সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
logo

ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তন ও বাম রাজনীতির হাল হকিকত

ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তন ও বাম রাজনীতির হাল হকিকত

কানাই দাশ, ২২ এপ্রিল, এবিনিউজ : বাম রাজনীতির অর্থ যদি হয়ে থাকে সমাজ প্রগতির লক্ষ্যে, মানব মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত রাজনীতি, লোভাতুর শাসক গোষ্ঠীর মুনাফা ভিত্তিক আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক বিধি ব্যবস্থার বিপরীতে জনকল্যাণকামী রাজনীতি, পুঁিজর শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির রাজনীতি তাহলে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, ভারত বা বাংলাদেশে শুধু নয় বিগত সিকি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় সহ বিশ্বব্যাপী বাম রাজনীতি এক ঝড়ো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অন্যদিকে আগ্রাসী পুজিবাদ এসময়ে তার অন্তর্গত স্থায়ী সংকট থেকে রক্ষা পেতে বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকে নয়া উদার নৈতিকতার নামে বিশ্ব অর্থনীতিকে জোরপূর্বক সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন মুনাফা নির্ভর ব্যবসার আওতায় নিয়ে এসে যতটুকু ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধ বিশ্বযুদ্ধোত্তর কেইনসীয় পুুঁজিবাদের ছিল তা বিসর্জন দিয়ে লুটপাট, ধর্মান্ধতা, ভোগবাদের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে সর্বত্রই এক দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতি চালু করেছে। বিশ্ব সমাজতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে নয়া উদার নৈতিক পুজিবাদ প্রগতিশীল পরিবর্তন ও পরিবর্তন প্রত্যাশী শক্তিকে আমাদের মত দেশে নানা কৌশলে গুরুত্বহীন করে তুলেছে। এ বিভ্রান্তির সুযোগে “গণতন্ত্রের” পীঠস্থান খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ভারতে ট্রাম্প–মোদী–যোগীদের মত মানবতা বিরোধী অসহিষ্ণু ধর্মান্ধরা “নির্বাচিত” হয়ে পুরো পৃথিবীকে বিপজ্জনক সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামো ও সংবিধানের আওতায় সামান্য ক্ষমতার অধিকারী ভারতের তিনটি প্রান্তিক রাজ্যে দীর্ঘদিন পর কমিউনিস্টদের নির্বাচনী বিপর্যয়ের চাইতেও বিংশ শতাব্দীতে অক্টোবর বিপ্লব সারা পৃথিবীতে যে পরিবর্তন ও আশাবাদের সঞ্চার করেছিল তার অনুপস্থিতিই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বাম ও প্রগতিশীল মানুষের কাছে অনেক বেশি চিন্তার ও উদ্বেগের বিষয়। প্রশ্নহলো কোন্‌পথে, কিভাবে মানব মুক্তির অনিবার্যতায় মানুষের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনা যাবে নাকি নিপীড়ন, নির্যাতনই সভ্যতার স্থায়ী বিধিলিপি হিসাবে মানুষকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গী সম্পন্ন একজন মানুষ হিসাবে বস্তুজগত তথা সমাজকে যদি আমরা গতি ও বিকাশের ধারায় দেখি, তাহলে মানুষের মুক্তির পথ যতই বন্ধুর হোক, মুনাফা নির্ভর সংকটগ্রস্ত পুজিঁবাদের বিপরীতে মানবমুক্তির লক্ষ্যভিসারী প্রকৃত বাম রাজনীতির ভবিষ্যত নিয়ে তো সংশয় থাকার নয়।

মানব সভ্যতার বিগত ৫ হাজার বছরের বিকাশের ইতিহাস অনুসরণ করলে আমরা দেখবো যে এ শুধু কোন বিমূর্ত ও আবেগাশ্রিত উপলদ্ধি নয় এর রয়েছে বস্তুগত ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। আদিম সাম্যাবস্থা, দাসপ্রথা, সামন্তপ্রথা– এ তিনটি আর্থ–সামাজিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েই আজ থেকে চারশ বছর আগে পুজিঁবাদের উদ্ভব হয়। বৈজ্ঞানিক নিয়মে পুজিঁবাদ তো কোন স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবতাবাদ, ইহলৌকিকতা, বিজ্ঞান মনস্কতা মানব সভ্যতায় পুজিঁবাদের এসব অসাধারণ অবদান থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা হিসাবে তার প্রগতিশীলতা গত প্রায় ১৫০ বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। শ্রম ও পুঁিজর চিরন্তন দ্বন্দ্বে বিক্ষত পুজিঁবাদ বৈষম্য, যুদ্ধ, দূর্নীতি, লুণ্ঠন ছাড়া আজ অচল। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ হল প্রগতিশীল কোন বিকল্প সমাজ ব্যবস্থা। সর্বগ্রাসী সংকটে বিপর্যস্ত পুঁজিবাদের বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বৈষম্যহীন সমাজ তথা সমাজতন্ত্রের একটা মডেল তার অনেক মৌলিক ও সদর্থক অবদান থাকা সত্ত্বেও সোভিয়েত রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে প্রায়োগিক ভুল ও অনভিজ্ঞতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তো মানুষের মুক্তির চিরন্তন স্বপ্ন, ব্যর্থ হতে পারে না। মানব মুক্তির পথ হিসেবে অন্য কোন বৈজ্ঞানিক মতবাদ বা ডিসকোর্স এখনো আমাদের কাছে স্পষ্ট নয় বিধায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিদ্যমান ন্যারেটিভ যাচাই বাছাই ও সংশোধনপূর্বক উন্নত সমাজতন্ত্রের’ পথ ও পদ্ধতি নিয়েই আমাদের এগুতে হবে। সঙ্গত কারণেই মার্কস সমাজতন্ত্রের কোন সুস্পষ্ট রূপরেখা দেননি। লেনিন সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের পরীক্ষামূলক পথে এগিয়েছেন, কিন্তু সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি। মনে রাখতে হবে, মানব মুক্তির লক্ষ্যাভিসারী কোন ব্যবস্থা বা সমাজতন্ত্র পরিকল্পিতভাবে তৈরি করে নিতে হয়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা গড়ে উঠে না মানুষের অন্তর্গত কিছু নেতিবাচক প্রবণতার কারণে। তৈরি করে নেবার এই অতি জটিল কাজে মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণে ভুল ভ্রান্তি হবেই। বারবার পিছিয়ে পড়ে এগুতে হবে। এ কারণেই ১৮৭১ এর প্যারী কমিউন ৭২ দিন টিকেছিল, অক্টোবর বিপ্লব মানব সভ্যতাকে নানাভাবে প্রগতির পথে প্রভাবিত করে ৭২ বছর টিকেছে, মানুষের অনিবার্য মুক্তির কর্মযজ্ঞে আগামীতে নিশ্চয়ই আরো উন্নত কোনো সমাজতন্ত্র পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেবে। প্রগতিশীল যে কোন পরিবর্তনে সতত বিশ্বাসী বামপন্থীরা পূর্বের মত সেই অনাগত ব্যবস্থার জন্যে লড়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের এ লড়াইয়ে উপমহাদেশের বামপন্থীরা শতবছর ধরে লড়ছে এবং সমাজে রাজনীতিতে নানা মাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলে এগিয়ে চলেছে চূড়ান্ত মুক্তির ইতিহাস নির্ধারিত লক্ষ্যে। সমাজ পরিবর্তনের এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ঐতিহ্যবাহী বাম রাজনীতির মূল্যায়ন করতে হবে।

ভারতে ১৯৫২ সাল থেকে সূচিত নির্বাচনী রাজনীতিতে কমিউনিস্টরা অংশগ্রহণ করে আসছে। ১৯৫৭ সালে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে কেরালায় কমিউনিস্ট পার্টি বিধান সভা নির্বাচনে সারাদেশে চমক লাগিয়ে জয়লাভ করে। সে সময়ে পশ্চিমবঙ্গেও কমিউনিস্ট পার্টি উল্লেখযোগ্য আসন পায় লোকসভা ও বিধান সভার নির্বাচনে। ১৯৭৭ সালে এককভাবে বামফ্রন্ট পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতায় যায় এবং টানা ২০১১ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকে। কেরালায় কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে দুটো ফ্রন্ট অনেকটা পালা করে মতায় নিয়মিত থাকছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে একাদিক্রমে বামরা ত্রিশবছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে ভূমি সংস্কারসহ জনজীবনের কিছু মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। এতে তারা অকুণ্ঠ গণসমর্থনে বার বার ক্ষমতায় আসতে থাকে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে নেতৃত্বের মধ্যে আত্মসন্তুষ্টি, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যেমন জন্মেছে তেমনি নীচের দিকে সুবিধাবাদি, সুযোগ সন্ধানী, সংস্কারাচ্ছন্ন, অপ্রশিক্ষিত পার্টি সমর্থক ও কর্মীরা মানুষকে বিরক্ত করে তুলেছে। এছাড়াও আরো নানা কারণে মানুষের মধ্যে একটা পরিবর্তনের আকাঙ্খা কাজ করেছে। স্মর্তব্য যে, বৈরী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কোন রাজ্য সরকার মানুষের জীবনের মৌলিক পরিবর্তন বা সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে সরাসরি কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না, পারে বড়জোর কিছু সংস্কারমূলক কাজ করতে এবং তাও কেন্দ্রের অসহযোগিতায় কিছুদিন পর থমকে যায়। এতে মানুষের অতি প্রত্যাশা হতাশায় রূপ নেয়। তাছাড়াও তিন রাজ্যেই বাম বিরোধী ভোট সব সময় বাম ভোটের কাছাকাছি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে ছিল। বামফ্রন্টের প্রথম ১৫ বছরের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি, কৃষকের স্বার্থে ভূমি সংস্কার, মানুষের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা, সাংগঠনিক রেজিমেন্টেশন ইত্যাদি মিলে সমর্থন থাকা সত্বেও কংগ্রেস তা কাজে লাগাতে পারেনি। পরে উগ্র বাম বিরোধী মমতার আবির্ভাব কংগ্রেসকে আরো দুর্বল ও বামবিরোধী ভোটকে বিভক্ত করে দেয়। পরবর্তীতে তৃণমূলের শিল্পবিরোধী জমির লড়াই, কংগ্রেস–তৃণমূল দৃঢ় ঐক্য, পরিবর্তনের জন আকাঙ্খা ইত্যাদি মিলিয়ে ৪০ শতাংশ ভোট পাওয়া সত্ত্বেও ২০১১ সালে বামরা পরাজিত হয়। ত্রিপুরাতে সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজেপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে, কর্পোরেট হাউসের টাকার বন্যা বইয়ে দিয়ে, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতীয় শক্তির সাথে জোট করে, তীব্র সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে, উন্নয়নের লোভ দেখিয়ে মাত্র ২০ লাখ ভোটের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য ত্রিপুরায় সব বাম বিরোধী ভোট কব্জা করে। ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েও বামফ্রন্ট জিততে পারেনি। ফেডারেল কাঠামোর অধীনে প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী কেন্দ্রীয় সরকারে ধর্মনিরপেক্ষও উদার গণতন্ত্রের দল, কিছুটা অসাম্প্রদায়িক শক্তি কংগ্রেস থাকা আর কর্পোরেট পুঁজির প্রত্যক্ষ এজেন্ট, চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক, বিজেপি ক্ষমতায় থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা নির্বাচন পরবর্তী ত্রিপুরার নজিরবিহীন হিংসাত্মক ঘটনায় বুঝা গেছে। বহুত্ববাদী ভারতবর্ষ আজ একটা ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী সুলভ একনায়কত্বের দিকে যাচ্ছে। মোদির কংগ্রেসমুক্ত ভারতের স্লোগান তো এক ধরনের একনায়কত্ববাদী হুংকার। এমতাবস্থায়, সামান্য ক্ষমতার অধিকারী রাজ্যস্তরে কোন বাম সরকার দূরে থাক এমনকি কংগ্রেসের মত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সরকারও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছেনা। এখানে বাম রাজনীতির অপ্রাসঙ্গিকতার প্রশ্ন তোলা তো অবান্তর। জাতীয় রাজনীতিতে অবশ্য সিপিএম এর কিছু হঠকারী সিদ্ধান্ত রাজ্যস্তরে বাম বিরোধী শক্তিগুলোকে ঘনিষ্ঠ হতে সাহায্য করে যা নির্বাচনী রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। শাসকদল হিসাবে কংগ্রেসের যতই অধোগতি হোক না কেন বিজেপি’র সাথে তাকে সমতুল্য করে সমদূরত্বে থাকার বাম রাজনীতি ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখন বাম রাজনীতিকেই অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিচ্ছে এবং তা যুক্তিযুক্ত ও সঠিক কৌশল বলে মনে হয় না, কেননা ভারতের ক্ষমতার মূল বলয় বিশাল হিন্দিভাষী অঞ্চলে বামদের রাজনৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। অন্যদিকে কংগ্রেস–বিজেপি বিরোধী শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলো ক্ষমতার রাজনীতির প্রয়োজনে যে কোন দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে তাদের নিয়ে জোট বা বিকল্প গঠন ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তর প্রদেশে মোলায়েম, মায়াবতী, বিহারে লালু, নীতিশ, অন্ধ্রে নাইডু তার উদাহরণ। ক্ষমতায় এসে আজ বিজেপি ভারতের জাতীয় রাজনীতি ও জনমানসকে যে সাম্প্রদায়িক ও ভোগবাদী লুটেরা ধারায় প্রভাবিত করছে ও ইতিহাসকে বিকৃতির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে তা যে কোন সুস্থ মানসিকতার ভারতবাসীকে উৎকণ্ঠায় ফেলে দিচ্ছে। এই সাম্প্রদায়িক মোদী সরকারকে হটানোর জন্য ভারতব্যাপী নির্বাচনী লড়াইয়ে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে বাস্তবে বাম ও প্রগতিশীলরা কিছুতেই এগুতে পারার অবস্থায় নেই– তবে পারলে ভালো হতো। একদিকে গোহত্যা, লাভ জিহাদ, হিন্দুত্ব মন্দির–মসজিদ বিতর্ক, অনুপ্রবেশ ইত্যাদিকে বিজেপি এখন রাজনীতির এজেন্ডা করেছে। অন্যদিকে পর্দার অন্তরালে চলছে কর্পোরেট পুঁজির লুটপাট। মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। গান্ধী নেহেরুদের মত সেকুলার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্রদ্ধেয় নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র এই বিপজ্জনক রাজনীতির বিকল্প রাজনীতি নিয়ে বামরা এগুতে পারছে না। ফলে তারা ভোট ও শক্তির দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে যাচ্ছে। বামপন্থীরা সামনের নির্বাচনে কি করবে সেটা পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। সিপিআই ইতোমধ্যে কংগ্রেসের সাথে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিপিএমও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। কেন্দ্র বা রাজ্যস্তরে বিজেপিকে নিশ্চয়ই বামপন্থী দূরে থাক কোন সুস্থ মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদীকে নিয়ে অমর্ত্যসেনের প্রতিক্রিয়া এক্ষেত্রে স্মরণীয়।

কংগ্রেস ও বিজেপি’র লুটপাটের আর্থ–রাজনৈতিক দর্শনের বিরুদ্ধে তীব্র শ্রেণি সংগ্রাম ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানুষকে নিয়ে বামপন্থীদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় ধর্মান্ধ ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তি বিজেপি’র রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ প্রবণতার বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে হবে একে হটানোর আশু লক্ষ্যে, এতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করা যাবে না। ইতোমধ্যে মোদী ম্যাজিক ফিকে হতে শুরু করেছে। খোদ গুজরাট ও উত্তর প্রদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন তার প্রমাণ। আমার মনে হয় ভারতের এ মুহূর্তের বাস্তবতায় মোদী বিরোধী নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রগতিশীলরা যেমন কংগ্রেস ছাড়া সফল হবে না তেমনি কংগ্রেসও বাম প্রগতিশীলদের বাদ দিয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করার অবস্থায় নেই। এখানেই ভারতে বাম রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা– শুধু দু’একটি রাজ্যে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় টিকে থাকা সুদূরপ্রসারী বাম রাজনীতির লক্ষ্য ও সার্থকতা হতে পারে না।

লেখক : কলাম লেখক ও অধ্যাপক

(সংগৃহীত)

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত