![ভালোবাসা-ভালো ‘বাসা’!](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/14/valentines-day_125872.jpg)
পংকজ দেব অপু, ১৪ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : এই একটি দিনেই কি শুধু মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে? বাকি দিনগুলো কি মানুষ ঘৃণা দিয়ে মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে ঠেলে দিবে? এর উত্তরে শুধু কয়েকটি চরণই বলতে হবে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমারের গান থেকেণ্ড “ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী? ভালোবাসা হল নিঃশ্বাস এ দেহের। নিঃশ্বাস বিনা মানুষ কখনো বাঁচে কি? ভালোবাসাকে আমরা কি শুধু নিঃশ্বাস বলবোণ্ড তাকে বলতেই হবে হৃদয়ে লালিত চিরন্তন বিশ্বাস। খ্যাতিমান গজল শিল্পী পংকজ উদাস নামটির বিকল্প খুঁজে না পেয়ে বলেছেনণ্ড ভালোবাসা, ভালোবাসা, তার আর কোনো নাম নেই। কোন্ সংজ্ঞায় তাকে সংজ্ঞায়িত করা যায়? অবচেতনে তা ভাবতে ভাবতে কণ্ঠশিল্পী সাইফুদ্দিন মাহমুদ খান গেয়ে ওঠেনণ্ড দু’টি হৃদয়ের অনন্য ভালোবাসা, এক হয়ে বাঁধে যদি ‘বাসা’/ লোকে তারে বলে ভালোবাসা।
ভালোবাসা শব্দটি আয়তনে ছোট হতে পারে, কিন্তু তার গভীরতা যে অতলান্তিক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের অন্তর থেকে সহজভাবে উৎসারিত চিরন্তন অভিব্যক্তির প্রকাশ হলেও এটা জোর করে আদায়ের চেষ্টাও অনেকের থাকে। কিশোর কুমারের আগের গানটির অন্তরার একটি চরণ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্যণ্ড যেভাবেই হোক তাই, ভালোবাসা পেতে চাই। যে কোনো ভাবেই তাকে পেতে হবেই। এ আকাঙক্ষা থেকেই বোধ হয় ‘অপহরণ’ ও ‘এসিড সন্ত্রাস’ শব্দ দু’টির বহুল প্রসার। এসব জবরদস্তকারী ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের অমিতের সংলাপ তো আর জানে নাণ্ড মনে নেয়া আর মেনে নেয়ার মধ্যে তফাৎ আছে বন্যা।
‘প্রতিটি মানুষেরই জীবনে প্রেম আসে’ চিরন্তন এ সত্যকে কণ্ঠে ধারণ করেছেন যে মান্না দে, তিনিই ভালোবাসা লাভ করবার সুতীব্র আকুতি থেকেই বলে থাকতে পারেনণ্ড শুধু একদিন ভালোবাসা মৃত্যু যে তারপর / তাও যদি হয়/ আমি তা–ই চাই, তাও যদি পাই/ চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর। …….ভাগ্যের দরবারে দু’হাত পেতে/চাইনা পুণ্য ফলে স্বর্গে যেতে/ স্বর্গকে ধরে ফেলি হাতের মুঠোয়/ যদি, একবার হাতখানি রাখো এ হাতে।
প্রিয় পাঠক, হাতে হাত রাখতে পারার যে স্বর্গীয় আনন্দ, তা বুঝতে যত দেরি হবে, ততই মানুষ বঞ্চিত হবে, কারণ কণ্ঠশিল্পী কুমার শানুর মতো তো তারা আর বলতে পারবেন নাণ্ড ভালোবাসা যত বড়, জীবন তত বড় নয়/ তোমায় নিয়ে হাজার বছর বাঁচতে বড় ইচ্ছে হয়। কিন্তু ভালোবাসা যখন হয় একতরফা তখন জীবনটা হয়ে ওঠে দারুণ দুর্বিষহ। কণ্ঠশিল্পী সুব্রত দাশ অনুজের কণ্ঠে সে হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয় এভাবেণ্ড “ভালোবাসা আসলেই তোমার বিলাস/ নইলে মেঘে কেন ঢাকবে বলো আমার আকাশ।…….. তুমি তুমি করে এই মনটা আকুল/সেই তুমি উদাসীন ভাঙলো না ভুল ( কথা: পংকজ দেব অপু)
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভালোবাসার সর্বব্যাপী রূপ তুলে ধরেছেন অনন্য ভঙ্গিতেণ্ড ভালোবাসি, ভালোবাসি/এই সুরে, কাছে দূরে জলে–স্থলে বাজায় বাঁশি। ভালোবাসা নিয়ে দারুণ অভিমানী কবি কাজী নজরুল। প্রিয়জন তাঁকে আশা দিয়ে ভাসিয়েছেন অকূল সাগরে। তিনি বলেছেনণ্ড আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু, ভালোবাসো মোর গান। তিনি যে জানেনণ্ড গান শেষ হলে বনের পাখিকে কেউ মনে রাখে না।
কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম ভালোবাসাকে দু’টি হৃদয়ের সম্মিলনের অনুপম ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছেনণ্ড ভালোবাসা এমন একটি গান/ কথা আর সুরে বাঁধা যেন দু’টি প্রাণ ( কথা: গাজী মাজহারুল আনোয়ার)
ভালোবাসাকে দু’টি হৃদয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে তাকে বৃহত্তর পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে দৃঢ়সংকল্প খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকাণ্ড আমি ভালোবাসি মানুষকে/ তুমি ভালোবাসো আমাকে/ আমাদের দু’জনের সব ভালোবাসা আজ/ এসো, বিলিয়ে দিই এ দেশটাকে।
এটা কি ঢাক–ঢোল পিটিয়ে বলার ব্যাপার? চোখই তো বলে দেবে ‘ কত ভালোবাসি যে তোমায়।’ কণ্ঠশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা এ কথাটিই গানে গানে গেয়েছেন চমৎকারভাবেণ্ড ভালোবাসি বলে, ভালোবাসি বলি না/ দু’চোখে দরশ হয়ে মিশে আছো বলে/ তোমারে খুঁজিতে নয়ন মেলি না।
জীবন্ত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর সংসার করেননি। সংসার পেতেছেন গানের সঙ্গেই। ‘কপালের লিখন সিঁদুরে ঢাকার’ অবকাশ তার হয়নি। তাই তার আন্তরিক ইচ্ছেণ্ড ভালোবেসে মরি যদি সেও ভালো। কবি–সাংবাদিক রাশেদ রউফ ভালোবাসার প্রকাশ করেন এভাবেণ্ড ভালোবাসা মানে তোমার জন্য কেমন কেমন করা। এর পরে ভালোবাসা সম্পর্কে আর কিছু কি বলার থাকে?
স্রষ্টা আর সৃষ্টির মধ্যে যে যোগ সাধন সেটাই আসলে ‘ভালোবাসা’। সেই যোগ সাধনের জন্য প্রয়োজন সাধনার, দরকার সংসারের মায়াবন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার। রাধা জীবাত্মা, কৃষ্ণ পরমাত্মাণ্ড হৃদয়ের আকুল করা ভালবাসায় জীবাত্মা লীন হবে পরমাত্মার মাঝে।
ভালোবাসা নিয়ে অনেক গল্প কথাই তো হল। এবার প্রখ্যাত ছড়াকার আবদার রশীদের ততোধিক বিখ্যাত একটি ছড়া। কোথায় কোথায় ভালোবাসা পাওয়া যায় তার বর্ণনা দিয়ে তিনি তার সন্ধান দিয়েছেনণ্ড ভালোবাসা পাবে তুমি প্রেমিকের চক্ষে / ভালোবাসা পাবে তুমি বাবাণ্ডমার বক্ষে ….. বলনাগো আপাতত: আমাদের পাড়াতে/ ভালো ‘বাসা’ পাওয়া যাবে কিছু কম ভাড়াতে?
বাড়ির মালিকরা বাড়ি ভাড়া আরেক দফা বাড়িয়েছেন। সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো ‘বাসা’ খুঁজে পাওয়াই মুস্কিল।
লেখক : গীতিকবি, অধ্যাপক
(সংগৃহীত)