বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

মোস্তফা কামালের নতুন বই ‘অগ্নিপুরুষ’

মোস্তফা কামালের নতুন বই ‘অগ্নিপুরুষ’

ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : একুশে বইমেলায় আলোচিত কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামালের নতুন বই ‘অগ্নিপুরুষ’ এসেছে। বইটি পার্ল পাবলিকেশন্স প্রকাশনা করেছে। প্রচ্ছদ একেঁছেন ধ্রুব এষ। বইটির মূল্য ৪০০ টাকা।

কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল জননী উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকপ্রিয়তা পেলেও ঐতিহাসিক উপন্যাস অগ্নিকন্যার মাধ্যমে সর্বমহলে আলোচিত হন। এবারের বইমেলায়ও এসেছে তার একাধিক গ্রন্থ। বইমেলা, বই এবং তার বই নিয়ে কথা হয় এই জনপ্রিয় লেখকের সঙ্গে।

এবারে বইমেলার পরিবেশ এবং উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বইমেলায় লাখো মানুষ আসছেন বই কিনতে। এই দৃশ্য সব সময়ই আমাকে অভিভূত করে। বই কেনার আনন্দ সত্যিই অন্যরকম। এখানে অন্য কোনো বিনোদন নেই। কোথাও এক দণ্ড বসারও কোনো সুযোগ নেই। অথচ হাজার হাজার নারী-পুরুষ তাদের সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসছেন। পছন্দের বই কিনছেন। কী দারুণ না ব্যাপারটা!

মোস্তফা কামাল বলেন, আমি ১৯৮৮ সাল থেকে বইমেলায় নিয়মিত যাই। বাংলা একাডেমির ছোট্ট চত্বর থেকে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল পরিসরে বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। পাঠকের উপস্থিতি আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। মানুষ যতবেশি বই কিনছে ততই ভালো লাগছে।

তিনি বলেন, বাঙালির বইয়ের প্রতি ভালোবাসা চিরায়াত। অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়ে বাঙালি যে বই ছাড়েনি তার প্রমাণ এবারের বইমেলা। বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ মেলায় আসছে, বই কিনছে। এটা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এজন্য আয়োজক এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

উপন্যাসের অন্যান্য শাখার তুলনায় বাংলাদেশে ঐতিহাসিক উপন্যাস কম লেখা হয়। এর কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস লেখার জন্য অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়। আমার অগ্নিকন্যা ও অগ্নিপুরুষ ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু। স্বাধীনতা অর্জনের সময় পর্যন্ত এর সময়কাল। দীর্ঘ এই সময়ের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘ ১৮/১৯ বছর ধরে পড়াশুনা করেছি। বিপুল সংখ্যক বই পড়েছি। আমার একটি বিষয় সব সময় মাথায় রাখতে হয়েছে। চরিত্রগুলো ঐতিহাসিক এবং ঘটনাপ্রবাহ সত্য। সেখানে রং লাগানোর কোনো সুযোগ নেই।

আবার কোনো চরিত্রকে ভুলভাবে উপস্থাপনেরও কোনো অবকাশ নেই। ইতিহাস বলতেই আমরা বুঝি, প্রবন্ধ কিংবা জটিল কোনো বিষয়। সেই বিষয়ের ওপর উপন্যাস! সে তো কঠিন কাজ। পুরো ঘটনাপ্রবাহ ও চরিত্রগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তো থাকতেই হবে। আবার নিজের ভেতরেও বিষয়গুলোকে আত্তস্ত করতে হবে। উপন্যাসের ভাষার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। ঝরঝরে ভাষা না হলে পাঠক টানবে না। কাজেই অনেক কষ্টের ব্যাপার। এই কষ্টটিই সবাই করতে চান না। তাই ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস কম লেখা হচ্ছে। বেশিরভাগ উপন্যাসই প্রেমের, পারিবারিক সমস্যা সংক্রান্ত, ভৌতিক, গোয়েন্দা কাহিনী প্রভৃতি। এতে তেমন কষ্ট করতে হয় না। যারা কষ্ট করে গবেষণা কাজ করেন তাদের কাজটা অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়। ওই কাজটাই আসলে টিকে থাকে। পাঠকও ধীরে ধীরে প্রকৃত লেখককে চিনতে পারেন। আমি মনে করি, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও বেশি বেশি কাজ হওয়া উচিত। তবে ভালো কাজের মূল্যায়নও হওয়া উচিত। আমাদের এখানে সেটা হয় না। ধরাধরি, লাইনবাজি, তেলবাজি না করলে পুরস্কার মেলে না। ভালো কাজের যথাযথ মূল্যায়ন হলে আরও বেশি ভালো কাজ হবে বলে মনে করি।’

এই সময়ের যারা উপন্যাস লিখছে তাদের বিষয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার জন্য এক ধরনের অশুভ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করছি। লেখালেখিতে শটকার্ট কোনো রাস্তা নেই। আমি ২৭ বছর ধরে লেখালেখি করছি। অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেছি। উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়ার মতো অবস্থা! কখনো কখনো মনে হয়েছে, লেখালেখি বুঝি বন্ধই হয়ে যাবে। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও লেখালেখির প্রতি প্রবল ভালোবাসার কারণেই হয়তো টিকে আছি। এখনো মনে করি, অনেক পথ আমাকে যেতে হবে এবং এই পথটি মোটেই মসৃণ নয়। আমি মনে করি, প্রত্যেক লেখকেরই উচিত, আগে নিজেকে তৈরি করা। পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করা এবং নিয়মিত পড়াশোনা করা। সাদা কাগজ ফটোকপি করলে সেটা কিন্তু সাদাই বের হবে। পড়াশুনা না করলে জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয় না। ভেতরে কিছুই থাকে না। তাহলে ভালো লেখা আসবে কোত্থেকে?

বইমেলায় আসা আপনার বইয়ের কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। গত মেলার বই 'অগ্নিকন্যা' এখনো নতুন বইয়ের মতোই বিক্রি হচ্ছে। জননী এখনো পাঠকরা খুঁজে খুঁজে কিনছেন। আর এবার পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে নতুন আসা উপন্যাস অগ্নিপুরুষ খুবই ভালো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যপ্রকাশ থেকে বের হয়েছে উপন্যাস চন্দ্রমুখীর সুইসাইড নোট ও কিশোর উপন্যাস নীলগিরিতে চার গোয়েন্দা। পাঞ্জেরী বের করেছে সায়েন্স ফিকশন বিজ্ঞানী লীরা ও এলিয়েন, বোকা ভূত এবং শিশুতোষ বই নীল পরির কাণ্ড। সবগুলোই ভালো যাচ্ছে।

পাঠক হিসেবে এবারের মেলায় পছন্দের কয়েকটি বইয়ের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আহমদ রফিকের ভাষা আন্দোলন, সংক্ষিপ্ত ভাষ্যে, হাসান আজিজুল হকের রাই কুড়িয়ে বেল, সেলিনা হোসেনের একুশের রক্তপলাশ, সৈয়দ আবুল মকসুদের কাগমারিতে ভাসানী এবং আনিসুল হকের আলো আঁধারের যাত্রী, শামসুর রাহমান রচনাবলী, আনিসুজ্জামানের বিদ্যাসাগর ও অন্যেরা, নির্মলেন্দু গুণের কবিতাসমগ্র (তৃতীয় খণ্ড) প্রভৃতি আমার পছন্দের বই।

এবিএন/মাইকেল/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত