![শুধু নারী লেখকদের বই প্রকাশই যাদের চ্যালেঞ্জ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/17/female writer book release_126267.jpg)
ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : বছর তিনেক আগে লেখক ক্যামিলা শামসি যখন প্রকাশনা শিল্পকে চ্যালেঞ্জ করলেন এই বলে যে এমন কোন প্রকাশনা সংস্থা কী ব্রিটেনে আছে যে ২০১৮ সালে শুধুমাত্র নারী লেখকদের বই প্রকাশ করবে?
সে সময় সবাই চুপ করে থাকলেও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিল শেফিল্ডের এক প্রকাশনা সংস্থা। নাম তার 'অ্যান্ড আদার স্টোরিজ'।
ক্যামিলা শামসি বলেছিলেন, সাহিত্য পুরষ্কার, বইয়ের সমালোচনা, প্রকাশনা শিল্পের বড় পদের চাকরি ইত্যাদি সবখানে নারী-পুরুষের বৈষম্য রয়েছে। এই বিভেদ দূর করতে হবে। আর ২০১৮-কে ঘোষণা করতে হবে নারী প্রকাশনার বছর হিসেবে।
তার এই আহ্বানের পর থেকেই সাহিত্যে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ রয়েছে কী না, তা নিয়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক।
আর তখনই ক্যামিলা শামসির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন 'অ্যান্ড আদার স্টোরিজ'-এর স্টেফান টবলার।
'অ্যান্ড আদার স্টোরিজ' ইংরেজি লেখক এবং অন্য ভাষার লেখকদের অনুদিত বই প্রকাশ করে থাকে।
তাদের প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নাম করেছে ডেবোরা লেভির উপন্যাস 'সুইমিং হোম' যেটি ২০১২ সালে বুকার পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
"সে সময় ক্যামিলা যা বলেছিলেন তা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। আমাদের মনে হয়েছে তিনি ঠিকই বলেছেন," মি. টবলার বলছিলেন, "নারীদের তুলনায় পুরুষ লেখকদের এখনও বেশি কদর করা হয়।"
লিঙ্গ ভারসাম্যের অভাব আরও বেশি লক্ষ্য করা যায় ভিন্ন ভাষা থেকে যেসব বই ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় সেখানে।
স্টেফান টবলার জানান, অনুদিত মোট বইয়ের মাত্র ৩০%-এর লেখক মহিলা।
'অ্যান্ড আদার স্টোরিজ' প্রতি বছর ১২টি নতুন বই প্রকাশ করে। চলতি বছর তারা প্রথম যে দুটি বই প্রকাশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ এর লেখক অ্যান কুইনের অপ্রকাশিত লেখা এবং সুইস লেখক ফ্লেউর জেগির একটি অনুবাদ।
কিন্তু ২০১৮ সালকে নারী প্রকাশনার বছর হিসেবে ঘোষণার ব্যাপারে প্রকাশনা শিল্পের প্রতিক্রিয়া মিশ্র।
কোন কোন লেখক এর প্রয়োজন রয়েছে বলে স্বীকার করলেও লেখক লিওনেল শ্রিভার এর প্রবল সমালোচনা করেছেন। তার যুক্তি: বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে নারী লেখকরা অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, এই ধারনাটাই তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।
কিন্তু পরিসংখ্যান কী বলছে?
ব্রিটেনের প্রধান সাহিত্য পুরষ্কারগুলোর মধ্যে গত ১০ বছর ধরে যারা বুকার প্রাইজ জিতেছেন তাদের মধ্যে ৫৭% হলেন পুরুষ লেখক।
অন্যদিকে, কস্টা বুক অ্যাওয়ার্ডসের ৬১% বিজয়ী হলেন নারী লেখক।
শুধু তাই না লেখক নিকোলা গ্রিফিথস ২০১৫ সালে দেখতে পেয়েছেন, এর আগের বুকার বিজয়ী ১৫টি উপন্যাসের মধ্যে ১২টি উপন্যাসের মূল চরিত্র পুরুষ।
পুস্তক সমালোচনাতেও নারীদের সুযোগ কম থাকছে।
লন্ডন রিভিউ অফ বুকসে ২০১৬ সালে যেসব সমালোচনা ছাপা হয় তার মাত্র ২৬% নারী লেখকদের সৃষ্টি নিয়ে।
টাইমস লিটারারি সাপ্লিমেন্টে এই হার ২৯%।
বই বিক্রির প্রশ্নে অবশ্য নারীরা পিছিয়ে নেই। বেস্ট সেলারদের তালিকায় নারী লেখকদেরই জয়জয়কার।
সর্বাধিক বিক্রিত ১০ জন সাহিত্যিকের মধ্যে নয় জন্যই হচ্ছে নারী।
মার্গারেট অ্যাটউড, সেরা পেরি কিংবা হেলেন ডানমোরকে নিয়ে সেরা ১০-এর যে তালিকা তাতে মাত্রটি নাম পুরুষ।
তিনি হলেন হারুকি মুরাকামি। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি