
ঢাকা, ০২ এপ্রিল, এবিনিউজ : উপন্যাস, কেবল কাহিনি সর্বস্ব শিল্পমাধ্যম নয়,একই সঙ্গে তা জীবন ও জগতের অধিবাস্তবতার শিল্পকলা, এটা বোঝা যায় সম্প্রতি প্রকাশিত আহমেদ মাওলা’র ‘ময়নামতী উপাখ্যান’ পড়লে।
মননশীল প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে তার পরিচিতির কথা সবাই জানলেও আহমেদ মাওলা’র কথাসাহিত্যিক পরিচিতি অনেকটা দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেছে। তার লেখা উপন্যাস ‘অতগুন ঝরা ফাগুন দিনে’(২০১৫) কতিপয় মুখ’ মানুষ’(২০১৭) এবং ‘ময়নামতী উপাখ্যান’(২০১৮) ইতোমধ্যে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ‘ময়নামতী উপাখ্যান’ মূলত কুমিল্লার ঐতিহাসিক স্থান ও কালের আখ্যান। একাদশ শতাব্দীর সমতটের রানী ময়নামতী ছিলেন চন্দ্রবংশীয় রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী। ময়নামতী ছিলেন নাথধর্ম অনুসারি একজন সাধক। আপন সাধনায় তিনি ‘মহাজ্ঞান’ লাভ করেছিলেন। অগ্নি, জল, বায়ু তিন বস্তকে জয় করে ময়নামতী অমরতা লাভ করেছিলেন। অবাক হওয়ার মত ছিল তার ‘আড়াই’ অক্ষর জ্ঞানের শক্তি। রাজা মানিকচন্দ্রের মৃত্যুর পর পুত্র গোপীচন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উপন্যাসের কাহিনি থেকে জানা যায়, রানী ময়নামতী ধ্যানযোগে জানতে পারেন যে, আঠারো বছর বয়সে গোপীচন্দ্র যদি বারো বছরের সৈন্ন্যাস ব্রত পালন না করেন ,তবে তার মৃত্যু অবধারিত। সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত গোপীচন্দ্র ঘরে তন্বী–তরুণী স্ত্রী অধুনা–পদুনা রেখে, রাজত্ব ফেলে সৈন্ন্যাসি হতে চায়না। মন্দ লোকেরা বলতে শুরু করে, ময়নামতী চক্রান্ত করে পুত্রকে দূরে পাঠিয়ে নিজেই রাজ্য ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। শুরু হয় পুত্র–মাতার দ্বন্দ্ব, রাজবধূদের চক্রান্ত। শেষ পর্যন্ত ময়নামতী তার মহাজ্ঞানের বলে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং গোপীচন্দ্র হাঁড়িসিদ্ধাকে গুরু মেনে বারো বছরের সৈন্ন্যাস জীবন কাটিয়ে ফিরে আসে এবং ময়নামতী পুত্রে হাতে রাজ্যভার অর্পণ করে পাহাড়ের গুহায় মহাজ্ঞানের শক্তি বলে অদৃশ্য হয়ে যায়। চরিত্র চিত্রণ, কাহিনি বিন্যাসে আহমেদ মাওলা যথেষ্ট শিল্পকুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। উপন্যাসের কাহিনিতে এক ইতিহাস সম্মোহিত এক যুবকের সঙ্গে নাটকীয়ভাবে সাক্ষাৎ হবে পাঠকের, সে যুবক পাঠককে হাত ধরে নিয়ে যাবে সেই লুপ্তনগরিতে, একসময় যা ছিল অথচ এখন নেই। সেই প্রাচীন নগরিতে রোমাঞ্চকর এক মানস–ভ্রমমণের স্বাদ পাবেন পাঠক। নির্বাক ইতিহাস, সবাক–শব্দায়িত হয়ে উঠেছে আহমেদ মাওলা’র আন্তরিক কলমের ছোঁয়ায়। মোট ছয়টি অধ্যায়ে রচিত এ উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সূচনায় ছয় পংক্তির অন্তমিলের একটা পদ্য আছে, প্রাচীন পুঁথির আবহ তৈরিতে এ পদ্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। প্রথাগত উপন্যাসের কাহিনি বিন্যাস থেকে ‘ময়নামতী উপাখ্যানের’ এই আঙ্গিক বিন্যাস ব্যতিক্রম, এজন্য ভালো লেগেছে। আশা করছি অন্য পাঠকদেরও ভালো লাগতে পারে। উপন্যাসটির বহুল প্রচার ও পাঠক প্রিয়তা প্রত্যাশা করছি।
[ময়নামতী উপাখ্যান/আহমেদ মাওলা, পরিবার পাবলিকেশন, পুরানা পল্টন, ঢাকা। প্রকাশ: ২০১৮, প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ, মূল্য: একশত পঞ্চাশ।] (সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি