![একটি আত্মঘাতী রাজনৈতিক প্রবণতা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/18/motamot_126468.jpg)
কানাই দাশ, ১৮ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : পেশাজীবী সংগঠন ও আন্দোলন কোনো দেশে সমাজ বা সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে না। এটা সার্বিক পরিবর্তন প্রত্যাশী কোন শ্রেণি আন্দোলনও নয়। কিন্তু এটি যে কোন দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান যা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের ক্ষোভ–বিক্ষোভ, মতামতকে সমাজে তুলে ধরে এবং সরকার ও সংশ্লিষ্ট সামাজিক শক্তির জবাবদিহিতা ও সুবিচার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে সামরিক শাসন বিরোধী দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্মিলিত পেশাজীবী আন্দোলন গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং পেশাজীবীদের রাজনীতি নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে তখন সাধারণ মানুষের কাছে সে আন্দোলন সহজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বুদ্ধিবৃত্তির নানা পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের আমরা সাধারণত পেশাজীবী হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। স্ব–স্ব ক্ষেত্রে পেশাগত নানা সমস্যা তাঁদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হয়। সে কারণে পেশাজীবীদের নানা স্তরে গড়ে উঠেছে পেশা ভিত্তিক নানা সংগঠন। প্রাথমিক পর্যায়ে এ সব সংগঠনসমূহ নিজেদের পেশাগত সংকটও সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রভাব মুক্ত পরিবেশে, অনেকটা অরাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিচালনায় আন্দোলন সংগ্রাম করত এবং তাতে বেশ সাফল্য ও মর্যাদা পেশাজীবীরা পেয়েছে। সে সব সংগঠনসমূহের গঠন পর্বের প্রাথমিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সে সময়ের পেশাজীবী নেতারা প্রায় সবাই বাম প্রগতিশীল চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলেন কিন্তু ক্ষতিকর বিবেচনা করে পেশাগত আন্দোলন সংগ্রামে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় বা চিন্তাকে আড়ালে রাখতেন। এসব নেতাদের অহর্নিশ ক্লান্তিহীন শ্রমে–ঘামে গড়ে উঠেছে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের একক পেশাজীবী সংগঠনসমূহ, গড়ে উঠেছে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের নানা সংগঠন ও তাঁদের নির্বাচিত যৌথ বার্গেনিং এজেন্ট বা দরকষাকষি সংস্থা যথাক্রমে বি.এম.এ এবং আইইবি। আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও গড়ে উঠেছে বার কাউন্সিলের মত নির্বাচিত সংস্থাগুলো যেগুলো আইনজীবীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে এবং তাঁদের পেশাগত স্বার্থেই বেঞ্চ ও বারের সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিচার বিভাগকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হয়। পেশাজীবী সংগঠনের সেদিনের নেতা ও সংগঠকরা অবশ্যই একটা সৎ ও সচেতন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতেন, আর তা হলো প্রত্যেক পেশাকে যথাযথভাবে নির্বিঘ্ন ও আকর্ষণীয় করা, পেশাকে যতদূর সম্ভব সমস্যা ও সংকট মুক্ত করা যাতে সে সব গণসম্পৃক্ত পেশা থেকে শুধু পেশাজীবীরাই উপকৃত হবেন না, গড়ে উঠবে দক্ষ মানব সম্পদ, মানুষ পাবে অনাবিল সেবা এবং সমাজে তৈরি হবে সততা এবং কল্যাণকামী কর্মসংস্কৃতির এক বাতাবরণ যা সমাজ প্রগতির জন্যও হবে অত্যন্ত সহায়ক এক কর্মকৌশল। পেশাজীবী সংগঠনসমূহের প্রাথমিক উদ্যোক্তা ও সংগঠকদের কাছে এ ছিল এক নিষ্কাম কর্মদ্যোগ ও প্রচেষ্টা। অন্যদিকে পেশাজীবী হিসেবে তাঁদের সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার কারণে প্রত্যেক পেশার মান–মর্যাদা উত্তরোত্তর বেড়েছে। তাঁদের প্রতি তখন সাধারণ পেশাজীবীদের ছিল গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধা। ট্রেড ইউনিয়ন ধর্মী এসব পেশাজীবী সংগঠনের কোন ট্রেড মার্ক না থাকলেও গণবিরোধী সরকারসমূহের নানা কালাকানুন, বিধি নিষেধের বিরুদ্ধে সাধারণ পেশাজীবীদের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে নেতারা আপোষহীন সংগ্রাম করে গেছেন।
বৃটিশ আমল থেকেই আমাদের দেশে পেশাজীবী সংগঠন ও আন্দোলন বিকশিত হতে থাকে। বিগত শতাব্দীর বিশের দশক থেকেই আমাদের দেশে গড়ে উঠে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের দুটি সংগঠন “অলবেঙ্গল টিচারস এসোসিয়েশন”, “বেঙ্গল কলেজ ইউনির্ভাসিটি টিচারস ইউনিয়ন”। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের একমাত্র সংগঠন “পূর্ব পাকিস্তান কলেজ শিক্ষক সমিতি” গড়ে উঠে মার্কসবাদী লেখক ও তাত্ত্বিক অধ্যাপক আবদুল হালিম ও পরবর্তীতে কমিউনিস্ট নেতা অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন প্রমুখের নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পূর্বাপর সময়ে স্কুল পর্যায়ে অধ্য কামরুজ্জামান, হেনা দাশ, চৌধুরী খুরশীদ আলম, শেখ আমানুল্লাহ প্রমুখ প্রগতিশীল ও বাম ধারার নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের উদ্যোগে “বিটিএ” পুনর্গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এসব নেতারাই স্বয়ং দোর্দণ্ড প্রভাবশালী নেতা বঙ্গবন্ধুর আমলেই শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রচন্ড আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৭৩ সালে কলেজ শিক্ষকরা ও ৩ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ধর্মঘট করেন। এজন্যে আজকের মতো সেদিন বঙ্গবন্ধুর সরকার শিক্ষকদের গালমন্দ করেননি বরং বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের কঠিন আর্থিক সংকটের মধ্যেও শিক্ষকদের দাবিদাওয়া আংশিক মেনে নিয়ে শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখেন। সেদিন শিক্ষক নেতৃবৃন্দের কাছে দল বা সরকার নয় শিক্ষকদের বেঁচে থাকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সর্বজনীন, সেকুলার বিজ্ঞান মনস্ক শিক্ষানীতির পেশাগত দাবিই ছিল প্রধান। শিক্ষক আন্দোলনের সেই সংগ্রামী ঐতিহ্য অন্য পেশার তুলনায় কিছুটা হলেও এখনো বজায় আছে। ১৯৯০ এর পর থেকে শিক্ষকরা পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গীও দাবিদাওয়া সামনে রেখে প্রত্যেক সরকারের আমলে আন্দোলন করেছেন এবং এ মুহূর্তেও বেসরকারি শিক্ষকদের সংগঠনগুলো “শিক্ষক–কর্মচারী সংগ্রাম কমিটি” নামে ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গঠন করে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছেন। তবে সম্প্রতি “স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ” নাম দিয়ে সরাসরি সরকার সমর্থক একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে কিন্তু সাধারণ শিক্ষক এমন কি সরকার সমর্থক অধিকাংশ শিক্ষকদেরও সে সংগঠনের প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
পেশাজীবী আন্দোলনে দলবাজির সংকটটি প্রকৌশলী ও চিকিৎসকদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। এ দুটো পেশায় যেহেতু আর্থিক সচ্ছলতা ও লেনদেন, পদোন্নতি ও বদলি ইত্যাকার বৈষয়িক বিষয় অন্যান্য পেশার চাইতে বেশি আকর্ষণীয়, তাই এক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতার বা সরকারের অনুগ্রহ ধন্য হতে এ’সব পেশা সংশ্লিষ্ট সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিদের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এখনকার মত স্বাধীনতার পূর্বাপর সময়ে এ প্রবণতা এত বেশি নগ্নভাবে চোখে পড়েনি। কিন্তু ’৯০ পরবর্তী সময়ে সরকারে থাকলে দুই বড় দলে সরাসরি বিভক্ত প্রকৌশলী ও চিকিৎসকদের দুই বড় সংগঠন তাঁদের দুই নির্বাচিত সংস্থা আই ই বি ও বি এম এ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সহ সব ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দ পালন করে চলেছে একক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা। নিরীহ বা দল নিরপেক্ষ যারা আছেন তারা এ দলবাজির নির্মম ও অসহায় শিকার। এ অশুভ প্রক্রিয়া থেকে পেশাজীবী আন্দোলনকে বের করে আনতে হবে পেশাজীবী ও দেশের স্বার্থে। বার কাউন্সিলের নির্বাচন শঙ্কামুক্ত পরিবেশে হচ্ছে বিধায় সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সমর্থক নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং জয়লাভও করে। সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে আবার প্রতিযোগিতা চলে। নানাস্তরের পাবলিক প্রসিউকিউটরের পদে নিয়োগ পাবার তদবির ও অন্যান্য ভাগ ভাগবাটোয়ারাই এ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য। কৌতূহলের বিষয় হলো এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দলবাজির ব্যাপকতা শুরু হয় কিন্তু ৯০ সালের নির্বাচিত সরকারগুলোর আমল থেকে। সাংবাদিকতার পেশাও আজ নানাভাবে এক দুষ্টচক্রে নিপতিত হয়েছে। জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদুল্লাহ কায়সার, সন্তোষ গুপ্ত, নির্মল সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, বজলুর রহমানের মত বিদগ্ধ সাংবাদিকদের হাতে গড়া সাংবাদিক ইউনিয়নও আজ সরকার ও বিরোধী দলে বিভক্ত। কিছু নিবেদিত প্রাণও নিরপেক্ষ সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী থাকলেও হলুদ ও মনগড়া সাংবাদিকতা, সাংবাদিক নাম দিয়ে মানুষকে নানাভাবে হয়রানির ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে শহরে–মফস্বলে। এসব কারণে পেশা হিসাবে সাংবাদিকতা ক্রমে তার অতীত সুনাম, ঐতিহ্য ও নৈতিকতা হারিয়ে কোটাারি রাজনীতি ও দুর্নীতির শিকার হয়ে পেশাগতভাবে অধোগতির দিকে যাচ্ছে।
ভোগবাদ সর্বস্ব লুটেরা আর্থ–সামাজিক দর্শনে বিশ্বাসী শাসক গোষ্ঠীর অপকর্ম ও তার প্রভাবে সব শ্রেণি পেশার মানুষ কম বেশি প্রভাবিত। ফলে বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবীদের মধ্যে অতীতের পেশাগত স্বচ্ছতা, সততা, আন্তরিকতা, উদারতা ও সাহসিকতার স্থান নিয়েছে দুর্নীতি, সংকীর্ণতা, ভীরুতা ও আত্মপর সর্বস্বতা। অর্থ আর মুনাফার যুপকাষ্ঠে বলিদান হচ্ছে পেশাগত নৈতিকতা ও মানবিক প্রতীতির। অধঃপতিত নেতৃত্বের কারণে পেশাজীবী আন্দোলন আজ দলীয় রাজনীতির বিভক্তির বৃত্তে আটকে পড়েছে, পেশাজীবী আন্দোলনের এ বিভক্তি ও নেতৃত্বের দলবাজি ও সুবিধাবাদিতার কারণে দুর্নীতিবাজ, সুবিধাভোগী, চাটুকারদের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া, সৎ সচেতন, পেশাজীবিদের স্বার্থে নিবেদিত প্রাণ কর্মীও নেতারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ পেশাজীবী সম্প্রদায়, পিছিয়ে পড়ছে সমাজ, কঠিনতর হচ্ছে প্রকৃত গণতন্ত্রের উত্তরণের সংগ্রাম।
পেশাজীবী আন্দোলনের স্বাভাবিক গতিমুখ হলো গণতন্ত্র ও সামাজিক প্রগতিশীলতা। কেননা গণতান্ত্রিক অধিকার ছাড়া যেমন আন্দোলন গড়ে তোলা যায় না তেমনি পেশাজীবীদের সমস্যা সমাধানের অর্থ শুধু পেশাজীবীদের আর্থিক সমস্যার সমাধান নয় তা প্রকারান্তরে পেশাজীবি এবং সাধারণ মানুষকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রচলিত গণবিরোধী সরকারি নীতি দর্শনের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও বিজয় এবং তার সদর্থক প্রভাব সমাজে পড়বেই। আবার পেশাজীবীদের স্বাধীন ও সুসংগঠিত শক্তি গণতান্ত্রিক পরিবেশকে টেকসই করে, সমাজপ্রগতির পথকে সুগম করে। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নেও অনুঘটকের কাজ করতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাম–গণতান্ত্রিক শক্তির দুর্বল অবস্থানের কারণে আমাদের দেশে পেশাজীবী আন্দোলন সহ সব প্রগতিশীল সামাজিক–সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মূল বেনিফিশিয়ারী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে স্রেফ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে স্বাভাবিক পথে সংগঠিত ও বিকশিত হতে দিচ্ছে না, বরং নানা ম্যানুভারিং এর মাধ্যমে সে সব সংগঠনগুলোকে আজ্ঞাবহ অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করে দলীয়বৃত্তে বন্দি করে ফেলেছে। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় দলনিরপেক্ষ পেশাজীবীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে এগিয়েছে। পেশাজীবীদের সমস্যা সমাধান ও সমাজে গণতান্ত্রিক আবহ তৈরির স্বার্থে এখন স্বাধীন স্বতন্ত্র পেশাজীবী আন্দোলনের বিকাশ তো হচ্ছেই না উপরন্তু পেশাজীবী আন্দোলন ক্ষমতালিঞ্ঝু চাটুকার কিছু লোকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়াতে এর সংগ্রামী, নিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তি হারিয়ে ফেলছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পেশাজীবীদের জন্য এর নিবেদিতপ্রাণ সংগ্রামী ঐতিহ্য। পেশাজীবী আন্দোলনের উপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস টলে যাচ্ছে। এ অসহনীয় অবস্থা থেকে পেশাজীবী আন্দোলনকে সঠিক পথে তুলে আনাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। নেতৃত্বের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে বর্তমানে দেশে পেশাজীবীদের সম্মিলিত কোন আন্দোলনের অস্তিত্বই নেই, নেই পেশাজীবীদের পারস্পরিক সংহতি ও ঐক্য। চলমান ব্যাপকভিত্তিক শিক্ষক আন্দোলনে অন্য কোন পেশার নেতৃবৃন্দের সংহতি ও সমর্থন দেখা যাচ্ছে না। এ নিছক অন্ধ দলীয় আনুগত্যের বিষময় ফল। ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তি, গণবিরোধী আমলাচক্র ও লুটেরা দুর্বৃত্ত যারা প্রগতিমুখীন পেশাজীবি সংগঠন ও আন্দোলনের বিরোধী তারাই এ নিয়ে শাসক দলের সংকীর্ণ দলবাজির সুবিধা নিচ্ছে এবং ক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছে সুস্থ ধারার পেশাজীবী আন্দোলন। ক্ষমতার রাজনীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আজ সামরিক শাসকদের প্রবর্তিত কর্তৃত্ববাদী, লুটেরা ও দুর্বৃত্তায়িত রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে আটকে গেছে। এক কালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী দলের জন্য এ হলো এক রাজনৈতিক আত্মহত্যা।
এমতাবস্থায় শাসকদলগুলোর সংকীর্ণ ক্ষমতার রাজনীতির বিপরীতে প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক সংগঠন ও ব্যক্তিকে একক দায়িত্বে পেশাজীবী সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার সেই প্রাথমিক পর্বের দিনগুলোর মত দৃঢ় শপথ নিয়ে পেশাজীবিদের সমস্যাও সংকটকে চিহ্নিত করে সমাজের প্রগতিশীল পরিবর্তনের লক্ষ্যে তাদের পুনরায় সংগঠিত করতে হবে সমস্ত রকম সুবিধাবাদিতা ও হঠকারিতার ঊর্ধ্বে ওঠে। পেশাজীবীদের পেশাগত সমস্যা সমাধানে এবং একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার পূর্বশর্ত হিসাবে নিরন্তর জবাবদিহিমূলক কর্মসংস্কৃতি ও উন্নত পরিবেশ সমৃদ্ধ কর্মোদ্দীপ্ত বিশাল এক পেশাজীবী সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য সৎ সমাজপ্রগতিতে বিশ্বাসী, নিবেদিত, নীতিনিষ্ঠ, ধৈর্য্যশীল কিছু পেশাজীবী মানুষকে অতীতের মত এ কঠিন কাজে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক আলোকায়নের জন্যে, পেশাজীবীদের মুক্তির প্রশ্নে এর কোন বিকল্প নেই।
লেখক : প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক, কলাম লেখক
(সংগৃহীত)