![বিদ্যুৎ নিয়ে নানা কথা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/23/siraj_abnews_131783.jpg)
সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম, ২৩ মার্চ, এবিনিউজ : বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইতিহাসে দেখা যায় ১৯৪৭ সালের পূর্বপর্যন্ত শাসকর্তারা মূলত প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো যা ১৭টি প্রাদেশিক রাজ্যে সীমিত আকারে ব্যবহৃত হত। সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ ১৭ মেগাওয়াট। পাবলিক সেক্টরে প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয় ১৯৬০ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে (স্টীম টারবাইন)। পরবর্তীতে একে একে আরও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ১৯৬২ সালে ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা নিয়ে স্থাপিত হয় কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ। এর ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে ১৯৮৮ সালে দাঁড়ায় ২২০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বিবেচনা করলে ১৯৭০, ১৯৮০, ১৯৯০, ২০০০, ২০১১ এবং ২০১২ সালে ছিল যথাক্রমে ২২৫, ৬২৫, ১৮০৪, ৪০০৫, ৫৮০০, ৭৮১৪ এবং ৮০৯৯ মেগাওয়াট। এসময়ে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১১, ২০, ৭০, ১২০, ২১২ এবং ২১৫ কিলোওয়াট।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে যখন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে বিদ্যুৎ সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। বর্তমান সরকার যেদিন দায়িত্ব গ্রহণ করে অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৩১, পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ চাহিদা ৪০০০ মেগাওয়াট এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৩২১৭ মেগাওয়াট। সে বছর সেচ মওসুম এবং গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় বিদ্যুৎ খাতের অবস্থা ছিল চরম নাজুক।
২০০৯ সালের কয়েকটি সংবাদপত্রের শিরোনাম:
• লোডশেডিং এ অতিষ্ট মানুষ, কেরানীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা ভাংচুর (দৈনিক জনকন্ঠ, ২০ জুন, ২০০৯)
• নীলফামারিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট: ১৫ ঘন্টায় ৫০ বার। (দৈনিক জনকন্ঠ, ২০ জুন, ২০০৯)
• তীব্র দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং (দৈনিক জনকন্ঠ, ২১ জুন, ২০০৯)
• লোডশেডিংয়ের সময়সূচীও ভেঙ্গে পড়েছে (প্রথম আলো, ১৭ এপ্রিল, ২০০৯)
• রাজশাহীতে অসহনীয় গরমে জনজীবন অতিষ্ট (দৈনিক ইত্তেফাক, ৯ এপ্রিল, ২০০৯)
২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এক কোটি ৬০ লাখ নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ শতাংশ হতে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সরকারের এই সফলতা ম্লান করে দিচ্ছে কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা। যেমন আপনার বিদ্যুৎ বিলের কপিটি হাতে নিন আর দেখুন কত তারিখ পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া আপনি বিলটি দিতে পারবেন? নিশ্চয় ২ বা ৩ তারিখ পর্যন্ত! এমনটা কেন? যেখানে সমাজের বেশির ভাগ মানুষ বেতন পায় ১ থেকে ৮ তারিখে, মানুষ বেতন পাওয়ার পরই তো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে নাকি? আপনি বেতন পাওয়ার পর যখন ৮/৯ তারিখের দিকে বিল দিতে যান তখন জরিমানাসহ আপনার বিলটি দিতে হয়। কেননা জরিমানা ছাড়া বিল পরিশোধের তারিখটি চলে গেছে গতমাসের ২৮, ২৯ বা চলতি মাসের ২, ৩ তারিখে যখন আপনার হাতে মাসের বেতনই আসে নি।
যদি জরিমানা ছাড়া বিল পরিশোধের তারিখ থাকতো ৮ থেকে ১৫ পর্যন্ত; তাহলে কাউকেই বিলের সাথে জরিমানা দিতে হতো না। আমার মনে হয় এটা ইচ্ছা করে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতানোর একটা সুকৌশলের ধান্ধা। সবার মতো আমিও এর প্রতিকার চাই।
বিদ্যুৎখাতে অভূতপূর্ব সাফল্যের ফলে সরকার দেশে ১৫০০-২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থেকে এখন ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল নামিয়ে এনেছেন। বর্তমানে মহাজোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় গ্রীডে প্রতিদিন ৬ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানী করছে, দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা সমাধানে রাশিয়ার সাথে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প চুক্তি করেছে। সরকারের এই বিশাল সফলতা কোনো একটি সংস্থার জন্য ম্লান হতে পারে না।
নেতৃত্বে সফলতা ও ব্যর্থতা থাকবেই, ব্যক্তি জীবনেও আছে। আমার দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কিছু ব্যর্থতা আছে। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে। তাই বিভিন্ন সমালোচনা থাকলেও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আগামী নির্বাচনের আগেই এই সমস্যার সমাধান করবেন। মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল বললে ভুল হবে, একটি অনুভূতি।
লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা