আহমদ রফিক, ০৫ এপ্রিল, এবিনিউজ : বেশ কিছুকাল আগের কথা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তখন উগ্র মূর্তিতে বিশ্ব শাসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছে। অবক্ষয়ে জীর্ণ (মূলত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতির কারণে), অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছু হটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিজের নাক কেটে হলেও মার্কিন আধিপত্যবাদের সমর্থনে সক্রিয়। তেমনি ফরাসি পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা।
মার্কিন প্রশাসন তখন নতুন নতুন তত্ত্ব তৈরি করছে তাদের আগ্রাসী তৎপরতার পক্ষে। যেমন—রোনাল্ড রিগ্যান বা জর্জ বুশের (সিনিয়র) ‘নয়া বিশ্ববিধান’। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সর্বাধিক রক্ত ঝরেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের শরীর থেকে—মানবিক, অর্থনৈতিক সব দিক থেকে। সে প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতি থেকে সামলে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন স্তালিনের নেতৃত্বে—পরে ঘরোয়া বিবাদ, অন্তর্দ্বন্দ্ব স্তালিনের মৃত্যুর পর। তবু দুই শিবিরব্যবস্থা তখনো অব্যাহত।
লড়াইটা চলছিল দুই শিবিরকে কেন্দ্র করে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী বনাম সোভিয়েত বলয়কে ঘিরে। এরই মধ্যে জনগণতন্ত্রী চীনের অভ্যুদয় দ্রুত জনবান্ধব সমাজব্যবস্থা শক্তিশালী করে তুলতে; অন্যদিকে সোভিয়েতের ক্লান্তিহীন, শ্রমনিষ্ঠ প্রচেষ্টা তাদের রাষ্ট্রশক্তিকে ধরে রাখতে পারলেও ভেতরে ক্ষয়, সামাজিক বৈষম্য, সর্বোপরি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বিরামহীন প্রচেষ্টার সম্মিলিত যোগফল সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন। এবং তা আদর্শত্যাগী ও পুঁজিবাদী সমৃদ্ধিতে বিশ্বাসী মিখাইল গর্বাচেভের হাত দিয়ে। তাঁর স্বদেশবিরোধিতার বড় প্রমাণ তাঁর অস্বাভাবিক আচরণ, স্বদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে হিজরত।
সোভিয়েত ইউনিয়ন সেই সুবাদে ভেঙে টুকরো টুকরো। মধ্য এশিয়ার মুসলমানপ্রধান দেশগুলোসহ একাধিক রাজ্য, রুশ ইউনিয়ন থেকে বিযুক্ত হয়ে নিজস্ব পথ ও শাসনব্যবস্থা খুঁজে নিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন মূলত রাশিয়া। তবে সে তার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে তার রাষ্ট্রশক্তির গৌরব উদ্ধারে এক পা-দুপা করে এগিয়েছে। ভাঙনের ক্ষয় পূরণ করে এখন পরিত্রাতার ভূমিকায় রুশ শাসক ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি এখন পাঞ্জা কষতে শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। বাদ যাচ্ছে না মার্কিন-মিত্রদেশগুলো। বন্ধুরাষ্ট্র ইরাককে অন্যায় আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করতে বা সমর্থক রাষ্ট্র লিবিয়ার গাদ্দাফিকে বাঁচাতে না পারলেও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শেষ মিত্ররাষ্ট্র সিরিয়াকে রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন পুতিন। আর সে কারণে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশারের পতন এখনো ঝুলে আছে। সম্ভবত এ যাত্রা রক্ষা পেয়ে যাবে সিরিয়া। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের উগ্রতার মুখেও সিরিয়া রণাঙ্গন থেকে পিছিয়ে আসছে, কারণ যা-ই হোক।
দুই.
চীন তার বরাবরের বিদেশনীতিমাফিক বেশির ভাগ রাজনৈতিক সংঘাতের ক্ষেত্রে তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। করে যতক্ষণ তার নিরাপত্তা ও স্বার্থ বিঘ্নিত না হয়। তাই মধ্যপ্রাচ্য রণকাণ্ডে চীন নিরপেক্ষ দর্শক। যদিও ইঙ্গ-মার্কিনদের সরাসরি আগ্রাসনে ইরাক দখল এবং পরোক্ষ মদদ জুগিয়ে লিবিয়া দখল। এরপর সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের উসকে দেওয়া, রণাঙ্গন তৈরি করা।
চীন বাইরের যুদ্ধকে ঘরে টেনে আনতে চায় না। তাই শেষোক্ত ক্ষেত্রে নীতিগত সমর্থন সত্ত্বেও সিরিয়া-রক্ষায় অংশ নেয়নি। লড়াইটা একাই চালাতে হয়েছে পুতিনের রাশিয়াকে। চীন তার পুঁজিবাদী অর্থনীতির ব্যাপক শক্তিশালী বিস্তারে ব্যস্ত। এখন সে বিশ্বের দুই নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি। তার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে এক নম্বরে তার অবস্থান নিশ্চিত করা। এবং তা তাদের কমিউনিস্ট শাসন কর্তৃত্ব নিশ্চিত রেখে। তার লড়াইটাও মুখ্যত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, আপাতত অর্থনৈতিক অভিধায়। পরে অন্যদিকটা ভাবা যাবে।
মার্কিন অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক বিজ্ঞজন অনেক দিন আগে থেকেই চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তির বিস্তার রোধ করতে সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্প আঁটে। তাদের মূল লক্ষ্য ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে চীনকে ঘেরাও ও অবরোধের নীতি বাস্তবায়ন। অনেকে মনে করে, এ তত্ত্বও সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতির অঙ্গন থেকে এসেছে। কেউ কেউ ‘সভ্যতার সংঘাত’ বইটির কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করে থাকেন।
বস্তুত এশিয়ায় ক্ষমতা বিস্তারের মার্কিন নীতি আজকের নয়। সেই কবে পঞ্চাশের দশক থেকে ভারত মহাসাগরে নৌঘাঁটি স্থাপন এবং আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের। সে সময় একের পর এক সামরিক চুক্তির মাধ্যমে এশিয়ায়, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও সন্নিহিত এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ছিল মার্কিন বিদেশনীতির লক্ষ্য। সিয়াটো, সেন্টো, বাগদাদ প্যাক্ট ইত্যাদি সামরিক চুক্তি প্রগতিশীল মানুষের শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দুর্বল রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে মার্কিন আধিপত্যকে সালাম জানিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু প্রগতিশীল ছাত্র যুবসমাজ সেসব দেশেও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্লোগান কণ্ঠে তুলে গর্জে উঠেছে : ‘সব রকম সামরিক চুক্তি বাতিল করো’। পূর্ববঙ্গেও তখন একই স্লোগান : ‘পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করো’। ছাত্রসমাজের পেছনে শ্রমজীবী শ্রেণির সমর্থন নেহাত কম ছিল না।
তবু ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দুষ্ট প্রচেষ্টার বিরাম ছিল না। চীন-ঘেরাওয়ের নীতি অব্যাহত ছিল। এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া তার সহায়ক শক্তি। মার্কিন পেন্টাগনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চীনবিরোধী ভারতকে পুরোপুরি এ ব্যাপারে কবজায় আনা। পাকিস্তান তো জন্মলগ্ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। এ ব্যাপারে বড় বাধা চীন সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার চীনবান্ধব নীতি।
তাকে হাতের মুঠোয় আনতে কম চেষ্টা করেনি ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। সমাজতন্ত্রী নেতা উং সানের কন্যা সু চিকে হাতের মুঠোয় এনে রাজনৈতিক খেলার পুতুল বানিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে অনেক অর্থনৈতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। দেশটি একদিকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিদ্রোহী তৎপরতায় অশান্ত, অন্যদিকে মার্কিন তথা পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবরোধে সমস্যায় আক্রান্ত।
এর মধ্যেই মিয়ানমার অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও চীনের সাহায্য সাপেক্ষে চীনবান্ধব নীতি অক্ষুণ্ন রেখে চলছিল। সম্প্রতি তাদের আধা-আত্মসমর্পণ ইঙ্গ-মার্কিন চাপের মুখে। অং সান সু চি এখন মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী, যদিও মূল ক্ষমতা সামরিক জান্তার হাতে। এর মধ্যে তাদের সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট, রোহিঙ্গা বিতাড়নের মতো অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থে। চলছে রোহিঙ্গা গণহত্যা-রাখাইন তথা আরাকান প্রদেশ নিজেদের কবজায় রাখতে। নেপথ্যে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ।
এরই মধ্যে ভারত তাদের নিরপেক্ষ বিদেশনীতির খোলনলচে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মার্কিন রাজশক্তির প্রভুত্ব মেনে নিয়েছে। বাকি রইল মিয়ানমারে পূর্ণ মার্কিন কর্তৃত্ব স্থাপন। এর মধ্যবর্তী বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের টানে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী বলয়ে নাম লেখিয়েছে। তার স্বপ্ন মার্কিন সাহায্যে বাংলাদেশকে মধ্যম অর্থনীতির দেশে পরিণত করা। তাতে বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও করপোরেট পুঁজির প্রভাব যত বাড়ুক না কেন।
বহুদিন লালিত চীন ঘেরাওয়ের মার্কিন স্বপ্ন প্রায় পূরণ হতে চলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতির রথ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে। উন্মাদ ও স্ববিরোধী কর্মকাণ্ডের নায়ক ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন হোয়াইট হাউসের মসনদে আসীন। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ইসরায়েল তোষণনীতি বর্তমান প্রেসিডেন্টের কল্যাণে এখন তুঙ্গে। ফিলিস্তিনি হত্যায় হাত রক্তাক্ত যেমন ইসরায়েলের, তেমনি পরোক্ষভাবে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের।
তিন.
তবু বিশ্ব শাসনের স্বপ্নটা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। কিউবা এখনো পদানত হয়নি। সিরিয়া সম্ভবত পুতিনের পতাকাতলে আত্মরক্ষা করে যাবে। লাতিন আমেরিকা পুরোপুরি কবজায় আসেনি হুগো শাভেজ বা আলেন্দেদের মৃত্যুর পরও। তাদের জাতিচেতনা, স্বাধীন রাষ্ট্রিক চেতনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইরান সদর্পে তার মার্কিনবিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজন্য শাসন তাদের আজ্ঞাধীন হলেও ইয়েমেন ভিন্নপথ ধরে চলছে। তুরস্ক মাঝেমধ্যে মাথা নাড়া দিচ্ছে। সেখানে মার্কিনবিরোধিতার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। লেবাননকে পুরোপুরি কবজায় আনা যায়নি।
এ অবস্থায় রুশি নায়ক পুতিনের আবার নির্বাচনে জয়লাভ তাঁর ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রকাশ (রুশি সোভিনিজম), বিচক্ষণ চীনা প্রেসিডেন্টের আজীবন ক্ষমতাসীন থাকার প্রস্তাব মাথাব্যথার কারণ তো বটেই। আমার বিশ্বাস, এসব প্রেক্ষাপটই পুতিনের রাশিয়া ঘেরাও তথা তাকে একঘরে করার পরিকল্পনা মার্কিন-ইঙ্গ-ফরাসি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির। সুযোগ ও উপলক্ষ সৃষ্টি হলো সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর কন্যা ইউলিয়ার ওপর নার্ভগ্যাস প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার ঘটনায়।
সংবাদমাধ্যমে (প্রেস মিডিয়ায়) এ ঘটনা এখনো যথেষ্ট মাত্রায় আলোড়ন সৃষ্টি না হলেও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইনে এর প্রচার কম নয়। এ দেশে কয়েকটি দৈনিকের পাতায় উঠে এসেছে কূটনৈতিক বিতাড়নের পাল্টাপাল্টি ঘটনার প্রতিক্রিয়া : ‘নািস জার্মানি ও বর্তমান পাশ্চাত্য ফারাক কোথায়?’ ‘রাশিয়ার কি উচিত শাস্তি হচ্ছে?’ সেই সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম : ‘রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্বে ঠাণ্ডাযুদ্ধের ছায়া।’ মনে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে এ আলোচনা বাড়বে। কারণ কূটনীতিক বহিষ্কারের পালা শেষ হচ্ছে না।
এর মূল ঘটনা নিয়ে আমরা আলোচনায় যাচ্ছি না যদিও এটি কূটনৈতিক যুদ্ধের প্রধান কারণ। যাচ্ছি না এ কারণে যে এ ক্ষেত্রে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ এবং অস্বীকার, সব কিছুই মৌখিক তর্কবিতর্কের। ঘটনার আনুষঙ্গিকতা যদিও রাশিয়ার বিপক্ষে তবুও তা নিশ্চিত করতে প্রমাণের প্রয়োজন। সে প্রমাণ আপাতত অনুপস্থিত। রাশিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে প্রমাণ সরবরাহ করতে দাবি জানিয়েছে। তাতে সাড়া দিচ্ছে না পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব। তাহলে কি মনে করা যায় যে কাজটা সিআইয়ের? এ ধরনের ঘটনায় তো তারা অভ্যস্ত। বিশ্বে প্রমাণ অনেক। এমনকি সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে।
আমার বক্তব্য বা প্রশ্ন : স্বদেশদ্রোহী আচরণের কারণে গুপ্তচর হত্যা বা হত্যাচেষ্টা নতুন কোনো ঘটনা নয়। আর এমন এক ঘটনা উপলক্ষে ইঙ্গ-মার্কিন নেতৃত্বে মার্কিন বলয়ের পশ্চিমা দেশগুলোর একযোগে ব্যাপক সংখ্যায় রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের বিষয়টি নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক ঘটনা বলা চলে। তাই একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে একে ‘সাজানো নাটক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনাও প্রায়ই দেখা যায়। তাই বলে যে ট্রাম্পের পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে এতকাল খবরাদি প্রকাশ পেয়েছে, সেই পুতিনের রাশিয়ার ৬০ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার এবং সিয়াটলে রুশ কনসুলেট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প? এমন ঘটনা ভাবতে পারা যায় না। এই ধারাবাহিকতায় একই রকম ঘোষণা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর।
এ ঘটনার পেছনে মস্তিষ্কচাতুর্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের। যেমনটি দেখা গিয়েছিল ইরাক আক্রমণের পেছনে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের দুষ্টবুদ্ধি—প্রচার করা হোক, ইরাকে রয়েছে জনবিধ্বংসী অস্ত্র। যে অস্ত্রের চিহ্ন মেলেনি ইরাক দখলের পর। পরে ব্লেয়ারের স্বীকারোক্তি একই সত্য প্রমাণ করেছে। কিন্তু ইরাক তো ধ্বংসস্তূপে পরিণত সংঘাতে ও সংঘাতে। পরিহাস ইতিহাসের, সর্বনাশ ইরাকি জনগণের।
তবে পুতিনকে, রাশিয়াকে একঘরে করার কাজটি কি সহজ হবে? না হোক, সাবেক ঠাণ্ডাযুদ্ধ-স্নায়ুযুদ্ধের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা তো চলতে পারে। ইতিহাসে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের উদাহরণ অনেক। হিটলার-মুসোলিনি-তোজোর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে যুদ্ধ করার পরও মিত্রশক্তির দুই প্রধান চার্চিল ও রুজভেল্ট তৃতীয় প্রধান স্তালিনের বিরুদ্ধাচরণই করেছেন। তাঁদের চক্রান্তে তখন বিভক্ত জার্মানি, অন্যদিকে কোরিয়া। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাময়িক কোণঠাসা পুতিন। কী হবে এ ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা?
যা-ই হোক, পুতিন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘২৩ দেশের কূটনীতিকদের বহিষ্কার’ করেছেন। প্রসঙ্গত বলতে হয় ট্রাম্প কি তাঁর ‘পুতিনবান্ধব’ ভূমিকা থেকে সরে এসে নিজের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন? কাদের পরামর্শে? কিন্তু পরিষদবর্গ তো সব সময় মিত্র নয়, প্রায়ই তাদের নিজ স্বার্থের বাহক, এ সত্য কি ট্রাম্পের জানা আছে? দেখা যাক এ ঘটনা কত দূর গড়ায়, কোথায় গিয়ে শেষ হয়। (কালের কণ্ঠের সৌজন্যে)
লেখক : কবি, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী