
ড. প্রকাশ দাশগুপ্ত, ০৯ মার্চ, এবিনিউজ : রবীন্দ্রনাথের নাটক লেখা ও অভিনয় অনুষ্ঠান ঘটেছে নানা কারণে, নানা লক্ষ্য সাধনে, নানা অভিপ্রায়ে। যে অর্থে পেশাদার সৃজকরা ‘রচনাকে’ রূপ–নির্মিতির লক্ষ্যে নির্মাণ করেন রবি ঠাকুরের বেলায় এমন বেশি ঘটেনি। নাটকের ক্ষেত্রে প্রায় ঘটেনিই বলা যায়। ব্যক্তিগত, প্রতিষ্ঠানগত, সমাজগত, সভ্যতা–সংস্কৃতির নীতি ও রূপগত দাবি মেটাতে তাঁকে নাটক লেখা ও প্রযোজনায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। তিনি যত রকমের নাটক লিখে থাকুন, যেভাবে যতভাবে সেসব নাট্যের অভিনয় করে থাকুন ভঙ্গি বা ফর্মের দিক থেকে সংক্ষেপে তিনভাবে ধরা যায়। ১. গানে নাটক, ২. কথায় নাটক, ৩. নাচে নাটক। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব স্বতন্ত্র রীতিতে নানা রূপরীতি ও আঙ্গিকের নাটক লিখেছেন এবং অভিনয় ও মঞ্চ স্থাপত্যে এক নতুন শৈলী নির্মাণ করেছেন। এই নতুন নাট্য নিরীক্ষার নানাদিক বিশেষ করে রচনাগত ও প্রযোজনাগত দিক থেকে সমকালীন থিয়েটার ভাবনার সঙ্গে এর সাযুজ্য ও স্বাতন্ত্র্যের আলোচন নিয়েই এই নিবন্ধের পাঠ।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্য প্রযোজক ও পরিচালক উৎপল দত্তের মন্তব্য: ‘রবীন্দ্রনাথ জীবিত অবস্থায়ই জনপ্রিয় নাট্যকার হিসেবে জনতার প্রণাম কুড়িয়ে গেছেন। ভালো নাটক মাত্রই একাধারে মঞ্চ সচেতন এবং সাহিত্য সচেতন। সেই মঞ্চ সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে রবীন্দ্রনাথে। মাইকেলের কৃষ্ণ কুমারিতে ওর শুরু; ক্ষীরোদ প্রসাদে ওর পুষ্টি; রবীন্দ্রনাথে ওর চরম বিকাশ’।
প্রথমেই আসা যাক, মঞ্চ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ বা নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে: চিন্তার গভীরতায় রবীন্দ্র নাটক হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। যা আজকের এই একুশ শতকেও আধুনিক। প্রকৃত অর্থে আজও প্রাসঙ্গিক। শুধু নাট্য আঙ্গিকের দিক থেকে নয়ণ্ড জীবন বোধ ও মননের দিক থেকেও অতি আধুনিক। নাট্যবোদ্ধা ড. অজিত কুমার ঘোষ বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের নাট্যচিন্তা ও নাট্য সৃষ্টির মধ্যে যে সব নতুন বৈশিষ্ট্য ও আধুনিকতার লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন সেগুলো সূত্রোবদ্ধ করে বলতে পারি:
রবীন্দ্রনাথ থিয়েটারি কলাকৌশল, ক্রিয়া আবেগের আতিশয্য থেকে মুক্ত করে নাটককে সংযত আবেগ ও মননশীলতার ওপরে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ কবি হয়েও নাটক লিখেছিলেন। সেজন্য তার নাটকে কাব্যধর্ম ও নাট্যধর্মের একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। ‘রাজা ও রাণী’ ও ‘বিসর্জনের’ মধ্যে নাট্যধর্মের প্রাধান্য, আবার তারপরেই ‘চিত্রাঙ্গদা’র মধ্যে কাব্যধর্মের আতিশয্য। অবশ্য পরবর্তী নাটক ‘মালিনীর’ মধ্যে নাট্যধর্ম ও কাব্যধর্ম প্রায় সমশক্তি সম্পন্ন। ‘কর্ণ কুন্তি সংবাদ’ ও ‘গান্ধারীর’ আবেদন নাট্য কাব্যগুলোর মধ্যে কাব্যধর্মই প্রধান। সাংকেতিক নাটকগুলো তত্ত্বময়, ব্যঞ্জনাধর্মী, সেজন্য সেগুলো কাব্য জগতের সামগ্রী, সংলাপের মধ্যেও অপূর্ব কাব্যময়তা। তবে গঠনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ অনেক স্থলে নাটকীয় পরিস্থিতি রচনা করেছেন।
রবীন্দ্র নাটকের ঘটনা ও পরিণতি অনেক স্থানেই কবির নিজস্ব চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এখানেও নাট্যকারের বস্তুনিষ্ঠার ওপরে প্রাধান্য পেয়েছে কবির আত্মনিষ্ঠা।
চিত্ত, আদর্শ ও মতবাদে রবীন্দ্রনাথ সকল প্রকার শাসন–শোষণ, সকল প্রকার অন্যায় ও বৈষম্য, সকল প্রকার লোভ ও হিংসার বিরোধী ছিলেন। মানুষের প্রতি তার দরদ ও সহানুভূতি ছিল সর্বব্যাপী ও সর্বাত্মক ব্যক্তিগত মানুষ, শ্রেণিগত মানুষ, জাতিগত মানুষ, বিশ্ব মানুষ– সকল প্রকার মানুষ। সেই মানুষের প্রতি যেখানে অবিচার, যেখানে অত্যাচার সেখানেই তার প্রতিবাদ সুতীব্র ও সুতীক্ষ্ন। রাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে ‘রাজা ও রাণী’ ও ‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকে, শাস্ত্রীয় প্রথা ও বর্ণগত অহমিকার বিরুদ্ধে ‘বিসর্জন’ ও মালিনীতে, অস্পৃশ্যতা ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে চণ্ডালিকার, সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও যন্ত্রের ভয়াবহ শক্তির বিরুদ্ধে, ‘মুক্তধারা’ নাটকে, ধনতন্ত্রী শোষণের বিরুদ্ধে ‘রক্তকরবী’ নাটকে এবং সামাজিক শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে ‘রথের রশি’ নাটকে নাট্যকণ্ঠ সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
রবীন্দ্রনাথ প্রত্যেকটি নাটকে তাঁর মানবমুক্তি চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। জড়শক্তির সঙ্গে প্রাণশক্তির সংগ্রামের পরিণতি ঘটে, অবশেষে প্রাণশক্তির জয় এবং মানুষের অবাধ মুক্তিতে। সেই মুক্তি অবারিত জগতে সকল মানুষের মধ্যে। সেই মুক্তির জন্য কঠিন মূল্য দিতে হয়, কিন্তু মুক্তির পথ অপ্রতিরোধ্য। সেই মুক্তির নায়ক অথবা নায়িকা হল–জয়সিংহ, ধনঞ্জয় বৈরাগী, অভিজিৎ মালিনী, নন্দিনী প্রভৃতি।
রবীন্দ্রনাথের নাটকই বাংলা নাটককে বিশ্বনাটকের পর্যায়ে উন্নীত করেছে। ‘রাজা’ ও ‘ডাকঘর’ পাশ্চাত্য দেশে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল। সাংকেতিক নাটক রচয়িতারূপে মেটারলিঙ্ক, ইয়েটস প্রভৃতি নাট্যকারদের সঙ্গে তিনি এক পংক্তিতে আসন লাভ করেছেন। মুক্তধারা ও রক্তকরবী’ নাটকে যন্ত্রের একাধিপত্য, সাম্রাজ্যবাদ, ধনতন্ত্রবাদ ইত্যাদি যেসব সমস্যার অবতারণা করেছিলেন সেগুলো প্রথম মহাযুদ্ধের পরে ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রকাশবাদী নাটকগুলোতে দেখানো হয়েছিল। সমস্যাগুলো কোনো বিশেষ দেশের সমস্যা নয়, সেগুলো হল বিশ্ব সমস্যা।
রবীন্দ্র নাটকে নারী ও পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা যে শুধু বলা হয়েছে তা নয়, মুক্তি সংগ্রামের নায়িকা রূপে তার গৌরবান্বিত ভূমিকাও নির্দেশ করা হয়েছে। বিক্রমদেব সুমিত্রাকে চেয়েছিলেন প্রেয়সী রূপে, প্রজামাতা রূপে নয়। ক্ষোভে, অপমানে রাণী রাজ্য ছেড়ে চলে যান। মালিনী, নন্দিনী এরা জনগণকে পূর্ণ মুক্তির সন্ধানই দিতে চেয়েছিল। চিত্রাঙ্গদা দেবী অথবা দাসী কিছুই হতে চায় নি, সে চেয়েছিল শুধু সহযাত্রী হতে। নৃত্যনাট্যগুলো নায়িকা নামাঙ্কিত, সেগুলোতে নারীর ভূমিকাই প্রধান।
রবীন্দ্রনাটকে জনতা চরিত্রের গুরুত্ব অনেক। পৃথক পৃথক ব্যক্তি রূপে জনতার চরিত্র দুর্বল, অক্ষম ও অসফল কিন্তু সমষ্টিগত শক্তি হিসেবে জনতা দুর্জয়, দুরতিক্রম্য। রাজা ও রাণীতে সেই জনতাকে তুষ্ট করার চিন্তা, ‘বিসর্জনে’ গোবিন্দ্য মানিক্য ও রঘুপতি দু’জনেই জনতাকে বার বার নিজের দিকে আনবার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এই জনতার গুরুত্ব ক্রমে ক্রমে বেড়েছে, বিশেষ করে ‘রাজা’, ‘অচলায়তন’, ‘মুক্তধারা’, ‘রক্তকরবী’ ও ‘রথের রশি’তে জনতার প্রাধান্য।
সাধারণ জনতা চলে পায়ে চলা পথ দিয়ে। জনতার গুরুত্বের জন্য রবীন্দ্র নাটকে পথেরও গুরুত্ব এসেছে। ‘ফাল্গুনী’, ‘রাজা’, ‘মুক্তধারা’, ‘রথের রশি’ এসব নাটকের ঘটনা ঘটেছে পথে। যে রাজা অথবা রাজপুত্র পথে বেরিয়েছে সেই সাধারণ জনতার আপনার জন হতে পেরেছে। উদয়াদিত্য ও অভিজিং পথে বেরিয়ে জনতার প্রিয় হতে পেরেছে। ‘রাজা’ নাটকের রাজা তো সকলকেই রাজা করে দিয়েছেন ‘আমরা সবাই রাজা, বাস করি এই রাজার রাজত্বে’। ‘রক্তকরবীর’ রাজা শেষকালে মুক্তিযুদ্ধে এই পথেই নেমেছে।
রবীন্দ্র নাটকে গানের গুরুত্ব অনেকখানি। প্রথম দিকের নাটকে গানের ভূমিকা যতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাংকেতিক নাটকগুলোতে তার চেয়ে গানগুলোর অনেক বেশি গুরুত্ব ছিল। ‘রাজা ও রাণী’তে রোমান্টিক নায়িকা ইলার গানে তার স্বপ্ন, আশা, বেদনা ও হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। ‘বিসর্জনে’ অপর্ণার গানে আছে আহ্বান, মন্দিরের শাসন থেকে প্রেম ও আনন্দের জগতে আহ্বান। সাংকেতিক নাটকগুলোতে গান নাটকের প্রাকৃতিক ঋতুর পটভূমি রচনা করেছে। যেন ‘অচরায়তনে’ গ্রীষ্ম ও বর্ষা, ‘শারদোৎসবে’ শরৎ, ‘রক্তকরবীতে শীত এবং ‘ফাল্গুনী’ ও ‘রাজা’ নাটকে বসন্ত। কোনো কোনো চরিত্র গানের মধ্যে দিয়ে নাটকের ভাব প্রকাশ করেছে। যেমন ঠাকুরদা, ধনঞ্জয় বৈরাগী, অন্ধ বাউল ইত্যাদি। অবিচ্ছিন্ন ঘটনা ধারায় এক ক্রিয়ার সঙ্গে অপর ক্রিয়ার যোগসাধন করেছে সংগীত। অনেক জায়গায় একটি সংগীতকে সামগ্রিক ভাবে প্রয়োগ না করে সংগীতের বিচ্ছিন্ন অংশ সংলাপের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নাটকে গতিবেগের সঞ্চার হয়েছে।
এবারে আসা যাক মঞ্চ প্রযোজক শিল্পী রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে। স্তানি াভস্কি বা ব্রেখট প্রমুখ নাট্য প্রযোজক তাদের নাট্য উপস্থাপনার যে বিবরণী ও দলিল বিস্তৃতভাবে রেখে গেছেন বা রেখে দেওয়া হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে সেভাবে তা নেই। অথচ বাংলায় নাট্য প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথ এক স্বতন্ত্র ও ভিন্নমুখী ধারা তৈরী করেছেন। তার সমকালে বাণিজ্যিক সাধারণ রঙ্গালয় গুলিতে যে সকল নাটক অভিনীত হত এবং যেসব নাটকের উপস্থাপনা যেভাবে মঞ্চায়িত হত, রবীন্দ্রনাথ তার নিজের নাটক নিজে প্রযোজনা করতে গিয়ে সবার থেকে এক ভিন্নমুখী ভাবনার পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার নিজস্ব থিয়েটার প্রযোজনার দীর্ঘসময় প্রায় ষাট বছর তিনি নানাভাবে তার নাটকগুলির যে ভিন্নতর উপস্থাপনা করেছেন সে সম্পর্কিত ভাবনাগুলো লিপিবদ্ধ থাকলে পরবর্তী নাট্য আন্দোলনে খুবই কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্যদের নানা বিবরণ থেকে সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করতে হয়।
রবীন্দ্রনাথ এত বিষয় নিয়ে এত কিছু লিখলেন অথচ দীর্ঘ ষাট বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় যে নাট্য প্রযোজনা করে গেলেন সে সম্বন্ধে তিনি নিজে কিছু লিখলেন না। এ আক্ষেপ নিয়েই আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। অধ্যাপক দর্শন চৌধুরী রবীন্দ্র প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথের থিয়েটারকে তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন। নাট্য রচনা শুরু করা থেকে প্রথম একুশ বছর (১৮৮১–১৯০১) তাঁর কলকাতার ১ম পর্বে ২টি ভাগ-(১) জোড়াসাঁকো বাড়ির থিয়েটার পর্ব। (২) সংগীত–সমাজের থিয়েটার পর্ব। তারপরে ১৯০২–১৯১৫ পর্যন্ত ২য় শান্তি নিকেতন পর্ব। পরবর্তী ২৫ বছর ৩য় পর্ব মিশ্র–কখনো কোলকাতায়, কখনো শান্তিনিকেতনে। এই তিনভাগে দেখলেই একটা পরিবর্তনের, পরিবর্জনের, সমন্বয়ের এবং স্বাতন্ত্র্যের রূপরেখা খুঁজে পাওয়া যাবে। বিশেষ করে মঞ্চসজ্জা ও অভিনয় বিষয়ে একটা তত্ত্বে পৌঁছাবার একটা আন্তরিক তাগিদ যে তিনি অনুভব করেছেন সেটা বুঝতে পারা যায়।
রবীন্দ্রনাথ প্রথম নাটক লেখেন মাত্র ১৯ বছর বয়সে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে যাত্রার আসর বসতো। ছেলে বেলায় তিনি যাত্রার পরিমন্ডলে বড় হয়েছিলেন। তাই বাংলার লোকনাট্য ‘যাত্রা’ সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। ১৮৭৮ খ্রি. রবীন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ছিলেন দেড় বছর সময়। পাশ্চাত্যের সঙ্গীতনাটক ‘অপেরা’র সঙ্গে পরিচিত হন। দেশে ফিরে এসে তিনি এক বছরের মধ্যে লেখেন ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ (১৯৮১)। ‘দেশী’ ও ‘বিলাতী’ সুরের মেলবন্ধন ঘটে এখানে।
১৯০৩–এর আগে অর্থাৎ সমালোচকের ভাষায় ফাল্গুনী পূর্ববর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘রাজা ও রানী’, ‘রাজা বসন্ত রায়’ (তাঁর সদ্য প্রকাশিত বউ ঠাকুরানীর হাট উপন্যাসের কেদার চৌধুরীকৃত নাট্যরূপ) প্রভৃতি পূর্ণাঙ্গ নাটকে বা নাট্যরূপে অভিনয় সাধারণ রঙ্গালয়ে অভিনীত হয়েছে। তাঁর ছোট প্রহসন ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ ও ‘দুকড়ি দত্ত’ নামে সেখানে মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু ‘বিসর্জন’ ‘মালিনী’ প্রকাশিত হলেও সাধারণ রঙ্গালয়ে অভিনিত হয়নি। বোধকরি সে সময়কার সাধারণ রঙ্গালয়ে হিন্দু জাতীয়তাবোধের উন্মাদনা পৌরাণিক নাটকের মাধ্যমে হিন্দু ভক্তি ধর্মের তারল্যে ভাসছিল, সেখানে রবীন্দ্রনাথের উদার মানবতার এবং সংকীর্ণ ধর্ম বোধের বিরুদ্ধে মোহরমুক্ত চিন্তা গৃহীত হওয়া সম্ভব ছিল না। অন্তত উনিশ শতকের শেষ চতুর্থ প্রহরে সম্ভব ছিল না। তাই তখন অভিনীত হয়নি।
তাছাড়া সেই সময়ে সাধারণ রঙ্গালয়ে গিরিশচন্দ্র ছিলেন একচ্ছত্র অধিপতি। তাকে বাদ দিয়ে কোনও রঙ্গালয়ই সে যুগে ভালভাবে চলতে পারেনি। গিরীশচন্দ্র যখন যে মঞ্চে অধিষ্ঠান করেছেন সেখানে রবীন্দ্রনাথের নাটকের অভিনয় হতে দেননি। আর অবর্তমানে নাটক চালু থাকলেও গিরিশ যোগদানের পর তা বন্ধ করে যে পদ্ধতিতে অভিনয় করা হত, রবীন্দ্রনাথের পরিশীলিত মন তাতেও সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। তাহলেও নাট্যকার হিসেবে অন্যদের মত রবীন্দ্রনাথও চাইতেন তার লেখা নাটক অভিনীত হোক। তাই কোন রঙ্গালয় কর্তৃপক্ষ তার নাটকের অভিনয়ের অনুমতি চাইলে তিনি আপত্তিও জানাননি।
তারপরেও ১৮৯৬ থেকে ১৯০৮–এই বারো বছর রবীন্দ্রনাথ কোনও পূর্ণাঙ্গ নাটক লেখেননি। অন্য আর সব কিছু অক্ষৗান্তভাবে রচনা করে গেছেন। হাস্যকৌতুক, ব্যঙ্গকৌতুক জাতীয় ক্ষুদ্র কয়েকটি নাটিকা অবশ্য লিখেছেন। আর অন্য কিছু কারণ থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ক্রমে ক্রমে সাধারণ রঙ্গালয় হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এবং স্বভাবত বীতস্পৃহ হয়ে পড়েছেন। সেই উম্মা ‘রঙ্গমঞ্চ’ (১৯০৩) প্রবন্ধে প্রতিফলিত। তাই তখনকার সাধারণ রঙ্গালয় সম্বন্ধে বলতে গিয়ে উপসংহারে বলেছেন-‘বিলাতের নকলে আমরা যে থিয়েটার করিয়াছি, তাহা ভারাক্রান্ত একটা স্ফীত পদার্থ। তাহাকে নড়ানো শক্ত, তাহাকে আপামর সকলের দ্বারের কাছে আনিয়া দেওয়া দুঃসাধ্য তাহাতে লক্ষির পেঁচাই সরস্বতীর পদ্মকে প্রায় আচ্ছন্ন করিয়া আছে।’
এখানে তিনটি প্রসঙ্গ উঠে আসছে। ইংরেজের অনুকরণে আমাদের রঙ্গালয়ের বাস্তবিক যে মঞ্চোপকরণ. তার বাহুল্য এবং অতিরেক ভারাক্রান্ত একটা স্ফীত পদার্থ। এই অনড় থিয়েটার সর্বত্রগামী হতে পারে না। এবং এখানে মালিকানা ভিত্তিক এই বাণিজ্যিক থিয়েটারে অর্থোপার্জনটাই আসল উদ্দেশ্য, শিল্পকলার বিস্তার সম্ভব নয়। লক্ষীর পেঁচা সরস্বতীর পদ্মকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। এই থিয়েটার রবীন্দ্রনাথের মানসিকতার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। বীতস্পৃহ রবীন্দ্রনাথের উম্মা এবং নব্যভাবনার বিকাশ ‘রঙ্গমঞ্চ’ প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ লাভ করেছে।
অভিনেতার সৃজনশীল শক্তির উপর আস্থা কী প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে এ রঙ্গমঞ্চ ভাবনায়। মঞ্চে অভিনেতাই তার অভিনয় ক্রিয়া দ্বারা দর্শকের কল্পনাকে উস্কে দেবে, এটাই হল এই তত্ত্বের সারকথা। অর্থাৎ তিনি আগে মঞ্চের ‘চিত্রপট’ এর চেয়ে দর্শকের ‘চিত্তপট’ এর ওপর ভরসা রাখার কথা বলেছেন। প্রবাসী, ভাদ্র, ১৩২৭ এ লিখেছেন–
‘নাটক দৃশ্যকাব্য: যাহা দেখা যায় সেই উপকরণ লইয়া যাহা দেখা যায় না সেই ভাবরসকে নাটকে অভিব্যক্ত করিতে হইবে।’
রঙ্গমঞ্চ প্রবন্ধের শুরুই করেছেন ভরতের নাট্যশাস্ত্রের সাক্ষ্য দিয়ে ‘ভরতের নাট্যশাস্ত্রে নাট্যমঞ্চের বর্ণনা আছে। তাহাতে দৃশ্যপটের কোন উল্লেখ দেখিতে পাই না। তাহাতে যে বিশেষ ক্ষতি হইয়াছিল, এরূপ বোধ করি না।’
মানতে হবে, রবীন্দ্রনাথের নাট্যভাবনার মধ্যেই এইসব ছিল। কিন্তু স্ফূরণের সুযোগ আসেনি। শান্তিনিকেতনে অবস্থানকালীন নাটক অভিনয় করাতে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতিতে তাঁকে সাদামাটা এবং প্রায়শই খোলামঞ্চে অভিনয়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। উপকরণের অভাব, উদ্যোগের অভাব এবং দৃশ্যপট রচনা করার কুশলী ব্যক্তিত্বের অভাব তাঁকে এই ব্যাপারে বাধ্য করেছে। মঞ্চ নেই, মঞ্চ তৈরি করা, কিংবা দৃশ্যসজ্জার মতো অর্থ নেই। কলকাতার মতো কোনো দিকের সুবিধেই এখানে নেই। তাই এই পর্বের নাট্যপরিকল্পনা, রচনা ও প্রযোজনা পরিবর্তিত হয়ে গেল। মঞ্চবাহুল্যহীন যাত্রাঙ্গিকের অভিনয়, আড়ম্বরহীন সাজসজ্জা, দৃশ্যপরিকল্পনা নেই, থাকলেও ইঙ্গিতবহ বাস্তবানুযায়ী নয়। কবি পুত্র রথিন্দ্রনাথ এ প্রসঙ্গে লিখছেন-‘নাট্যঘরের পূর্বদিকে উঁচু মেঝেটাই ছিল আমাদের রঙ্গমঞ্চ। সেখানে দুধারে গাছের ডাল লাগিয়ে, তাতে দেবদারুর পাতা বেঁধে আমাদের নানা রঙের পট্টবস্ত্র টাঙিয়ে অতি চমৎকার রুচি সম্মত রঙ্গমঞ্চ নিখরচায় হয়ে যেত। তিনি আরো লিখছেন -‘শরৎ ঋতুর সমাগমে আশ্রমের নৈসর্গিক শোভা ‘শারদোৎসব’ নাটকের যেন মুখ্য চরিত্র। উন্মুক্ত পরিবেশে অভিনয়ের ফলে এসব নাটক ঘটনা ও চরিত্রের মধ্যেও প্রকৃতি যেন একটা ভূমিকা পালন করে চলেছে– আজকের ভাষায় যাকে আমরা বলতে পারি ‘এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটার’।
এই পর্ব শুরুর মুখেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘রঙ্গমঞ্চ’ প্রবন্ধটি লেখেন। এই সময়কার নাট্য মানসিকতা তাই এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। বাস্তবানুসারী দৃশ্য সজ্জাকে তার ‘স্ফীত পদার্থ’ বলে মনে হয়েছে। বিলিতি নকলের বর্বরতার থিয়েটারকে তিনি বরবাদ করে দিতে চাইছেন। যাত্রাঙ্গিকের মধ্যে নিজের প্রযোজনার সাযুজ্য পাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাট্য প্রযোজনায় প্রস্তুতিটুকু কাজ করেছে। শহর থেকে সুদূর গ্রামে গিয়ে নাট্যোপস্থাপনায় তাকে তাই যাত্রা রীতিকে বেছে নিতে হয়েছে। বলছেন, ‘আমাদের দেশের যাত্রা আমার ঐজন্য ভালো লাগে। যাত্রার অভিনয়ে দর্শক ও অভিনেতার মধ্যে একটা গুরুতর ব্যবধান নাই। পরস্পরের বিশ্বাস ও আনুকূল্যের প্রতি নির্ভর করিয়া কাজটা বেশ সহৃদয়তার সহিত সুসম্পন্ন হইয়া ওঠে। কাব্যরস, যেটা আসল জিনিস, সেটাই অভিনয়ের সাহায্যে ফোয়ারার মত চারিদিকে দর্শকদের পুলকিত চিত্তের ওপর ছড়াইয়া পড়ে’। উদাহরণ হিসেবে বলেছেন:
‘মালিনী যখন তাহার পুষ্পবিরল বাগানে ফুল খুঁজিয়া বেলা করিয়া দিতেছে তখন সেটাকে সপ্রমাণ করিবার জন্য আসরের মধ্যে আস্ত আস্ত গাছ আনিয়া ফেলিবার কী দরকার আছে–একা মালিনীর মধ্যে সমস্ত বাগান আপনি জাগিয়া ওঠে’। এবং সেখানেই তার সিদ্ধান্ত– ‘তাই যদি না হইবে তবে মালিনীরই বা কী গুণ, আর দর্শকগুলোই বা কাঠের মূর্তির মত কী করিতে বসিয়া আছে’?
বুঝতে পারা যায়, এসব ভাবনা শান্তি নিকেতন পর্বে এসে শুরু হয়েছে। ১৮৯০ থেকে ১৯১৫ অর্থাৎ ফাল্গুনী অভিনয় পর্যন্ত দেখতে পাই শান্তি নিকেতনে বাস্তব পরিবেশে এবং ছাত্রদের অভিনয়ের কথা মনে রেখেই প্রযোজনা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। অথচ ১৮৯৪–এর ২০ নভেম্বর এই ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ সাধারণ রঙ্গালয়ের ব্যবহৃত প্রসেনিয়াম স্টেজ’–এর কার্যকারিতার প্রশংসা করে লিখেছিলেন: ‘সমতল পৃথিবী সাধারণ সমস্ত কাজের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী একথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না, কিন্তু অভিনয় করতে গেলে একটা স্বতন্ত্র স্টেজের আবশ্যক করে; দর্শকদের মাঝখানে নেমে এসে অভিনয় করলে তাদের মনে সেই বিভ্রমটা উৎপন্ন হয় না। অভিনয়ের বিষয়টাকে চতুর্দিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটু ওপরের দিকে উঠিয়ে দিয়ে আলোক এবং দৃশ্যপট এবং সঙ্গীতের দ্বারা বেশ জাজ্বল্যমান করে সম্মুখে ধরা চাই, তবে সেটা সমগ্রভাবে এবং স্বতন্ত্রভাবে কল্পনাপটে মুদ্রিত হয়ে যায়’।
পরবর্তীকালে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থাৎ আমাদের প্রবন্ধে বিভাজিত শেষ পর্বে তিনি তার নিজের নাট্য প্রযোজনায় এর অনেকগুলোকেই আবার নিজের মতো ব্যবহার করেছেন। মঞ্চ সজ্জা, সাজসজ্জা, নারী চরিত্রে অভিনেত্রী গ্রহণ শুরু করেছেন। যেগুলো শান্তিনিকেতন পর্বের আগে কলকাতায় করেছিলেন। নাট্য প্রযোজক রবীন্দ্রনাথ তার থিয়েটার ভাবনা গড়ে তুলছেন সমসাময়িক প্রযোজনাগত পরিস্থিতি ও প্রাপ্ত সুযোগ এবং ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। পরিস্থিতির প্রয়োজনে প্রযোজক হিসেবে অনেক কিছু করেছেন ‘নটির পূজা’ (১৯২৬), ‘চণ্ডালিকা (১৯৩৩) ‘চিত্রাঙ্গদা’ (১৯৩৬), ‘তাসের দেশ’ (১৯৩৬) শান্তি নিকেতন এবং কলকাতার মঞ্চে নতুন আঙ্গিকে পরিবেশিত হল। দেহের ভাষা আর গান প্রাধান্য পেয়েছে এই নতুন নাট্য নিরীক্ষায়। মঞ্চ সজ্জায় এল রঙ এবং সরল মঞ্চ স্থাপত্যণ্ড সেই সঙ্গে নানা অলঙ্করণ। পোশাকের বৈচিত্র্য এবং অলঙ্করণ একটা নতুন শৈলী তৈরি করল এসব প্রযোজনার মাধ্যমে। জোর দেওয়া হয়েছে নাটক অনুযায়ী প্রেক্ষাগার ও মঞ্চকে একই ছন্দে সাজানোর। কিন্তু এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তার নাট্যবোধ ও মানসিকতা যে স্তরে উন্নীত হচ্ছে, বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে তা অনন্য সংযোজন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকছে।
নাটকের ভাববস্তু, চরিত্র চিত্রণ ও ঘটনা বর্ণনা এবং উপস্থাপনার নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা রবীন্দ্রনাথ তার থিয়েটারে যেভাবে করতে চেয়েছেন, পেশাদারী সাধারণ রঙ্গালয়ের সঙ্গে তার কোন সামঞ্জস্য ছিল না। বিশ্বাসভাজন প্রয়োগকর্তা শিশির ভাদুড়িকে কয়েকটি নাটক প্রযোজনা করতে দিলেও রবীন্দ্রনাথের মন তাতে ভরেনি। সে সময়ের এক সাক্ষাতকারে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব পরিষ্কার বোঝা যায়:
‘যেভাবে এখন সাধারণ রঙ্গালয় চলছে তা মোটেও আশাপ্রদ নয়। যাঁর মনে রসবোধ ও কলা জ্ঞান আছে সেখানে গিয়ে তার প্রাণ কিছুতেই তিষ্ঠুতে পারবে না’। এ প্রসঙ্গেই তিনি তাঁর নিজস্ব থিয়েটারের পরিকল্পনা দেন:
‘সর্বসাধারণের জন্য নয়, যাঁরা ললিতকলার সূক্ষ্ম সৌন্দর্য্য উপভোগ কতে চান তাদের জন্য কি বাংলাদেশে একটি অতিরিক্ত রঙ্গালয় প্রতিষ্ঠা করা চলে না? . . . সাধারণ রঙ্গালয় দর্শকদের মুখ চেয়ে যেমন চলছে চলুক অতিরিক্ত রঙ্গালয়ের সঙ্গে তার কোন সম্পর্কই থাকবে না। এখানে যে সব নাটক নির্বাচিত হবে কলা রসিকের উন্নত মনে তা ভাবের রেখাপাত করতে পারবে।’
স্বল্পায়াতন আলোচনায় সব প্রসঙ্গের আলোচনা সম্ভব নয় বিধায় এতটুকুতেই ক্ষান্তি দিচ্ছি। অধ্যাপক দর্শন চৌধুরীর আক্ষেপের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে পারি স্তানি াভস্কি যেমন সাধারণ রঙ্গালয়ের দর্শককে তৈরি করে নিতে নিতে চেকভে’র নাটক জনপ্রিয় করেছিলেন, বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়ে সে রকম কোন রবীন্দ্র প্রযোজক আসেনি। তাই উদ্বেলিত হওয়ার মত কোন প্রযোজনাও আমরা দেখতে পাই না। একবিংশ শতাব্দির শুরুতে এসে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাংলা থিয়েটারে বিশেষ করে তার সার্ধ শতবর্ষে, চলেছে একাধিক নাটকের ধারা। একটি ধারায় রবীন্দ্র মেজাজ ও রবীন্দ্র রচনার মৌলিকতা অক্ষুণ্ন রেখে নাট্য প্রয়াস চলেছে। অন্যদিকে রবীন্দ্র ভাবনার মৌলিকতাকে ক্ষুণ্ন করে সমকালীন করার নামে এক ধরনের প্রয়াসে অনেকেই সামিল হয়েছেন। আবার আধুনিকতার নামে রবি ঠাকুরকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন না করেও এক ধরনের পরীক্ষা চলছে। এই তিন ধারার বাইরে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সামগ্রিক অনুসন্ধান বা রবীন্দ্রনাথের কোন একটি নাটক বা অনেক রচনাকে নিয়ে গবেষণামূলক কাজও চলেছে– যা খুবই আশাপ্রদ। পরিশেষে নাট্যকার, পরিচালক দেবনারায়ণ গুপ্তের প্রাসঙ্গিক মন্তব্য দিয়েই এই নিবন্ধের ইতি টানছি-‘জীবনটাকে সাধারণভাবে দেখা আর জীবন দর্শন উপলব্ধি করা এক কথা নয়। সাধারণ থিয়েটারের দর্শকেরা জীবনটাকে দেখতে এসেছেন, জীবন দর্শনের আস্বাদ গ্রহণ করতে আসেননি বলেই থিয়েটারে রবীন্দ্র চর্চা অনেকাংশেই সফল হতে পারে নি’। (সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি