![হৃদয়ছোঁয়া একুশে ফেব্রুয়ারি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/20/21-february_126798.jpg)
জয়কেতু বড়ুয়া, ২০ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : ভাষা মানুষের আত্ম প্রকাশের পবিত্র অবলম্বন। ভাষা আছে বলে মনুষ্যজীবন দুর্লভ। যে মায়ের মুখের ভাষায় আমরা জন্ম থেকে কথা বলি সে ভাষায় দক্ষতা থাকা স্বাভাবিক। এই মাতৃভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা হওয়ার সৌভাগ্য পৃথিবীর গুটি কতেক জাতির রয়েছে। পৃথিবীতে ৬০০০ ভাষার মধ্যে ৩০০০ ভাষার বিলুপ্তি ঘটেছে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে পৃথিবীতে ১৫টি ভাষায় ৯৫% লোক কথা বলে আর ৫৯৫ টি ভাষায় কেবল ৫% লোক কথা বলে। পৃথিবীতে বাংলা ভাষার স্থান লোক সংখ্যা অনুপাতে অষ্টম স্থানে। ইংরেজি ফরাসি স্প্যানিশ হিন্দি জার্মান, চায়না, রাশিয়া–আরবী ভাষার পরেই আমাদের বাংলা ভাষা। বর্তমানে পৃথিবীতে ২৫ কোটি বাংলা ভাষী লোক রয়েছে বলে জানা যায়। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা আন্দোলন সংগ্রাম করে আমাদের ছাত্র যুবকদের প্রাণ দিতে হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও মাতৃভাষার জন্য কেহ প্রাণ দেয়নি।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয় পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে নিয়ে। কিন্তু জন্ম থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ লুটেরা শাসকেরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও সর্ব দিকে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আমাদের ঠকিয়েছে। ভাসানীর মতে ইংরেজরা ২০০ বৎসরের শাসনে আমাদের যে অর্থ সম্পদ নিয়েছে পাকিস্তানিরা ২০ বৎসরে তার অনেক বেশি সম্পদ নিয়েছে। সবচেয়ে ঘৃণিত আচরণ করল ৫৬.৪% জন সংখ্যার বাংলাভাষাকে বাদ দিয়ে কেবল ৬% উর্দু ভাষার উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য এক তরফা সিদ্ধান্ত নিল। মর্মান্তিক ব্যাপার হলো বিনা নোটিশে রেলের টিকেট পোস্ট অফিসের খাম স্ট্যাম্প সব সরকারি দলিলে উর্দু লেখা আরম্ভ করল। ১৯৪৮ সালে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় হাতে আলিফ বে তে চের উর্দু বই ধরিয়ে দিল। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরেই এর প্রতিবাদে এদেশের শিক্ষিত সমাজ ছাত্র জনতা রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার জন্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সর্ব প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ও নুরল হক তমুদ্দিন মজলিশ নামের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান গঠন করে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। ২৩ শে ফেব্রুয়ারি/৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য মন্ত্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের গণ পরিষদে বিল আনেন। কিন্তু জোটে বিল বাতিল হয়ে যায়। তার পরেও গভর্নর জেনারেল কায়েদে আযম জিন্নাহ মার্চের ২১ এবং ২২ তারিখে কার্জন হলে এবং রেইসকোর্স ময়দানে সরোয়ার্দ্দী ময়দান জনসভায় বলেন উর্দু একমাত্র উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তার মুখের উপর ছাত্র জনতা নো নো বলে এর প্রতিবাদ করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব নাকচ হলে ১১ই মার্চ হরতালের ডাক দেন তমুদ্দিন মজলিশ ও মুসলিম ছাত্রলীগ। এতে স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবুল কাশেম, নাইমুদ্দিন প্রমুখ শিক্ষাবিদ রাজনীতিবিদ। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই নুরল আমিনের ফাঁসি চাই–এই োগান সব স্কুল কলেজ অফিস আদালতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদে ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, তোয়াহা, নিনি আনোয়ারা খাতুনসহ সর্বস্তরের কবি সাহিত্যিক সকলেই অংশগ্রহণ করেন। ইত্তেফাক, অবজারভার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০ শে ফেব্রুয়ারি/৫২ সালে সরকার ১৪৪ ধারা জারী করলেও এম আর আক্তার মুকুলের প্রস্তাবে গাজিউল হকের সভাপতিত্বে সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশের গুলিতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শহীদ হন এবং শতাধিক আহত হন, সেই দিন থেকে অনেক আনন্দ, আবেগ আশা আকাঙক্ষা আর অপরিসীম মমতায় পালিত হচ্ছে ২১ শে ফেব্রুয়ারি । আবদুল গফফার চৌধুরীর রচিত আলতাফ আহমদের সুরে গীত হয় “আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা পৃথিবীতে দিনটি পালিত হচ্ছে। সর্বস্তরের বাংলা প্রচলন কামনা করি।
লেখকঃ প্রকৌশলী মুক্তিযোদ্ধা
(সংগৃহীত)