
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, এবিনিউজ : শেষ পর্যন্ত ঢাকার শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে জোয়ারি আন্দোলন সৃষ্টি করেছে। তাদের দাবি, চাকরিতে কোটাপদ্ধতির প্রাধান্য কমিয়ে আনতে এর সংস্কার। সংস্কার মূলত মেধার প্রতি সুবিচার করতে, কোটাব্যবস্থা একেবারে তুলে দিতে নয়। আন্দোলন শুরুর পর ক্রমে এর শক্তির ব্যাপকতায় মহানগর ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ একাংশ অচল হয়ে পড়ার মতো অবস্থা। এ বদ্ধাবস্থার চাপ ছড়িয়ে গেছে নগরের অন্যদিকে—প্রবল যানজটে তার প্রকাশ। এক ঘণ্টার পথ দশ ঘণ্টায় যাওয়া অথবা যেতে না পারা। হাসপাতালমুখো রোগীর কী ভোগান্তি! এমনই অবস্থা আরো অনেকের।
এর দায় কার বা কাদের? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে নেওয়ার আগে দেখা দরকার কেন এ অবস্থার সৃষ্টি হলো। সে ইতিহাস ছোট হলেও আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতিবাচক দিকের বিচার-বিশ্লেষণে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোনো আন্দোলনই হঠাৎ করে আকাশ থেকে নেমে আসে না, তার একটা পূর্বচিত্র থাকে, প্রেক্ষাপট থাকে, সংগত বা যুক্তিসম্মত দাবিদাওয়া অনাদায়ের ইতিহাস থাকে। সেদিকে নজর না দিলে যত সমস্যা।
এখানে কিছুটা হলেও তেমন ইতিহাস রয়েছে। হঠাৎ করে সামান্য কটা দিনের আন্দোলন নিয়ে, এর গুরুত্বের কারণে জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে, এমনকি অপেক্ষাকৃত কম পাঠকপ্রিয় দৈনিকগুলো এই আন্দোলনের বয়ানে বা খবরে বা বিচার-ব্যাখ্যার প্রতিবেদনে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরাট করে রেখেছে। বিজ্ঞদের, শিক্ষাবিদদের লেখায় নানা তথ্য উঠে এসেছে। এমনকি আন্দোলন স্থগিত ঘোষণার পরও চৈত্রসংক্রান্তির দিনে শিয়রে-সংক্রান্তির উপলব্ধি নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন, ইতিহাস ঘেঁটেছেন।
আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত এসেছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এই পরিপ্রেক্ষিতে যে চাকরিতে আর কোটাপদ্ধতি থাকবে না। সংসদে এ ঘোষণার পর আন্দোলনকারী নেতৃত্বের এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ খুব একটা স্পষ্ট নয়, সংবাদপত্রে তেমন প্রকাশ নেই। এ বিষয়ে আমার প্রথম প্রশ্ন—তারা কি চেয়েছিল যে কোটাপদ্ধতি একেবারে উঠে যাক? না চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর এ প্রশ্নে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার। না হলে এ বিষয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দেবে, আবার হবে বিক্ষোভ।
কারণ প্রথমত সংবিধানে কোটা প্রথার ব্যবস্থা রয়েছে। সেটা তুলে দিতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আর কোটাপদ্ধতির বিলোপ কিছু সামাজিক সমস্যাও তৈরি করবে। তার প্রধানত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য এবং পিছিয়ে থাকা নারীসমাজের জন্যও। তা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশ্নটি তো আছেই। এসব নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে। বলিষ্ঠ একমুখী আন্দোলন একাধিক ধারায় বিভক্ত হবে। এর সুফল যাবে সরকারের দিকে, শিক্ষার্থী তথা আন্দোলনের দিকে নয়।
এ সমস্যার দিকে চোখ রেখে আন্দোলনকারীরা বর্তমান ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কী চায়, কতটুকু সংস্কার চায়, সেসব নিয়ে তাদের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে, সেখানে অটল থাকতে হবে। এখানে কোনো অস্পষ্টতা, অস্বচ্ছতা থাকলে চলবে না। এটা অবিলম্বে জানান দিতে হবে। একটি কথা এ প্রসঙ্গে মনে হচ্ছে যে শিক্ষার্থী-তরুণদের জমাট আন্দোলনের দৃঢ়তা ও ব্যাপকতা দেখে হয়তো প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে হঠাৎ করেই কোটা সংস্কারের দিকে হাত না বাড়িয়ে দুম করে কোটা প্রথা তুলে দেওয়ার কথাই বলে বসলেন। জানি না এ বিষয়ের সাংবিধানিক জটিলতার বিষয়টি তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও উপদেষ্টারা তাঁর গোচরে আনবেন কি না, নাকি দাবিটি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুন্তির মতো ঝুলে থাকবে বছরের পর বছর।
তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য আশুপ্রয়োজন দাবিগুলো কাটছাঁট করে মৌলিক প্রয়োজনের যুক্তিগত দিকগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসা এবং একটি যুক্তিসংগত সমঝোতায় পৌঁছানো। সে ক্ষেত্রে মেধার প্রতি গুরুত্বের দিকটি যে প্রাধান্য পাবে তা বলা বাহুল্য। মুক্তিযুদ্ধের কোটা একাধিক কারণে কমে আসতে পারে। তা বিশেষত, অন্তত এ কারণে যে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের একাংশ এখন যথেষ্ট বিত্তবান। বিত্তের সুযোগে দুর্মূল্য শিক্ষা কেনা তাদের পক্ষে কঠিন নয় এবং তা কিছুটা ঘটছেও। বস্তুত মধ্য বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা নিম্নবর্গীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মান্তর সন্তানদের জন্য বরং সংরক্ষণ ব্যবস্থা দরকার। তেমনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য।
দুই.
পূর্বোক্ত দায়ভাগ ও আন্দোলনের অবাঞ্ছিত দিকের পূর্বাপর ঘটনা সম্পর্কে কিছু কথা বলা বোধহয় দরকার পাঠকদের সুবিধার্থে। প্রথমত, কোটা প্রথা চালু হয়েছিল ১৯৭২ সাল থেকেই, ব্যাপক পরিধিতে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে কোটাব্যবস্থার বিশদ বিচারে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে নাকি ২৫৮ ধরনের কোটা সুবিধা বিদ্যমান (কজন তার খবর রাখে)? সেই কোটা থেকে নিয়োগ ৫৬ শতাংশ, মেধাবিচারে ৪৪ শতাংশ। অনুমান করা যেতে পারে এর ফলে আমলাতন্ত্রে, পোশাগত দিকে তথা সরকার পরিচালনায় মেধার কিছুটা অভাব ঘটবে। সেটা কি একটি দক্ষ রাষ্ট্রযন্ত্র গঠনের পক্ষে সঠিক বিবেচনা? আসলে তখন একাত্তরের আবেগ প্রবল হয়ে উঠেছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা রেখেও বলতে হয় তাঁদের জন্য ধার্য কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কিছুটা কমিয়ে অন্যভাবে কি তাঁদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যেত না? সেটা হয়নি। ইতিমধ্যে শিক্ষার হার বেড়েছে, মেধাবীর সংখ্যাও বেড়েছে, বেকারত্বের হার বেড়েছে, মেধাবীদের কেউ কেউ হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে মেধা বিক্রি করতে শুরু করেছে; যত দিন গেছে, বছর গেছে, এই ধারা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে কি দেশের শাসনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, পেশাজীবিতার উত্কৃর্ষে টান পড়েনি, অধোগতি হয়নি এসব দিকে? অস্বীকার করা সম্ভব হবে না। এতে সমাজের ক্ষতি, রাষ্ট্রের ক্ষতি নিঃসন্দেহে হয়েছে।
প্রসঙ্গত একটি অপ্রিয় সত্যের কথা বলি, এই যে এখন শিক্ষার মান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গুণগত মান, একইভাবে চিকিৎসক-প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত মানের (নিম্নমান?) কথা বারবার উঠে আসছে আলোচনায়, সংবাদপত্রে, টিভিতে—এসবে কোটা প্রথার কি কোনো অবদান নেই? আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, কোটাপদ্ধতি যদি সঠিক বলে মেনেও নিই, তাহলে পূর্বোক্ত সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও জনসংখ্যার পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে তাতে সংস্কারের প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। তাই শিক্ষার্থী ও শিক্ষাজীবন শেষ করা যুবকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, ক্রমে তার উত্তাপ বেড়েছে। একটি ভিন্নদিকের কথা উল্লেখ করি এ প্রসঙ্গে—যে কথা একটু আগে বলেছি মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংস্কারের প্রশ্নে; লক্ষ্য করছি সাবেক সচিব ড. আকবর আলি খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু আমার সন্তানদের জন্য কোটা দাবি করিনি।’ ঠিক এ কথাটিই একটু বিশদ পরিধিতে উল্লেখ করেছিলাম কোটার প্রয়োজনহীন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা সুবিধা প্রসঙ্গে। তাই সেখানে সংস্কারের দাবি যুক্তিহীন নয় মোটেই।
এমন অনেক ঘটনা বিভিন্ন খাতেও সত্য। তাই কোটা সংস্কারের দাবি কোনো দিক থেকে অযৌক্তিক নয়। বরং আমি বলব, কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন কিছুটা দেরিতেই শুরু হয়েছে। বেকারত্বের যন্ত্রণা, মেধার প্রতি অবিচার ইত্যাদি কারণে বছর কয়েক আগেই বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে শুরু সুস্পষ্ট বিক্ষোভ, যা ধারাবাহিকতার টানে বর্তমানে বিস্ফোরক আন্দোলনে পরিণত। ঠিক যেমন ঘটেছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি নিয়ে ১৯৪৭ সালের শেষ দিকে ক্ষোভ, সীমাবদ্ধ আন্দোলন (১৯৪৮, ১৯৫০), অবশেষে বিস্ফোরক বায়ান্ন।
সময়ের এক ফোঁড়ে অবহেলার পরিণাম প্রায় তিন ফোঁড় ছাড়িয়ে বহু ফোঁড়ের ভিন্ন চরিত্রে পৌঁছে যায়। যেমন ঘটেছে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার না করায় হতাশাগ্রস্ত যুবক-শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ আন্দোলনের প্রকাশ।
এ পর্যন্ত এ বিষয়ে এক ডজনেরও বেশি লেখা পড়েছি বিশিষ্টজনদের। সবার লেখায় একই সুর, ‘যৌক্তক আন্দোলন’, ‘ন্যায্য দাবির প্রতি অন্যায্য শক্তি প্রয়োগ’ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে চড়া সুরে বিশ্বাসীদের লেখায় চড়া শিরোনাম। এ আন্দোলন দ্রুত উচ্চতম শিক্ষায়তনে ছড়িয়ে প্রচণ্ড শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে। শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন তো ন্যায্য সংস্কার দাবির পরিণাম, এক কথায় কোটার হার কমিয়ে মেধার হার বৃদ্ধি সমাজবাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে।
অবস্থাদৃষ্টে বিচক্ষণ, দূরদর্শী পদক্ষেপ ছিল তাৎক্ষণিক আলোচনা সরকারি ও আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের। কোনো এক রকম গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসত, যদি উভয় পক্ষ অনড় না হয়ে যুক্তির ওপর নির্ভরশীল হতো। তার বদলে কী ঘটল, সরকারপক্ষে শক্তি প্রয়োগ, তাদের সহায়তায় সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন। সেই সঙ্গে ক্ষমতার ঐতিহ্যধারায় আন্দোলনকারীদের ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী’ এবং ‘জামায়াত-শিবির’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলো কারো কারো বক্তৃতা-বিবৃতিতে। এ কাজটি কি ঠিক ছিল?
এ ঐতিহ্য রাজনীতি ক্ষেত্রে কায়েমি স্বার্থপন্থার, এ ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ প্রত্যাশিত নয়, যুক্তিসংগতও নয়। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার ওপর বিনা উসকানিতে পুলিশের আক্রমণ (টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ইত্যাদি) কি যুক্তিসংগত ছিল, না এর প্রয়োজন ছিল। এরপর যথারীতি সহিংসতার ঘটনা, উপাচার্যের ভবনে অবাঞ্ছিত ভাঙচুর। তাতেও দেখা গেছে কিছুসংখ্যক মুখে কাপড়বাঁধা বা মুখোশধারীর দুর্বৃত্তপনা।
এরা কারা? এরা সাধারণ বিক্ষোভকারী ছাত্র হওয়ার কথা নয়। পাকিস্তান আমলে, বিশেষত ভাষা আন্দোলনে সংগ্রামীদের চরিত্র হননের ভিন্নমাত্রিক ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি ঘটেছে পুলিশে প্ররোচনাহীন তৎপরতা (একুশ ফেব্রুয়ারিতে গুলি, এমনকি বাইশ তারিখেও)। এসব ঘটনা রাজনীতির ও শাসনযন্ত্রের চিরাচরিত রীতি। তাই আন্দোলনকারীদের মতো আমাদেরও দাবি, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ‘চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার’, সেই সঙ্গে স্বভাবতই প্রতিবেদন প্রকাশও অনিবার্য ঘটনা। কিন্তু কবে, কত দিনে? তা আবার অনির্দিষ্টকাল যেন বাক্সবন্দি না থাকে, প্রধানমন্ত্রী সেদিকে নজর রাখবেন—এমন দাবি নিঃসন্দেহে যুক্তিসংগত। বিস্ফোরক কোটা আন্দোলন পকেটে রেখে দেওয়া বলা বাহুল্য বিপজ্জনক। সমস্যার সমাধান না হলে হয়তো বা অধিকতর শক্তিমান বিস্ফোরণ দেখা দিতে পারে। ইতিহাসে এমন নজির কম নেই।
তিন.
এ আন্দোলন উপলক্ষে সংঘটিত কয়েকটি বিষয়ের উদ্ঘাটন জরুরি। যেমন শান্তিপূর্ণ মিছিলে অশান্তি ঘটানোর জন্য দায়ীদের বিচার; ভাঙচুর, মাস্তানিতে তৎপরদের শনাক্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। সর্বোপরি কোটা প্রথা এ মুহূর্তে পুরোপুরি বাতিল নয়, সংস্কারের উদ্দেশ্যে নির্দেশের প্রতিবেদন হাতে নিয়ে ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক এবং যুক্তিসংগত সমাধানে পৌঁছানো।
যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রযন্ত্রের নীতিগত কর্তব্য যেকোনো সমস্যার সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করা, শক্তি প্রয়োগ সেখানে অবাঞ্ছিত, তাতে সমস্যা বাড়ে, কখনো ভাষাশহীদ বা নূর হোসেনদের তৎপরতা বাড়ে। শুরুতে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে একটি কথাই বলতে হয়, পূর্ব ধারামাফিক এ আন্দোলনের বিষয়ে সরকারপক্ষের অবাঞ্ছিত উদাসীনতা ও অবহেলা, দ্বিতীয় দায় পুলিশের হঠকারিতা বন্ধ না করা, যা আমরা আড়াই দশকের পাকিস্তানি শাসনামলে দেখে এসেছি।
সমাজের সংগত দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন দেখা দেবেই, কখনো তা শাসনযন্ত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত বিস্ফোরক চরিত্রে। দায়টা শাসকশ্রেণির—গণতন্ত্রী বা স্বৈরতন্ত্রী বা একনায়কী যে ধারারই হোক। সদিচ্ছা ও শুভবুদ্ধি, সেই সঙ্গে যুক্তিবাদী চেতনা সব সমস্যার সমাধান ঘটাতে পারে। এ ক্ষেত্রেও আমরা তা প্রত্যাশা করব।
সব শেষে একটি দৈনিকের নিবন্ধ শিরোনামের (‘তরুণেরা কেন ফিরে ফিরে আসে?’) জবাবে বলি—তারুণ্যে যৌবনে যে গভীর আদর্শনিষ্ঠ থেকে, স্বার্থবুদ্ধি বা বৈষয়িক চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায়—সংসারজীবনে তা দেখা যায় না। তাই তরুণ বা যুবকরাই স্বদেশপ্রেম বা সমাজ বদলের ডাকে নিঃস্বার্থ লড়াইয়ে নামতে পারে, প্রয়োজনে প্রাণ দিতে পারে, মুক্তিকে বা যেকোনো দাবিকে ছিনিয়ে আনতে পারে (যদিও সর্বদা তা ঘটে না, প্রাণদান বৃথা যায়)।
আদর্শের জাদুবাঁশির সুরে তাই তরুণ-যুবকরাই সমস্যার সূচনালগ্নে সাড়া দেয়, আপ্রাণ চেষ্টা চালায় লক্ষ্যে পৌঁছতে। যেমন একাত্তরে দেখা গেছে লক্ষাধিক তরুণকে (বিনা নির্দেশেও) স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণায় গেরিলা যুদ্ধে বা অনুরূপ তৎপরতায় নাম লেখাতে, প্রশিক্ষণ নিতে, রণক্ষেত্রে বা আমবুশে প্রাণ দিতে। এটাই তারুণ্যের বা যৌবনের স্বাভাবিক ধর্ম, কিছু ব্যতিক্রমের মধ্যে এটাই সত্য।
আমরা আশা করব, কোটা সংস্কারের যথাযথ বাস্তবায়নে সরকার সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেবে। সমস্যাটিকে, তরুণদের সংগত দাবিটিকে ঝুলিয়ে রাখবে না। (কালের কণ্ঠ থেকে সংগৃহীত)
লেখক : কবি, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী