বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

৭ই মার্চের ভাষণ: পটভূমি ও তাৎপর্য

৭ই মার্চের ভাষণ: পটভূমি ও তাৎপর্য

প্রকৌশলী জাহিদ আবছার চৌধুরী, ০৯ মার্চ, এবিনিউজ : বাঙালির ইতিহাসে অনেকগুলো দিন আছে যা আমাদের মনে রাখতে হবে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দিয়েছিলেন। ১০ লক্ষাধিক লোকের সামনে পাকিস্তানি দস্যুদের কামান–বন্দুক–মেশিনগানের হুমকির মুখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই দিন বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন– ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

কী পরিস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ইতিহাস বিখ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭০–এর ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৩টি মহিলা আসনসহ জাতীয় পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল ৩১৩টি (৩০০+১৩= ৩১৩)। এর মধ্যে অবিভক্ত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল– পূর্ব পাকিস্তানের আসন ছিল ১৬৯টি (১৬২+৭=১৬৯)। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি আসন। ওই নির্বাচনে বহু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। সামরিক আইনের অধীনে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামীলীগ ১৬৭ টি আসন পাওয়ার পর বাকি ২টি আসন পায় পিডিপি। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ’৭১ এর ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি নেতা জেড এ ভুট্টো এবং পাকিস্তান সামরিক চক্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীদের হাতের পুতুলে পরিণত হলেন সামরিক প্রেসিডেন্ট জে. ইয়াহিয়া খান। ’৭১ এর পহেলা মার্চ ১টা ৫ মিনিটে আকস্মিক এক বেতার ঘোষণায় ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান)।

৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে– আমার সহ–কর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। যেকোন মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে– অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তীতে কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন। ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহবান জানান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে আন্দোলন এগিয়ে চলল। সারা দেশে তখন একজন মাত্র নেতা। তিনি হচ্ছেন দেশের শতকরা ৯৮ জন মানুষের ভোটে নির্বাচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের সামরিক শাসন চালু থাকলেও সামরিক সরকারের কথা তখন কেউ শুনছে না। বঙ্গবন্ধু’র কথাই তখন আইন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সমগ্র বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে।

সেই আন্দোলনমুখর পরিস্থিতিতে ঘনিয়ে এল ৭ মার্চ। সবার দৃষ্টি ৭ মার্চের দিকে। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে কী বলবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাবিয়ে তুলল পাকিস্তান সামরিক চক্রকেও। কারণ তারা বুঝে গেছে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাদের আর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশ পরিচালিত হচ্ছে বিরোধী দলের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথায়। এই অবস্থায় ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যদি রেসকোর্স জনসভায় স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন।

চিন্তিত পাকিস্তান সামরিক চক্র কৌশলের আশ্রয় নিল। ৭ মার্চের একদিন আগে অর্থাৎ ৬ মার্চ জে. ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে কথা বলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সরকারের তৎকালীন তথ্য কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিকের (ঘর্ধভণ্র্রর্ ম ওলররণভঢণর) গ্রন্থে এসব তথ্য রয়েছে। ৬ মার্চ জে. ইয়াহিয়া তার দীর্ঘ টেলিফোন আলাপে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলার চেষ্টা করেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) যেন এমন কোন কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন, যেখান থেকে ফিরে আসার উপায় আর না থাকে।’

৭ মার্চের পূর্ব রাতে জে. ইয়াহিয়া টেলিপ্রিন্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি বার্তাও প্রেরণ করেন। সালিকের গ্রন্থে রয়েছে– একজন ব্রিগেডিয়ার জে. ইয়াহিয়ার সেই বার্তা ৭ মার্চের আগের রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসেন। মেজর সালিক ওই বার্তাটি সংক্ষিপ্ত আকারে তার ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। বার্তায় জে. ইয়াহিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুরোধ করেন, “অনুগ্রহ করে কোন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি সহসাই ঢাকা আসছি এবং আপনার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি আপনার আকাঙক্ষা এবং জনগণের প্রতি দেয়া আপনার প্রতিশ্রুতির পুরোপুরি মর্যাদা দেব। আমার কাছে একটি পরিকল্পনা আছে– যা আপনাকে আপনার ছয়দফা থেকেও বেশি খুশি করবে। আমি সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি, কোন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন না।” (সূত্র: ঘর্ধভণ্র্রর্ ম ওলররণভঢণর) ৬ মার্চ টেলিফোনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা, টেলিপ্রিন্টারে বঙ্গবন্ধুর কাছে বার্তা প্রেরণ করেও পুরোপুরি স্বস্তি পাচ্ছিলেন না জে. ইয়াহিয়া। ৬ মার্চ এও ঘোষণা করা হলো যে, ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

৭ মার্চ রেসকোর্সে জনসভার বক্তব্য কী হবে– এ নিয়ে ৬ মার্চ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক হয়। জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কী বলবেন– এ নিয়ে বিভিন্নজন বক্তব্য রাখেন। একপক্ষের মত, বঙ্গবন্ধু যেন জনসভায় সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। অন্যপক্ষ স্বাধীনতার সরাসরি ঘোষণা পরিহার করে আলোচনার পথ খোলা রাখার পক্ষে মত প্রদান করেন। সভা ৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত মুলতবি রইলো। ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের চরমপন্থীরা বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ৭ মার্চের জনসভায় স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য। যতদূর জানা যায়, ৭ মার্চ ভাষণ দেয়ার আগে চিন্তিত বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বলেছিলেন, ‘আল্লার নাম নিয়ে তোমার মন–দিল–অন্তর থেকে যা আসে– তাই বলে দিও।’

পরিস্থিতির চাপে ভীতসন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সদর দপ্তর থেকে বিভিন্নভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ও আওয়ামীলীগকে এই মেসেজ দেয়া হয় যে, ৭ মার্চ যেন কোনভাবেই স্বাধীনতা ঘোষণা না করা হয়। ৭ মার্চ জনসভাকে কেন্দ্র করে কামান বসানো হয়। এমনকি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত রাখা হয়। মেজর সিদ্দিক সালিক তার গ্রন্থে লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ৭ মার্চের জনসভার প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ নেতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “পাকিস্তানের সংহতির বিরুদ্ধে কোন কথা বলা হলে তা শক্তভাবে মোকাবেলা করা হবে। বিশ্বাসঘাতকদের (বাঙালি) হত্যার জন্য ট্যাংক, কামান, মেশিনগান সবই প্রস্তুত রাখা হবে। প্রয়োজন হলে ঢাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হবে। শাসন করার জন্য কেউ থাকবে না কিংবা শাসিত হওয়ার জন্যও কিছু থাকবে না।”

এমন এক কঠিন সংকটময় পরিস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্সে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষকে চারটি শর্ত দিয়ে ভাষণের শেষাংশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের কিছু অংশ ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, তিনি সেদিন যুদ্ধের ঘোষণা যেমন পরোক্ষভাবে প্রদান করেন– আবার যুদ্ধে কিভাবে জয়ী হতে হবে সে ব্যাপারেও বক্তব্য রাখেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের বৈধ সরকার প্রধানের মতো এক পর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইলো প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে।”

প্রকৃতপক্ষে ’৭১–এর পহেলা মার্চ থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন কায়েম হয়। যে জন্য তিনি বলতে পেরেছেন, ২৮ তারিখ কর্মচারীরা বেতন নিয়ে আসবেন। তিনি পাকিস্তানি শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলারও আহবান জানান। অনেকেরই আশঙ্কা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মেরে ফেলা হতে পারে। যে জন্য তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা রাস্তাঘাট সবকিছু বন্ধ করে দেবে।’ অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলেও শত্রু পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকে– ৭ মার্চের ভাষণে তাই তিনি বলেছেন। তা ছাড়া ভাতে মারবো, পানিতে মারবো– এ কথার মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীকে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পর্যুদস্ত করার কথাই বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সে সময় এমন ছিল যে, কোন কোন বিদেশি পত্রিকাও তখন জানিয়েছিল– ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। ’৭১–এর ৫ মার্চ লন্ডনের গার্ডিয়ান, সানডে টাইমস, দি অবজারভার এবং ৬ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ৭ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দেয়া হয়। ৬ মার্চ ’৭১ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ছাপা হয় “ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল (৭ই মার্চ) পূর্ব পাকিস্তানের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭১ এর ৭ মার্চ সরাসরি কেন স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, তার ব্যাখ্যা পরবর্তীকালে তিনি নিজেই দিয়েছেন। ১৯৭২ এর ১৮ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে এনডব্লিউ টিভির জন্য দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ৭ মার্চের ওই ঘটনা বর্ণনা করেন। ফ্রস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চান, ‘আপনার কি ইচ্ছা ছিল যে, তখন ৭ মার্চ রেসকোর্সে আপনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা দেবেন?’ জবাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ আমি জানতাম এর পরিণতি কী হবে এবং সভায় আমি ঘোষণা করি যে এবারের সংগ্রাম মুক্তির, শৃঙ্খল মোচন এবং স্বাধীনতার।’ ফ্রস্ট প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যদি বলতেন, আজ আমি স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রের ঘোষণা করছি, তো কী ঘটত?’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তর দেন, ‘বিশেষ করে ওই দিনটিতে আমি এটা করতে চাইনি। কেননা, বিশ্বকে তাদের আমি এটা বলার সুযোগ দিতে চাইনি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং আঘাত হানা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমি চাইছিলাম তারাই আগে আঘাত হানুক এবং জনগণ তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’ ইতিহাস প্রমাণ করে– ৭ মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শতভাগ সঠিক কাজটিই করেছেন। উল্লেখ্য, ওই ভাষণের ১৮ দিন পর ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা শহরে গণহত্যার মাধ্যমে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন পাকি প্রেসিডেন্ট জে. ইয়াহিয়া খান। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি জাতি ৯ মাসের যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।

লেখক : নগরপরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলী সংগঠক।

(সংগৃহীত)

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত