
অভীক ওসমান, ২১ মার্চ, এবিনিউজ :
সুপ্রিম লিডার
১৯৭৫ এ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ড হয়। এর পরবর্তী পর্যায়ে রক্তাক্ত প্রান্তরের বাংলাদেশে গ্রিক ট্রাজেডির কেন্দ্রীয় চরিত্রের মতো একা নিঃসঙ্গ শেখ হাসিনা ৮০’র দশকের শুরুতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। শেখ হাসিনার ভাষায় তার জীবন ‘লিভিং ইন টিয়ার্স’ (২০০৪)। ১৯৮১ সালে তিনি উপমহাদেশের প্রাচীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সভাপতি নির্বাচিত হন। বিংশ শতাব্দির শেষ লগ্নে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। মূলত বিংশ শতাব্দিতেই একজন সাহসিকা সুপ্রিম লিডারের সমস্ত গুণাবলী ও দক্ষতা তিনি অর্জন করেছেন। একবিংশ শতাব্দি হচ্ছে শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষ নেত্রীর বিস্তৃত হবার ইতিহাস। দেশে অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব, সমুদ্রসীমা জয়, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’, ‘দেশিকাত্তোম’ খেতাব অর্জন, বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি লাভ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি অর্জন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তি, শীর্ষ দশ জনপ্রিয় নেতার তালিকায় ৭ নম্বরে অবস্থান এসব প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা দুই শতাব্দির নেত্রী, রাষ্ট্রনায়ক ও চিন্তক হিসেবে দেশ–বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার স্বরচিত ও তার গ্রন্থের অনুবাদ, সংকলন–সম্পাদনা এ রকম ১০টি গ্রন্থ পাঠের সারমর্ম হচ্ছে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন তার মূল লক্ষ্য। ‘পিপল অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামে তার একটি গ্রন্থও রয়েছে।
একবিংশে চট্টগ্রামের গুরুত্ব
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক ভূ–রাজনৈতিক এবং ভূ–অর্থনৈতিক কৌশলের প্রেক্ষাপটে পশ্চিম এবং প্রাচ্যের পরাশক্তি জোট এবং দেশগুলোর কাছে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর ২৫ শতাংশ জুড়ে ভারত মহাসাগর বিস্তৃত– মোট তেল ও গ্যাস সম্পদের ৪০ ভাগ এবং জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ এই মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাস করে। এর সমুদ্র পথ দিয়েই মধ্যপ্রাচ্য প্রচুর অপরিশোধিত তেল পূর্ব এশিয়ায় রপ্তানি করে। ভারত মহাসাগরের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ বঙ্গোপসাগর, পৃথিবীর বৃহত্তম উপসাগর। বঙ্গোপসাগর মালাক্কা প্রণালী হয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে সংযুক্ত। তাই দক্ষিণ চীন সাগরের বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশসমূহ বিশেষ করে চীন ও জাপানের জন্যও বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব সর্বোচ্চ। আর বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের অবস্থানগত কারণেই নয়, ভারত ও মায়ানমারের সাথে এর জলসীমা – সমস্যার সমাধান, বিরাট অংশ জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬% এর উপরে রাখা– এ সকল কিছুই কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশের গুরুত্ব সুসংহত করেছে। জাপান ‘বিগ–বি’ নিয়ে যে বিশাল অর্থনৈতিক পরিকাঠামো চিহ্নিত করেছে, তা বঙ্গোপসাগরকে আবর্তিত করেই গড়ে ওঠবে। অবধারিতভাবেই এই মহাপরিকল্পনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল।
প্রাইভেট–পাবলিক পার্টিসিপেশন এজেন্ডার বাস্তবায়ন
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৭ ক্যালেন্ডার ইয়ারে চট্টগ্রামে ১৮৪টি শিল্প নিবন্ধিত হয়েছে, ৬৫,৮৯৮.৮৭৬ মিলিয়ন বিনিয়োগ হয়েছে। তাছাড়া ১০০ শতাংশ বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগে ১৬টি শিল্প প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৩,১০৯.৪৯০ মিলিয়ন। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ বেশ উল্লেখ্য। এস আলম গ্রুপ বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট, পিএইচপি কর্তৃক মালেয়শিয়ার প্রোটোনসাগা ম্যানুফেকচারিং, সাদ মুসা গ্রুপের আনোয়ারায় মিনি ইপিজেড স্থাপন বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে বিএসআরএম, কেএসআরএম, আবুল খায়ের গ্রুপ উল্লেখ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করছে। চট্টগ্রামের জিপিএইচ ইস্পাত তাদের কুমিরাস্থ প্ল্যান্ট সম্প্রসারণের জন্য অস্ট্রিয়া জিএমবিএইচ এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে করে ইস্পাত শিল্প খাতে চট্টগ্রামে এশিয়ার আধুনিকতম যন্ত্রপাতি স্থাপন করবে জিপিএইচ, ফলে প্রতি বছর ৮,৪০,০০০ মেট্রিকটন বিলেট তৈরি হবে। ২০১৮–১৯ সাল নাগাদ তাদের প্রকল্প শেষ হবে। সর্বশেষ গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি ‘গ্রিন ব্রিকস’ নামে মীরেরসরাইতে একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন।
এগিয়ে যাচ্ছে বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল
সরকার এখন বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল (বেজা) কনসেপ্টে চলে এসেছে। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি’র মতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। চীন, জাপানসহ চট্টগ্রাম তথা দেশীয় কর্পোরেট হাউসগুলো এতে অংশগ্রহণ করছে। সর্বশেষ সংবাদ সূত্রে জানা গেছে বেজা’য় মহেশখালী, পটিয়াও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় একটি পরিত্যক্ত চা বাগানের ৭৭৪ একর জমিতে পটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল। মহেশখালী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ঘটিভাঙা–সোনাদিয়া)। সেখানে মোট জমির পরিমাণ ১২ হাজার একর। কক্সবাজারে ৩ হাজার ৯৮০ একর জমিতে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল। খাগড়াছড়িতে ৬৪০ একর জমির ওপর আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন।
বেজা–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগের পাশাপাশি এর নিরাপত্তাকেও অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। বেজাও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস থেকে শুরু করে সার্বিক ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে বেজার মাধ্যমে। এ কারণেই বিনিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠছে দেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান। সক্ষমতার আলোকে এতে এগিয়ে থাকছে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।
চিটাগাং চেম্বারের বিশেষ শিল্পাঞ্চল
এক দশক আগে তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে একটি বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল গড়ার জন্য সরকার সমীপে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সুখের বিষয় গত ১৮ মার্চ চিটাগাং চেম্বার বিশেষ সাধারণ সভা করে নিজস্ব অর্থায়নে একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আমরা মনে করি, যারা দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মাণ করেছে, বেসরকারী খাতে মেলা আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকে রেয়াতি মূল্যে সরকারের খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হোক। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম এখানে এসএমই (ওুঋ) দের অগ্রাধিকার দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
টানেল ও টুইনসিটি
এই টানেল ইস্ট ওয়েস্ট কে লিংক করবে। দেশে প্রথমবারের মতো নদীর তলদেশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার লম্বা এ টানেল নির্মাণে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ‘কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ শীর্ষক এ প্রকল্প অনুমোদনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠছে।এ প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হবে। টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের বন্দর এলাকা ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। অর্থাৎ টানেলের এক পাড়ে থাকবে বন্দর এলাকা, অন্য পাড়ে আনোয়ারা উপজেলা এবং রেস্ট অব দ্য কান্ট্রি। এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দেবে ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বাকি ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া টানেলটি হলে কর্ণফুলী নদীর ওপরে নির্মিত দুটি সেতুর ওপর যান চলাচলের চাপ কমবে। এর আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ, চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) ও অভি অরুপ অ্যান্ড পার্টনারস হংকং লিমিটেড যৌথভাবে টানেল নির্মাণের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা করে। এরপর গত বছরের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীন সরকারই সিসিসিসিকে এই টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে। এ বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ ও সিসিসিসির মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়েছে।
গেইটওয়ে অফ দি ইস্ট
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার স্বপ্ন হচ্ছে ব্যবসা বান্ধব বন্দর গড়ে তোলা। চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প পায়রা বন্দর নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে। কিন্তু এখন বে–টার্মিনাল স্থাপনে পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বন্দরকে পুনর্বার সমৃদ্ধ করতে চলেছে। বে–টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়ে গেছে। এর পর শুরু হবে এটির বাস্তবায়ন কাজ। ফিজিবিলিটি স্টাডির সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বে–টার্মিনালের যাবতীয় অনুমোদন সম্পন্ন করে রাখার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। বন বিভাগের অনাপত্তি এবং পুলিশের অনাপত্তিপত্রের কাগজপত্রও জমা দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে বে–টার্মিনালের দুই পাশে বিশ হাজার ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান রাখার মতো টার্মিনাল করার শর্ত দেয়া হয়েছে। এর জন্য ৯০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও চলছে। চবক সদস্য (এডমিন) জনাব জাফর আলম বলেছেন, বে–টার্মিনাল শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ১০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বেশি হ্যান্ডলিং করতে হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করা না হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য হোঁচট খাবে। এই অবস্থায় আগামী ১০০ বছরের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য এবং দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বে–টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
হালিশহর উপকূলে জোয়ার–ভাটার নির্ভরতামুক্ত এলাকায় ৯০৭ একর জায়গায় টার্মিনালটি নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৬০০ মিটার। সমুদ্রে জেগে ওঠা চরে বে–টার্মিনালের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। বর্তমানে এই বন্দরে সর্বোচ্চ ১৮শ টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যায়। বে–টার্মিনালে অনায়াসে ৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যাবে। বে–টার্মিনালের কার্যক্রম চট্টগ্রাম বন্দরের তিন গুণ আয়তন নিয়ে শুরু করা হবে। ক্রমান্বয়ে তা আরো বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে। বিদ্যমান বন্দর এনসিটিসহ মোট ৩৩০ একর এলাকায় অপারেশনাল কার্যক্রম চলে। তাছাড়া কেসিটি, পিসিটি, লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল, মাতারবাড়ি কমার্শিয়াল পোর্ট এবং বেসরকারি খাতে বেশ কিছু জেটি বরাদ্দ করার পরিকল্পনা বন্দর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে।
দুরন্ত রেলের গতি
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার–ঘুনধুম রেল লাইন স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে রেল লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প ঠিকাদারদের। এর জন্য প্রয়োজন ১৩৬৫ একর অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২২০ একর (১৮ মার্চ, দৈনিক আজাদী)। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকদের দাবিকৃত ৩৯১ কোটি টাকার মধ্যে ৩১২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের দাবি ৩১৪ কোটি টাকা। মিটারগেজ ও ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে ২০২১ সালের রূপকল্প হিসেবে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রয়েছে সরকারের। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতের অনুদানে এই রেলপথ নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চালু হতে যাওয়া এই রেল রুট ভারতের নর্থ ইর্স্টান কান্ট্রি নামে পরিচিত রাজ্যগুলোর সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগে যোগ করবে নতুন মাত্রা। ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার এই প্রকল্পে ভারতীয় অনুদান থাকছে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। ভারতের অনুদানে শীঘ্রই আখাউড়া–আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশে ১০ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে ৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। আগরতলায় বাংলাদেশের সিমেন্ট, রড, প্রসাধনসহ নানা পণ্য ও সামগ্রী রপ্তানি করা হয়। এমনকি ত্রিপুরার সাথে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন
বর্তমান নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন যোগদানের সাথে সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়নের কিছু বার্নিং পয়েন্ট যেমন কর্ণফুলী নদী ও চাক্তাই খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, দখল দূষণ ইত্যাদির উপর কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। অতীতে শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক মেজবাহউদ্দিন আহমেদের এক গুচ্ছ প্রকল্পও তিনি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। ১৮ মার্চ মাসিক সভায় তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে বাংলাদেশের উন্নয়ন।
সিডিএ–অগ্রাধিকার জলাবদ্ধতা নিরসন
সম্প্রতি গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনিটরিং কমিটির সভায় বর্ষা মৌসুমের আগে ১৬টি খাল খননের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ সালাম তথ্য জানাচ্ছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহিত প্রথম প্রকল্পটি হল কর্ণফুলীর তীরে চাক্তাই খালের মুখ হতে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ৮.৫ কি.মি. দীর্ঘ, ২৫ ফুট উঁচু, ৭৪ ফুট প্রশস্ত বাঁধ কাম রাস্তা নির্মান প্রকল্প। প্রায় ২২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই প্রকল্প ১২টি গুরুত্বপূর্র্ণ খাল কর্ণফুলীর সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি খালের মুখে পাম্পসহ স্লুইস গেইট নির্মাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম। এছাড়াও ১২টি খালের মুখে রয়েছে ১২টি ২ একর বিশিষ্ট জলাধার। পরিকল্পিত ও বিজ্ঞানসম্মত পানি ব্যবস্থাপনা গ্রহণের ফলে প্রকল্পটি জলাবদ্ধতা নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । ৮.৫ কি.মি. দীর্ঘ সুউচ্চ বাঁধ কাম রাস্তাটি বৃহত্তর বাকলিয়ার যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা পালন করবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহিত দ্বিতীয় প্রকল্পটিতে শহরের ৫৭টি গুরুত্বপূর্র্ণ খাল এবং ড্রেন সমূহের যথাযথ উন্নতিকরণ ও সম্প্রসারণসহ পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । ২৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে শাহ–আমানত সেতু হতে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ৬ লেইন বিশিষ্ট এপ্রোচ রোড। এই এপ্রোচ রোড সমাপ্ত হলে শাহ আমানত সেতু থেকে বহদ্দারহাট জংশন পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজতর হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছে বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার যার সুফল চান্দগাঁও, বোয়ালখালীসহ উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নির্মাণ করা হয়েছে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৬.২০ কি.মি. দীর্ঘ আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার। বহদ্দারহাট থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ কি.মি. সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও দ্রুততর করার লক্ষে চতুর্থ প্রকল্প হিসাবে চউক ইতিমধ্যে লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রায় ৩৩০০ কোটি ব্যয়ে ১৮ কি.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বাংলাদেশের দীর্ঘতম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে যা জুন ২০২০ সালে সমাপ্ত হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন : প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সাথে একযোগে
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মতে, এসফল্ট কারখানা নির্মাণ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে মেট্রো রেল স্থাপন, মাস্টার প্ল্যানের সুপারিশমতে প্রস্তাবিত নতুন সড়ক নির্মাণ, ফিরিঙ্গিবাজার হতে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত ফ্লাইওভার, মুরাদপুর রেলক্রসিং–এর ওপর ওভারপাস, ঝাউতলা রেলক্রসিং– এর ওভারপাস, অক্সিজেন রেলক্রসিং–এর ওপর ওভারপাস, আকবরশাহ্ রেলক্রসিং–এর ওপর ওভারপাস, ঢাকামুখী বাস টার্মিনাল, হাটহাজারীমুখী বাস টার্মিনাল, টোল রোডের পাশে কন্টেইনার টার্মিনাল, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ওভারপাস–আন্ডারপাস নির্মাণ। ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশমতে প্রস্তাবিত নতুন ড্রেনসমূহ, ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশমতে শীতল ঝরণা থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত প্রস্তাবিত নতুন খাল, চাক্তাই খালের সম্প্রসারণ–সহ উভয় পাশে সড়ক, মহেশখালের সম্প্রসারণ–সহ উভয় পাশে সড়ক, হিজরা খালের উভয় পাশে সড়ক, আযববাহার খালের উভয় পাশে সড়ক, রামপুর খালের উভয় পাশে সড়ক, ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশমতে প্রস্তাবিত জলাধার এবং খালের মুখে পাম্প হাউস–সহ স্লুইস গেট নির্মাণ।
চট্টগ্রাম ওয়াসা–এই প্রথম সুয়ারেজ প্রকল্প
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ জানাচ্ছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের মোট চাহিদার প্রায় ৭০% পানি চট্টগ্রাম ওয়াসা সরবরাহ করতে সক্ষম। তাছাড়া সম্প্রতি উদ্বোধিত ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি প্রকল্প জাইকা কাজ শুরু করেছে। চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইম্প্রুভমেন্ট এন্ড স্যানিটেশন প্রকল্প শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (পেজ ২), বোয়ালখালীর ভাণ্ডারজুরী এলাকায় পানি সরবরাহ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম মহানগরীর ড্রেনেজ এবং পয়ঃনিষ্কাশন মাস্টারপ্ল্যানের উপর ভিত্তি করে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি– চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছে এনার্জি হাব্
ইতোমধ্যে এস আলম পাওয়ার জেনারেশনের ২ ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। জাপানের কারিগরি সহায়তায় এটি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট। এছাড়াও বাঁশখালীতে ৬১২ মেগাওয়াট করে মোট ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াটের দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য পিডিবির সাথে চুক্তি করেছে এস আলম। ২৪০ কোটি ডলারের মধ্যে এই প্রজেক্টে চীনা ব্যাংক দেবে ১৭৫ কোটি ডলার। আনুমানিক ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গ্যাস খাতে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে পেট্রোবাংলা ও এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড–এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে। উদ্যোগের প্রায় ৬–৭ বছর হতে চললো। দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। এই টার্মিনালের মাধ্যমে কয়েকমাসের মধ্যে এলএনজি আমদানি করে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। রাজধানীতে পেট্রোসেন্টারে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন টার্মিনালটি থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। পেট্রোবাংলার হিসেবে, বাংলাদেশে দৈনিক প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হবে। এছাড়াও ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস লাগবে। এই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশে গ্যাস অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার
গণমাধ্যম ও ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহ গত ২ বছর ধরে সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে পানি সরবরাহের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্যান্য শিল্পাঞ্চলে ১–৩টি নলকূপ দিয়ে তাদের পানির চাহিদা মেটাচ্ছে। পক্ষান্তরে সীতাকুণ্ড অঞ্চলে ৪০–৫০টি গভীর নলকূপ বসিয়েও তা করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ মতে, পাহাড়ের খাল–খন্দক, নালা ও ছরাগুলোতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে উক্ত শিল্পাঞ্চলের পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। সুতরাং এক্ষেত্রে বিত্তবান ও সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকদের নিজ খরচে জলাধার নির্মাণের জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। উল্লেখ্য, ভারত, কম্বোডিয়া ভিয়েতনামে এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার ইউটিলিটি সার্ভিস হিসেবে সরকারেই সরবরাহ করে থাকে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদের সদ্ব্যবহার : এগ্রোবেইজড্ ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ
আমরা ইতোপূর্বে অভ্যন্তরীণ সম্পদের সদব্যবহারের কথা বলেছি। মূলত বাংলাদেশ এখনও কৃষি প্রধান দেশ। অতীতে একজন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে শক্তিশালী প্রাইভেট সেক্টর হচ্ছে কৃষিখাত।’ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৪ লক্ষ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। আমরা চট্টগ্রামের মৌসুমী ফলসমূহ বিশেষ করে কাঞ্চননগরের পেয়ারা, বান্দরবানের আম, কমলালেবু ইত্যাদির ফলন ও সংরক্ষণের কথা বলেছি। তাছাড়া রাঙামাটির আনারসের পর্যাপ্ত ফলন, কালুরঘাটের স্থাপিত জুস প্ল্যান্টটি সিক ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হওয়ার কথা বলেছি। প্রাণ, বিডিফুড এর মতো প্রাইভেট সেক্টরের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে আশানুরূপ ফল আসেনি।
মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, লামা, সাতকানিয়াসহ বৃহত্তম চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার আশেপাশে ব্যক্তি উদ্যোগে হিমাগার গড়ে উঠছে। এতে সেখানকার কৃষি পণ্য মজুদ ও সংরক্ষণ করার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এই অঞ্চলের পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্প অনেকদিনের। ২০২১ সালের মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ৫০–৬০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ দাঁড়াবে। এখান থেকে প্রায় দৈনিক ১ হাজার ৭০০ টন মুরগির মাংস ও দুই থেকে সোয়া দুই কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পুরো চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক ডেইরি ফার্ম রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। পশুসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ গৃহপালিত গরু, ৪৫ হাজার ছাগল এবং ৩৬ হাজার মহিষ রয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়ন
উন্নয়ন বলতে আমরা বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়ন বুঝি, মূলত চট্টগ্রাম বিভাগকে নিয়ে একটি অর্থনীতিক সমৃদ্ধি পরিকল্পনা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে টেকনাফ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে আলাদা ডেভলপমেন্ট অথরিটি গঠন ও চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম দোহাজারি ঘুনধুম রেলপথ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের উপজেলা সমূহে সরকার দৃষ্টি দিয়েছেন। উত্তর চট্টগ্রামে বেজা ছাড়াও একে গ্রুপসহ বিশেষ কোম্পানিগুলোকে বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাগুলোর সম্পদ, সম্ভাবনা ও জনসম্পদ সরকার কাজে লাগাচ্ছেন। হালদা নদীকে জাতীয় নদীতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিচ্ছেন। চট্টগ্রাম–ঢাকা সড়কপথ চারলাইন বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এটিকে আটলাইন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর পার্শ্বস্থ ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলাসমূহ বাণিজ্য বিনিয়োগ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জেগে উঠছে।
আকুল আবেদন
’৭১ এ আমরা ভারতে শরণার্থী ছিলাম। ২০১৭ এসে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। এতদসত্ত্বেও কিছু আমলাতান্ত্রিক কারণে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানীর মর্যাদা লাভ করতে এখনও সক্ষম হয়নি। মুম্বাই, সাংহাই এর মতো চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানীর মর্যাদায় নিয়ে যেতে হবে। দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক একটি কথা প্রায় বলে থাকেন, আমরা এখনো মফস্বলে রয়ে গেছি। এ প্রেক্ষাপটে কিছু কথা বলতে চাই। ইতোপূর্ব যে সব কর্পোরেশনের হেড কোয়ার্টার চট্টগ্রামে রয়েছে তাদের কর্মকর্তারা যাতে হাফ হার্টেড না হয় তার জন্য কঠিন নজরদারী রাখতে হবে। চট্টগ্রামের মন্ত্রীগণ, এমপিগণ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে উন্নয়নের ব্যাপারে সমন্বয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। এর জন্য একজন সিনিয়র মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কো–অর্ডিনেশন সেল গড়ে তোলা যেতে পারে। চট্টগ্রামের শিল্প, পর্যটন, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দ্রুত ব্যবহারের জন্য চট্টগ্রামে দুটো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সদর দপ্তর স্থাপন, চা এর নিলাম পুনর্বার চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনা সহ নৌ–বন্দর, শিল্প ও বাণিজ্য, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বয়ংসম্পূর্ণ দপ্তর চট্টগ্রামে স্থাপনের দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। অনুরূপভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র চট্টগ্রামের নয় দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে সম্পদ ও সম্ভাবনা রয়েছে তার অপটিমাম ইউটিলাইজেশন করা হলেই একটি ভারসাম্য ও কল্যাণমূলক একবিংশের বাংলাদেশ আপনার নেতৃত্বে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
লেখক : সাবেক সেক্রেটারি ও সিইও, চিটাগাং চেম্বার, অতিথি শিক্ষক, নাট্যকলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন গবেষক।
(সংগৃহীত)