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত করে, অপরদিকে নাটকীয় চমক ও চমৎকারিত্বে অপ্রতিহত করে তুলেছেন কবি। বীরাঙ্গনা নিঃসন্দেহে উচ্চাঙ্গের কাব্যকলার নিদর্শন হয়ে থাকবে ।

তথ্য:

১। মধুসূদনের বীরাঙ্গনা– ডঃ গুলশান আরা।

২। উইকি সংকলন– তারা পত্রিকা।

৩। মধুসূদন ; বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারীবাদী প্রবক্তা– মুন্সি আবু সাইফ।

(সংগৃহীত)

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত