ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : আজ শুক্রবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৩তম দিন। মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ২৬৬টি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্রন্থমেলায় ছিল শিশুপ্রহর।
দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন
আজ শুক্রবার দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার কবিতা শীর্ষক আলোচনাপর্ব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক কায়সার হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নেপালের লেখক আভি সুবেদি, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন এবং কবি সাদাফ সায্। বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার কবিতা ব্যক্তিগত অনুভব এবং সমষ্টিক অঙ্গীকার উভয় সত্যকে ধারণ করে নতুন শতকে নবতর ভাষা ও আঙ্গিকে প্রকাশমান। তারা বলেন, বহমান দুঃস্বপ্নের মধ্যে কবিরাই স্বপ্ন দেখাতে পারেন। একই সঙ্গে দৈশিক ও বৈশ্বিক অনুভব ও অঙ্গীকারকে ধারণ করে কবিরাই পারেন মানবিক পৃথিবীর স্বপ্নকে বাস্তব করতে।
বেলা ১২ টায় দক্ষিণ এশিয়ার ভাষা এবং অনুবাদ শীর্ষক সমাপনী আলোচনা পর্বে বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রাশিদ আসকারী, ফায়েজা হাসানাত এবং জি এইচ হাবীব। বক্তারা বলেন, অনুবাদের মধ্য দিয়ে যেমন দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি মূলভাষা ব্যতীত ইংরেজি থেকে ঢালাও অনুবাদের ফলে পাঠক সাহিত্যের প্রকৃত রস থেকে বঞ্চিতও হয়। সেজন্য অনুবাদের ক্ষেত্রে ইংরেজির পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয় নানাভাষার পারস্পরিক অনুবাদও অত্যন্ত জরুরি।
বিকেল ৪ টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল শওকত আলীর সাহিত্যসাধনা শীর্ষক আলোচনানুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফারজানা সিদ্দিকা এবং তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক বলেন, শওকত আলীর সৃষ্টিক্ষমতায় এবং ব্যক্তিজীবনের প্রগতিশীল রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সক্রিয় কর্মোন্মুখ চৈতন্যের লুব্ধ আলো মৃত্যুর পরও তাঁকে দেবে নতুন স্থান। শওকত আলী কোন্ জীবনাভিজ্ঞতা, কোন্ জীবনদর্শনের গল্প বয়ান করেছেন তার সমকালের রূপান্তরক্রিয়া নির্মাণের এই সূত্রটি আবিষ্কার করা প্রয়োজন। কেননা সময়ের অদৃশ্য নিঃশ্বাসে আন্দোলিত হয় বস্তু, ব্যক্তি ও সমাজ। বস্তু ও ব্যক্তির অস্তিত্ব ও বিকাশের সমস্ত সূত্র তাই মূর্ত হয়ে ওঠে সমাজ-সংগঠনে, সময়ের পরিচিহ্নে। তিনি বলেন, শওকত আলী সাহিত্যসাধনা, বিশেষত কথাসাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে আমাদের উপর্যুক্ত বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের ইতিবৃত্তের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, শওকত আলী যা বিশ্বাস করেছেন তাই তার লেখনিতে উঠে এসেছে। তিনি বৃহতের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছেন বারবার। তার লেখনিতে তৃণমূলের মানুষের পাশাপশি মধ্যবিত্তের নিরূপায় পরিস্থিতিও উঠে এসেছে। বাংলা কথাসাহিত্যে তার অভাব অনুভব করবে দীর্ঘদিন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শওকত আলী জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কলম ধরেন নি। তিনি বাস্তবতাবিবর্জিত কোন গল্প, উপন্যাস কখনোই লিখেন নি। শওকত আলী উপন্যাসকে কালের দর্পণ ভাবতেন। তার মতো জীবনঘনিষ্ঠ লেখক সত্যিই বিরল।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মো. মফিজুল ইসলামের পরিচালনায় ‘কালু শাহ্ শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং সালাউদ্দীন বাদলের পরিচালনায় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী’-র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন সমর বড়–য়া, সালমা চৌধুরী, আহাদ চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম এবং রীতা ভাঁদুরী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বাবু জামান (তবলা) এবং আজিজুর রহমান (কী-বোর্ড)।
আগামীকালের অনুষ্ঠানসূচি :
আগামীকাল শনিবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৪তম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্রন্থমেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।
সকাল ১০:৩০ মিনিটে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
বিকেল ৪ টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে রয়েছে দেশ বিভাগের সত্তর বছর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইমানুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সৈয়দ হাসান ইমাম ও নূরজাহান বোস। সভাপতিত্ব করবেন কামাল লোহানী। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি