
মো. নূর কাশেম, ২০ মার্চ, এবিনিউজ : যেহেতু তিনি আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন, প্রায় দুইশত বছর পূর্বের লেখা উল্লিখিত গানের প্রথম দুই লাইনে তিনি কী বুঝাতে চেয়েছেন সেটা আমার মত লোকের বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। যাঁর কথা বলছি তিনি জ্ঞানের সাগর আসকর আলী পণ্ডিত। পটিয়া উপজেলার শোভনদণ্ডী গ্রামে তিনি জন্মে ছিলেন। ২৭ শে ফাল্গুন ছিল তার ৯৯ ৩ম ওফাত দিবস। ওরশে সারারাত ব্যাপি দোয়া মাহফিল ও পণ্ডিতের রচিত বিভিন্ন পুঁথি– গান পরিবেশন করেন তাঁর ভক্তরা। পণ্ডিতের লেখা পুঁথি গ্রন্থের মধ্যে আছে জ্ঞান চৈতিষা, গীত বারমাস, নন্দ বিলাস, নন্দ সাগর, পঞ্চসতী পেয়ার জান ইত্যাদি। আরবি হরফের বর্ণনা তিনি ছন্দে ছন্দে অসাধারণভাবে উল্লেখ করেছেন তার পুঁথি গ্রন্থে। পাশাপাশি পন্ডিত কাহাকে বলে তা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ঐ চার অ র দিয়ে (প,ন,ড,ত)।
আস্কার আলী পণ্ডিতের প্রত্যেকটি গানের শেষের অন্তরার কয়েকটি লাইনে একটি মেসেজ পরিলক্ষিত হয়। যেমন–
(১) হীন আস্কর আলী কয়
নিশ্চিন্তপুর গেলে কেহ
ফিরে আইসত নয়।।
(২) আস্কর আলী কয়
সময়ে না করলে সাধন
অসময়ে কি হয়?
(৩) আস্কর আলী কয় বন্ধুয়া
আস্কর আলী কয়
যৌবনে কালে ভাটা হইলে
জোয়ার হইত নয়।।
(৪) কয় হীন আস্কর আলী পাইয়াছি খবর
পাগলার মাইজভাণ্ডারে ঘর
খোদার ভাবে যাইয়ুম চলি
বৈরাগীনির ব্যাশ লইয়া, শ্যাম নন্দিয়া।।
(৫) কয় আস্কর আলী সাধুশত জনে
উদাসী বানাইল মোরে।।
(৬) কয় হীন আস্কর আলী
সময় হলে পরে–
মাধব বৈরাগীর সনে
মিলাই দিয়ুম তোরে।।
(৭) বন্ধু পরবাসী,পরের ঘরে আসি
এত ঘুমে ক্যানে ধরে ?
(৮) ঘাটেতে নাও পাবিনা
ঐ যমুনার জল শুকাইলে।।
আস্কর আলী পণ্ডিতের অসংখ্য গান রয়েছে যার কথাগুলো খুবই রসালো হলেও ভিতরে কি মাহাত্ম আছে তা আমি বুঝিয়ে বলতে পারবনা। যেমন–
(১) ভোমরা তোর নাই কাছে
ফুল ফুটিল পিরিতির গাছে।। (২) আমি রহিছি একেলা ঘরে/অবলা বন্ধুয়া, কি জ্বালা দিই গেলা/এই দুঃখ বুঝাবো কারে।। (৩) না দেখিলে ঘুমে না ধরে
ও কমলা তোরে।। (৪) এবার মরিবো আমি বিশ খাইয়া/শ্যাম নন্দিয়া।। (৫) কালঞ্চির কূলে পিয়ারী/জল আনিতে যেইও না/জল আনিতে যেইও নারে
কূলে আছাড় খেইও না।। (৬) দেখতে দেখতে দিন ফুরাই (সখি)/সূয্যি উঠি ডুবিরে যায়/আইবো বলি হই বন্ধুয়ার দেখা নায়।। (৭) দেখি না দেখিলে মোরে-/মুরালী টিপ দিয়া যারগইরে বন্ধুয়া
আমি রইলাম রান্ধন ঘরে।।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আস্কর আলী পণ্ডিত এত সুন্দর পুঁথি ও গান রচনা করে গেলেও তার কোন প্রচার নাই। শুধু মাত্র তার লেখা ৩টি গান আমরা গণমাধ্যমে শুনতে পেয়ে থাকি। একটি কণ্ঠশিল্পী তপন চৌধুরী গেয়েছিলেন ‘ডালেতে লরি চরি বৈইও চাতকী ময়নারে’। আরেকটি রবি চৌধুরী গেয়েছিলেন ‘এক সের পাবি, দেড় সের খাবি’ এবং আর একটি গেয়েছিলেন হৃদয় খান ‘কি জ্বালা দিই গেলা মোরে, নয়নের কাজল পরাণের বন্ধুরে, না দেখিলে পরাণ পোড়ে’। উপরোল্লিখিত ৩টি গান চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান হলেও সারা বাংলাদেশে গানগুলির সমাদর আছে। তাছাড়া বাকী হাজার হাজার গান মিডিয়াতে প্রচার হলে সেগুলোও বাংলাদেশের প্রত্যেকটি লোকের কাছে সমান ভাবে জনপ্রিয় হবে বলে আমি একশত ভাগ নিশ্চিত।
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি