
ঢাকা, ০৫ মার্চ, এবিনিউজ : ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ভারতের হিমাচল প্রদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। আগ্রহের বিষয় ব্যাসেল বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক খাত, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাজার ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি। কর্মজীবন শুরু ১৯৭৯ সালে ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টে। পরে ১৯৮১তে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন বিআইবিএমে। ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান গতিবিধি নিয়ে সম্প্রতি একটি দৈনিকের সঙ্গে কথা বলেন। তার হুবহু তুলে ধরা হলো-
আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলন কেন?
আসলে বিআইবিএমের পক্ষ থেকে আমরা প্রতি বছরই একটি বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন করি। এ সম্মেলনে আমাদের টার্গেট থাকে মূলত দেশীয় ব্যাংকিং নিয়ে। এখন যেটি করছি, সেটি হলো আঞ্চলিক (রিজিওনাল) ব্যাংকিং সম্মেলন। প্রথমে আমরা নাম দিয়েছিলাম সার্ক ব্যাংকিং কনফারেন্স। কিন্তু সার্কভুক্ত সব দেশ থেকে আমরা সেভাবে সাড়া পাইনি। সবাই সাড়া না দেয়ায় আমরা এর নাম রেখেছি আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলন। এ সম্মেলনের পার্টনার হলো— বিআইবিএম (বাংলাদেশ), এনবিআইএম (ভারত), এফআইটিআই (ভুটান) ও এনবিআই (নেপাল)। এ চার সংস্থা মিলে আমরা প্রথমবারের মতো এ আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলন আয়োজন করছি। ভবিষ্যতে এ সম্মেলনে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানসহ সার্কের অন্যান্য সদস্য দেশকে আনার চেষ্টা থাকবে।
এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য কী?
এ সম্মেলন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা; মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একে অপর থেকে শেখা। কারণ সারা বিশ্বে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক রূপান্তর ও উন্নয়ন হচ্ছে। কাজেই এ উন্নয়ন ও রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছি ব্যাংকিংয়ে নিয়োজিত জনবলের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজে। এ চার প্রতিষ্ঠানই আমরা অনবরত কাজটি করে যাচ্ছি। সক্ষমতা উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতায় পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সঙ্গে চারটি দেশে ব্যাংকিং উন্নয়ন কেমন হচ্ছে, এ খাতের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা হচ্ছে, এসব বিষয়ের ওপর আমরা চলতি সম্মেলনে নজর দেব।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা আমাদের ব্যাংকিং খাত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে কি?
নিশ্চিতভাবে আমরা যেহেতু বৈশ্বিক ব্যবস্থারই অংশ এবং আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চাগুলো গ্রহণ করার প্রাসঙ্গিকতায় বাংলাদেশে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের সমস্যাগুলো মূলত আমাদের নিজস্ব। একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা আসলে এত খেলাপি ঋণ নিয়ে চলতে পারে কিনা, এতবার ঋণ পুনঃতফসিল হয় কিনা, এত সুশাসন ঘাটতি সমস্যা হয় কিনা। এসব বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতায় আমাদের সমস্যাটা বিবেচনা করতে হবে। আমাদের সমস্যা কিন্তু সারা বিশ্ব যেভাবে এগোচ্ছে, যেভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে, যেসব কৌশল নেয়া হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে না পারার সমস্যা নয়। এসব ক্ষেত্রে আমরা খুব একটা পিছিয়ে নেই। কিংবা ধরুন, অনেকেই বলে বিশ্বব্যাপী ফিনটেক, বিটকয়েন এসবের এত উন্নয়ন সত্ত্বেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছু করছে না। আসলে বাংলাদেশ কিছু করছে না— এ কথাটি ঠিক নয়। এসব উন্নয়ন তো প্রকৃত অর্থে নিজের দেশের সার্বিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এখনো বাংলাদেশের লোকরা নগদ লেনদেন করে। চেক, কার্ড, ইত্যাদি বাদই দিলাম। তার পরই তো আসবে বিটকয়েন। এ মুহূর্তে বিটকয়েন পুরো ব্যবস্থার ওপর চাপাতে চাইলে সেটা সামাল দেয়া কঠিন হবে। তবে এ থেকে পিছিয়ে থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে বিশ্ব যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, আমাদেরও ধীরে ধীরে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। কিন্তু সেটিকে প্রধান উদ্বেগ বলে ধরে নিলে ঠিক হবে না। আমাদের এখন প্রধান উদ্বেগ হলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। কীভাবে সারা দেশকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে পারি। তার জন্য ডিজিটাইজেশন আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে, সেদিকেই বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। এখনই একটি নগদবিহীন সমাজ বানিয়ে ফেলা সম্পর্কে আমরা মোটেই উদ্বিগ্ন নই।
ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের বিষয়টি কীভাবে দেখেন? এটি কমানোয় কী করণীয়?
খেলাপি ঋণের বিষয়টি আমি অন্যভাবে দেখি। এ সমস্যা আমাদের সুশাসনের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। এখন প্রশ্ন আসে, সুশাসনের বিষয়টি আমরা কীভাবে দেখি? আমাদের দেশে সমস্যাটি কিন্তু সুশাসন নয়, এটি করপোরেট সংস্কৃতির। করপোরেট সংস্কৃতি হলো ব্যবস্থাপনা ও মালিকানার পৃথকীকরণ। এটা পৃথক করে দিলে ব্যবস্থাপনা যা খুশি তা-ই করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক দুর্নীতির কারণে সেখানে ব্যবস্থাপনাকে তারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়নি। করপোরেট সুশাসনের সমস্যা আসলে ব্যবস্থাপনা সমস্যা। আমাদের দেশের সমস্যা করপোরেট সুশাসনের নয়, এখানে সমস্যা করপোরেট পৃথকীকরণের। এ পৃথকীকরণটাই তো হয়নি। এখানে ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি বোর্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যেটা হওয়ার কথা নয়। বোর্ডের কাজ নীতি করা, ব্যবস্থাপনার কাজ সেগুলো বাস্তবায়ন করা এবং অডিট কমিটির কাজ তা দেখভাল করা। এটিই হচ্ছে করপোরেট সুশাসনের শ্রম বিভাজন।
লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় খেলাপি ঋণ অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে খেলাপি ঋণ মাত্র ২-৩ শতাংশ। আমাদের দেশের কোনো কোনো ব্যাংকে যা ২২-২৩ শতাংশ; বিপুল পরিমাণ। দেশে খেলাপি ঋণ কমাতে বড় উপায়, যথাযথভাবে সুশাসন ঘাটতির সমস্যা সমাধান করা। ব্যাংকগুলো যেভাবে পরিচালনা হওয়ার কথা, সেগুলো সেভাবে পরিচালিত হতে হবে। এর মধ্যে যাতে কোনো ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপ না থাকে। আমি মনে করি, বোর্ডের কাছ থেকে ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা প্রত্যাহার করা উচিত। কারণ বোর্ডের দায়িত্ব ঋণ দেয়া নয়, নীতি প্রণয়ন করা। আমি প্রায়ই বলি, সুশাসন ঠিক করেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে আমাদের আইনের ঘাটতি নেই, কিন্তু সেগুলো ঠিকভাবে পরিপালন করা হয় না। আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা গেলে কোথাও কোনো সমস্যা হবে না। আরেকটি বিষয়, বহু দেশে খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান করার জন্য আলাদা আইন আছে। পার্শ্ববর্তী ভারতেও এ-সংক্রান্ত আইন রয়েছে। ঋণখেলাপিরা কোনো রিট করতে পারবে না— আমরা যদি এমন আইন করি, তাহলে এ সমস্যা অনেকাংশে রোধ হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালকের সংখ্যা ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে? এটা কী ধরনের প্রভাব ফেলবে?
এটা অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। নিজেরা তদবির করে এটি তারা করেছে। এখন পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা প্রত্যাহার করুন। দেখুন, বোর্ডে ক’জন থাকে। তখন দেখবেন, কেউ আর পরিচালক হতে আগ্রহী হবে না। তারা মনে করে এটি তাদের ব্যবসা। আসলে কি তাদের ব্যবসা? তারা কত শতাংশ ফান্ড নিয়োগ করে। বড়জোর ৩-৪ শতাংশ। এত কম বিনিয়োগ করে ৯৭ শতাংশ সম্পদের ওপর খবরদারি করা তো হতে পারে না।
সংখ্যা বাড়লেও ঘুরে-ফিরে ব্যাংকগুলো একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাছে কুক্ষিগত হচ্ছে? এটা কি সমস্যা তৈরি করবে?
দেশে এটি যেমন অসমতা সৃষ্টি করবে, তেমনি ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের সমস্যাও তৈরি করবে। সংবিধানেও এ নিয়ে বলা আছে। সরকারের অধিকর্তারাও সবসময় বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক নীতির কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু কখনো ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের কথা বলেননি। ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর কাছে সব আর্থিক সম্পদ কেন্দ্রীভূত হলে এরা যেকোনো সময় দেশটিই উল্টে দিতে পারে। এটা মোটেই ঠিক নয়। এজন্যই কেন্দ্রীকরণের বদলে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। বিকেন্দ্রীকরণ না এলে অসমতাও বাড়বে।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাড়লেও প্রডাক্টের দিক থেকে তো বৈচিত্র্য নেই...
কোনো কিছুতেই বৈচিত্র্য নেই। আমি বলি, নতুন অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর নিজেদের অঙ্গীকারের মূল্যায়ন করা উচিত। তারা যে ধরনের অঙ্গীকার করেছিল, সেগুলো পরিপূরণ করতে পারছে না। তাদের প্রত্যেকেরই কথা ছিল, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কাজ করবে, এসএমই ব্যাংকিং করবে। তা পরিপালন করেনি। সবার মতো তারাও মতিঝিল বা জুবিলি রোডে শাখা খুলে গতানুগতিক ব্যাংকিং ব্যবসা করছে। সুতরাং কোনো ধরনের বৈচিত্র্যায়ন নেই।
দেশে ৩৩টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তাদের মূল কথা ছিল, তারা বাজারে প্রডাক্ট বৈচিত্র্যায়ন করবে। কিন্তু সেটি করেনি। তারাও গতানুগতিক ব্যাংকিংয়ের মতো আমানত নেয়, ঋণ দেয়। তাদের কথা ছিল, তারা কমার্শিয়াল পেপার, ফিন্যান্স পেপার, নেগোশিয়েবল সার্টিফিকেট অব ডিপোজিট বাজারে ছাড়বে এবং অ্যাসেট সিকিউরিটাইজেশন করবে। এভাবে তারা লায়াবিলিটি ও অ্যাসেট মার্কেটে বৈচিত্র্য আনবে। অথচ তারা তা না করে পুরনো ধাঁচেই চলছে। তার মানে, নতুন ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রডাক্টের দিক থেকে কোনো ধরনের বৈচিত্র্য আনতে পারেনি।
ব্যাংকিং খাতে জনবলের দক্ষতা বাড়ানোয় কী করা যায়?
দক্ষতা বাড়ানোই আসলে আমাদের কাজ। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দক্ষতাকে কয়েক ভাগে দেখতে হবে। নিচের দিকে এক ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, মধ্যম স্তরে এক ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন এবং উচ্চ স্তরে আবার অন্য এক ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন। সুতরাং সেটি বিবেচনায় নিয়েই কিন্তু ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন— উচ্চ স্তরে দক্ষতা দরকার মূলত সফট স্কিলস, লিডারশিপ, মোটিভেশন, নেগোশিয়েশন ইত্যাদি। একেবারে নিচের দিকে দক্ষতা দরকার পরিচালনগত। তারা কার্জকর্ম করবে, এলসি ওপেন করবে, অ্যাকাউন্ট ওপেন করবে। মধ্যম স্তরে আবার দুটোই লাগে। সেজন্যই কিন্তু সাত-আট বছর ধরে আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো সেভাবে ভাগ করেছি। কিছু কর্মসূচি উচ্চ স্তরের নির্বাহীদের জন্য, কিছু কর্মসূচি মধ্যম স্তরের নির্বাহী এবং কিছু কর্মসূচি জুনিয়রদের জন্য। আমাদের দেশে প্রতিটি ব্যাংকেরই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আছে। তারা জুনিয়র স্টাফদের ওপর বেশি নজর দেয়। অনেকেই আবার সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে। তাদের নিচের দিকের কর্মকর্তাদের ওপর নজর দেয়া উচিত। বিআইবিএম যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন আমাদের ম্যান্ডেট ছিল, আমরা উচ্চ ও মধ্যম স্তরের নির্বাহীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন মেটাব। আর প্রতিটি ব্যাংকের প্রশিক্ষণ ইউনিট তাদের জুনিয়র কর্মীদের প্রশিক্ষণের চাহিদা মেটাবে। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু সার্বিক ব্যবস্থায় সুশাসনের ঘাটতি থাকলে সেগুলোর সুফল পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে আর্থিক খাতে গবেষণার অবস্থা কী?
ব্যাপকভাবে বললে, বাংলাদেশে আর্থিক খাতের অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। তবে আমরা বিআইবিএম থেকে প্রতি বছর ব্যাংকিং খাতের সাতটি কার্যকর ক্ষেত্র (ফাংশনাল এরিয়া) নিয়ে একটি জরিপ করি। যেমন— ট্রেড, ক্রেডিট, ট্রেজারি, ইন্টারনাল কন্ট্রোল, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ইসলামিক ব্যাংকিং এবং মানি লন্ডারিং। এ সাতটি বিষয়ে আমরা প্রতি বছর গবেষণা করি। এছাড়া সমকালীন প্রসঙ্গ নিয়ে ৮-১০টি গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আমরা প্রতি বছরই বেশ কয়েকটি গোলটেবিল বৈঠক করি, ৮-১০টি সেমিনার করি। এভাবে আমরা আমাদের কাজ করছি। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা ও পরিসংখ্যানও নিশ্চিতভাবে নিজস্ব প্রয়োজনে বেশকিছু গবেষণা করে থাকে। বিআইডিএসও কিছু কাজ করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিপিডিও আর্থিক খাত নিয়ে কিছু গবেষণা করে। এসব গবেষণার ফলাফল ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে সম্পদের অপচয় হবে।
ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে তো খুব একটা গবেষণা করা হয় না...
ঠিকই বলেছেন। এগুলোকে আমরা বলি মার্কেট রিসার্চ। ধারাবাহিকভাবে যেগুলো চলে। ব্যাংকিং পণ্য বা প্রক্রিয়া উন্নয়নে যেসব গবেষণা করা হয়, সেগুলো সত্যিকার অর্থে কোনো ব্যাংকে নেই। অনেক ব্যাংকই দু-একজন দিয়ে একটি গবেষণা সেল তৈরি করেছে বটে, কিন্তু সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই।
সংশ্লিষ্ট খাতের বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণে ব্যাংকিং কমিশন গঠন কি আদৌ কাজে আসবে?
আমি আসলে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের পক্ষপাতী নই। কারণ আমরা তো সমস্যাগুলো জানি। কমিশন কেন করব? সংস্কার (রিফর্ম) তো ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আলাদা একটি কমিশন করলে আরেকটি পদক্রম (হায়ারার্কি) তৈরি হবে। তখন একদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়, একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আরেকদিকে কমিশন হবে। সেটা অন্য ধরনের সমস্যার জন্ম দেবে। বরং বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করাই জরুরি। সারা বিশ্বে ব্যাংকি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা পালন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশেও সেটি হওয়া উচিত। তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান করলে একে অন্যের ওপর দোষ চাপাবে। কাজের কাজ হবে না।
ডিজিটাইজেশনের যুগে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো কী?
ডিজিটাইজেশনে আমরা খুব পিছিয়ে নেই। অনেকেই ফিনটেক বা বিটকয়েনের কথা বলে। সেদিকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ব্যাংক যাবে। যাহোক, ডিজিটাইজেশনে আমরা যতখানি এগিয়ে ছিলাম, এখন কিন্তু তাতে একটু ধীরগতিতে এগোচ্ছি। এর মূল কারণ হলো, সিকিউরিটি মেজারস সেভাবে উন্নত করিনি। ডিজিটাইজেশনের সঙ্গে সঙ্গে সমানভাবে নিরাপত্তার বিষয়গুলোও উন্নয়ন করতে হয়। এটি এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সিকিউরিটি মেজারস ভালোভাবে উন্নয়ন করে আমাদের সামনে এগোতে হবে। আর পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ হলো সুশাসনের ঘাটতি। সুশাসনে লক্ষণীয় উন্নয়ন ছাড়া দেশের ব্যাংকিং খাত স্থায়িত্বশীল হবে না।
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ