![সহজিয়া সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/04/doat_128515.jpg)
চন্দ্রশিলা ছন্দা, ০৪ মার্চ, এবিনিউজ : কিশোর বয়সে এসে বাঙালি ছেলে মেয়ে চুপি চুপি কবিতা বা গল্প লিখতে চেষ্টা করেনি এমন ঘর কি বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে? আমাদের চারপাশের অবারিত সবুজ মাঠ, মাথার উপর হেমন্তের ঝকঝকে চাঁদ, কুয়াশা মাখা ঘাসে আসা একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তির আন্দোলনে একাত্তরে অকাতরে বিলিয়ে দেয়া লাখো শহীদের প্রাণ, প্রাণ প্রিয় স্বাধীনতা এবং উড়ু উড়ু পাখির মত চঞ্চল কিশোর প্রাণে ভোরের মিষ্টতায় আসা প্রথম প্রেমের ছোঁয়া সবই এদেশের মানুষের কবিতার উপকরণ। কবিতা মানুষ কেন লেখে? এর সঠিক উত্তর কী আসলে কখনো পাওয়া যাবে? উত্তর পাওয়া যাক না যাক উত্তর খোঁজা থেমে থাকেনি। এই ব্যাপারে বলতে গেলে আমাদের উপমহাদেশে প্রথমে যার উদ্ধৃতি আসে তিনি হলেন পন্ডিত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন:
“সামাজিক দায়বদ্ধতা, বিতর্ক–টিতর্ক, ওসব কাজের কথা নয়। একজন চাষী যখন লাঙল কাঁধে মাঠে চাষ করতে যায় বা একজন শ্রমিক যখন তার হেতের নিয়ে কারখানায় কাজ করে, তখন কি তারা সমাজের উপকার করছে বলে সেগুলো করে? তা তো নয়, তারা ওই কাজ করে তাদের জীবন ধারণের জন্য, খাওয়া–পরার জন্য। কিন্তু কাজগুলো এমনই যে তাতে সমাজের উপকার হয়। যে ভাল লোক, সে কারোর উপকার করতে না পারুক, অপকার তো করে না। কীটস্–এর কথা ধরো, তিনি কখনও সোশ্যাল কমিটমেন্টের কথা বলেননি, কিন্তু তাঁর কবিতা কি সমাজের কোনও অপকার করেছে? একজন কবি তাঁর নিজের মুক্তির কথা লিখছেন, তা পড়ে অন্যেরাও মুক্তি অনুভব করছে। কবি তো আর দেবী স্বরসতীর সঙ্গে দায়বদ্ধতার চুক্তি করে লিখতে বসছেন না। তবে কবির দায়বদ্ধতা থাকে কবিতার প্রতি, নিজের প্রতি। সাহিত্যের শর্ত তাঁকে মানতে হয়। যারা সাহিত্যের শর্ত লঙ্ঘন করে, তারা সাহিত্যের ক্ষতি করে।”
ওদিকে রবীন্দ্র–পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে কবি জীবনান্দ দাশকে বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়েছে। আধুনিক এই কবির মতে “সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি ; কবিকেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু’ সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।”
কবিতা কী? এই প্রশ্নের উত্তর মানুষ যেভাবে খুঁজেফিরেছে এবং যুগে যুগে কালেকালে যতশত কবি দার্শনিকগণ কবিতাকে নানা সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করতে চেষ্টা করেছেন, যত তর্ক–বিতর্ক হয়েছে কবিতা নিয়ে সেই অনুপাতে গল্প কী? নাটক বা উপন্যাস কী? এই রকম প্রশ্ন সাধারণভাবে কারো মনে দানাবাঁধে না। বরং এরকম প্রশ্ন কেউ করলে সেটা হাস্যকর ব্যাপারেই পরিনত হবে। এর কারণটাও সহজ। গল্প উপন্যাস বা নাটক রচিত হয় একটা কাহিনী বা বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। যা স্পষ্ট। যার শুরু এবং শেষটা বেশ গুছানো। কিন্তু কবিতা হয় একজন কবির চিন্তা চেতনার ফসল। যার কিছুটা সহজ বোধ্য আবার কিছুটা দুর্বোধ্য। কবির হৃদয়ের রক্ত রণের কিছু ধরা যায় কিছুটা আবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তবে কবিতা কখনো কখনো কাহিনী নির্ভর সহজবোধ্যও হয়। কবিতা কখনো কখনো মানুষের জীবনে আশ্রিত পিতার মত। কবিতা কখনো কখনো নিজের মত বেঁচে থাকার উপকরণ। সাধনায় প্রাপ্য সিদ্ধিলাভের মত। আমি কে? আমার ভেতরে কে? এই প্রশ্ন চিরন্তন মানুষ মাত্রই অহরহ ঘুরপাক খাচ্ছে মনে মনে। বিশেষ করে কবি লেখকরা ধ্যানের গভীরে ডুবে নিজেকেই খোঁজার এবং বোঝার চেষ্টায় নিমগ্ন থাকেন বলেই আমরা জানি। মানুষ প্রথমে নিজেকে ভালবাসতে শিখেছে। বেঁচে থাকার লড়াই করতে শিখেছে। মনের খোরাক খুঁজতে খুঁজতে প্রকৃতিকে ভালোবাসাতে শিখেছে। মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছে। ঈশ্বর এবং কবিতাকে ভালবাসতে শিখেছে। মানুষ প্রথমে নিজের গোপন ভালোলাগা মন্দলাগা কষ্ট প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিগুলো একান্ত নিজের করে কবিতা করে লিখতে থাকে। এই লিখতে লিখতেই এক সময় নিজেকে প্রকাশের আকাঙক্ষা প্রকাশ্যে আসে। পৃথিবীতে মানুষ হয়ে আসার স্বাক্ষর রেখে যাবার আকাঙ্খা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই আকাঙক্ষার বশবর্তি হয়ে রাজা বাদশাহরাও বিভিন্ন মসজিদ মন্দির নির্মাণ করে গেছেন। যা কালের স্বাক্ষী হয়ে শত শত বছর সেই সব শিল্পের নিদর্শন আজও টিকে আছে। তেমনি কবিতা কিংবা যে কোন সাহিত্যও টিকে থাকে শত সহস্র শতাব্দিব্যাপি। এই পৃথিবী আমার। মা মাটি দেশ আমার। আকাশ প্রকৃতি প্রেমিক সন্তান আমার। আমি আমার। সুতরাং এই আমি আমার প্রেম (ঈশ্বর বা তুমি) আমরাই তো কবিতা। অর্থাৎ একজন কবি নিজের বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে জীবনবোধকে তুলে নিয়ে কবিতা করে যা আঁকেন সেই চিত্রটাকে সামগ্রিক আকারে রূপদান করতে পারাই কবিতা। শুধু ছন্দ মাত্রার ব্যাকরণের ছকে লেখা সারিবদ্ধ পঙক্তিমালাকেই কবিতা বলে না। তবে ছন্দ মাত্রাকে অবশ্যই উপেক্ষা করে চলা যাবে না এইটিও সত্য। মনীষীরা বলেন, আইন জেনে তার পর আইন ভাঙো। অর্থাৎ ছন্দ মাত্রাকে রপ্ত করার পরেই তা ভাঙতে মন চায়লে ভাঙতে পারো। নতুন নতুন সৃষ্টির নামই কবিতা। কবিতা হলো শিল্প। দেশ কাল ছাড়িয়ে যা দার্শনিকতার মর্যাদায় অধীষ্ঠিত। কবিতা চিত্রশিল্পীর মত মনের গভীরে আঁকা নানা স্বপ্ন কল্পনা, পাওয়া না পাওয়ার পরিমার্জিত ছবি। কবিতা নিজ নিজ জীবনদর্শন।
সাহিত্য কেন চর্চা করি বলতে গেলে আগে বলতে হয় সাহিত্য আসলে কি? আর এই প্রশ্নের আভিধানিক অর্থ করলে দাঁড়ায়, মনের সাথে অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের সাথে জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা, সৌন্দর্য স্বপ্ন কল্পনায় বোনা সুপাঠ্য এবং জনকল্যাণে হিতকর লিখনের বাস্তব রূপ সাহিত্য। যা মানুষ কিছুটা নিজের সুখ দুঃখ থেকে রচনা করে। কিছুটা প্রকৃতির বিমুগ্ধতা থেকে পায় এবং কিছুটা আত্মিক ধ্যানধারণা জ্ঞান থেকে অর্জন করে পাঠককে সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনায় ভাসিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
উইকিপিডিয়া সূত্র মতে, বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত ঘটে অনুমানিক খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দির দিকে। তবে এই শুরুটার নির্দিষ্ট করে দিন ক্ষণ তারিখ সেই ভাবে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। অনুমান করা হয় খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত হয় বৌদ্ধ দোঁহা সংকলন চর্যাপদ। যা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে আমরা পেয়েছি। গিতীকাব্যের মাধ্যমে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য তখন হিন্দু মুসলিম বিভিন্ন লৌকিক ধর্মবিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই মূলত গড়ে উঠেছিল। বৈষ্ণব পদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, মঙ্গলকাব্য, রামায়ণ, মহাভারতের বাংলা অনুবাদ, নাথসাহিত্য, পীরসাহিত্য, বাউল পদাবলি এবং ইসলাম ধর্মসাহিত্য ছিলো এই সকল সাহিত্যের মূল বিষয়বস্তু। খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রভাব পড়তে শুরু করে। এবং কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই সাহিত্য এক নবজাগরণ সৃষ্টি করে। আধুনিক সাহিত্যের সূত্রপাত হিসেবে তাই উনবিংশ শতাব্দীকে সাহিত্যের নতুন যুগ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। এই সময় থেকে মানুষ ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বৃত্ত থেকে বের হয়ে এসে মানবতাবাদ ও মানব মনস্তত্ত্বের বিষয়গুলোতে মনযোগি হয় এবং বাংলা সাহিত্যে সামাজিক সমস্যা, ব্যক্তির সুখ দুঃখ, প্রকৃতি প্রেম ইত্যাদি প্রধান লেখ্য ও আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। পরবর্তিকালে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্য চর্চা দুটি ধারায় বিভক্ত হলেও বাংলা সাহিত্য বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম সমৃদ্ধ সাহিত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
সাহিত্য চর্চাকে সাল তারিখ কিংবা দশকের গন্ডিতে বাঁধতে কেউ কেউ পছন্দ না করলেও সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র বিবেচনা করে পন্ডিতগণ বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাসকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন(১) আদিযুগ বা প্রাচীন যুগ আনুমানিক ৬৫০ খ্রি মতান্তরে ৯৫০ খ্রি থেকে ১২০০ খ্রি।(২)মধ্যযুগ ১২০১ খ্রি–১৮০০। (৩)আধুনিক যুগ ১৮০১ খ্রি থেকে বর্তমান কাল। আবার এই আধুনিক কালকেও আবার বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন প্রাক রবীন্দ্র যুগ। রবীন্দ্র যুগ। রবীন্দ্রোত্তর যুগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমসাময়িক বাংলা সাহিত্য। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য। এবং পূর্বপাকিস্তান–বাংলাদেশের সাহিত্য। আমি এতো সুবিস্তৃত আলোচনায় না গিয়ে শিরোনামের সূত্র ধরে বলি। হাজার বছর আগের ইতিহাস থেকে বোঝা যায় মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশের চেষ্টায় ছিলো বলেই ভাষার আশ্রয় নিয়েছে। এবং এই ভাষাকে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যেই মানুষ কখনো পাহাড়ের গায়ে, গুহায়, গাছের ছাল বাকলে মনের ভাবগুলোকে আঁকিবুকির মাধ্যমে সংরক্ষন করার চেষ্টা করেছে। শুরুর দিকে সাহিত্যের মধ্যে এতো ভাগও দেখা যায়নি। যুগের সাথে সাথে ভাষার যেমন রূপ রস বদলেছে তেমনি ভাষাও বিভক্ত হয়েছে দেশ কাল ব্যাপ্তিতে। এখন আমরা সাহিত্যকে দেখি বিভিন্ন ভাগে থরে থরে সাজানো। লেখ্য সম্পদকে গদ্য, প্রবন্ধ, ছোট গল্প, বড়গল্প, উপন্যাস, এবং কবিতাকে আধুনিক গদ্যকবিতা, কিশোরকবিতা, ছড়া ইত্যাকারে পাই। সাহিত্যের ইতিহাস পাঠ করে অনুমেয় হয় যে, বাংলা ভাষায় রচিত চর্যা পদাবলি ছিলো সহজিয়া সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত। সুরকরে পুঁথিপাঠ এবং গিতীকবিতা বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন। যদিও জয়দেবের গীতগোবিন্দম কবীন্দ্রবচনসমুস্তয় এবং সদুক্তিকর্ণামৃত সামক দুটি সংস্কৃত শ্লোকসংগ্রহ এবং অকহটঠ ভাষায় রচিত ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ কবিতা সংকলন বাঙালির সাহিত্য রচনার আদি নিদর্শন। এই সকল গ্রন্থ বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্যে গীতগোবিন্দম কব্যের প্রভাব অনস্বীকার্য। জানা যায় শুরুদিকে রবীন্দ্রনাথের রচিত কাব্যেও জয়দেবের প্রভাব ছিলো অত্যন্ত গভীরভাবে। সে যায় হোক। একজনের চিন্তা চেতনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মঙ্গলময় কিছু ঘটলে সেটাকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখার কিছু নেই। কারণ সাহিত্য সংস্কৃতি হলো সম্পূর্ণ জীবন জুড়ে থাকা সুবিস্তৃত উপাদান। এটা একটা দেশের ভাষা সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে এবং একেকটা জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। এর চর্চা মানুষকে অনেক উচ্চাসনে অবস্থানের আসন তৈরি করে দেয়। সুতরাং সাহিত্য চর্চা অবধারিত আশীর্বাদরূপে যে কোন সমাজেই সে নিজের একটা জায়গা করেই নেয়। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসতে, শৃঙ্খলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির পথে আসতে সাহিত্য চর্চার অবদান অনস্বীকার্য। যুগে যুগে মানুষের জানার ইচ্ছা আগ্রহ ছিলো আদম্য। একটা সময় তারকা গগনার মাধ্যমে মানুষ ভূত–ভবিষ্যত রচনা করেছেন। এই করতে গিয়ে কতশত মনিষী বিজ্ঞানী জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন। তাঁদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষকে কোন শাসনই দমাতে পারেনি। জ্ঞান বিজ্ঞান দর্শন ধর্ম কল্প সাহিত্য চলেছে তার আপন গতিতে। এই জানার আগ্রহ স্পৃহা এখনো চলমান। মানুষ নিজের একাকিত্বের দুঃখ ব্যথা। সুখ আনন্দ স্বপ্নকে নিজের মনের মাধুরি দিয়ে গল্প গদ্য কবিতায় রূপদান করে এবং এতে করে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি লাভ করে। কখনো কখনো কল্পনায় সাজানো গল্প কারো কারো সাথে কোথাও না কোথাও মিলে গেলে বা গভীরভাবে ছুঁয়ে গেলে সেই গল্প বা কবিতা অমরত্ব লাভ করে। কালজয়ী হয়ে ওঠে। একজন লেখকের সাহিত্য সাধনার সার্থকতাও এইখানে। নিজের স্বপ্নকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেপারা। তাই সমাজ পরিবর্তনের প্রশ্নে সাহিত্য চর্চা চলবে পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত। একটি দেশের মুক্তি কিংবা উন্নয়নেও সাহিত্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সুতরাং সাহিত্য ছাড়া জীবন অসম্ভব। প্রতিনিয়ত পুরাতনকে পেছনে ফেলে নতুন নতুন সৃষ্টিকে সাথে নিয়ে পৃথিবীর গতি যেমন চলমান, সাহিত্যও ঠিক তাই। আর এই চলমানতাকে রোধ করার চেষ্টা করা মানেই একটি দেশকে ধ্বংস করে দেয়া। একটি জাতিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া। কিংবা বলা যায় একটি সভ্যতাকে হত্যা করার সামিল। কেননা আমরা জানি যে, শিল্প সাহিত্য শুধু বিনোদই নয়। শিল্প সাহিত্য চেতনা, বিজ্ঞান, দর্শন। লিউওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির কল্পনায় আঁকা একটি ছবি পরবর্তীকালে উড়োজাহাজ তৈরীতে যেমন বিজ্ঞানীদের সাহায্য করেছে। তেমনি এই একইভাবে নানান সময়ে পৃথিবীর নানান দেশের কবির কবিতায় ফুটে ওঠা কল্পচিত্র ভবিষ্যত বিজ্ঞানের সহায়ক হয়েছে। অর্থাৎ সভ্যতাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখানে প্রসঙ্গক্রমে আমাদের কবি বেগম সুফিয়া কামাল, এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাটি কিছু অংশ তুলে ধরছি,
আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
(বেগম সুফিয়া কামাল)
তেমনি, আমাদের জাতীয় কবিও বিজ্ঞানকে উৎসাহিত করেছেন চাঁদ এবং মঙ্গল অভিযানে যেতে। সাগরের তলদেশের রহস্য ভেদে।
কেমন করে বীর ডুবুরী সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে
কিসের অভিযানে মানুষ চলছে হিমালয়ের চূড়ে
হাউই চড়ে চায় যেতে কে চন্দ্রলোকের অচিন পুরে
শুনবো আমি, ইঙ্গিত কোন মঙ্গল হতে আসছে উড়ে।
(কাজী নজরুল ইসলাম)
সুতরাং সমাজ জীবনে এমনকি দৈনন্দিন জীবনে সাহিত্য বলি আর কবিতা বলি এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের প্রেরণায়, আমাদের জ্ঞানে বিজ্ঞানে জীবনকে গতিময় করতে সাহিত্যচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি