বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম স্মরণে

জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম স্মরণে

নেছার আহমদ, ০১ এপ্রিল, এবিনিউজ : মেধা, নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায় যে মানুষটিকে সফলতার চূড়ায় নিয়ে গেছে, বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের চিকিৎসা জগতকে যে মানুষ আলোকিত করেছেন, তিনি হলেন চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম। উপমহাদেশের মানবদরদী কৃতী চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম ১৯২৮ এর ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মোহাম্মদপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দুর রহমান মাতা রত্নগর্ভা গুলমেহের বেগম। ৩ ভাই ৫ বোনের মধ্যে সবার ছোট নুরুল ইসলাম। তাঁর বয়স যখন মাত্র চার তখন তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। অল্প বয়সে পিতৃহারা হয়ে মায়ের ও বড় ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে তিনি বেড়ে উঠেন। ফলে মা গুলমেহের তাঁর জীবনে অপরিমেয় প্রভাব রাখেন।

পিতার মৃত্যুর পূর্বেই গ্রামের পাঠশালায় নুরুল ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু। বাল্যকাল হতেই মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি সকলের প্রিয় পাত্রে পরিণত হন। ১৯৪৩ এ গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে লেটার সহ মেট্রিক পাস করেন এবং সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। মেট্রিক পাস করে ডাক্তারী পড়ার আশা নিয়ে বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে কলকাতার ঐতিহাসিক ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজ হতেই ১৯৪৫ সালে কৃতিত্বের সাথে আই. এস. সি পাস করেন। সে সময় এ কলেজে ছাত্র ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আই. এস. সি পাস করে কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে এমবিবিএস পরীক্ষায় পাস করেন। ছয় মাস প্রশিক্ষণের পর ১৯৫১ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস ডিগ্রি সনদ লাভ করেন।

১৯৫৪ সালে লন্ডনের হুইটিং ইন হাসপাতাল হতে এফ আর সিপি ডিগ্রি লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ডা. নুরুল ইসলাম সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র এফ আর সি পি ডিগ্রিধারী ডাক্তার হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ১৯৫৫ সালে ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় হতে টিডিডি ডিগ্রি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি চিকিৎসা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ইতিহাসে প্রফেসর নুরুল ইসলামের ন্যায় ক্ষণজম্মা মহাপুরুষ খুবই কম জন্ম নেয়। ওয়েলস হতে টিডিডি পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে এডিনবরা হতে ১৯৫৬ সালে এম আরসিপি ডিগ্রি নেন। পোস্ট গ্যাজুয়েট ডিগ্রি লাভের পর তিনি দেশে ফিরে ঢাকাস্থ মেডিক্যাল স্কুল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে যোগ দেন। দেশে এ পদে তিনিই প্রথম এম আর সিপি ডিগ্রিধারী ডাক্তার।

১৯৬১ এর শেষের দিকে তিনি প্রফেসর অব মেডিসিন হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে যোগদেন। তিনি ২৬ ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে আনোয়ার বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন প্রথম পূর্বপাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে চিকিৎসক শাস্ত্রে নাফিল্ড ফেলোশীপ নিয়ে ডিজিটির প্রফেসর হিসেবে যোগ দিতে লন্ডন যান। তিনি যখন নাফিল্ড ফেলোশিফ নিয়ে লন্ডনে যোগ দেন স্ত্রীর সাথে তিনি তাঁর মা গুলমেহের বেগমকেও সাথে নিয়ে যান। বাল্যকালে পিতৃহীন হওয়ার কারণে মায়ের প্রতি অসম্ভব ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছিল নুরুল ইসলামের। যতদিন এ স্নেহশীল মা বেঁচে ছিলেন তত দিন তিনি ছেলের সাথেই জীবন অতিবাহিত করেছেন। ডা. নুরুল ইসলামের জীবনে মায়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ না করে পারছি না। ইতিহাসের আরেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব পাকিস্তানের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক আদালতের প্রধান বিচারপতি স্যার জাফরুল্লাহ্‌ খানের জীবনেও মায়ের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। মায়ের বিষয় নিয়ে তিনি মাইমাদার নামে একটি পুস্তকও রচনা করেন। বইটি বাংলায় ‘মা আমার মা’ নামে অনুবাদ হয়েছে। বইটি আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানে আই.পি.জি.এম আর (পিজি হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠায় তিনি হলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি পিজি হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক পরবর্তীতে পরিচালকের পদোন্নতি দেয়া হয়। পিজিতে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হলে তৎকালীন মুখ্য সচিব চট্টগ্রামের আরেক কৃতি সন্তান সফিউল আযম সাহেবের পরামর্শে তিনি এ পদে যোগ দেন। অনেক বাধা বিপত্তি ও ষড়যন্ত্রকে জয় করে তিনি এতে সফল হন। সে সময় তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১০ ডিসেম্বর ১৯৬৫ সালে ডা. নুরুল ইসলাম পিজির পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এ পদে তিনি দীর্ঘ ২৪ বছর কর্মরত ছিলেন। সফলতার সাথে তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছিয়ে দেন। এ সময় ব্রিটিশ সাময়িকী ডা. নুরুল ইসলাম এর কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে আই পিজি এম আর এর ‘ফাউল্ডিং ফাদার’ হিসেবে অভিহিত করে।

পরিচালক নিযুক্তির মাত্র তিন মাসের মধ্যে অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে পিজিতে এম ফিল এবং এফসিপিএস কোর্স চালু করা হয়। পিজিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথিতযশা চিকিৎসক হিসেবে তিনি তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে সমাদৃত হন। ১৯৭০ হতে তিনি বঙ্গবন্ধুর পিতা মাতার চিকিৎসক নিযুক্ত হন। ১৯৭১ এ দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধকালীন নয় মাস প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পিজির দায়িত্ব পালন করেন। ডা. নুরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর পিতা ও মাতা উভয়কে পিজি হাসপাতালে কেবিনে রেখে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি একশত কম্বল ও বিপুল পরিমাণ ওষুধ হাসপাতাল হতে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন। এ দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি পাক হানাদার বাহিনীর রোষানলের শিকার হন। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হতে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান ডা. নুরুল ইসলাম।

দেশ স্বাধীন হলে স্বাধীন বাংলাদেশে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ডা. নুরুল ইসলামের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃতজ্ঞ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘হি ইজ মাই ফাদার’ তিনি আমার পিতা, ইনি আমার বাবা মাকে বাঁচিয়েছেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর উপর খুবই নির্ভর করতেন। ফলে ১৯৭২ হতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ডা. নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভালোবাসা ও অগাধ বিশ্বাসের মর্যাদাও তিনি রেখেছেন।

পিজির পরিচালক পদে থাকাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক মানের কয়েক শত গবেষণা নিবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ এর ৩১ মার্চ সরকার ডা. নুরুল ইসলামকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেন। জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্তির পূর্ব পর্যন্ত তিনি দীর্ঘ ২৪ বছর পিজির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্তির পরও তাঁকে পিজিরই দায়িত্ব দেয়া হয়।

চট্টগ্রামের প্রতি দায়বদ্ধতা বিশেষ করে মানব সেবার প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধের কারণে ১৯৮৯ এর ১৩ মে মাত্র ৪০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউএসটিসি। ঢাকা মেডিকেল কলেজও পিজি হাসপাতালের যাত্রা শুরু টিন সেডের ঘর হতে। তিনি ইউএসটিসির যাত্রা শুরু করে টিন সেড ঘর দিয়ে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের বিশাল পরিধি ও বিরাট বিরাট অট্টালিকা। যার সুনাম আজ দেশে ও বহিঃবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি তাঁর স্বপ্নের একটি প্রতিষ্ঠান শত ষড়যন্ত্র ও বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে তিনি এটি নিজের মত করে প্রতিষ্ঠা করেন। আন্তর্জাতিক মানের সুখ্যাতি সম্পন্ন চিকিৎসক চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান ডা. নুরুল ইসলাম ইউএসটিসি এর ন্যায় বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন প্রতিষ্ঠা করেছেন তেমনি তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং দেশীয় পর্যায়ে অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ও দেশে অনেক সম্মান পেয়েছেন। তাঁকে সম্মানিত করে দেশ ও জাতি সম্মানিত হয়েছেন। একাডেমী অব সায়েন্স এ তিনি স্বর্ণপদক জয়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানী। ১৯৬৩ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদক লাভ করেন এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজে স্বর্ণপদক পেয়ে চিকিৎসা হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৮৫ তে দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে ভারতের গোল্ডেন গ্রাহক সেবা পদক, পাকিস্তানের মদিনাতুল হিকমাতর ও সেফা–ই–আতরাফ, মহাত্মা গান্ধী অহিংস শান্তি পুরস্কার, চিকিৎসা শাস্ত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের বিসি রায় পদক ২০০৩, বাংলাদেশ সরকারের সমাজ সেবা পদক ১৯৯৯ স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা প্রসার এর ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইবনে সিনা পদক ১৯৯৫, সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়।

কালজয়ী ও ক্ষণজন্মা মহান এ চিকিৎসক রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ান (এডিন) এর এমিরেটাস এডভাইজার হিসেবে প্রায় ত্রিশ বছরের অধিক সময় কাজ করেছেন। হামদার্দ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সফল ছিলেন, সময়ের বিশেষ প্রয়োজনে তিনি ১৯৫৮ সালে জাতীয় যক্ষ্মা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন করেন।

বাংলাদেশের এ ওষুধনীতি একটি শক্তিশালী জনকল্যাণমুখী ওষুধনীতি হিসেবে দেশ বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তাঁর প্রণীত এ ওষুধ নীতি বাস্তবায়নের ফলে দেশীয় ওষুধ শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যার ফলে দেশের ওষুধ শিল্প সমৃদ্ধ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধ বিদেশে রপ্তানী হয়। যা তাঁর দূরদর্শী ওষুধ নীতির সফলতা।

তিনি বাংলা একাডেমীর ফেলোশিফ মেম্বার, ইসলামিক মেডিকেল মিশনের প্রতিষ্ঠা মহাসচিব, জনসেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, আনোয়ারা নুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ট্রাস্টি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এইচ আর ভিডির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। পাকিস্তান ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস এন্ড সার্জনস এর প্রতিষ্ঠাতা কাউন্সিলর, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম এইডস কমিটির চেয়ারম্যান ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের সর্ব্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদকসহ দেশ বিদেশের বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন।

বিশ্ব নন্দিত আধূনিক (আমরা ধূমপান নিবারন করি) এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিশ্বের সবগুলো ধূমপান বিরোধী মহাসম্মেলনে তিনি আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে যোগ দেন এবং ধূমপানমুক্ত সমাজ গঠনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর এ সফল আন্দোলন পুরো বিশ্ববাসিকে ধূমপান বিরোধী ভূমিকা পালনে এবং ধূমপানের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও আইন প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছে। দেশে ও আন্তর্জাতিক মানের অনেক পদক যেমন তিনি পেয়েছেন তেমনি তিনি বিভিন্ন পদে অভিসিক্ত হয়ে সম্মানিত হয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের শতাধিক নিবন্ধ রচনা ছাড়াও তিনি ধূমপান বিরোধী একশতের মত প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

তিনি প্রায় ২৫টির মতো পুস্তক রচনা করেছেন। তাঁর পুস্তকগুলোর মধ্যে কয়েকটি মেডিকেল কলেজসমূহে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাঠ্য পুস্তক হিসেবে পঠিত হয়। এসব পুস্তকের কয়েকটি নাম আমি এখানে তুলে ধরছি।

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ : ১। এ সিমপিলিফাইড টিউবার কিউলসিস কন্ট্রোল গ্রোগ্রাম ফর ইস্ট পাকিস্তান, ২। ট্রপিক্যাল এ্যাসিনোফিলিয়া, ৩। সিম্পজিয়াম অন মেডিসিন, ৪। এ্যাসেন্‌সিয়ালস অফ মেডিকেল ট্রিটমেন্ট, ৫। মেডিকেল ডায়োগনসিস এন্ড ট্রিটমেন্ট,৬। স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কিছু কথা, ৭। হিষ্ট্রি অব আই পি জি এম আর, ৮। প্রেসক্রিপশন, ৯। প্রেসক্রিপশন অ্যান্ড প্রফেসনালস, ১০। পল্লী চিকিৎসায় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, ১১। তামাক ও ধূপমান : অভিমত– প্রশ্ন উত্তর, ১২। জীবন স্রোতে (আত্মজীবনি), ১৩। কিছু ভাবনা, ১৪। সনিক টট ইন এ্যানগলিনস্‌, ১৫। বঙ্গবন্ধু,১৬। বঙ্গবন্ধুঃ ব্যক্তিগত চিকিৎসকের দৃষ্টিতে ইত্যাদি। এসব মূল্যবান গ্রন্থ রচনা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসি (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম) এর প্রতিষ্ঠাতা। যা তাঁর অবিনশ্বর কীর্তি। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞানী, কালজয়ী ও মেধাবী চিকিৎসক চট্টগ্রামের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক নুরুল ইসলামের চরিত্রের সততা, নির্লোভ, আপোষহীন এবং অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁকে দিয়েছে আলাদা স্বাতন্দ্রবোধ। দেশে বিদেশে তিনি চিকিৎসা জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং পেয়েছেন সম্মান। তাঁকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলার ইবনে সিনা হিসেবে ডা. নুরুল ইসলামকে চিহ্নিত করা হয়। চট্টগ্রামকে তিনি ভালবাসেন এবং ভালবাসেন তাঁর জন্মভূমিকে। ফলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। প্রখর মেধাবী ও চট্টগ্রামের মানুষের আপনজন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকাস্থ তাঁর ধানমণ্ডিস্থ বাসভবন ‘গুলমেহের’ এ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাঁকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯.৪৫ মিনিটে তিনি পুরো দেশবাসীকে শোকের সাগরে নিমজ্জিত করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ক্ষণজন্মা এ মহাপুরুষের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির জন্য এবং চিকিৎসা জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। চিকিৎসা জগতের কিংবদন্তী হিসেবে ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও সংগঠক

(সংগৃহীত)

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত