বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

প্রশ্নফাঁসের টাকা দিয়ে এক ছাত্র মোটর বাইক কিনতে চায়

প্রশ্নফাঁসের টাকা দিয়ে এক ছাত্র মোটর বাইক কিনতে চায়

ফজলুল হক, ১৯ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : এ মাত্রায় ব্যাপক প্রশ্ন ফাঁস আগে হয়নি। আগে কেউ দেখেনি, শোনেওনি। পরীক্ষা মানেই প্রশ্ন–ফাঁস। গোপনে না। প্রকাশ্যে। আগাম ঘোষণা দিয়ে। ফাঁস ঠেকাতে অনেক রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যা আগে দেখিনি। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রশ্ন ফাঁসের বন্যার পানি ফুঁসছে। শুধু পাবলিক পরীক্ষা নয়, বিসিএস–সহ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষা এখন প্রহসন। পরিস্থিতি জটিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেছেন, বর্তমান প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন পত্র ফাঁস ঠেকানো কঠিন কাজ। মন্ত্রণালয় এখন প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এম সি কিউ) তুলে দিতে চায়। পরীক্ষা বাড়ছে, প্রশ্ন ফাঁসের বাজার স্ফীত হচ্ছে। ফাঁস করা প্রশ্ন বাজারে খাচ্ছে। তাই ফাঁস লাভজনক হচ্ছে। “বাজার অর্থনীতি” নিজে, মুনাফার জন্য সব কিছু গ্রাস করতে চায়। মানুষকে দাস বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা যায়। মানুষ ধরে নিয়ে গিয়ে তার কিডনি কেটে নিয়ে আরেক জনের কাছে বিক্রি করা যায়। সুন্দরী মেয়েকে পণ্য হিসেবে গণ্য করে– তার কেনাবেচা চলে। “বাজার–অর্থনীতিতে” ফাঁস করা প্রশ্নের রমরমা বাজার থাকতেই পারে। “বাজার” থাকলে– তরুণরা বসে থাকবে কেন? লেখাপড়া না করে জিপিএ–৫ যুদ্ধে জয়ী হতে কে না চায়? পরীক্ষা এখন জিপিএ–৫ এর যুদ্ধ। শিক্ষা এখন বাস ভর্তি প্রশ্ন–ফাঁস। পরীক্ষার যুদ্ধ চলছে। শিক্ষা এখন অনেকটা বাণিজ্য।

শিক্ষামন্ত্রীর জায়গাতে আমি হলে কি করতাম? আল্লাহর কাছে হাত তুলতাম, হে আল্লাহ, শিক্ষাকে রক্ষা কর। ডিভাইন হেল্প চাই। প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হল, কেউ এগিয়ে এলোনা। ধরিয়ে দিলোনা। প্রশ্ন ফাঁসকারীরা যাদু জানে? পরীক্ষা শুরুর আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হলো, কোন কাজ হলোনা। কেন্দ্রের ভেতরে মোবাইল ফোন বন্ধ করা হলো। লাভ হলোনা। জড়িতদের ধরপাকড়ের সিদ্ধান্ত হলো। পরীক্ষা কেন্দ্রে আগে প্রশ্নের মোড়ক খোলা বন্ধ করা হলো। এমসিকিউ তুলে দেবে– এমন কথা বলা হলো। কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে কারো হাতে মোবাইল থাকলে– গ্রেপ্তার– পরীক্ষার্থীকে আধা ঘন্টা আগে আসতে বলা হলো, ফাঁস খতিয়ে দেখতে কমিটি হলো, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলোনা। ফাঁস চলছে। চট্টগ্রামে ১০ জনের মতো পরীক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্ন নেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে কোর্ট তাদের জামিন দিয়েছে। শহরের একটি স্কুলের কেন্দ্র সচিবকে শিক্ষা বোর্ড অব্যাহতি দিয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র এবং যারা প্রশ্ন নেয় অর্থাৎ ফাঁসের সুবিধাভোগী যারা– তাদের সকলকে শাস্তি দিতে হবে। ফাঁস করা প্রশ্ন নিয়ে তার উত্তর বের করে পরীক্ষা দেয়া কি অপরাধ নয়? গ্রেপ্তার হওয়া দশ ছাত্রের জামিন শুনানীর সময় কোর্টে হওয়া কথাবার্তা আদালত সুত্রে জানা গেছে, এইচএসসি, এসএসসি, পিএসসি নামে ফেসবুকে চারটি গ্রুপ সক্রিয়। এসব গ্রুপই মূলত প্রশ্ন সরবরাহ করে। প্রথমে প্রশ্নের ব্যাপারে পরীক্ষার্থীকে অবহিত করা হয়। তারপর তাদের এসব গ্রুপের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পাওয়ার জন্য ফ্রেন্ডস রিকোয়েষ্ট পাঠায়। এরপর বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলে, রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে বলে– ওই সব গ্রুপের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। টাকা পরিশোধের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর হাতে চলে যায় প্রশ্ন। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, এসব গ্রুপ একাউন্ট কারা চালায়? কোথা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়? তাদের এডমিন কে? বের করা কি কঠিন? তাদের না ধরে পরীক্ষার্থীকে এরেষ্ট করল কেন? এর যৌক্তিকতা কি? আদালতে দেয়া এক অভিভাবকের এ বক্তব্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার সময় এসেছে ঃ–

গ্রেপ্তার ১০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজনের বাবা আদালতে বলেছেন, উনার সন্তান পরীক্ষার্থী। সে ফাঁস করা প্রশ্ন পেতে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর বায়না ধরে। বাবা রাজী নন। বাবা রাগান্বিত হয়ে তাকে মারধর করেন। এ সময় উনার স্ত্রীর সাথে উনার সীমাহীন রাগারাগি, বাকবিতন্ডা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিতা ব্যর্থ হন। উনার ছেলে টাকা দিয়ে প্রশ্ন নিয়েছে।

আমি শিক্ষা বোর্ডে চাকরি করেছি। এসব বিষয় আমি কাছ থেকে দেখেছি। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি (সেটিং মডারেশন), ছাপানো, সরবরাহ কিভাবে হয় খুবই কাছ থেকে দেখেছি। (আমাদের অভিজ্ঞতার দাম কি আছে?) প্রশ্ন তৈরি থেকে শুরু করে কেন্দ্রে পৌছানো পর্যন্ত মোট আটটি স্তর আছে। লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ কাজে ৯৫% থেকে ১০০% সম্পৃক্ত থাকে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। নিয়ন্ত্রনে থাকে শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু প্রিন্টিং ও বাক্সে ঢোকানো হয় বিজি প্রেসে। আগেও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তখন মোবাইল, ফেসবুক ছিলনা। এখন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসে। ঝুকিপুর্ণ যায়গা হলো, প্রশ্ন যেখানে সংরক্ষন করা হয়– সে স্থান। এটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে থাকে। বিজি প্রেস, ট্রেজারী, পরীক্ষা কেন্দ্র– প্রশ্ন আনা নেয়া ঝুকিপুর্ণ। প্রশ্ন যাতায়াত প্রক্রিয়া ঝুঁকিপুর্ণ করতে হবে। কয়েক বছর আগে মেডিকেল ভর্তি পরী ায় প্রশ্ন আউট হতে শুরু করে। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। এই পরীক্ষায় প্রশ্ন তৈরি থেকে শুরু করে কেন্দ্রে পৌছানো পর্যন্ত পুরো কাজটি প্রযুক্তি দিয়ে করা হয়। ম্যানুয়ালী করা হয়নি। পুরো প্রক্রিয়ায় এমন কি প্রশ্ন পরিবহনের সময় কেউ যদি তা খোলার চেষ্টা করে তাহলে সে বার্তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রে চলে যাবে।

যে আটটি ধাপে এসএসসির প্রশ্ন চলাচল করে তার ঝুঁকি নিয়ে ভাবা উচিৎ ছিল। এ সকল স্তরে প্রচুর লোক কাজ করে। তাদের নৈতিক মানের কথা ভাবা উচিৎ ছিল। শিক্ষা বোর্ড গুলোর অবস্থা কি– তা ও বোঝা উচিৎ ছিল। শিক্ষামন্ত্রী আগে বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছেনা। আরো আগে সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে, পরীক্ষা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা নিয়ে আরো আগে ভাবা উচিৎ ছিল– বলে আমি মনে করি।

শিক্ষার মূল বিষয় হচ্ছে পরীক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থা এখন ধসে পড়তে বসেছে। পানির মত প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক থাকলো ক্যামনে? দেশ ডিজিটাল, পরীক্ষা এনালগ। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, প্রতিটি বিষয়ে অনেকগুলো সেট প্রশ্ন বানিয়ে, যেমন দশ সেট, পনের সেট, বছরের শুরুতে প্রকাশ করে দেয়া হবে। এ প্রশ্নগুলো পরীক্ষার হলে সব সময়ই প্রস্তুত থাকবে। পরীক্ষার দিন সকালে জানিয়ে দেয়া হবে পরীক্ষা হবে অমুক সেট প্রশ্নে। এটা করা হবে একেবারে শেষ মুহূর্তে। পরীক্ষা ধসে পড়ছে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বরবাদ হবে। সারা বছর দশ পনের সেট প্রশ্ন নিয়ে লেখাপড়া করলে কিছুতো লাভ হবে। হবেনা?

স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষকেরা যেভাবে ছাত্রদের পড়াই– সেটা কি সত্যিকার লেখাপড়া? আমরা আসলে কার্যকর কিছু পড়াই? পড়ালেখা নাই। শিক্ষকেরা অনেকে (সবাই নন) এখন ধান্দা করেন। ছোট ধান্দা বা বড় ধান্দা। এভাবে কথা বললে, অনেকে আমার পেছনে লাগবে। আমরা বড় লোকের সন্তানদের “সেবা” দিই। কোচিং মানে কি? ক্লাসে পড়াই বা না পড়াই, আমরা কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে মাতামাতি করি। আপনারা সবাই “আদু ভাই” এর গল্প জানেন। আদু ভাই “হিরো” হলেন পরীক্ষা পাস না করে। আদু ভাইয়ের “স্রষ্টা” কে নিশ্চয় চিনেন। ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে আতাউর রহমান খানের মুখ্য মন্ত্রীত্বের অধীনে শিক্ষামন্ত্রীত্বের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। উনার রস গল্পের বই যেমন আছে তেমনি আছে সিরিয়াস বই। আয়না, জনসেবা ইউনিভার্সিটি, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর/ আতাউর রহমান খানের বই আছে ওজারতির দুই বছর। (ভুল হতে পারে স্মৃতি নড়বড়ে হয়ে গেছে।) আবুল মনসুর আহমদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর আবুল মনসুর আহমদ শিক্ষাবিদদের ডেকেছিলেন, বলেছিলেন, “পরীক্ষার উদ্দেশ্য তো আসলে এই যে আমরা বছর দিঘালী ছাত্রদেরে যা পড়াইলাম, তা তারা পড়িয়াছে, বুঝিয়াছে কিনা তারই টেস্ট করা। তার বদলে আমরা যদি ছাত্রদের না পড়াইয়া শুধু শুধু কতকগুলো পুস্তক পাঠ্য তালিকাভুক্ত করিয়াই, সে সব পুস্তক হইতে, অনেক সময় সে সব পুস্তকের বাহির হইতেও প্রশ্ন করিয়া ছাত্রদের বিদ্যা পরখ করিতে চাই, তবে সেটা পরীক্ষা হয়না, হয় অবিচার। (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর) (আনিসুল হকের প্রবন্ধ, দৈনিক প্রথম আলো ১৬/২/১৮) আমরা পড়াচ্ছিনা বলেই বাইরে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার, অসংখ্য গাইড বই, টিউশনি– এটা অসহ্য। অন্তত পরীক্ষায় জিপিএ–৫ এর নির্যাতন এখনি বন্ধ করা দরকার, রেজারেল্টের বৈষম্য রেখে আমরা কি করতে চাচ্ছি? প্রশ্ন ফাঁসের মহোৎসব দেখে আমার মনে হচ্ছে আমাদের মানুষ জনের নৈতিকতায় ধস নেমেছে। নৈতিক বিপর্যয়ের লক্ষণ এটি। আমরা নিজের জীবন বিপন্ন করে রাজনীতি করেছি, দেশ স্বাধীন করার রাজনীতি। আর এখন তরুণরা প্রশ্ন ফাঁস করছে টাকার জন্য।

প্রশ্ন ফাঁস ইস্যু আদালতে উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব চেষ্টা, সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে ধারাবাহিক ভাবে এসএসসির প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এটা আদালতে গেল। আদালত দুটি কমিটি করতে বলেছে। একটি কমিটির কাজ প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ও আনুষাঙ্গিক বিষয় তদন্ত করা। অপর কমিটি ভবিষ্যতে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের ঘটনারোধে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করবে। একটা কমিটিতে নেতৃত্বে থাকবেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কায়কোবাদ। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ বিচারিক কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।

তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ইন্টারনেট, ফেসবুক বন্ধ করা সমাধান নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা যে পরীক্ষা গ্রহণ করি, যেভাবে প্রশ্ন প্রস্তুত করি, প্রশ্ন করা থেকে শুরু করে প্রশ্ন যেভাবে পরীক্ষার্থীর কাছে পৌঁছায়, এটি দীর্ঘ দিন ধরে এমন ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে যে, এত বেশী মানুষ এর সাথে জড়িত থাকে যে, এটা যে কারো জন্যই পুরো চ্যালেঞ্জ হতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াতে নিরাপত্তা বিধান করা কঠিন। এটি দুরূহ। এত মানুষের সংশ্লিষ্টতা যেখানে, সেখানে নিরাপত্তা দেয়া কঠিন। পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন দরকার। যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়, যে পদ্ধতিতে প্রশ্ন তৈরি হয়, যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। কেবল প্রশ্ন ফাঁসের নিরাপত্তা নয়, আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে নিরাপদ করা। (দৈনিক আজাদী ১৫/২/১৮)।

আমাকে একজন ফোন করে বল্লেন, প্রশ্ন ফাঁসের সাথে পরীক্ষার্থী জড়িত নয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ছাত্রদের গ্রেফতার করে কষ্ট দিচ্ছে। আমি আমার অভিজ্ঞতা বলি। এককালে পরীক্ষার হলে ব্যাপক নকল হতো। আমরা শিক্ষক নকল ধরতে গিয়ে মার খেতাম। আপনারা পাঠক পাঠিকা পত্রিকা নিয়ে বসেন মন ভাল করে দেয়ার জন্য। মন খারাপ করা কথা বলছি, সে জন্য দুঃখিত। এক পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়েছি, পেছনের আসনে দুই পরীক্ষার্থী টেবিলে পিস্তল রেখে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেউ ওদিকে যাচ্ছে না। আমি ওদিকে যাচ্ছি– এক ছেলে পিস্তল হাতে নেয়। আপনারা বলুন– একে কি করা উচিৎ? অপরাধ যে করুক, ক্ষমা নাই। প্রশ্ন–ফাঁস উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হচ্ছে। অপরাধ দেখে বিচার হবে। চেহারা দেখে নয়। “প্রশ্ন বেচাকেনায় জড়িত হচ্ছে ছাত্ররা”– আমার কথা নয়, দৈনিক প্রথম আলোর হেডিং (১৭/২/১৮ ইং)। র‌্যাব–২ এর এক কর্মকর্তা বলেছেন, এমনও পাওয়া গেছে যে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী নিজের জন্য ইন্টারনেট থেকে প্রশ্ন কিনে আবার গ্রুপ খুলে বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে। র‌্যাব–২ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আনোয়ার উজ জামান বলেছেন, তারা এ পর্যন্ত যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তারা দ্বিতীয় পর্যায়ের বিক্রেতা। তারা নিজের ফেসবুক কেন্দ্রীক গ্রুপ থেকে প্রশ্ন কিনে এক দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এরা ছাত্র। এই পাঁচ জনের আর্থিক অবস্থা ভাল। প্রশ্ন ফাঁসের টাকা দিয়ে একজন ভাল মোবাইল কিনতে চায়। আরেকজন মোটর বাইক কিনতে চায়। অভিভাবককে সতর্ক হতে হবে। দায় নিতে হবে। প্রশ্ন ফাঁসে পরীক্ষার্থী জড়িত। তারাই সুবিধা ভোগী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। শিক্ষা বোর্ড গুলিতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফাঁস বন্ধ করতে হবে।

লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ। অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

(সংগৃহীত)

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত