শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
logo

"বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যুগ যুগ ধরে প্রবাহমান"

মশিউর রহমান,১৮ এপ্রিল,এবিনিউজ :বাঙালি জাতির বাতিঘরের আদর্শ যুগ যুগ ধরে প্রবাহমান।তিলে তিলে বাঙালির হৃদয়ের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন পরাধীনতার সকল বেড়া ভাঙার মন্ত্র।পলাশীর বিয়োগান্তে যে সূর্যের কবর রচিত হয়েছিল তাঁরই জ্বলন্ত মন্ত্রে সেই সূর্য নতুন করে উদিত হয়েছিল ৭১ এর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়।

যে মন্ত্রে প্রদীপ্ত হয়ে বাঙালিরা পায় স্বাধীন দেশ,যে দেশ আজ তাঁর সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশের পথে। শকুনের দল শত চেষ্টা করলেও ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পারেনি,পারবেও না কেয়ামত পর্যন্ত নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সৃষ্টাকে। দৈহিক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলেও মৃত্যু বঙ্গবন্ধু যেন তার আদর্শের বার্তা পৌঁছে রেখেছে কেয়ামত পর্যন্ত। তাই তো সমগ্র বিশ্ব যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করে যাচ্ছে ইতিহাসের মহান স্রষ্টাকে।

বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল টুঙ্গিপাড়ায় কাটে। আঁকাবাঁকা নদীর খেয়ালী চলা আর হাওড়-বাঁওড়ের সাথে মিশেই চিনে ফেলেছিলেন বাংলার অবারিত শস্য শ্যামলে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ।

বাংলার মুক্ত আলো-বাতাসে সিক্ত হয়ে বেড়ে ওঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই শিশুকাল থেকেই অবলোকন করেছেন গ্রামীণ বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালো লাগা-ভালবাসাকে। গ্রামের মাটি আর মানুষের প্রতি দূর্বলতা ছিল পৈত্রিকসুত্রে।

জীবন থেকে নেয়ার মতোই শৈশব থেকে অবলোকন করেছেন জমিদারদের অত্যাচার, শোষণ আর নির্যাতন। এসব দেখেই হয়ে ওঠেন অসাম্প্রতিকতার প্রাণ প্রতীক। চোখে দেখা মানুষের এসব দুঃখ, কষ্ট তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই তো ন্যায়ের পথে যুদ্ধ করতে গিয়ে জীবনে কোনো শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেননি, মাথানত করেননি।

ভাই বোনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় সন্তান। ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সময়ই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতার সংস্পর্শে আসেন। তখন চলছিল বাংলার ইতিহাসে উত্তাল সময়। ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছিল বাংলার বুক। এখান থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বিকাশ হয়েছিল।

১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে সাহসী ভূমিকায় বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির দাবি আদায়ে আস্থাবান করে তুলেছিল। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে একক নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা তিনি এভাবেই ধাপে ধাপে অর্জন করেছিলেন।

পাকিস্তানের নির্যাতন, অসংখ্য মামলা, বারবার কারাবরণ আর ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোনো দিন বাংলার মানুষের অধিকারের প্রশ্নে থমকে দাঁড়ান নি।

ঝাঁড়ফু মাখা দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান জোর করে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করতে চাইলেন। জমে থাকা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন বাঙালি জাতি। আন্দোলনের পুরোভাগে নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে। ৪৬, ৪৭, ৫২, ৫৪, ৬২, ৬৬ আর ৬৯-এর পথ পেড়িয়ে ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিজয় সবই ছিল বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাসের একেকটি মাইলফলক। সেই সংগ্রাম আর প্রেরণার অক্সিজেন ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জয় বাংলা মন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে উঠেছিল একটি নিপীড়িত পরাধীন জাতি। যার ৭ই মার্চের নির্দেশ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। ৭ মার্চেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণী নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে বাঙালিরা।

৭২ এর ১০ জানুয়ারি দেশ ফিরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে আত্মনিয়োগ করেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ৭১ এর পরাজিত শক্তি, মানবতার শত্রু, ঘৃণ্য ঘাতকের দল ৭৫ এর ১৫ আগস্ট মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। এর জন্য জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনো কিছুই পরোয়া করেননি। শত যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট-বেদনাকে সহ্য করেছেন হাসি মুখে। বাংলা, বাঙালি জাতিসত্ত্বা, বঙ্গবন্ধু সবই এক। সারাবিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত ও মুক্তিকামী মানুষের মাঝে যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আরো উঁচু করতে হলে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দীক্ষায় দীক্ষিত হতে হবে।

লেখক:সদস্য,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কৃষি ও সমবায় উপ-কমিটি। ও

সাধারণ সম্পাদক,বঙ্গবন্ধু পরিষদ,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত