বিচিত্রা সেন, ২০ এপ্রিল, এবিনিউজ : সবেমাত্র মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে সৌখিনতার বশে একটা কলেজে জয়েন করেছি। চারপাশের অপূর্ব প্রকৃতি আমাকে মাতোয়ারা করে দিলো। গল্প– উপন্যাসের নায়িকাদের মতো পণ করে ফেলতে চাইলাম এ গ্রাম ছেড়ে আর আমি কোথাও যাবো না। জীবন মরণ এখানেই কাটিয়ে দেবো। চঞ্চল প্রজাপতির মতো অপরূপ প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত কলেজটাতে ঘুরে বেড়াতাম। বাস্তবে শিক্ষক হলেও চলাফেরায় তখনো ছাত্রী ছাত্রী ভাব। কলেজের সহকর্মীরা অল্প কয়েকদিনেই বুঝে ফেললো আমি খুবই চঞ্চল, হাস্যময়ী, আবার স্পষ্টবাদীও ভয়ানকভাবে। সবাই খুব আদর করতো, প্রিন্সিপ্যাল স্যারের আদরটা ছিল খুব বেশি। বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি তাঁর। এমনিতে রাশভারী, কিন্তু তাঁর আচরণে, কথাবার্তায় স্নেহটা ঠিকই টের পেতাম।
একদিন কমনরুমে বসে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছি সহকর্মীরা, ঠিক তখনই পিওন এসে বললো, “ম্যাডাম, আপনাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন।” একটু অবাক হলাম, এসময় তো স্যার কখনো ডাকেন না! ব্যাপারটা কী? সবাই একসাথে বলে উঠলো, “যাও যাও, দেখো আবার কী দায়িত্ব পড়ে।”
কিছুটা উৎকণ্ঠা নিয়ে আমি দ্রুত পা বাড়ালাম স্যারের রুমের দিকে। “স্যার আসবো?” পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে বললাম আমি। স্যার একটু মুচকি হেসে বললেন, আসো। “স্যার আমাকে তুমি করে বলতেন,কারণ তাঁর ছেলে মেয়েও আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। স্যারের সামনে বসতেই স্যার ইশারায় পিয়নকে বেরিয়ে যেতে বললেন। আমার বুক তখন দুরু দুরু করছে।কী বলবেন স্যার! কী এমন করলাম আমি! স্যার একটু মুচকে হেসে আমাকে বললেন, তোমার একটা চিঠি এসেছে, তাও আবার নীলখামে।” আমি তো বোকা বনে গেলাম। অনেক প্রশ্ন মোকাবেলা করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু এমন একটা খবরের জন্য বিন্দুমাত্রও প্রস্তুতি ছিল না। হতচকিত আমি প্রশ্ন করলাম, “স্যার, কে লিখেছে? ”স্যার হেসে বললেন, আমি কী করে জানবো? তুমিই তো জানবে।” বলেই নীল খামটা আমার হাতে তুলে দিলেন। হাতে নিয়ে দেখলাম নিজহাতে বানানো নীলখাম। উপরে খুব সুন্দর হাতের লেখায় আমার নাম ঠিকানা। কিছুটা লজ্জা, কিছুটা বিস্ময় নিয়ে স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। নীলখামের উপর সুন্দর হাতের লেখা আমাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে! কে লিখেছে এ চিঠি? কী লিখেছে চিঠিতে?
আমাদের কমনরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো,“স্যার কেন ডেকেছিলেন?” আমি সত্য গোপন করার বৃথা চেষ্টা করে বললাম, “এমনিতে,এমনি গল্প করতে।” কিন্তু আমার হাতে থাকা নীল খাম হঠাৎ রেবেকা ম্যাডামের চোখে পড়ে গেলো। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন,এই, “সবাই দেখুন ম্যাডামের হাতে নীল খাম।” আর কি! যা ঘটার তাই ঘটলো।সবাই এক সাথে যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার হাতের উপরে! এটা কে পাঠালো? আমি খামটা ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বললাম, “আমার এক আত্মীয়।” সবার চোখ ছানাবড়া! আত্মীয়রা বুঝি আজকাল নীলখামে চিঠি পাঠায়? আমি কপট গাম্ভীর্য এনে বললাম, “হুম।”
এরপর কীভাবে যে সে চিঠি অক্ষত রেখে আমি বাড়ি ফিরেছিলাম সে শুধু আমিই জানি।
বাড়ি ফিরে বুক ঢিব ঢিব, কে লিখেছে এ চিঠি? এত সুন্দর নীল খাম,এত সুন্দর হাতের লেখা। আমি তো মুগ্ধই হয়ে গেলাম। কিন্তু চিঠি খোলার মতো পরিবেশ পাচ্ছিলাম না। মা, ঠাকুরমা, বৌদি, দাদা, ভাইপো, ভাইঝি… এত এত মানুষের ভীড়ে কী করে খুলি আমার জন্য যত্নে বানানো নীল খামের ভেতরে সযতনে লুকায়িত ওই গোপন পত্র? খুব কৌতূহল, খুব উৎকণ্ঠা আমাকে কাহিলও করে ফেলেছিল বলা যায়। শারীরিক ক্লান্তি আমাকে কিছুটা গ্রাস করলেও মানসিকভাবে ছিলাম বেশ চনমনে। এত সুন্দর করে যে চিঠি পাঠাতে পারে,না জানি সে দেখতে কেমন! নিশ্চয় খুব সুদর্শন হবে, সেই সাথে রোমান্টিক। এমনটাই ভেবে যাচ্ছিলাম আমি। একবার ভাবলাম ওয়াশরুমে গিয়ে চিঠিটা পড়ে আসি। কিন্তু ব্যাপারটা কেমন ছেলেমানুষী মনে হলো। হঠাৎ মাথায় এক বুদ্ধি এলো, আমি বাসায় এতটা সময় নষ্ট করছি কেন? আমার জানের জান প্রিয় বান্ধবী আঁখির বাসায় চলে গেলেই তো পারি। ওখানে দুজনে মিলে বেশ আয়াস করে নীলখামের বিশেষ চিঠিটা পড়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ক্লান্ত শরীরেই নীল খামের সম্মোহনে ছুটলাম আঁখির বাসার দিকে।
আঁখির বাসায় পৌঁছাতেই সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। আঁখি তো ভীষণ অবাক।” কি রে তুই! এ সন্ধ্যাবেলায়?” বিস্ময়ে চোখ কুঁচকে বললো সে।আমি বললাম,” হুম, একটা জরুরি দরকার আছে।” বলেই সোজা ওর রুমে চলে গেলাম। খালাম্মা এবং খালুও কিছুটা অবাক হলেন আমাকে দেখে। কারণ আমি সন্ধ্যায় কখনো বাসা থেকে বের হই না। যাই হোক উনারা আমাকে বসতে বলেই উনাদের রুমে চলে গেলেন। এবার আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আঁখিকে বললাম,” শোন, জরুরি কথা আছে।” আঁখি আবার আমার বিপরীত চরিত্র। খুব গম্ভীর,হাসে কম, যা বলে বুঝে শুনে বলে। তাছাড়া আমার সব কাজের পরামর্শদাত্রী সে।ও চিরাচরিত গম্ভীরমুখে বললো,” বল,কী হয়েছে।” আমি লজ্জারাঙা মুখে নীলখামটা বের করে ওর হাতে দিলাম। বললাম,” এটা কে যেন আমার নামে পাঠিয়েছে কলেজের ঠিকানায়।” সে খুব তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে খামটার দিকে তাকালো, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলো হাতের লেখাগুলোকে, তারপর হতাশ স্বরে বললো,” আমাদের কোনো ফ্রেন্ডের লেখা বলে তো মনে হচ্ছে না।” আমি বললাম,” আরে না,আমাদের ফ্রেন্ড কেউ না। ওরা কেউ কি আমার নতুন জয়েন করা কলেজের ঠিকানা জানে নাকি?” তারপর চিরকালের অধৈর্য আমি বললাম,” উফ! চল তো দেখি চিঠিতে কী লেখা আছে।” নীলখামটা ওর হাতে ছিল, চিরকালের শান্তশিষ্ট আঁখি বিন্দুমাত্র অস্থিরতা না দেখিয়ে খুব যত্ন করে খামের মুখটা ছিঁড়লো। তারপর চিঠিটাকে যত্ন করে বের করে আনতে গিয়ে দেখা গেলো মিষ্টি সুবাসযুক্ত গোলাপের পাঁপড়ি বেরিয়ে এলো। আঁখি অস্ফুট স্বরে বললো,” বাহ! রুচি আছে ছেলেটার। দেখ, নীলখামের ভেতরে নীলকাগজের পত্র।” আমি তাড়াতাড়ি ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলাম,আঁখিও ঝুঁকে এলো চিঠিটার দিকে। চমৎকার এক নীল কাগজে সুন্দর হরফে লেখা ছোট একটা চিঠি। চিঠিটা কোণাকুণিভাবে লেখা–
সুচরিতাসু, আমাকে তুমি চিনবে না। চেনার কথাও নয়। আমি তোমার চেনাভুবনের বাইরের এক পথহারা পথিক।পথ হারিয়েছি তোমার অসাধারণ রূপমাধুরীতে।তোমার কলেজে সেদিন তোমাকে দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম।তুমি কি এ জগতের কেউ? নাকি স্বর্গ থেকে নেমে আসা অঞ্ঝরী? আমার কাছে এখনো অরক্ষিত এক অমীমাংসিত প্রশ্ন।কোনো ভনিতা ছাড়াই তোমাকে জানাতে চাই,আমার জীবনে তোমাকে বড় বেশি প্রয়োজন।
তোমার রূপ এবং মেধায় আমি বিমোহিত। আমার পরিচয় নিচে পাঠালাম। যদি আমাকে তোমার জীবনে আসার সুযোগ দাও তবে আমার এ জনমটা ধন্য হয়ে যাবে।
বিঃ দ্রঃ— যদি আমার সাথে পরিচিত হতে চাও তবে নিচের ঠিকানায় জানাবে।
নিচে ছেলেটির নাম এবং অফিসের ঠিকানা দেওয়া আছে। কি এক অদ্ভুত ভালো লাগায় আমার মনটা ভরে গেলো। কি অল্প কথায় কত বিশাল একটা কথা বলে দিলো। আমাকে সে বিয়ে করতে চায়! আবার কোনোরূপ লুকোচুরি নেই, অফিসের ঠিকানাও দিয়ে দিয়েছে। আমি আঁখির দিকে তাকালাম, দেখলাম, ওর মুখেও প্রসন্নতা
বললো,” ছেলেটা তো বেশ ভালো চাকরি করে। তাছাড়া এত বড় কোম্পানির ম্যানেজার হতে যোগ্যতা লাগে কিন্তু।” আমিও মাথা নাড়লাম, তবে বলে দিলাম,” আমি কিন্তু ওকে চিঠি টিঠি লিখতে পারবো না।” আঁখি বললো,” আচ্ছা, তোকে লিখতে হবে না। আমিই লিখে দেবো তাকে নিউমার্কেট আগামী সপ্তায় আসতে। নিচে তোর নাম দেওয়া থাকবে। আঁখির সিদ্ধান্তের উপর আমার অগাধ বিশ্বাস। আমি জানি ও যখন বলছে, তখন ছেলেটা ভালো হবে। তাছাড়া মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি, এবার তো আর পড়ালেখার অজুহাতে বিয়ে ঠেকাতে পারবো না!
এরপর এক সপ্তাহ ধরে দুই বান্ধবীর কত ফিসফাস, কত শলা পরামর্শ! আমি আঁখিকে বললাম,” আচ্ছা, ছেলেটাকে যদি আমার পছন্দ না হয়।” আঁখি বললো, এত রোমান্টিক করে যে চিঠি পাঠাতে পারে, তাকে তোর পছন্দ না হয়ে পারবে না। সে দারুণ হ্যান্ডসাম এক যুবক হবে। আর জানিস না, বড় কোম্পানীগুলোর ম্যানেজাররা দারুণ সুদর্শন হয় দেখতে।” আঁখির কথায় আমি আশ্বস্ত হই। কারণ ও আবার আমার চেয়ে সবকিছু ভালো বুঝে। আমাদের এসব কথাবার্তা আমরা দুজন ছাড়া তৃতীয় আর কেউ জানে না। ছেলেটার দেওয়া ফোন নাম্বারে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো,হ্যাঁ,অভিক চৌধুরীই এ কোম্পানীর ম্যানেজার এবং তিনি এখনো অবিবাহিত। একবার ভাবলাম অফিসে গিয়ে দূর থেকে দেখে আসি পত্রলেখককে। কিন্তু ওদের অফিস শহরের শেষ সীমানায়। তাছাড়া আঁখি বললো এভাবে পাত্র দেখতে গেলে পাত্রীকে বেহায়া ভাববে। এরই মধ্যে আঁখির লেখা চিঠির উত্তর এলো রবিবার সকাল এগারোটায় আমাদের নীলখামওয়ালা নিউমার্কেট ফটোমেক্স এর সামনে আসবেন।জায়গা হিসেবে ফটোম্যাক্স বাছাই করার কারণ ও দোকানের এবং আশেপাশের সবাই আমাদের পরিচিত।কোনো উল্টাপাল্টা টাউট হলে তাকে মারও লাগানো যাবে।
শনিবার বিকেল থেকে দুই বান্ধবীর সে কি স্নায়ুচাপ! আচ্ছা কাউকে না জানিয়ে যে ছেলেটির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি এটা কি ঠিক হচ্ছে? ছেলেটি ভালো না হলে? আঁখি বললো,” আরে আমরা তো নির্জনে কোথাও যাচ্ছি না, শত শত মানুষের ভীড়ে শুধু ছেলেটিকে একবার দেখতে যাচ্ছি,বিয়ে তো আর করতে যাচ্ছি না।যদি ছেলেটাকে ভালো লাগে তবে সোজা ওর ঠিকানা পরিবারকে জানানো হবে। ওরাই খবর নিয়ে দেখবে সব। একজনের সাথে পরিচিত হতে তো দোষ নেই।” ওর কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। এবার মহা টেনশন কী পরবো সেটা নিয়ে! শাড়ি, নাকি সালোয়ারকামিজ? আঁখি ভেবেচিন্তে বললো,” শাড়ি পরতে হবে,নীল শাড়ি।তার সাথে নীল টিপ, নীল চুড়ি, নীল মালা, নীল ব্লাউজ, নীল ব্যাগ। আমিও মনে মনে তেমনটাই ভাবছিলাম। খুব একটা কষ্ট করতে হলো না। বৌদির শাড়ি, ব্লাউজ, ব্যাগ, আর আমার চুড়ি,টিপ,মালা সব মিলিয়ে নীলে নীলময় হয়ে গেলাম। সেদিন কলেজে গেলাম না। সকাল থেকে আমাদের দুজনের সাজুগুজু, ফিসফাস বৌদিকে তীব্র কৌতূহলী করে তুলছিল। আড়েঠাড়ে তিনি জানতেও চাইছিলেন আমরা কী করতে যাচ্ছি? কিন্তু আমরা দুজনেই মৌনব্রত অবলম্বন করলাম। সাজগোজ শেষে শেষবারের মতো যখন আয়নার দিকে তাকালাম তখন অনেকটা নার্সিসিস হয়ে গেলাম যেন! ঠিক সাড়ে দশটায় আমরা বাসা থেকে বেরুলাম।
এগারোটা বাজতেই আমরা নিউমার্কেটের ফটোম্যাক্সের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আশেপাশের দোকানের চির পরিচিত ভাইয়া দাদারা তো আমাদের সাজুগুজু দেখে ‘পড়ে না চোখের পলক”। জানতে চাইলো কোথায় যাচ্ছি আমরা? আমরা বললাম,প্রোগ্রাম আছে। কিন্তু এগারোটা বেজে দশ মিনিট হয়ে গেলো! নীলখামওয়ালা অভিক চৌধুরী তো এলো না এখনো। আমি বার বার এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলাম, আঁখিও শান্ত শীতল চোখে চারপাশটা পর্যবেক্ষণ করছিল। যখনই কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে, তখনই ও বলে,” এই স্নিগ্ধা দেখ দেখ, অভিক চৌধুরী এসেছে মনে হয়। আমিও উৎসুক চোখে সেদিকে তাকাতেই দেখি সেই সুদর্শন যুবক আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলি,” দূর, কেউ আসবে না রে। আমাদের কোনো ফ্রেন্ড আমাদের সাথে মজা করেছে, এখন দেখ গিয়ে হয়তো ওরা দূর থেকে মজা দেখছে। আঁখিরও মনে হয় তেমনটা মনে হচ্ছিল। সে বললো,” তাহলে কি আমরা এখন চলে যাবো?” আমি চরম বিরক্তি এবং রাগের সাথে ওকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,’ তো তুই কী করতে বলছিস?’ আমার প্রাণের বন্ধু আমার মেজাজটা ধরতে পারছিল, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বললো,” আচ্ছা, চল যাই।” রাগে আমার সারাটা শরীর জ্বলছিল, আর নিজেদের এসব কাণ্ডকারখানার জন্য নিজেকেই ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছিল। আমরা দুজন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দু’পা বাড়াতেই হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে পেলাম ”এই সিনিগ্দা, আমি এসে গেসি।” আমার নামের এমন বিশ্রী উচ্চারণ শুনে বিরক্তি সহকারে পেছনে ফিরতেই দেখলাম চল্লিশোর্ধ্ব এক স্থুলাকৃতি ভদ্রলোক আমার দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছেন। আমি বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে তাকাতেই তিনি বললেন, আমিই অভিক ছৌদুরি। তোমাকে আমিই ছিটি পাঠায়েছিলাম।” আমার স্বপ্নদুয়ারে হানা দেওয়া সেই নীলখামের নীলপত্রের প্রেরকের এমন বাস্তব উপস্থিতি আমাকে বেদনায় নীল করে দিলো। নীলে নীলময় আমি নীলাভ বেদনার্ত চোখে আঁখির দিকে তাকালাম। আঁখির চোখ বিস্ফোরিত, ভাব কিংকর্তব্যবিমূঢ়! ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে এসে বিশুদ্ধ ইংরেজিতে বললেন,’ দেরী হওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী”। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর ওই ইংরেজি শব্দ আমার কানে আর ঢুকার রাস্তা পাচ্ছিল না।’সিনিগ্দা’, ’ছৌদুরি’ আর ’ছিটি’ ততক্ষণে আমার কানের ভেতর গিয়ে ঝাঁপাঝাঁপি শুরু করে দিয়েছে। তাছাড়া তাঁর বিশাল বপুসমৃদ্ধ চল্লিশোর্ধ্ব চেহারা আমার সেই বয়সের নীলখামের নীলপত্রের রোমান্টিক নায়ককে এক ঝটকায় ধুলায় লুটিয়ে দিয়ে আমাকে নীলাভ বেদনায় বিমর্ষ করে দিলো। (সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি