![গণতন্ত্র: স্বপ্নে ও বাস্তবে](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/05/fazlul-haq_124445.jpg)
ফজলুল হক, ০৫ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ :
(এক)
প্রত্যেক মানুষের বোধ আলাদা। প্রকাশ শৈলীও আলাদা। আপনার এবং আমার বোধ এক নয়। পার্থক্যটা আকাশ–পাতাল হতে পারে, আবার খুব সামান্য হতে পারে। এটা মনে করার কোন কারণ নাই যে, লেখক এবং পাঠক একই ধরনের চিন্তা করবে। একই রকম ভাববে। আমি ভয়ে ভয়ে থাকি, পাঠক আমার বক্তব্য কতটুকু ডিস্– লাইক করলেন? পত্রিকায় লিখি, কিন্তু আমিও একজন পাঠক। যা লিখি, তার চাইতে অনেক বেশী পড়ি। একটি জাতীয় দৈনিকে একটি উপ–সম্পাদকীয় কলাম পাঠ করি। লেখক আমার প্রিয় ও পছন্দের লেখকদের একজন। সব বিষয়ে আমি উনার সাথে একমত হইনা। কিন্তু উনার লেখা পড়ি। একটি পত্রিকায় তিন থেকে চারটি উপ–সম্পাদকীয় নিবন্ধ থাকে। পত্রিকা খুলে উনার নাম দেখলে আমি অন্য লেখা ফেলে উনার কলামে “ঝাঁপিয়ে পড়ি।” উনার একটা কলাম থেকে দু এক লাইন উদ্ধৃতি দিচ্ছি ঃ– আমি পত্রিকা পড়ে উন্নয়ন বোঝার চেষ্টা করি। দেশে জিডিপি বেড়েছে। ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ বেড়েছে। অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে। মানুষের ব্যয় ক্ষমতা বেড়েছে। কিছুটা তো উন্নতি হয়েছে এসবে। কিন্তু আমি গুণমুগ্ধ হতে পারিনা এতে। আমার এই চোখ দেখে, গার্মেন্টস্ শ্রমিক, বিদেশের মানুষ (বিনিয়োগকারী), কৃষক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার প্রাণপাত পরিশ্রম– এর খবর। আমি তাই ভাবি, উন্নয়ন যদি হয়, কিছু জিডিপি আর ফরেন কারেন্সি যদি বাড়ে, যদি বাড়ে কর্মসংস্থান, এটাতো গরিব আর সাধারণ মানুষের প্রাণপাত পরিশ্রমের কারণে। এই উন্নয়ন কিভাবে যৌক্তিক হয়, তাদেরই গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার আয়োজনে?”
লেখকের এই বক্তব্য অনেক “এংগরি” পাঠকের পছন্দ হবে। আমি তো আগে বলেছি, উনার লেখা এবং উনাকে আমি পছন্দ করি। কিন্তু উনার “বোধ” এবং আমার “বোধ” এক না। উনার “প্রকাশ– শৈলী” এবং আমার “প্রকাশ– ভংগি” এক নয়। হতেও পারেনা। উনার লেখা পড়ে আমার মনে দুটি প্রশ্ন উত্থাপিত হলো ঃ– (১) আমাদের ব্যয় ক্ষমতা বেড়েছে, জিডিপি বেড়েছে, ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ বেড়েছে, অতি দরিদ্রের সংখ্যা কমেছে, – এসব কিছু হয়েছে, সাধারণ মানুষের প্রাণপাত পরিশ্রমের কারণে, গার্মেন্টস শ্রমিকের পরিশ্রমের কারণে, কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পরিশ্রমের কারণে– এটা সত্য নিঃসন্দেহে। তাহলে এরশাদের শাসন আমলে ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ বাড়েনি কেন? একেক সরকারের আমলে এক্সপোর্ট পারফরমেন্স একেক রকম হয় কেন? মজুর এবং কৃষকের পরিশ্রম যদি যথেষ্ট হয়, তাহলে– এক সময় খাদ্য ঘাটতি হয় আবার এক সরকারের আমলে খাদ্য স্বয়ং সম্পূর্ণ হয় কেন? আমি উনার বক্তব্য পুরো রিজেক্ট করছিনা। যদি কেউ এই সব সাফল্য তাদের নিজের বলে দাবি করে এবং জনগণ, মজুর, শ্রমিক, উদ্যোক্তাকে, প্রাইভেট সেক্টরকে, বিনিয়োগকারীকে কোন কৃতিত্বের অংশ না দিতে চায় তাহলে– উনি যা লিখেছেন তা পড়ে আমি সামনে এগুতে রাজী আছি। যদি উনি সরকার, প্রশাসন, নীতি নির্ধারক– কাউকে কোন ক্রেডিট না দিতে চান, তাহলে আমি বলব, উন্নয়ন অগ্রগতি হলে– তার সুনাম সরকার পাবেই। ব্যর্থতা হলেও সরকার বদনাম কুড়োবে।
(২) উনি লিখেছেন, গণতন্ত্র এগিয়ে নেয়ার জন্য বা কাটছাট করতে “উন্নয়ন” এর অজুহাত কি ভাবে যৌক্তিক হতে পারে? আমি গণতন্ত্রকে কাটছাট করার একেবারেই পক্ষে নই। কিন্তু আমি লেখককে একটা সহজ প্রশ্ন করি, আপনি “ডেমোক্রেসি ইন থিউরী” এবং “ ডেমোক্রেসি ইন্ প্র্যাকটিস্”– দুটোকে এক করে দেখেন? স্বপ্ন ও বাস্তবতা এক নাকি? গণতন্ত্রের জন্য মাতম করা এবং গণতন্ত্র চর্চা করা এক কথা নয়। আপনি এক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক। আপনার সাথে আমি একটু “উচ্চ মার্গীয়” কথা বলতে পারি। জানি হয়ত পাঠকের কিঞ্চিৎ কষ্ট হবে। আপনি আব্রাহাম এইচ মাসলোর– “হায়ারারকি অফ নিড্” তত্ত্বের পিরামিডের দিকে তাকান। দেশের একেবারে নিঃস্ব গরিব মানুষ, হতদরিদ্র, অনাহারী যারা তাদের ফার্স্ট এবং ফরমোস্ট টার্গেট হচ্ছে “ভাত।” সব রোগের বড় রোগ কি? “ ক্ষুধা”। সব ওষুধের বড় ওষুধ কি? “ভাত।” ভাই, সরকার “গণতন্ত্র” দিলে হতদরিদ্র বলবে, “ভাত” দাও। গণতন্ত্র মানে, আমাদের কাছে– ভাত দাও, কাপড় দাও, বাসস্থান, ওষুধ দাও। পেট ভরে ভাত পেলে গণতন্ত্রের স্বাদ পাবো। আর যারা পিরামিডের উপরের “তাকে” আছে, তার কাছে “গণতন্ত্র” মানে “ভাত” নয়। সে ভাবে “ভাত” কম খেতে হবে। “ভাত” শরীর মোটা করে। গরীব থাকে “ফিজিওলজিক্যাল নিড্” অনুভবের স্তরে আর “ধনী” থাকে “সেলফ একচুয়ালাইজেশন নিড্” অনুভবের স্তরে। কোন মন্ত্রী যদি একজন কুলিকে একমণ চাল দেন– সে বলবে এমন দরদীকে আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী যদি একজন গার্মেন্টস মালিককে ডেকে নিয়ে একমণ চাল উপহার দেন, উনি অপমানে লাঞ্ছনায় দেশ ছাড়তে চাইবেন। উনাকে যদি “পদক” দেন উনি খুশী হবেন। গণতন্ত্র দেশের এক কিসিমের মানুষের জন্য এক এক অর্থ বহন করে। সরকার “উন্নয়ন” দেখিয়ে গণতন্ত্র কাটছাট করছে, এই কথা যারা বলেন, উনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা গণতন্ত্রের বিশদ ব্যাখ্যা আমাদের দেন। গণতন্ত্র– আসলে কি? প্রিয় কলামিস্টের কাছে আমার আরো একটা প্রশ্ন আছে। অনেকে মনে করে “গণতন্ত্র” থাকবে, “লেইজা ফেয়ার” “যেমন খুশী চল” নীতিতে, সবাই যে যার মত চলবে। তাহলে সরকারকে ক্ষমতা কেন্দ্রীয়করণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সব জায়গাতে বিকেন্দ্রীকরণ থাকবে। দলে, প্রশাসনে, স্থানীয় সরকারে, সরকারের ভেতরে– সর্বত্র। ওয়েস্ট মিনিস্টার ধাঁচের গণতন্ত্রে চেক এন্ড ব্যালেন্স ব্যবস্থা আছে। বেশী কর্তৃত্ববাদী হয়ে সেখানে সরকার যা ইচ্ছা তা করতে পারেনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওয়েস্ট মিনিস্টার ধাঁচের সহজ সরল গণতন্ত্রের প্রচণ্ড ভক্ত। কিন্তু আমি একজন শিক্ষক। আমার সাবজেক্ট ম্যানেজমেন্ট। একটি প্রশ্ন সব সময় আমাদের সামনে আসে– আর সেটা হচ্ছে– বিকেন্দ্রীকরণের প্রশ্নে, হাউ মাচ্ পাওয়ার ইউ ক্যান্ ডেলিগেট টু ইয়োর কলিগ? হাউ মাচ্ অথরিটি ক্যান বি শিফটেড? ডেলিগেশন টু হোয়াট এক্সটেন্ট? আপনি কি আপনার সকল ক্ষমতার কিছু কিছু অংশ বিকেন্দ্রীকরণ করবেন? না, কিছু ক্ষমতার সকল অংশ বিকেন্দ্রীকরণ করবেন? কোনটা করলে, বেশী গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত হবে? আপনি যদি জনতার সাথে থাকেন আপনি বলবেন, সকল ক্ষমতার সকল অংশ বিকেন্দ্রীকরণ কর। আর যখন আপনি ক্ষমতা হাতে নিবেন, তখন ভাববেন, সকল ক্ষমতা যদি বিকেন্দ্রীকরণ করি, তাহলে দেশের উন্নয়ন কিভাবে করব? এই রকম একটা পাজেল, একটা ধাঁ ধাঁর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র এগুচ্ছে। হায় গণতন্ত্র। স্বপ্নে তুমি যেমন, বাস্তবে তা নও।
(দুই)
ভেরী ইন্টারেস্টিং একটি ব্যাপার। আমরা চার্লস ব্যাবেজ এর কথা সব সময় বলি। কমপিউটার আজ আমাদের অগ্রগতির চাকায় অস্বাভাবিক গতি এনে দিয়েছে। এর গোড়ার দিকের সাফল্যের প্রশ্নে আমরা ব্যাবেজ– এর কথা বেশী বলি। কিন্তু ইন্টারনেটে ভিন্ন জিনিস দেখে নিজেকে সামলে নিলাম। পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম এনিয়াক (Electronic Numerical Intigrator and calculator-ENIAC) উদ্ভাবকদ্বয়ের নাম– Eckort এবং John mauchly। এর জন্য ২০*৪০ ফুট বা ৮০০ বর্গফুটের স্থাপনা বানাতে হয়েছিল। এর ওজন ছিল ৩০ টন। সে এক সেকেন্ডে ৫ হাজার টি যোগ এবং ৩০০টি গুণের অংক করতে পারতো। তখন সেটা অবাক বিষয় ছিল।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ বানানোর কর্মসূচি না দিলে আমরা ৩০টন ওজনের সনাতন কম্পিউটারের যুগে থেকে যেতাম। একজন রাজনীতিবিদের জন্য ডিজিটালাইজেশনের চিন্তা কত বড় বিষয়?
(তিন)
অন্ লাইনে একটি নিউজ দেখলাম। আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া টাকার অভাবে পড়েছে। তারা ব্যয় কমাতে চায়। তাদের সকল সরকারি কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিদেশ ভ্রমণের অনুরোধ গ্রহণ করা হবে না। ওদের প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব নেই। এখন তাদের নগদ অর্থ সংকট। তাদের প্রেসিডেন্ট গিয়েনগব জেট উড়োজাহাজ ব্যবহার করেন। তিনি এখন কমার্শিয়াল ফ্লাইটে চড়ছেন। খাদ্য সরবরাহ, বিদ্যুৎ পানির বিল দেয়ার ক্ষমতাও এখন তাদের নেই। আমাদের যদি এই অবস্থা হতো? বুঝতেই পারছেন, অর্থনৈতিক সামর্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এবার আমাদের সরকারকে মূল্যায়ন করুন। প্রশংসা মানুষ এমনি এমনি করেনা।
(চার)
বিশ্ব রাজনীতিতে ডেমোক্রেটিক দেশগুলোর দিকে তাকালে আপনি “জনতুষ্টিবাদ” বলে একটি টপিক দেখতে পাবেন। আমি এ বিষয়টি কম বুঝি। পশ্চিম ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে আপনি গণতন্ত্রের এক একটি রূপ দেখতে পাবেন। আমরা– এককালে কম্যুনিস্ট শাসন ছিল পূর্ব ইউরোপের তেমন দেশ গুলোর দিকে তাকাই। টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট অফ গ্লোবালচেঞ্জ– এর মার্টিন ইয়ারম্যান, ইয়াসা মুন্ক এবং লিমুর গুলছিন বিশ্লেষণ করেছেন, একমাত্র ইউরোপের কম্যুনিস্ট পরবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোতে “জনতুষ্টিবাদ” নিয়মিত ভিত্তিতে প্রসারিত হচ্ছে। এই মতবাদ প্রথাগত দলগুলোকে পরাজিত করছে। তারা বলেছেন ২০০০ সালের আগে, পূর্ব ইউরোপে মাত্র ২টি দেশে জনতুষ্টিবাদী দলগুলো ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখন ওই অঞ্চলের ১০ টি দেশে তারা সে পরিমাণ ভোট পাচ্ছে। তার মধ্যে ৭টি দেশে জনতুষ্টিবাদী দল ক্ষমতায়, ২টি দেশে ক্ষমতাসীন দলের শরীক হিসেবে তারা ক্ষমতায় আছে। তিনটিতে তারা প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে। পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে “চেক এন্ড ব্যালেন্সের” মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্যের ব্যবস্থা আছে। পূর্ব ইউরোপীয় গণতন্ত্রে তার ঘাটতি আছে। পোল্যান্ডের কথায় আসতে পারি। তাদের “ল এন্ড জাস্টিস পার্টির” চেয়ারম্যান দেশটির কার্যত প্রধান শাসক কাসজিনস্কির মতো ট্রাম্প চাইলেই বিচারিক সিদ্ধান্তকে উড়িয়ে দিতে পারেননা। অথবা নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরোধী শক্তির ভূমিকায় ঠেলে দিতে পারেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং নির্বাচনী দল রাশিয়ার সাথে যোগসাজশ করেছে– এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। রবার্ট মুয়েলার স্পেশাল কাউন্সেল– তদন্ত করছেন। সে বিষয়টি দেখেন বুঝতে পারবেন। মুয়েলারকে নিয়োগ দিয়েছে মার্কিন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল। উনার নাম রড রোজেন স্টেইন। রোজেনস্টেইন সরাসরি ট্রাম্পের অধীনে সরকারি চাকুরে। মুয়েলার ও রোজেনস্টেইন দুজনকেই যখন তখন বরখাস্ত করার ক্ষমতা ট্রাম্পের হাতে আছে। তারপরও ট্রাম্প তাদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দেখাবেন না। কিন্তু পোলান্ডের কাসজিনস্কির ক্ষেত্রে একই কথা বলা যাবে না। গণতন্ত্র চর্চা একেক দেশে একেকভাবে হয়। তবুও ওটা গণতন্ত্র।
পূর্ব ইউরোপীয়রা– পশ্চিম ইউরোপীয়দের চেয়ে বেশী বস্তুবাদী চেতনাধারী। এটি বস্তুবাদ উত্তর চেতনা। পূর্ব ইউরোপের দেশে বাক–স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মতো বিমূর্ত উদারপন্থী প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রমণের শিকার হয় বেশী। (সূত্র– স্লাভোমির সিয়েরাকোভস্কি, ইনস্টিটিউট অফ এডভান্স স্টাডিস, ওয়ারশ, দৈনিক প্রথম আলোর নিবন্ধ, ০২/০২/১৮)
আমাদের দেশে গণতন্ত্র আছে, সংসদীয় গণতন্ত্র । আমাদের গণতন্ত্রে “ডান” বনাম “বামের” সীমারেখা বিভাজিত নেই। এখানকার গণতন্ত্রে ডান, বাম, উদারনৈতিক সব একাকার। আমাদের গণতন্ত্র একপক্ষ বলছে, আমরা “ঠিক” ওরা “বেঠিক”। এখানে সরকারি দল (পজিশন) এবং বিরোধী দল (অপজিশন) এভাবে ব্যবস্থাকে দেখা হচ্ছে না। দেখা হচ্ছে হয় তুমি “শত্রু” না হয় “মিত্র” হিসেবে। কোন কোন দল নিজেকে দেশ প্রেমিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু মনে করে। তারা ভাবে তারাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক। প্রতিপক্ষ আসলে রাজনীতিতে অবৈধ। তারা পরস্পরকে পরাজিত করতে চায়। শুধু তা নয়, একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। আপনি বৃটেন বা যুক্তরাষ্ট্রে দেখুন– এমনটা হয় না। আমাদের দেশের ব্যবস্থার সমালোচনা করলেও আপনি দেখবেন শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত মানুষ যারা ক্ষমতায় আছে তাদের সমর্থন দেয়। তারা গণ বিরোধী নয়। তারা জনপ্রিয়।
আপনি ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রের আলোকে সরকারকে গণতন্ত্র সংকোচনের জন্য সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আমাদের পরিবেশটা যে ওয়েস্ট মিনিস্টারের মতো নয়, তাও আপনাকে বুঝতে হবে। আরেক দল ক্ষমতায় গেলে এটাই করবে। কে বেশি গণতন্ত্র দিবে আমরা জানি না।
লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও
অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
(সংগৃহীত)