![শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ থেকে জাপার মন্ত্রীদের পদত্যাগ: এরশাদ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/02/ershad-abn_128275.jpg)
রংপুর, ০২ মার্চ, এবিনিউজ : সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, সরকারের সাথে আলোচনা চলছে, মন্ত্রিপরিষদ থেকে আমি ও আমার তিন মন্ত্রী কিছু দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবো। সরকারের মন্ত্রীত্ব নেয়ায় জাপার ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। আমরা তা হতে দিতে পারি না।
আজ শুক্রবার দুপুরে রংপুরের সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় এরশাদ বলেন, বিরোধী দল হিসাবে জাপার মন্ত্রীত্ব গ্রহণ ঠিক হয়নি। বিরোধী দল নয়, আগামীতে সরকার গঠনের হিসাব- নিকাশ করে এগিয়ে যাচ্ছে জাপা।
গত মঙ্গলবার সংসদে রওশন এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আসলে সরকারি দলে নাকি বিরোধী দলে- কেউ এমন প্রশ্ন রাখলে এর সদুত্তর দিতে পারি না। ফলে জাপা তার প্রাপ্য সম্মানের জায়গায় নেই।’
সরকারে থাকা জাপার মন্ত্রীদের কারণে আমরা বিরোধী দলের ভূমিকায় কাজ করতে পারছি না।...‘সরকারে থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের সরিয়ে দিন। সরকারে থাকা বিরোধী দলের মন্ত্রীদের বাদ দিলে জাপা বেঁচে যেত। হয় কয়েকজন মন্ত্রীকে সরিয়ে নিন, নইলে সবাইকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে নিন।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের নির্বাচনে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ভোটে যায় জাতীয় পার্টির একটি অংশ। তবে এরশাদের নেতৃত্বে একটি অংশ আবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল যদিও এরশাদ নিজে নির্বাচিত হয়ে আসেন একটি আসনে। পরে জাতীয় পার্টির সদস্যরা রওশনকে তাদের সংসদীয় দলের প্রধান নির্বাচন করেন। এরশাদ প্রথমে শপথ নেবেন না জানিয়ে পরে শপথ নেন আর মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত হন।
আবার সংসদে বিরোধী দলে থাকলেও জাতীয় পার্টির একজন পূর্ণাঙ্গ এবং দুই জন প্রতিমন্ত্রী হন। আর জাতীয় পার্টির একই সঙ্গে বিরোধী দলে থাকা এবং সরকারে থাকা নিয়ে সমালোচনা আছে। এরশাদ নানা সময় তার দলের নেতারা মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসবে বলে জানালেও শেষমেশ আর সেটা হয়নি।
আজও সুনির্দিষ্ট কোনো সময় না জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘বর্তমান মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির যে তিনজন মন্ত্রী আছেন, আমিও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় আছি। আমরা কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করব।’
‘কারণ মন্ত্রিত্ব নিয়ে আমরা সমালোচনার মুখে পড়েছি। দেশের মানুষের কাছে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।’
এরশাদ বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে রয়েছি। আমাদেরকে তিনজনকে মন্ত্রিত্বও দেয়া হয়েছে। এ মন্ত্রিত্ব নেয়া আমাদের ঠিক হয়নি। মন্ত্রিত্ব নেয়ার পর দেশবাসীর কাছে আমাদের নানা সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে আমাদের সুনাম নষ্ট হয়েছে। তাই এমন মন্ত্রিত্ব আর চাই না। অচিরেই আমরা মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
‘আমরা অনেকদিন বিরোধী দলে থেকেছি। আর বিরোধী দলে থাকতে চাই না। আগামী নির্বাচন করব বিরোধী দলে থাকার জন্য নয়। সরকার গঠনের জন্য। আমাদের নেতাকর্মীরাও সে লক্ষ্য নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের মানুষ আমাদের আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়।’
বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টি জোট করবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোট করার তো প্রশ্নই ওঠে না। এ বিষয়ে আমি আর এখন কিছু বলতে চাই না।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার ব্যাপারে এরশাদ বলেন, তাদের নেতৃত্ব শূন্য হয়েছে। একাদশ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
এ সময় দুর্নীতির মামলায় সাজার বিরুদ্ধে আপিলের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এত দ্রুত কেন জামিন পাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এরশাদ। তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা জামিনযোগ্য হলেও তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপির সাথে জাপার জোট করার কোনোই সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে কিনা সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। তারপরেও সরকার চেষ্টা করছে, আমরাও মনে করি তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত।
খালেদা জিয়া কয়েকদিন কারাগারে থাকা অবস্থায় তার জামিন পাওয়া নিয়ে হৈ-চৈ করা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, আমি ৬ বছর ২ মাস কারাগারে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে সব মামলাই ছিল জামিন যোগ্য। তারপরেও আমি জামিন পাইনি। হাইকোর্ট আদেশ দেয়ার পরেও আমাকে সংসদে আসতে দেয়া হয়নি। পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো নেতাই আমার মতো নির্যাতন ভোগ করেনি। আমার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তার কোনো নজির নেই।
নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বিদেশিরা কোনো প্রভাব খাটাবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী।
দলের মহাসমাবেশ সম্পর্কে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, এই মহাসমাবেশের মাধ্যমে তারা দলের শক্তি প্রদর্শন করবেন।
এসময় তার সাথে ছিলেন, জাপার কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের, দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, জাপা নেতা মেজর (অব.) খালিদ, রংপুর সিটি মেয়র ও মহানগর জাপার সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, যুবসংহতির নেতা আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
এরআগে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ রংপুর সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছালে রংপুরের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম এবং রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রাশিদুল মান্নাফ।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি