![কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিকতা কতটুকু?](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/20/abnews-24.bbbbbbbbbbbbbb_131336.jpg)
অমিত বণিক, ঢাকা, ২০ মার্চ, এবিনিউজ : গত কয়েক দিন ধরে দেখছি এ দেশের শিক্ষিত বঞ্চিত যুবক-যুবতীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে। আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের জনস্রোত আর বক্তব্য শুনলেই বুঝতে পারছি, দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট আর ক্ষোভ তারা প্রকাশ করছে। তারা চায় যৌক্তিকতা দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানিয়ে তাদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে। ইতিহাস থেকে তারা এ শিক্ষা পাবে যে, তরুনরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে পরাজিত হয়নি। সবসময় জয়ী হয়েছে। আমরা এখন দেখব কোটা পদ্ধতি কতটা যৌক্তিক।
আমাদের সংবিধানের ২৮(১) এ বলা আছে, রাষ্ট্র কারো প্রতি বৈষম্য করবে না। ২৯(১) এ বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিক সমান। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, কোনো কোটা থাকা উচিত নয়। কিন্তু ২৯(৩)এর (ক) তে আছে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করার জন্য তাদের জন্য বিশেষ বিধান থাকবে। এতে আমরা রাষ্ট্রে কোটা ব্যবস্থা থাকার সাংবিধানিক যৌক্তিকতা দেখতে পাই। তবে তা শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য। বর্তমানে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। ফলে ১০০ জন নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা থেকে নিয়োগ হয় ৫৬ জন। অবশিষ্ট ৪৪ জনকে নেওয়া হয় মেধা থেকে। আর যদি কোটা থেকে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না যায়, তাহলে তা শূন্য রাখা হয়। ফলে স্বপ্নের কাছাকাছি এসেও কোটার কারণে ছিটকে পড়তে হয় অসংখ্য গরীব মেধাবীদের।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিসিএসে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাঁদের নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রয়েছে ১ শতাংশ, যা পূরণ করা হয় সাধারণত ওপরের যেকোনো একটি কোটা থেকে। অর্থাৎ কোনো কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেখান থেকে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ হয়। সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ কার্যক্রম থেকে দেখা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে সিংহভাগেরই কোটার সুবিধা থাকে না। অথচ সেখান থেকে কম প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে কোটার সুবিধা নিয়ে যাঁরা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন, তাঁরা সংখ্যায় কম হলেও তাঁদের জন্য পদ থাকে বেশি। ফলে দেখা যায়, কোটার পদ পূরণের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য প্রার্থী থাকছে না। এতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা সব পদ পূরণ করা সম্ভব হয় না। এতে দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। প্রথমত, ওই পদ সংরক্ষিত থাকার কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় জনবল পাচ্ছে না। এখন প্রশ্ন হলো অনগ্রসর কারা। প্রতিবন্ধীরা অনগ্রসর। উপজাতি শ্রেণি ভৌগোলিক ও ভাষার কারণে অনেক পিছিয়ে। পিছিয়ে রয়েছে আমাদের দেশের ছিন্নমূল মানষেরা। আছেন চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এমন মানুষজন। হ্যাঁ যদি আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ পিছিয়ে পড়া হিসেবে বিবেচিত হন তাহলে তিনি কোটার সুবিধা পাওয়ার অধিক দাবিদার।
আবার কোটাধারীদের মধ্যে কেউ যদি উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য হন বা এদের কেউ বা কোনো শ্রেণি যদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা কোটার সুবিধা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার হারাবেন। মেয়েরা এক সময় পিছিয়ে ছিল। গত কয়েক বছরে দেখা যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি। সব ক্ষেত্রে তাদের অংশ নেয়া বেড়েছে। সুতরাং এখন নারীদের জন্য কোটা প্রযোজ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার দরকার।
জেলা কোটার অযৌক্তিকতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই তাদের মতপ্রকাশ করেছেন।দেশকে সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়তে মেধাকে মূল্যায়ন করে কোটা পদ্ধতির সংস্কার অতীব জরুরি। প্রায় ছাব্বিশ লাখ বেকারের এই দেশে মেধাবীদের হতাশ না করে তাদের দেশ গড়ার কাজে সুযোগ দিন। দেশ এগিয়ে যাবে।বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।
এবিএন/উজ্জ্বল/জসিম/তোহা