বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

৮ ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য রায় নিয়ে বিএনপি শিবিরে এই আতঙ্ক কেন?

৮ ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য রায় নিয়ে বিএনপি শিবিরে এই আতঙ্ক কেন?

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ০৬ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার যে রায় বেরোনোর কথা, তা নিয়ে বিএনপি রাজনীতিতে আতঙ্ক ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে মনে হয়। সম্প্রতি ঢাকায় একটি অভিজাত হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যে সভা হয়, তাতে এই আতঙ্ক ও অস্থিরতার প্রকাশ্য চেহারা দেখা গেছে। নির্বাহী কমিটির সভায় জাতীয় রাজনীতি, বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলোচনা নয়, রায়ে খালেদা জিয়া জেলে যাবেন এবং তারপর দলে ‘বেঈমানরা’ ভাঙন ধরাবে—এই আতঙ্কটাই নেত্রী থেকে শুরু করে দলের বড় নেতা, পাতিনেতা সবার কণ্ঠে শোনা গেছে।

আমার জানা মতে, একটি রায় সম্পর্কে শুধু অনুমানের ওপর নির্ভর করে কোনো রাজনৈতিক দলকে এর আগে এমন আতঙ্কিত হতে দেখা যায়নি। কোনো রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে দলের গঠনতন্ত্র থেকে নির্লজ্জভাবে অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের দলে স্থান না দেওয়ার ধারা বাতিল করতে পারে তা আমার জানা ছিল না। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা বাতিল করা তো দলের ভেতরের ও বাইরের ক্রিমিনালদের উৎসাহদান এবং দলে অবস্থানের জন্য আহ্বান জানানোর শামিল। দেশের মানুষের কাছে এ ব্যাপারে বিএনপির কৈফিয়তটা কী?

‘চোরের মনে পুলিশ পুলিশ ভাব’ না হলে রায় বেরোনোর আগেই বেগম জিয়াকে সাজা দেওয়া হবে এবং নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে—নির্বাহী কমিটির সভায় এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে কেন? আর এই আতঙ্কিত কণ্ঠ থেকে শোনা গেছে, বেগম জিয়ার সাজা হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এটা কি আদালতকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা নয়? একটু নরম ভাষায়, কোনো রাজনৈতিক মামলায় নয়, একটি দুর্নীতির মামলায় আদালতের রায় প্রভাবিত করার চেষ্টা।

বিএনপির অভিযোগ, বেগম জিয়ার দুর্নীতিসংক্রান্ত এই মামলা গত সেনা সমর্থিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেও পরে আওয়ামী লীগ সরকারই এটাকে টেনে এ পর্যন্ত এনে নির্বাচনের আগে রায় প্রকাশ করে বেগম জিয়াকে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণার চক্রান্ত করছে। আওয়ামী লীগ এ চক্রান্ত করেছে কি না আমার জানা নেই। আর বিএনপিও স্বীকার করে, এই মামলা আওয়ামী লীগ করেনি।

তারপর এই মামলা টেনে দীর্ঘায়িত করার দায় সরকারের ওপর চাপানো কি ধোপে টেকে? এই মামলার রেকর্ড হলো, এই মামলা চলাকালে বেগম জিয়া কতবার বিভিন্ন অজুহাতে সমন পেয়েও অনুপস্থিত থেকেছেন, তাঁর আইনজীবীরা বারবার খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন। বেগম জিয়া অসুস্থতার অজুহাতে তিন-চার মাস বিদেশে অবস্থান করেছেন। এই মামলার অন্য আসামি তারেক রহমান আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। আর ফেরেননি। আদালতের সমন পেয়েও বিচারের সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে দেশে আসেননি। তাঁর মনেও দণ্ডিত হওয়ার আতঙ্ক।

খালেদা জিয়া দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের দীর্ঘকালের নেত্রী। একাধিকবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশের মানুষ তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বশীল কথাবার্তা আশা করে। দায়িত্বহীন কথাবার্তা নয়। দেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচারের মামলায় হাইকোর্টের রায়ে তারেক রহমানের সাত বছর সাজা হয়। এর আগে জজ আদালতে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। যে জজ এই খালাসের রায়টি দিয়েছিলেন, তিনি রায়টি দিয়েই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, তিনি বিরাট অঙ্কের ঘুষ নিয়ে রায়টি দিয়েছিলেন। তিনি ধরা পড়ার ভয়ে রাতারাতি দেশ ছেড়েছেন। সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সময় ও সুযোগ পায়নি।

দেশের মানুষকে নিরেট বোকা না ভাবলে বেগম জিয়া প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে পারতেন না। তিনি দেশের হাইকোর্টের মতো উচ্চ আদালতের রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, আর নিম্ন আদালতের রায়কে বলছেন সঠিক। যদি তা-ই হবে, তাহলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলার রায় তো একটি নিম্ন আদালতই দিচ্ছে। তা নিয়ে তাঁর এত ভয় কেন? শুধু জজকোর্ট কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে উচ্চ আদালতে পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সাজা থেকে বাঁচানোর চেষ্টার গুজব বাজারে ছড়িয়েছিল। বিএনপির বিরুদ্ধেই এ অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেই।

এবার আসল কথায় আসি। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালত কী রায় দেবেন তা আমরা জানি না, খালেদা জিয়া যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে নির্বাচন কমিশন বিধি-বিধানমতো তাঁকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করবে কি না তা-ও আমরা জানি না। নিয়মমাফিক অযোগ্য ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থের কথা ভেবে নির্বাচন কমিশন নিয়ম শিথিল করতে পারে, আবার না-ও পারে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে চান বিএনপি নির্বাচনে আসুক, এটা তাঁর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য থেকে অনুমান করা যায়। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন যথাযথ হবে না।’

বিএনপি এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করে না। আদালতের সুষ্ঠু বিচারের ওপরও তাদের আস্থা নেই। তাহলে দেশের জনগণের ওপরও তাদের আস্থা আছে কি? যদি না থাকে তাহলে বিএনপির রাজনীতির শিকড়টা কোথায়? বিএনপি নেত্রীর কথাবার্তা যে কতটা পরস্পরবিরোধী, তার প্রমাণ, একদিকে তিনি বলছেন আওয়ামী লীগ প্রশাসন, বিচার বিভাগ—সব কিছু কবজা করে ফেলেছে; অন্যদিকে নির্বাহী কমিটির সভায় দলের নেতাকর্মীদের অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী আছে।’ কী ভয়ংকর কথা! একটি গণতান্ত্রিক দেশে প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব কিছু থাকে দলনিরপেক্ষ। বাংলাদেশে যদি এরা সবাই বিএনপির অনুগত হয়, তাহলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের অবস্থাটা কী? খালেদা জিয়া কি তাহলে দেশে একদলীয় (তাঁর দল যেখানে সর্বেসর্বা) গণতন্ত্র চান এবং ক্যান্টনমেন্টে বসে আবার দেশ শাসনের স্বপ্ন দেখছেন? তাঁর মনের আসল কথা সম্ভবত তাঁর অজান্তেই এমনিভাবে বেরিয়ে এসেছে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় নির্বাচনে যোগ দেওয়ার যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তার কোনো কোনোটি সরকার বিবেচনা না করে দেখতে পারে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করব না (সরকার নির্বাচন চলাকালে ছোট আকারের কেয়ারটেকার সরকার হিসেবে থাকলেও)—এটা মামার বাড়ির আবদার। কিন্তু নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবির যৌক্তিকতা আছে। বিএনপি এসব দাবির পেছনে জনমত তৈরি করতে পারে।

কিন্তু দুর্নীতির মামলায় নেত্রীর সাজা হলেই দল নির্বাচনে যাবে না—এটা যৌক্তিক কথা নয়। এই মামলার রায়ে যদি তিনি সাজা পান, তাহলে তাঁর উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ আছে এবং তিনি জামিনও পাবেন। সম্প্রতি ভারতের কয়েকটি রাজ্যে রাজনৈতিক দলের বাঘা বাঘা নেতা, মন্ত্রী, এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির মামলায় আদালতের বিচারে জেলে গেছেন। তা নিয়ে তাঁদের দল অযথা হৈচৈ করেনি। বিচারকে প্রহসন বলেনি। নেতা জেলে বসে তাঁর অনুপস্থিতিতে দল পরিচালনার জন্য নেতা মনোনয়ন করেছেন। কারামুক্তির পর আবার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন।

ভারতে আরো কী হয়েছে? কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী তো কোনো দুর্নীতির মামলায় সাজা পাননি। বরং তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বহুকাল পর ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল। কিন্তু তাঁর বিপক্ষের লোকরা তিনি ‘ইতালীয় বংশোদ্ভূত’ বলে প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর বসায় আপত্তি করে। তিনি সেই আপত্তিকে মান্য করে নিজে প্রধানমন্ত্রী না হয়ে ড. মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের নেতৃত্ব ছিল তাঁর কবজায়।

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী যুক্তফ্রন্টের হক মন্ত্রিসভাকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করে। দুই বছর পর যখন সেই যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ওঠে, তখন কেন্দ্রীয় সরকার শর্ত দেয়, ফজলুল হক আর যুক্তফ্রন্টের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে পারবেন না। ফজলুল হক এই শর্ত মেনে নেন। তাঁর মনোনয়নে আবু হোসেন সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু নেতৃত্ব ও দলের চাবিকাঠি থাকে হক সাহেবের হাতে। পরে তিনি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদে বসেন।

যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, ৮ ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য ঘোষিত রায়ে খালেদা জিয়ার জেল হবে এবং নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হবে, তাহলেও তাঁর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তিনি জেলে বসেই দল পরিচালনা করবেন এবং তাঁরই মনোনীত নতুন কোনো নেতার নেতৃত্বে দল নির্বাচনে যাবে। তাতে দলের ঐক্য বজায় থাকবে এবং কারাবন্দি নেত্রীর প্রতি জনগণের সহানুভূতি বাড়ার ফলে নির্বাচনে তাঁর দল উপকৃত হবে। চাই কি তাঁর দল নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি পুত্রসহ সব অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারেন এবং হয়তো ক্ষমতায়ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।

এই সম্ভাবনাটা বিএনপি খতিয়ে দেখছে না; নিজেদের অতীতের কৃতকর্মের জন্য তারা এতই ভীত যে ‘রজ্জুতেই সর্পভ্রম’ করছে। দলের ভেতর যে সুবিধাবাদী নেতৃত্ব আছে, তারা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে যে দল ভাঙার চেষ্টা করতে পারে, এই ভয়ে তারা ভীত। কারণ অতীতে দলের ভেতর থেকেই এই চেষ্টা একাধিকবার হয়েছে। বিএনপিতে নিষ্ঠ নেতাকর্মীর চেয়ে বিভিন্ন দল থেকে ক্ষমতার লোভে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীর সংখ্যাই বেশি। তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তো সুযোগ পেলেই দল বদল করেছেন। তাই দলের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি না থাকলে বিএনপির ভয়টা বেশি। দল বুঝি টিকে থাকবে না, সুবিধাবাদীরা পেছন থেকে ছুরি মারবে।

এই ভয় একেবারে অমূলক নয়। বিএনপি যে আন্দোলনের ডাক দিয়ে ব্যর্থ হয় তার কারণও এখানেই—দলে নীতিনিষ্ঠ নেতাকর্মী কম। আন্দোলনে কেউ যেতে চায় না। এই অভিযোগ বিএনপির সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও উঠেছে। তবে অভিযোগের তীরটা ঢাকার নেতাকর্মীদের দিকেই বেশি। বিএনপি জানে, তারা নেত্রীর দণ্ড হলে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে বটে, এটা অক্ষমের আস্ফাালন ছাড়া আর কিছু নয়। এই আস্ফাালনের অন্তরালে রয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারির রায় নিয়ে দারুণ ভীতি এবং দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দারুণ আশঙ্কা। তাই বেগম জিয়াসহ শীর্ষ নেতারা দলের ভেতরের বেঈমানদের সম্পর্কে বারবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব ও বিএনপির ঐক্য বজায় রাখার একমাত্র পথ নির্বাচনে যাওয়া। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য তাদের পছন্দমতো নির্বাচনকালীন তথাকথিত নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আবদার না জানিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য বাস্তব দাবিদাওয়া তুলে ধরা এবং তার ভিত্তিতে জনমত গড়ে তোলা। আমার ধারণা, যেকোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তা না হলে সেটা হবে দলটির জন্য আত্মঘাতী নীতি।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা জিয়া এমন কিছু কথা বলেছেন, যা শুধু সত্যের অপলাপ নয়, সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্যও ক্ষতিকর। এ সম্পর্কে অন্য একটি নিবন্ধে আলোচনার আশা রইল। (কালের কণ্ঠ)

লন্ডন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত