বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • মুক্ত মতামত
  • "মাদার অব হিউম্যানিটি থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী"

"মাদার অব হিউম্যানিটি থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী"

মশিউর রহমান, ২৪ মার্চ, এবিনিউজ :পলাশী থেকে ধানমন্ডি হয়ে আজকের বাংলাদেশ! এক লম্বা যাত্রা। পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল তা পুনরায় ধাপে ধাপে ফিরে এসেছিল জাতির পিতার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।

৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই দেশ গড়ার মিশন হাতে নিলেন জাতির পিতা। তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রতিটি কোণায় কোণায় মৃত্যু আর ক্ষুধার আহাজারি তুঙ্গে। সকল ভয় আর সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে সহায় সম্বলহীন দেশটিকে সামনের দিকে তিলে তিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন জাতির অক্সিজেন। ৭১ এর পরাজিত শক্তির এজেন্ট, এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধী দালাল চক্রের কাছে সহ্য হলো না সেটা। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাদের বিষাক্ত ছোবল ঝাঁজড়া করে দিল পিতার পবিত্র বুক, যে বুকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন সন্তানদের। সেই কুলাঙ্গাররাই ঝাঁজড়া করে দিল বাংলা মায়ের বুক। থমকে দাড়ালো দেশ গড়ার মহান কাজ। কে ধরবে এই হাল?

জাতির কান্ডারিকে তো জোড় করে রাখা হয়েছিল রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রবাসে! মেজর জিয়ার অবৈধ সরকার পাসপোর্ট দিলো না, ভিসা দিল বন্ধ করে। এমন কি বাবার জানাজা পর্যন্ত পড়তে দেওয়া হলো না তাঁকে। এরকম কতো প্রতিকুলতা আর কতো বাধা! দেশে ফেরার সময়টা ছিল খুব খারাপ। এমনি খারাপ যে, যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা? ওত পেতে ছিল, আছে খুনিরা সোজা বাকা সব পথেই! প্রতিটি পথেই যেন বিষাক্ত কাটা ছড়ানো। শুধু কি তাই? সব সময় প্রস্তুত শত্রুর বন্ধুকের নল? কিন্তু তিনি তো এসব বাঁকানো, চোরাস্রোত আর বিষাক্ত পথ অতিক্রম করার সাহস অনেক আগেই পিতার মাতার কাছ থেকে রপ্ত করেছেন? এত ঝুঁকি জেনেও ফিরে এসেছিলেন দেশে। স্পষ্ট বলেছিলেন, নিহত হওয়ার আশঙ্কায় আমি শঙ্কিত নই; জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।

শত প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করে বাবার কষ্টে তিলে তিলে গড়া বিধ্বস্ত দলের দায়িত্ব নিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেই শোকাহত জাতিকে শোনালেন ‘আমি আওয়ামী লীগের নেতা হতে আসিনি। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, আমি বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকতে এসেছি। বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। আপনারাই আমার পরম আত্মীয়। স্বামী-সংসার, ছেলে রেখে তাই আপনাদের কাছে এসেছি। আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে মুক্তির সংগ্রামে নামতে চাই। মৃত্যুকে ভয় পাই না। বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য আমার বাবা আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষের জন্যই জীবন দিয়েছেন। আমিও প্রয়োজনে বাবার মতো আপনাদের জন্য জীবন দিব।

দিশেহারা বাঙালি জাতির মাঝে যেন সঞ্চারিত হলো নতুন প্রাণ। তারা জেগে উঠলো নতুন আশায়, নতুন স্বপ্ন ও উদ্যমে। স্বপ্ন, আপসহীন প্রতিশ্রুতি আর অসহায় মানুষ গুলোকে নিয়ে জাতির পিতার দেখা অসমাপ্ত স্বপ্নের লক্ষ পানে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতার সব গুনের পরিপূর্ণতা যেন "মাদার অব হিউম্যানিটি" খ্যাত শেখ হাসিনা'র মাঝে। পরিবার সামলানো, ধর্মচর্চা, শিল্প-সাহিত্য চর্চা করেন নিয়মিত। একজন স্বনামধন্যা লেখকও! তুলির আঁচড় দিয়ে আঁকেন সুন্দর ছবি। ক্রীড়াপ্রেমী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জিতলে আনন্দে আপ্লুত হন। পরম মায়ায় খেলোয়াড়দের পরশ বুলিয়ে দেন। সকল গুনে গুণান্বিত তিনি। কি গুন নেই তাঁর! যিনি রাঁধতে জানেন, তিনি চুলও বাঁধতে পারেন। যাকে নিয়ে এই চর্চা তাঁর নাম জননেত্রী শেখ হাসিনা। অবাক হওয়ার কিছু নেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় নিয়মিতই রান্না করেন। সুযোগ পেলেই অতিথিদেরও রান্না করে খাওয়ান।

বাবার স্বপ্ন পূরনে ৯৬তে জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করেই দেশ গঠনের কাজে নেমে যান। দেশে তখন স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-বিএনপি চক্র সক্রিয়। ছিনতাই, খুন, গুম, ধর্ষন, জঙ্গীবাদ, যেন প্রতিদিনের সংবাদ পত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সব কিছু উপেক্ষা করে তিনি ধরলেন দেশের হাল। শিক্ষা-অর্থনীতি খাতে নিয়ে এলেন আমুল পরিবর্তন। দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে যেতে থাকলো। নারীর ক্ষমতায়নকে রোল মডেলে পরিণত করলেন। সামাজিক ভাবে যেন পিছিয়ে না থাকতে হয়, এজন্য নারীদের যুক্ত করলেন অর্থ উপার্জনের সাথে। দেশের রাস্তা ঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থায় এলো যুগান্তকারী পরিবর্তন। ক্যাবল সাবমেরিন এর সাথে যুক্ত করলেন দেশকে। চট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগাম, রাঙ্গামাটির মত দূর্গম এলাকায় নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় এলো অভূতপূর্ব পরিবর্তন। দেশে আনলেন ফোরজি। দেশ আজ ডিজিটাল। জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় তাঁর নেওয়া পদক্ষেপ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেন দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়, ঘর থেকে ঘরে। বেকার যুবকরা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে উপার্জন করছে বৈদেশিক মুদ্রা আর রেমিটেন্স। আর্থ সামাজিক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। ক্ষুধা যেন আজ জাদুঘরে!

দারিদ্রতা হার মেনেছে বঙ্গবন্ধুর বাংলায়। সুদের গুরু ড. ইউনুস সহ সকল সুদ, হুন্ডির যাঁতাকল থেকে মুক্ত হয়ে শেখ হাসিনার মাইক্রো ক্রেডিট অর্থনীতির ফল দৃশ্যমান। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে দেশকে সম্প্রতিই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের অপপ্রচার, আর বিশ্বব্যাংকের সকল ষড়যন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে প্রমান করে দিলেন, আমরা পারি অসম্ভবকে সম্ভব করতে। স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান!

দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে অস্বীকারকারী বিএনপি-জামাত, বাম চক্রের ষড়যন্ত্র তো বসে নেই এর মাঝেও। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ আর জামাত-বিএনপির জ্বালাও পোড়াও রোধে পরিবার, নারী, যুবসমাজ, গণমাধ্যম এবং ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করে কঠোর হস্তে দমনের মাধ্যমে বিশ্বকে সুসংবাদ দিয়েছেন বাংলাদেশে করেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছিল সকল বাঙ্গালির প্রাণের দাবি। দেশী-বিদেশী চাপ উপেক্ষা করে সকল ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে চপেটাঘাত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাজা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর দৃঢ়তা আর সাহসিকতায়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নাকি ভীষণ জেদী? তা তো অবশ্যই জেদী। সেই জেদ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার। এই জেদই তাকে দিয়েছে অসীম সাহস আর প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার দৃঢ় মনোবল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা। পিতার মতই মানুষের প্রতি ভালবাসা। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে হতদরিদ্র মানুষের ভালবাস অর্জন করেছে। এ জন্যই তাঁর কাছে এতো মানষের প্রত্যাশা। রোহিঙ্গা সমস্যায় অতুলনীয় ভূমিকা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের উঁচু করে দিয়েছে। বিশ্ব অবলোকন করছেন শেখ হাসিনা কিভাবে কঠিন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা যিনি বাঁধাধরা কোন নিয়মের মধ্যে না থেকে খোলা মনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে সবকিছু যোগ্য হাতে পুরনোকে ছাড়িয়ে নতুনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশ কিসের মাধ্যমে অগ্রগতি হবে তা একমাত্র শেখ হাসিনাই জানেন।

আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়ন, অগ্রগতি, নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা। তিনি সমগ্র মানবতার প্রতীক, নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর সেবকে পরিণত হয়েছেন। বার বার নিজের জীবনকে বিপন্ন করে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন। ক্ষুধামুক্ত দরিদ্রতা নিরসনের এক মহা সাহসিকার নাম শেখ হাসিনা। কিছু পল্টিমারা অপদার্থ সুশীল ছাড়া দেশ ও বিশ্বসম্প্রদায় শেখ হাসিনাকে ঠিক ঠিক চিনেছে। বৃটিশ মিডিয়া বলছে "মাদার অব হিউম্যানিটি"।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য ষ্ট্যাটিস্টিক্স তাঁকে আখ্যায়িত করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। এটা শুধু তাঁর অর্জন নয়, প্রাপ্য! ছোট্ট একটি দেশের ষোল কোটি মানুষের একজন প্রতিনিধি হয়ে আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয় জাতির পিতার সুযোগ্য কণ্যা, গণতন্ত্রের মানস কণ্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা। নেতৃত্বের রোল মডেল হয়ে থাকবেন সারা বিশ্বের নেতাদের কাছে। তিনি ইতিহাস হয়ে থাকবেন ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অনাগত শাসকদের মাঝে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ,

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত